বইছে আবার চৈতী হাওয়া ৬০

0
342

বইছে আবার চৈতী হাওয়া
৬০

-তুমি আমাকে বারবার ফোন দিচ্ছ কেন শুভ?
-কারন তুমি ফোন কেটে দিচ্ছ। কথা না বললে তো আবার ফোন দিতেই হবে। তাই না?
-কেটে দিচ্ছি তার মানে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী না, এই সহজ ব্যপারটা বুঝতে পারছ না?
-ও। আমি ভেবেছিলাম হয়ত আশিক আশেপাশে আছে তাই ফোন কেটে দিচ্ছ।

মীরা একটু ক্ষণ চুপ করে রইল। কথাটা একেবারে মিথ্যা ও নয়। যে কবার ও ফোন দিয়েছে আশিক কাছেই ছিল, অবশ্য না থাকলেও ও আর শুভর সঙ্গে কথা বলতে চায় না। মীরাকে চুপ করে থাকতে দেখে শুভ বলল
-আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই
-কেন?
-জরুরী কিছু কথা আছে
-তোমার সঙ্গে আমার কোন কথা নেই।
-তোমার নেই কিন্ত আমার আছে। কথা বলতে চাইছ না কেন? আশিক কি আশে পাশে আছে?
-না
মীরা সত্যি কথাটাই বলল। বাড়িতে কেউই নেই। আশিক ওর অফিসে, আরিফ সাহেব কোর্টে গেছেন। রোজিনা আর আফসিন মিলে কেনাকাটা করতে গেছে। মীরা রান্না বসিয়েছিল এর মধেই ফোনটা এসেছে।
-গুড। না থাকলেই ভাল।
মীরা ভুরু কুচকে বলল
-সমস্যা কি তোমার? কি চাও এতদিন পর?
-আমার সঙ্গে একবার দেখা কর। তুমি সবটা জান না। জানলে এভাবে…
-আমার কিছু জানার দরকার নেই। আমি ফোন রাখছি, আর কখনো আমাকে ফোন করবে না।
-আচ্ছা আচ্ছা, এখন দেখা করতে না চাইলে করো না কিন্তু আমার একটা কথার জবাব দাও
– কি?
-তুমি কেমন আছ?
-হঠাৎ এই প্রশ্ন?
-শুনলাম সেদিন তুমি ক্লাশে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে? আশিক কি তোমার উপর বেশি টর্চার করছে?
মীরার এমন মেজাজ খারাপ হল, মনে হল শুভ হাতের কাছে থাকলে গরম খিচুরির পাতিল ওর মুখে ছুঁড়ে মারত। বহু কষ্টে মাথা ঠান্ডা করে বলল
-সবাই কে নিজের মত ভাব কেন? অবশ্য তোমার কাছ থেকে এরকমটাই আশা করা যায়। একটা কথা খুব ভাল করে শুনে রাখ, ওনার ব্যপারে একটা বাজে কথা ও আমি সহ্য করব না
-উনি টা কে ?
মীরা দতেঁ দাত পিষে বলল
-আশিক ভাই
-এখনো ভাই বল নাকি? যাক ভালই
-মীরার ইচ্ছা হল শুভর গলা টিপে ধরতে। কি যে হয়েছে আজকাল আল্পতেই মেজাজ এত খারাপ হয়ে যায়। মীরাকে চুপ করে থাকতে দেখে শুভ আবার শুরু করল
– শোন, দেখা করে কথা বললে ভাল হতো, কিন্তু তুমি যখন চাইছ না ফোনেই শোন
-কি বিষয়ে?
-সব ওই রাসেল বদমাইশটার জন্য হয়েছে। আমি জেনেছি তোমার আর আশিকের মধ্যে কিছু ছুল না, অ্যান্ড আম শিওর এখনো নেই……
-বাহ, যখন আমাদের মধ্যে কিছু ছিল না তখন তুমি ভাবতে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক আছে আর এখন যখন আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তখন বলছ আমাদের মধ্যে কিছু নেই?
– যদি থাকেও আমার কিছু যায় আসে না।
-মানে?
-তুমি তো আর আশিককে ভালোবাসো না। বিপদে পড়ে বিয়ে করেছিলে। সেদিন আমি যদি রাজি হতাম তাহলে আজকে তুমি আমার কাছে থাকতে।
-তুমি তো রাজি হওনি। আমাকে বিশ্বাস ও করোনি বরং বিচ্ছিরি ভাবে আপমান করেছিলে।কি জানো শুভ, তবু আমি তোমার উপর রাগ করতে পারি না। কেন জান?
-কারন তুমি এখনো আমাকে ভালবাসো
মীরা ম্লান একটু হাসলো, তারপর বলল
-না, কারন আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ। তোমার উপকার আমি কোনদিন ও ভুলব না। সেদিন যদি তুমি তোমার আসল রূপটা না দেখাতে, তাহলে আমি কোনদিন ও উনাকে পেতাম না। কখনো জানতেই পারতাম না ভালবাসা কি।

-শোন মীরা আশিক তোমাকে হিপনোটাইজ করে রেখেছে। তুমি ওর মোহে অন্ধ হয়ে আছো। এইজন্য এসব কথা বলছ। কিন্তু এটা বেশি দিন থাকবে না। তুমি জান না ও সব মেয়েদেরকেই এভাবে……
মীরা ওকে কথা শেষ করতে দিল না, তার আগেই বলল
-তুমি ঠকই বলেছ আমি অন্ধ হয়ে গেছি। ওর ভালবাসায় আমি অন্ধ হয়ে গেছি। এতটাই অন্ধ যে আমার সামনে কেউ ওর ব্যপারে খারাপ কিছু বললে আমি তাকে খুন করে ফেলতে ও দ্বিধা করব না।

শুভ একটু থমকালো। হঠাৎ করে বলার মতো কিছু খুজে পেল না। মীরা থেমে থেমে বলল
-তুমি আর কক্ষনো আমাকে ফোন করবে না কিংবা আমাদের মাঝখানে আসার চেষ্টা করবে না।
– মীরা তুমি বুঝতে পারছো না, একবার দেখা করো আমি তোমার সব ভুল ভঙ্গিয়ে
দেব, আমি…
-শুভ, আমাকে বাধ্য করো না। আমি যদি ওকে জানাই তুমি কি করছো, তারপর তোমার কি হবে তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারবো না।
-মীরা……
-আর একটা কথা ও না। শেষ বার বলছি আর আমাকে ফোন করবে না।

মীরা ফোন রেখে হাপাতে লাগল। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। চুলা বন্ধ করে দিল ও। খিচুড়ি সেদ্ধ হয়ে গেছে, মাংসটাও বোধহয় তলা দিয়ে ধরে গেছে।

রান্নাঘরে বসার মত কিছু নেই। মীরা আস্তে আস্তে হেটে ডাইনিং রুমে চলে গেল। চেয়ারটা টেনে বসার শক্তি ও নেই। কি যে হয়েছে আজকাল, এত দুর্বল লাগে। হাতের মুঠোয় ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। এই ছেলেটার কি কোন সেন্স নেই। এতবার বলার পরেও ফোন করেই যাচ্ছে। মীরা ফোন কানে ঠেকিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বলল
-কি ব্যপার? আর কতবার নিষেধ করব ফোন করতে?
-মীরা, কি হয়েছে?
মীরা চমকে উঠে বলল
-আপনি?
-তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ লাগছে?
-না আমি ঠিক আছি।
-খেয়েছ দুপুরে?
-না, ভেবেছিলাম আপনার ওখানে খাবার নিয়ে যাব তখন একসাথে খাব কিন্তু গাড়ি এখনো ফেরেনি।
-তুমি কি বাসাইয় একা?
-হ্যাঁ
-সেকি! আচ্ছা ঠিক আছে আমি চলে আসছি
-না না। কাল তো আপনার পরীক্ষা, একবারে পড়া শেষ করে রাতে আসুন। আমি আসছি খাবার নিয়ে
-একদম না। ডাক্তার তোমাকে রেস্ট নিতে বলেছেন না। তুমি একেবারেই কথা শোন না। তুমি বাসা থেকে বের হবে না। আমি এখনি আসছি।
-না শুনুন…
আশিক শুনল না। ফোন রেখে দিল । ও কেমন অস্থির হয়ে যায়। মীরা ওর পরীক্ষার মধ্যে যেতে চায়নি তবু জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। দুই ঘন্টা বসে থেকে তবে ডাক্তার দেখাতে পেরেছে। কতটা সময় নস্ট হল পরীক্ষার আগের দিন। তাতেও যদি শেষ হত, ডাক্তার একগাদা টেস্ট দিল। পরদিন আবার ওকে নিয়ে গেল সেগুলির জন্য। মীরার কেন যেন ভাল লাগছিল না। এত টেস্ট কেন করতে হবে? ওর যদি খারাপ কিছু হয় আশিক নিতে পারবে তো।

মীরাকে অবাক করে দিয়ে আশিক পনের মিনিটের মধ্যে বাসায় চলে এল। মীরা তখন সবে গোসল শেষ করে বেরিয়েছে।আশিক ওকে দেখে থমকে গেল। এত ফ্যকাশে লাগছে কেন? মীরা খেতে ও পারল না ঠিকমত। রাতে ছাড়া ছাড়া ঘুম হল। সকালে ঘুম ভেঙে দেখল আশিক বেরিয়ে গেছে। নোটপ্যডে লিখে রেখে গেছে বাসায় থেকে রেস্ট নিতে, ও আসার সময় টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে আসবে, রাতে সগুলো নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

সকাল থেকেই মীরার খুব অস্থির লাগছিল, ভয় ও,করছিল একটু, তাই আর আশিকে্র জন্য অপেক্ষা করল না, দুপুড় নাগাদ রিক্সা নিয়ে হাসপাতালে চলে গেল। একতলা থেকে রিপোর্ট তুলে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে ফেলল। ইনি আশিকদের পারিবারিক ডাক্তার। ওর জ্বরের সময় বাড়িতে দেখা হয়েছে। সেদিন আশিকের সঙ্গে এসেও দেখিলে গেছে তাই বেশীক্ষণ বসতেঁ হল না। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে যা বললেল মীরা বুঝল না খুশি হবে না ভয় পাবে। শুধু একটা কথাই মনে হল আশিকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব কথা বলতে হবে।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here