বইছে আবার চৈতি হাওয়া
৪০.
রাগে ভয়ে রাসেলের হাত কামড়াতে ইচ্ছে করছে। যখন থেকে মোবাইলে দেখেছে এগারোটার সময় মিটিং তখন থেকে ওর ঘুম উধাও হয়ে গেছে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আশিক যদি জানতে পারে ও কি করেছে তাহলে ওকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে।
টিএসসিতে যে ছেলেটাকে আশিক মেরেছিল তার নাম তৌহিদ। রাসেল ওকে আগে থেকেই চিনতো। ওর কাছ থেকে দুই একবার মাল নিয়েছে। বেশ বড় ঘরের ছেলে। ওর বাবা মন্ত্রি ফন্ত্রি কিছু একটা হবে। সেদিন আশিক হুট করে ছেলেটাকে মেরে বসবে ও ভাবতে পারেনি। এই ঘটনার কদিন পর ছেলেটা দলবল নিয়ে ওর সঙ্গে আবার দেখা করতে এসেছিল।রাসেল ভয় পেয়েছিল কিন্তু সেরকম কিছু ঘটেনি। বরং ওকে নিয়ে গিয়ে বেশ দামী দোকানে বসিয়ে বিদেশি মাল খাইয়েছে। অনেকক্ষণ গল্প টল্প করেছে। ওদের কাছ থেকেই রাসেল জানতে পেরেছে যে আশিকের বাবার কারণে ওর গায়ে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। আশিকের বাবা অনেক ঘাঘু লোক। পুলিশের চেয়েও উকিল বেশি ডেঞ্জারাস। পুলিশ তো জেলে ভরে রাখবে, যেখান থেকে চাইলে বের হওয়া যায় কিন্তু উকিল তো একেবারে ফাঁসিতে ঝুলানোর ব্যবস্থা করে ছাড়বে। তাই ওরা একটা সুযোগ খুঁজছে আশিককে জব্দ করার, যাতে সাপ ও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে। রাসেল বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, সে রকম যেন কিছু না করে। হাজার হোক আশিক ওর ছোটবেলার বন্ধু। কিন্তু সেদিন যখন মিরার কারনে আশিক ওর কলারে হাত দিল মাথাটা স্রেফ আউলা হয়ে গেল। তাই সেদিন রাতে যখন সুযোগটা এলো তার শতভাগ সদ্ব্যবহার করে ফেললো রাসেল। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে তৌহিদকে জানালো যে ওরা দুজন আটকা পড়েছে তৌহিদ একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলেছিল সাবাস!
বুদ্ধি করে পরদিন সকালবেলা শুভকে ফোন করতে ভুলেনি রাসেল। পরের দিন সকালে যখন ফোন দিল তখন শুভ ঘুমে অচেতন। রাসেল ফোন করে বলেছিল
– তুই ঘুমা শালার পো আর তোর ডার্লিং অন্য লোকের লগে ফুর্তি করুক
– মানে কি বলছিস এসব?
– তুই জানিস মীরা কই?
– না, কই?
– আশিকের অফিসে। রাতে ওখানেই ছিল।
– তুই শিওর?
– ওভার সিওর। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। আশিক আমাকে নিজে বলছে, আর তাছাড়া আজকে তো নতুন না। এর আগে ওরা একসঙ্গে থাকছে। আমিতো তোরে আগের দিনও সাবধান করছিলাম।
– আশিক এটা করতে পারলো?
– আশিক তো ফেরেস্তা না। সাইজা গুইজা যায় বইসা থাকে ওর অফিসে।
– তাই বলে অফিসে?
– আশিক অফিসে সোফা-কাম বেড ফালাইছে, এমনি এমনি নাকি?
– ডিসগাস্টিং
রাসেল মনে মনে হেসেছিল। ছাগলের বাচ্চাটা টোপ গিলেছে। পড়ালেখাতেই খালি ভালো, মাথার ভেতর গরুর গোবর।
দুদিন ফুরফুরে মেজাজে ছিল রাসেল। তারপর একদিন দুপুর বেলা ফোন করে মারুফ জানিয়েছে যে আশিক আর মীরার বিয়ে। সব প্ল্যান ভেস্তে গেল। তবুও রাসেল শেষ চেষ্টাটা করল। সেদিন রাতেই মিরাকে ফোন করে বলল যে পুরোটাই আশিকের প্ল্যান করা। আশিক আগে থেকেই মিরাকে চাইতো, তাই সেদিন সুযোগ পেয়ে ওকে ফোন করে বলেছে যেন না আসে। মীরার কাছে অনেকবার করে ক্ষমাও চাইলো। বলল সেদিন ও আসলে হয়তো এত বড় অঘটনটা ঘটতো না। মীরা প্রথমে বিশ্বাস করতে চায়নি, পরে রাসেল বলেছিল একটা কথা তুমি ভেবে দেখো অত সকালে ওই মানুষগুলো কি করে জানবে যে তোমরা ওখানে আটকা পড়েছ? যদি না আশিক ওই মানুষগুলিকে খবর দিয়ে আনিয়েছে।
সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। রাসেল খোঁজ নিয়েছে আশিক অফিসেই থাকছে। এখন মিটিং এর সময় যদি লাইলী-মজনু একসঙ্গে হয়ে যায় আর ওর হাঁড়িটা হাটে ভেঙ্গে যায় তাহলে আশিক ওকে আস্ত রাখবে না।
রাসেলের দায়িত্ব ছিল সুবেনীরগুলি তৈরি করা। এখন প্রিন্টিং এর কাজ চলছে প্রেসে। রাসেল প্রেস এ ফোন করে বলল কাজ বন্ধ করে রাখতে। তারপর আশিককে ফোন করে জানালো যে সে অসুস্থ আসতে পারছে না আর প্রেসে কি একটা ঝামেলা হয়েছে সুবেনীর বের হতে সময় লাগবে।
প্রথমে ভেবেছিল আশিক হয়তো রাগারাগি করবে কিন্তু আশিক খুব আনমনা হয়ে ছিল। শুধু বলল ও দেখবে। রাসেল সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাক এ যাত্রা বাঁচা গেল।
৪১.
আশিকের মন মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে আছে। মীরা ঐভাবে চলে যাওয়ার পর অনেকবার ওকে ফোন করেছে, কিন্তু ওর ফোন বন্ধ। বাড়িতে ফোন করে জেনেছে ও ফেরেনি। ভেবেছিলো ঘন্টাখানেক পর আবার ফোন করবে। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। রাসেল ফোন করে জানিয়েছে প্রেসের কাজ আটকে গেছে। ও নিজেই অসুস্থ আর কারো উপর দায়িত্ব দিয়ে ভরসা করা যাচ্ছে না। মারুফ আর সুমনকে অন্যান্য কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাধ্য হয়ে ও নিজেই প্রেসে চলে গেল। ওখানে যাবার পর আরেক দফা মেজাজ খারাপ হলো। প্রেসের লোকেরা জানালো আশিক নাকি ওদের কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে। বেশ কিছুক্ষণ উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার পর আবরো কাজ শুরু হল, ততক্ষণে বিকেল গড়িয়ে গেছে এবং আকাশের অবস্থা যথেষ্টই খারাপ। প্রেসের লোকজন কাজ বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যেতে চাইছে। ওদের ধরে বেঁধে অনুরোধ করে কাজ শেষ করতে করতে রাত প্রায় শেষ হয়ে গেল।
শেষ রাতের দিকে আবারো বৃষ্টি শুরু হল। আশিক আর বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করল না। কাল মিরা ঐভাবে চলে যাওয়ার পর থেকে খুব খারাপ লাগছে। আশিক ঠিক করে রেখেছিল দুপুরে বাড়ি যাবে। ও জানে মীরা বিকেল নাগাদ ফিরে আসে। ভেবেছিল আজ বাড়িতেই থাকবে। সেটা আর হলো না।
বৃষ্টি মাথায় করেই আশিক বেরিয়ে পড়ল। পুরো রাস্তা ফাঁকা, একটা রিক্সা পর্যন্ত নেই। আশিক হেঁটেই রওনা দিল। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ নেই। একেবারে মুষলধারে বৃষ্টিও না আবার ইলসে গুড়িও নয়, কেমন একটানা মন খারাপ করা বৃষ্টি। আকাশ অন্ধকার হয়ে আছে।
গা ভর্তি জ্বর নিয়ে যখন বাড়ি ফিরল ততক্ষণে নয়টা বেজে গেছে। বাড়ি ফিরে জানতে পারলো মিরা এইমাত্র বেরিয়ে গেছে । আশিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উপরে নিজের ঘরে চলে গেল। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর উঠছে। আশিক পোশাক পাল্টে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। খিদে পেয়েছে কিন্তু কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না। আশিক চোখ বন্ধ করে আপন মনেই বলল
“ গা পোড়ানি জ্বর নয়
তবুও বিস্বাদ মুখ
আমাকে পেয়ে বসেছে
তোমাকে দেখতে চাওয়ার দীর্ঘ অসুখ”
চলবে……..
আজকের কবিতাটা রুদ্র গোস্বামীর লেখা। অনেকেই সুন্দর সুন্দর রিভিউ দিয়েছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আবার অনেকেই রিভিউ দিয়েছেন কিন্তু তাদের রিভিউ দেখা যাচ্ছে না। একটু কষ্ট করে স্টেপগুলো চেক করে নেবেন। সাতটা রিভিউ দেখা যাচ্ছে না। মন খারাপ লাগছে।