বইছে আবার চৈতি হাওয়া ২৭.

0
322

বইছে আবার চৈতি হাওয়া
২৭.

-আশিকের সংগে তোমার কোথায় দেখা হল?
-আমি উনার অফিসে গিয়েছিলাম
-আজকে তো তোমাদের মিটিং ছিলো না?
-না আমি অন্য একটা কাজে গিয়েছিলাম।
-কি কাজ? শুভ ভুরু কুঁচকে জানতে চাইল।
-আমার পেজ-এর একটা অর্ডার নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কি হয়েছে জানো, একটা খুব বড় অর্ডার পেয়েছি। একটা অনুষ্ঠানে….
– ফোনে কথা বলতে পারতে!
– চার্জ ছিল না।
– আচ্ছা যাই হোক, তোমার সঙ্গে জরুরি কিছু কথা আছে।

মীরা একটু থমকে গেল; ও খুব আগ্রহ নিয়ে অর্ডারের ব্যাপারটা শুভকে বলতে চাইছিল, কিন্তু শুভ পাত্তাই দিল না। তার ভালো লাগা নিয়ে কেন যেন শুভর কোন মাথা ব্যথা নেই। মীরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
– বল কি জরুরী কথা।
-দাঁড়াও আগে কিছু খাবার অর্ডার করি।
শুভ অর্ডার দেবার জন্য উঠে গেল। মার্কেট থেকে বেরোনোর পরে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে বসেছে। মীরার অবশ্য ওখানেই ভালো লাগছিল; আলো ঝলমল মার্কেটে ফুটপাতে দোকান, কত রকমারি জিনিস বিক্রি করছে। পাশে বইয়ের দোকান; কেমন ঘোর লাগা অনুভূতি! এই সময় যদি খুব প্রিয়জন কাছাকাছি থাকে, তাহলে এই ঘোর যেন আর কাটতেই চায় না। কিন্তু শুভর এসব ভালো লাগেনা; ও নিরিবিলিতে কোন বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে বসতে চায় সবসময়।

মীরা মোবাইলে ওর পেজের আপডেট চেক করছিল; শুভ অর্ডার করে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে মীরাকে দেখছিল। মীরা কি একটু বদলে যাচ্ছে?

আজকের পুরো ঘটনাটা শুভ আগে থেকেই জানে; তারপরও মিরাকে এদিক ওদিককার প্রশ্ন করে একটু ঝালিয়ে নিচ্ছিল। দেখতে চাইছিল ও সত্যি বলছে, নাকি কিছু লুকাতে চাইছে।

সন্ধ্যের একটু আগে যখন লাইব্রেরী থেকে উঠতে যাচ্ছিল শুভ, ঠিক তখনই রাসেল ফোন করে জানিয়েছিল যে রাইফেলস স্কয়ারের সামনে আশিক আর মিরাকে রিকশায় দেখা গেছে। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়েছিল শুভর। ফোন বন্ধ করে আশিকের সঙ্গে রিক্সা করে কোথায় যাচ্ছে ও আর কেনই বা যাচ্ছে? অন্য একজনকে দিয়ে আশিককে ফোন করিয়ে জানতে পেরেছিল যে নিউমার্কেটে আছে; তাই সোজা চলে এসেছিল। বইয়ের দোকানগুলোর কাছে একটু খুঁজতেই পেয়ে গেল। আশিক অবশ্য বুদ্ধিমান ছেলে, ধরা খেয়ে সটকে পড়েছে নিশ্চয়ই। তবে শুভ ভেবেছিল মীরা হয়তো মিথ্যা কথা বলবে। ওদের ব্যাপারটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। যাই হোক মিরাকে যে করেই হোক ওর সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।

শুভ ফিরে এসে বলল
-কি দেখছো?
– তেমন কিছু না।
এবার ইচ্ছা করেই মীরা ওর পেজের ব্যাপারে কিছু বলল না। ড্রিংকস আর স্প্রিং রোল দিয়ে গেছে মিরা আলতো করে পানীয়র গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল
– কিছু বলবে বলছিলে
– হ্যাঁ আমার স্কলারশিপটা কনফার্ম হয়ে গেছে
– বাহ! কংগ্রাচুলেশনস। তো কবে যাচ্ছ?
– যাচ্ছো না, বলো যাচ্ছি
– মানে?
– তোমাকে তো আগেই বলেছি, তোমাকে নিয়েই যাবো। তুমি তাড়াতাড়ি পরীক্ষাটা দিয়ে ফেলো।
– কি পরীক্ষা?
– আই ই এল টি এস
– তারপর, পরীক্ষা দিয়ে কি করব?
– তারপর ভিসার জন্য এপ্লাই করব।
– তোমার প্ল্যানটা ঠিক কি শুভ?
– দেখো, আমি প্ল্যান করেছিলাম আমার থিসিস শেষ করে তারপর স্কলারশিপের জন্য এপ্লাই করব; কিন্তু তুমি তো জানো সিনিয়র একজনের সঙ্গে কয়েকটা রিসার্চ প্রজেক্টে আমি কাজ করেছি। এই সুবাদে আমার দুটো পাবলিকেশন ও বের হয়েছে। তাই যখন সুযোগ পেলাম তখন আমি এপ্লাই করে ফেললাম এবং লাকিলি স্কলারশিপটাও হয়ে গেল। এখন আর সমস্যা নেই। একবারে ওখানে গিয়েই মাস্টার্স করব তারপর পিএইচডি।
-ও আচ্ছা। তাহলে তুমি বাসায় কথা বলে ফেলেছ?
– বাসায়?
– হ্যাঁ, তোমার বাসায় কথা বলোনি?
শুভ একটু আমতা আমতা করে বলল
– না , মানে বাসায় এখনও কথা বলিনি
– তাহলে কিভাবে হবে?
– আমরা নিজেরা বিয়ে করে চলে যাই, তারপর ওনাদের জানালেই হবে।
– আর আমি আমার বাসায় কি বলবো?
– সেটা তুই চিন্তা করে দেখো। তোমার বাসার লোকজনের তো খুশিই হওয়ার কথা। তোমার জন্য এর থেকে ভাল পাত্র তারা কোথায় পাবে?
মীরার কপালে ভাঁজ পড়ল
– ভালো পাত্র বলতে তুমি কি বুঝাচ্ছো?
– মানে ধরো সবাই তো এরকম ছেলেই চায়। ভালো স্টুডেন্ট, বাইরে সেটেল
– সেটা ঠিক আছে, কিন্তু ভাল পাত্রকে তো আমার বাসায় প্রপোজাল পাঠাতে হবে। তার সঙ্গে পালিয়ে গেলে নিশ্চয়ই আমার বাসার লোকজন খুশি হবে না। আর তাছাড়া আমার পড়াশোনার কি হবে?
– তুমি ওখানে কোন একটা কোর্স করে নিও।
– কোন একটা কোর্স ? সিরিয়াসলি ? তোমাকে কয়েকটা কথা খুব ভালো করে বুঝিয়ে দেই , আমার বড় চাচা অনেক বিশ্বাস করে আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন; এভাবে পালিয়ে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি যদি তোমার ফ্যামিলিকে জানিয়ে আমাদের বাসায় প্রপোজাল পাঠাতে পারো তাহলেই কিছু হবে, তা না হলে না।
– এটা কোনদিনও হবে না
– কেন?
– এই সহজ ব্যাপারটা বুঝতে পারছ না? তোমাদের যে ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড তাদের সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে আমার বাবা-মা কখনোই রাজি হবে না।
– এক মিনিট, আমাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড বলতে কি বুঝাচ্ছো তুমি?
– দেখো আমি খারাপ ভাবে বলতে চাই না ; কিন্তু এটাই রিয়ালিটি।
– কি রিয়ালিটি?
– তোমার বাবা নেই। তুমি সাধারন একটা মফস্বলের মেয়ে; তাছাড়া তোমার চাচা একটা দোকানদার…
মীরা আর শুনতে পারল না। উঠে দাঁড়িয়ে থমথমে গলায় বললো

-এসব তোমার আমাকে প্রপোজ করার আগে চিন্তা করা উচিত ছিল। একটা দোকানদারের মেয়েকে যদি বিয়ে করতে না পারো তাহলে তার সঙ্গে প্রেম করতে যাওয়া তোমার উচিত হয়নি।

শুভ যেন সম্বিত ফিরে পেল। মীরা আশিকের সঙ্গে আছে শোনার পর থেকেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে ছিল। এখানে এসে দুজনকে একসঙ্গে দেখে আরো মেজাজ খারাপ হয়েছে। তারপরেও মাথা ঠান্ডা রেখে আজকে মিরাকে রাজি করাবে ঠিক করেছিল। কি থেকে যে কি বলে ফেলল। এখন আর কথা ফিরিয়ে নেওয়া ও সম্ভব না।
ওয়েটার খাবার সার্ভ করছে। শুভ সামনের দিকে তাকালো। মীরা গেটের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। একগাদা ধুমায়িত খাবার সামনে নিয়ে শুভ বোকার মতন বসে রইলো।

মিরা রিক্সার হুডটা শক্ত করে ধরে চোখে ওড়নার আঁচল চেপে ধরেছে। কি অসহ্যরকম কষ্ট যে হচ্ছে। একটা দিন এত সুন্দরভাবে শুরু হয়ে এত বিচ্ছিরিভাবে শেষ হয়ে যায় কেন ?

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here