গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী #Maisha_jannat_nura(লেখিকা) #পর্ব_৫

0
338

#গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী
#Maisha_jannat_nura(লেখিকা)
#পর্ব_৫

একদিকে তীব্রের অপারেশন অন্যদিকে দাদুর অসুস্থতা তৃপ্তি কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, ও কি এখনও হাসপাতালে থাকবে নাকি চলে যাবে এখান থেকে, বড় দ্বিধায় পড়ে গেছে সে। একটু আগেও এদের কাওকেই চিনতো না সে এই অল্প সময়েই কি থেকে কি হয়ে গেলো এসব ভাবতে ভাবতেই লক্ষ্য করলো অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসছেন। তৃপ্তি উঠে ডাক্তারের কাছে যায় আর বলে..

-উনার কি অবস্থা ডাক্তার? উনি সুস্থ হয়ে যাবেন তো? (অজানা ভয় তৃপ্তির মুখ জুড়ে বিরাজ করছে)

-অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে, কিন্তু.. (চিন্তিত কন্ঠে)

ডাক্তারের দিকে তৃপ্তি নিজের দৃষ্টি স্থির করে প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে বললো
-কিন্তু কি ডাক্তার?

-ওনার শরীরে ক্ষত এর পরিমাণ অনেক বেশি, সুস্থ হতে যথেষ্ট সময় লাগবে। ওনাকে সঠিকভাবে দেখাশোনা করা সময় মতো খাবার খাওয়ানো ঔষধ দেওয়া এগুলোর দিকে খুবই যত্নশীল হতে হবে তাহলেই সম্ভব ওনাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা (ডাক্তার)

-আর কোনো সমস্যা নেই তো? (তৃপ্তি)
-না আর কোনো সমস্যা নেই, আপনি ওনার স্ত্রী তো! কাইন্ডলি ওনার খেয়াল রাখবেন ঠিকভাবে, আমি আসছি (ডাক্তার)।

বলেই ডাক্তার তৃপ্তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সেখান থেকে চলে গেলেন, তৃপ্তি চোখ বড়বড় করে ডাক্তারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো আর বিরবির করে বললো..

-ডাক্তার বেডা কি বলে গেলো, আমি ওনার বউ! এ্যাহহহহহ… উফফ আল্লাহ আমি পাগল হয়ে যাবো।

তখনি হঠাৎ একজন মধ্য বয়স্ক লোক দ্রুততার সাথে তৃপ্তির কাছে এসে উত্তেজিত কন্ঠে তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো..

-ম্যাডাম, বড় সাহেবের সেন্স ফিরেছে, উনি খুব ছটফট করছেন ছোট সাহেবের কাছে যাবেন জন্য আমরা কেও তাকে সামলাতে পারছি না আপনি একটু আসবেন প্লিজ।

-আচ্ছা চলুন আমি দেখছি (তৃপ্তি)

তৃপ্তি রুমে প্রবেশ করতেই লক্ষ্য করে আইসিইউ এর বেড এ বসে ছটছট করছেন আমজাদ চৌধুরী আর তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন বিশালদেহী ৪জন বডিগার্ড, উনি এবার বেশ রাগী কন্ঠে চেঁচিয়ে বললেন

-এই সর তোরা আমি আমার দাদু ভাইয়ের কাছে যাবো।

-স্যার আপনি একটু শান্ত হোন বসের সাথে এখন কাওকে দেখা করতে দিবেন না ডাক্তার (পাশ থেকে একজন বডিগার্ড আমজাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বললেন)

-আমি কোনো কথা শুনতে চাই না, আমি এখনি যাবো আমার দাদু ভাইয়ের সাথে দেখা করতে, তোরা সরবি সামনে থেকে নাকি আমার লাঠির বাড়ি খাবি? (আমজাদ চৌধুরী)

বলেই পাশ থেকে দাদু তার লাঠিটা উঠিয়ে নিলেন, তৃপ্তি আর দূরে দাড়িয়ে না থেকে দৌড়ে আমজাদ চৌধুরীর কাছে চলে আসে আর বলে..

-আরে আরে দাদু দাদু.. করছেন কি! লেগে যাবে তো।

-লাগুক (অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে),, আমি তো তখন থেকে ওদের আমার সামনে থেকে সরে যেতে বলছি কিন্তু আমার কথা ওরা শুনছে না, ওরা এতো অবাধ্য হয়ে গেছে ওদের জন্য আমার লাঠির বারি যথেষ্ট।

-তোমার নাতীর অপারেশন মাত্র শেষ হয়েছে একটু পর বেড এ সিফট করবে, আগামী ২ ঘন্টা সেখানে কারোর যাওয়ার পারমিশন নেই, উনি এখন ভালো আছেন আর ডাক্তার বলেছেন উনাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে তাই উনি এখন ঘুমাবেন। আপনি যদি এখন এভাবে জেদ করেন ওনার সাথে দেখা করার জন্য তাহলে কিভাবে হবে বলুন তো, আপনি এমন উত্তেজিত অবস্থায় উনার কাছে গেলে উনার উপর আরো বেশি প্রেসার পড়বে যা এই মুহূর্তে ওনার জন্য ঠিক হবে না।

তৃপ্তির কথাগুলো শুনে আমজাদ চৌধুরী শান্ত হয়ে যান, আর বলেন..

-ডাক্তারকে বলে দিও তাদের বলে দেওয়া সময় শেষ হয়ে গেলে, আমাকে যেন দাদু ভাইয়ের সাথে দেখা করতে দেয়।

-আচ্ছা ঠিক আছে দাদু, আপনি এখন একটু রেস্ট করুন আপনার শরীরের অবস্থা ও খারাপ ছিলো একটু আগে (তৃপ্তি)

-আমার কিছু হয় নি (ভেঙচি কেটে) আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, আমার দাদু ভাইয়ের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত আমার একটু বসেও শান্তি হবে না (আমজাদ চৌধুরী)

তৃপ্তি আর কিছু না বলে বিছানার পাশে রাখা চেয়ারে বসে পরে।কিছুসময় এভসবেই চুপ থাকার পর আমজাদ চৌধুরী তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-এতো ঝামেলার মাঝে তো তোমার সাথে পরিচয় হওয়াই হলো না, আজ তোমার জন্য আমি আমার দাদুভাইকে ফিরে পেয়েছি, তোমার নাম কি দিদিভাই? কোথায় থাকো তুমি? তোমার বাবা কি করেন?

আমজাদ চৌধুরীর প্রশ্নে তৃপ্তির মুখ ভার হয়ে যায়, কি বলবে সে তার তো একুল ওকূল জুড়ে আপন বলতে কেও নেই আর না আছে থাকার জায়গা। তৃপ্তিকে চুপ থাকতে দেখে আমজাদ চৌধুরী তার উৎসুক দৃষ্টি তৃপ্তির দিকে স্থির করেন প্রশ্নসিক্ত
কন্ঠে বলেন..

-কি হয়েছে দিদিভাই? তুমি এভাবে মাথা নিচু করে মুখ ভার করে আছো কেন? আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর ও দিলে না!

-আমার নাম তৃপ্তি, আমার বাবা-মা ১ বছর আগে এক্সিডেন্টে মারা গেছেন দাদু (চোখ দিয়ে বাধাহীন ভাবে পানি পড়ছে তৃপ্তির) এই অচেনা শহরজুড়ে আমার কোনো আপনজন নেই তাই আমার থাকার কোনো জায়গা নেই।

স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমজাদ চৌধুরী তৃপ্তির দিকে,এতো অল্প বয়সেই মেয়েটা তার বাবা মা, নিজের আশ্রয়ের জায়গা ও হারিয়েছে। আমজাদ চৌধুরী ইশারা করে সব গার্ডদের রুম থেকে চলে যেতে বললেন, মুহূর্তেই গার্ডরা রুম থেকে চলে গেলেন। এরপর আমজাদ চৌধুরী নরম কন্ঠে তৃপ্তিকে জিঙ্গাসা করেন..

-গত ১ বছর কোথায় ছিলে তুমি?

তৃপ্তি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অতীতের সব কথা আমজাদ চৌধুরীকে বলে, সবশুনে আমজাদ চৌধুরী যেন রাগে সম্পূর্ণ শরীর জ্বলছে মানুষ এতোটা নীচু স্বভাব ও মানসিকতার কিভাবে হতে পারে! এদের মতো মানুষদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি প্রাপ্য, এমন মানসিকতার মানুষদের জন্য আমাদের দেশে অনেক মেয়েরা বেচে থাকার কোনো দিশা খুজে না পেয়ে অল্প বয়সে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে আত্নহত্যা করেন। আমজাদ চৌধুরী নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে তৃপ্তির মাথায় হাত রেখে বলেন..

-দিদিভাই তুই কখনও এটা ভাবিস না যে তোর কেও নেই, তোর কোথাও থাকার আশ্রয় নেই, তোর জন্য এই বুড়ো দাদু আছে আর এই বুড়োর বিশাল বাড়ি ও আছে তুই এখন থেকে আমাদের সাথে সেখানে থাকবি।

তৃপ্তি মাথা তুলে ছলছল দৃষ্টিতে আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে, কি বলবে বুঝতে পারছে না, আমজাদ চৌধুরী আবারও বলেন..

-আজ তোর জন্য আমি আমার দাদু ভাইয়ের জীবন পেরেছি, তোর এই একাকিত্ব সময়ে তোকে একা ছেড়ে দিতে পারি না তুই আমার নাতনী হয়ে থাকবি আমাদের সাথে, ভয় পাস না দিদিভাই তোর অতীতের ঐ মানুষগুলোর মতো আমাদের বাড়ির মানুষগুলো এতো খারাপ না, সবাই অনেক ভালো।

তৃপ্তি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে..
-বাড়িতে কে কে আছেন দাদু?

-আমার ২ ছেলে, বউমা, তীব্র সহ একজন নাতি আর ২ জন নাতনী এখন তুই সহ আমার ৩জন নাতনী হয়ে গেলো, হ্যা আরেকজন বাদ পড়ে গেছে।

-কে? (প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে জিঙ্গাসা করে তৃপ্তি)

-আমার রাগী বউ, আজ আমার রক্ষে থাকবে না তার হাত থেকে দিদি ভাই।

-কেন দাদু? (অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

-তীব্রের খোজ পেয়েছি, ওর এতোটা ইন্জুরি হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে আমি বাড়িতে কাওকে কিছু জানাই নি এখনও, ওর দাদীমা তো মনে হয় এতোক্ষণে চিন্তায় চিন্তায় মনে মনে বকা দিয়ে আমার পিন্ডি চটকাচ্ছেন।

তৃপ্তি এবার শব্দ করেই হেসে দেয়, তৃপ্তির হাসে দেখে আমজাদ চৌধুরী ও হেসে দেন আর বলেন..

-মাশাআল্লাহ, হাসলে তো আমার দিদিভাইকে অনেক সুন্দর দেখায়।

তৃপ্তি হাসি থামিয়ে বলে..
-এই যে বুড়ো তাড়াতাড়ি দাদীমা কে ফোন করে ওনার খবর দাও নয়তো বাড়ি ফিরলে দাদীর হাতে খন্তের বারি খেতে হবে তোমাকে (বলে আবারও হেসে দেয়)

আমজাদ চৌধুরী একটু মুখ গোমড়া করে ন্যাকা কান্না ভাব নিয়ে বলে..
-আমার তো ভয় করছে, ফোন দিতেই না জানি ওপাশ থেকে কি রিয়েকশন আসবে!

-ওনারা সবাই অনেক চিন্তা করছেন হয়তো ওনাকে নিয়ে, তুমি তাড়াতাড়ি কল করে ওদের জানিয়ে দাও উনি সুস্থ আছেন আগামীকাল সকালে যেন সবাই হাসপাতালে চলে আসেন ওনার সাথে দেখা করতে।

আমজাদ চৌধুরী ও তৃপ্তি কথা অনুযায়ী কাজ করে বাড়িতে ফোন করে সবটা জানিয়ে দেয়, দেরিতে খবর দেওয়ার জন্য বকা শুনতে হলেও এখন সব ঠিকঠাক আছে।

আমজাদ চৌধুরী আর তৃপ্তি গল্প করছিলো তখন একজন নার্স ভিতরে প্রবেশ করেন আর বলেন..

-রুম নাম্বার ২০৯ এর রোগী তীব্র চৌধুরীর বাড়ির লোক তো আপনারাই , ওনার সেন্স ফিরেছে আপনারা এখন ওনার সাথে দেখা করতে পারেন, তবে বেশি সময়ের জন্য না, রোগীকে উত্তেজিত করবেন না আর বেশি কথা বলতে দিবেন না।

-আচ্ছা ঠিক আছে (তৃপ্তি)
নার্স চলে যায়, তৃপ্তি আমজাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-এতো সময় তো নাতীকে দেখার জন্য কথা বলার জন্য ছটফট করছিলে এখন চলো দেখা করবে।

-হুম চল (আমজাদ চৌধুরী)

তৃপ্তি আর আমজাদ চৌধুরী তীব্রের কেবিনের উদ্দেশ্যে হাটা ধরে…

একটুপর………

#চলবে….

[বি-দ্রঃ আগামীকালের পর্ব থেকে শুরু হবে আসল ধামাকা। সবার থেকে একটু গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি, ধন্যবাদ সবাইকে, হ্যাপি রিডিং আসসালামু আলাইকুম ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here