বইছে আবার চৈতি হাওয়া ৪২.

0
215

বইছে আবার চৈতি হাওয়া
৪২.
– রাসেল কি তোর বাপ?
মীরা অপ্রতিভ মুখে তাকিয়ে রইল। টুম্পার কথার কোন লাইসেন্স নেই। কি থেকে কি বলে বসে তার ঠিক নেই। ও কোনমতে বলল
– উফ! এসব কি বলছিস?
– ঠিকই বলছি। রাসেল কি তোর বাপ, তোর চাচা নাকি তোর ভাই? তাহলে কি বুঝে ওর কথা বিশ্বাস করতে গেলি?
– বিশ্বাস করিনি তো।
– বিশ্বাস না করলে ঐরকম একটা কথা আশিক ভাইকে কেন বলেছিস? তোর কি মনে হয়েছে আশিক ভাই তোর কাছে আসার জন্য মরে যাচ্ছে?
– উফ! কি বলছিস এসব? তোকে সব কিছু বলাই আমার ভুল হয়েছে।
– তোর আরো অনেক ভুল হয়েছে
– আমি জানি আমার অনেক ভুল হয়েছে। আমার মাথা ঠিক ছিল না। সকাল থেকে এতসব ঝামেলা গেছে। একদিকে সৌরভ ভাই তারপরে শুভর ওইরকম ব্যবহার। হুট করেই আশিক ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে। তারপর আবার ফোন করে রাসেলের এসব বলা। আমি আর মাথায় আর নিতে পারছিলাম না।
– আর সেই ঝালটা তুই দেখালি আশিক ভাইয়ের সঙ্গে?
– না, সেটা না। ওহ! আমি তোকে বোঝাতে পারছি না। আমি ভেবেছিলাম উনি কিছু বলবেন। কিন্তু আমি ভাবতেও পারিনি যে উনি কিছু না বলে আমার সঙ্গে কথা না বলে এভাবে থাকবেন। বাসাতেও আসছে না।
– ভালো করেছে। আমি হলেও আসতাম না।
– তুই যে খুব ওকালতি করছিস? তোর প্রেম এখনো যায়নি?
– ফালতু কথা বলবি না। বান্ধবীর জামাইয়ের সঙ্গে প্রেম করবো এমন দিন আমার আসেনি। তাছাড়া তুই জানিস আমি এঙ্গেজড। তুই ভুল করেছিস তোর এটা ফিক্স করা উচিত। তাই বলছি।
– বুঝতে পারছি না আমার কি করা উচিত। উনি তো আমার সঙ্গে কথাই বলছেন না।
– আমি বলছি কি করবি
– কি?
-সোজা গিয়ে পা চেপে ধর
– ফালতু কথা কম বল
টুম্পা হাসতে হাসতে বললো
– তাহলে এক কাজ কর বুকে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়
– অসহ্য! তুই ঠিকমতো কথা বলতে পারিস না?
– আরে আমি তো আরেক কাঠি বেশি বলতে চেয়েছিলাম। ঝাঁপিয়ে পড়ে কি করবি সেটা তো বললামই না
– মুখ বন্ধ রাখ। তোর সঙ্গে কথা বলতে আসাই আমার ভুল হয়েছে।
টুম্পা হটাৎ অন্যরকম গলায় বলল
– আমাকে একটা কথা বল মীরা, আশিক ভাই এর ব্যাপারে তুই এতটা রিয়াক্ট করলি কেন? এতটা তো তুই তখনও করিসনি যখন শুভ তোর সঙ্গে বেইমানি করল।
– কারন আমি ওনাকে অসম্ভব বিশ্বাস করি। অনেক বেশি শ্রদ্ধা করি।
– কি অদ্ভুত ব্যাপার। যাকে আমরা ভালোবাসি শ্রদ্ধা করি, বিশ্বাস করি তার সামান্য ভুল আমরা ক্ষমা করতে পারি না, অথচ খারাপ মানুষগুলো যা ইচ্ছা করছে তাতে আমাদের কিছু যায় আসেই না
– তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না
টুম্পা একটু ম্লান হাসলো, তারপর বলল -আশিক ভাইকে তুই এত পছন্দ করিস, তোর কারনে উনি কষ্ট পাচ্ছে ভেবে তুইও কষ্ট পাচ্ছিস। ওনার সঙ্গে কথা বল।
মীরা জবাব দিল না। তবে ওর মনের অস্থিরতা কমলো না।
মীরা ঘড়ি দেখল। বেলা আড়াইটা বাজে। কাল আশিকের অফিস থেকে ফিরে সারা দুপুর সারা বিকেল ওর জন্য অপেক্ষা করেছে। সন্ধ্যে থেকে অনেক বৃষ্টি নেমেছিল, রাতের দিকে তুমুল ঝড় শুরু হয়। মীরার খুব ভয় করছিল ও আশিককে ফোন করেছিল। ওর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিল বলে আরিফ সাহেবের কাছে জানতে চেয়েছিল। আরিফ সাহেব ওকে নিশ্চিন্ত করে বলেছিলেন যে আশিক প্রেসে আছে। আজকে রাতেই কাজগুলো শেষ করতে হবে, তাই দেরি হচ্ছে। তবু মীরার অস্থিরতা কমেনি। সারারাত ঘুমাতে পারেনি। টুম্পাকে মেসেজ করে বলেছে এগারোটার বদলে নটায় আসতে ওর সঙ্গে জরুরী কথা আছে। মীরা ভেবেছিল কারো সঙ্গে কথা বললে হয়তো মনের অস্থিরতা কমবে কিন্তু এতক্ষণ ধরে টুম্পার সাথে কথা বলার পরও অস্থিরতা একটুও কমেনি, বরং বেড়েছে। একটা সময় ও বুঝতে পারল ওর মনের ঝড় থামবে শুধুমাত্র আশিকের সঙ্গে কথা বললে, তার আগে নয়।

৪৩.
ঘরে ঢুকে মিরা চমকে গেল। কম্বলমুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে আশিক। ওর সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে। মীরা হাতের ব্যাগ ফেলে দৌড়ে গেল। কপালে হাত রেখে চমকে উঠলো। শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক রকম বেশি । মীরা ভীত কন্ঠে হলো
-কি হয়েছে আপনার ?
আশিক জবাব দিল না মিরা দৌড়ে সিঁড়ির কাছে গিয়ে রোজিনা আর আফসিনকে ডাকলো। দ্রুতই এলো দুজন। মীরা ভয় পাওয়া কন্ঠে বলল
-আফসিন তোমার ভাইয়ার অনেক জ্বর। উনি এরকম করছেন কেন?

রোজিনা কিংবা আফসিনকে খুব একটা উদ্বিগ্ন মনে হলো না। আফসিন বলল
– ভাইয়ার জ্বর উঠলে এরকমই হয় ভাবী। তুমি চিন্তা করো না

মিরা এক মুহূর্ত থমকালো, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে আত্নবিশ্বাসী কণ্ঠে বললো

-আফসিন তুমি ডাক্তারকে ফোন করো আর রোজিনা বাটিতে ঠান্ডা পানি আর একটা গ্লাসে বরফ নিয়ে আসো।
দুজনেই একটু অবাক হল, তবে কেউ কিছু বলল না। যে যার কাজে চলে গেল। মীরা বাড়ির বড় মেয়ে। এই কাজগুলো ওর মধ্যে সহজাতভাবেই আসে। বাড়িতেও কারো জ্বর হলে ওই সামলাত। মা কেমন যেন দিশাহারা হয়ে যেত সে সময়।

মীরা দরজার কাছ থেকে ফিরে এসে আশিকের কপালে হাত রাখল, তারপর আস্তে আস্তে বলল -শুনুন
আশিক চোখ মেলে তাকালো। ওর চোখ রক্তবর্ণ হয়ে আছে। এক মুহূর্ত চোখ মেলেই আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল। আলোটা খুব ঝাঁঝালো। মিরা ঘরের পর্দাগুলো টেনে দিল। তারপর ফিরে এসে আবার ওর কপালে হাত রেখে বলল
এখন ঠিক আছে?
আশিক একটা হাত দিয়ে কপালের উপর রাখা মীরার হাতটা ধরে বলল
– তুমি কোথায় চলে গেছিলে?
মীরার বুকের ভেতরটা ছলকে উঠল। শিওরের কাছে বসে বলল
-কোথাও যাইনি। এই তো আমি।
আশিক হঠাৎ অদ্ভুত একটা কাজ করলো, মীরার কোলের মধ্যে মাথাটা তুলে দিয়ে বলল
– আর কখনো কোথাও চলে যেও না
মীরা একটু দিশেহারা বোধ করল। কিছু বলল না। আশিক বলেই যাচ্ছে

-আমি, আমি আর কখনো এরকম করবো না। এখন থেকে তোমার সব কথা শুনবো। তবু চলে যেও না। তুমি না থাকলে আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না মা।

মীরা চমকে উঠলো। আশিক ওকে চিনতে পারেনি। জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছে। ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলছে।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here