বইছে আবার চৈতী হাওয়া ৬৫

0
333

বইছে আবার চৈতী হাওয়া
৬৫

আশিক বসে আছে একেবারে জলের ধার ঘেঁষে। আকাশে মেঘ করে আছে। চাঁদের দেখা নেই। চারিদিকে কেমন বিষণ্ণ আবছা আঁধার। নাকি ওর মনের মধেই এক আকাশ বিষণ্ণতা, বুঝতে পারল না। ওর থেকে একটু দূরে সাত আটজন ছেলেমেয়ে জটলা বেধে বসে গল্প করছে। মাঝে মাঝেই ওদের উচ্চস্বরে হাসির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। অন্য পাশে একজোড়া ছেলে মেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে। গল্প করছে একান্তে। আশেপাশের এত সোরগোল ওদের নিবিড় আলোচনায় ব্যঘাত ঘটাতে পারছে না। আশিক দুই এক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে নিল। আজ সব ঠিক থাকলে এখানে ওর আর মিরার থাকার কথা ছিল।
আশিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রাত বাড়ছে। আশেপাশে কারো মধ্যে কোন তাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সবাই কেমন ঢিলেঢালা আমেজে আছে। মাথা ধরেছে। চা খাওয়া দরকার। মীরার হাতে বানানো চা। কি দারুণ চা করে ও। ধুর! সব কিছুতে কেন যে মীরা এসে যায়? ও বাড়ি ছেড়ে এসেছে দুসপ্তাহ হয়ে গেছে। মীরার ভাবনা থেকে পালাতে এখানে আসা। তবু কি করে যেন সব কিছুতেই মীরাকে মনে পড়ে।
আশিক উঠে দাঁড়াল। হাতের বালি ঝেড়ে সামনে তাকাল। সমুদ্রের সবুজাভ ঢেউ নজরে আসছে। হোটেলে ফিরতে হবে। পরশু রাতে ও সেন্টমারটিন এসে পৌঁছেছে। সেদিন সকালে উঠে কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে এসেছে। মীরা তখন ঘুমে অচেতন। ভালোই হয়েছে। ওকে বিদায় দেয়া কিংবা ওর থেকে বিদায় নেয়া, দুটোর কোনটাই সম্ভব ছিল না আশিকের পক্ষে।
এখানে ও আগে অনেকবার এসেছে। যায়গাটা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আগের সেই অকৃত্রিমতা আর নেই। ভালো লাগে না। তবু কোথাও একটা তো যেতেই হতো। আগে প্রতি বছরই আসতো বন্ধুদের সাথে। বাধা হোটেল ছিল, সেখানেই উঠত। ম্যনেজার থেকে শুরু করে স্টাফ সবাই ওর চেনা। হুটহাট চলে এলে রুম পেতে সমস্যা হতো না। এবার ও ওখানেই উঠেছে।
হাটতে গিয়ে বোতলটা পায়ে বাঁধল। আশিক তাকিয়ে দেখল একবার। তুলে নিল না। আবার বসে পরল আগের জায়গায়। কাল রাতে এটা দিয়ে গেছে। আগে রাসেল সহ এলে ওই জোগাড় করত। রাতে বিচে বসে খেত সবাই। ছেলেটা বোধ হয় চিনেছে ওকে। কাল জানতে চাইছিল লাগবে কিনা। আশিক দিয়ে যেতে বলেছিল। আজ নিয়ে এসেছিল সঙ্গে করে, খোলা হয়েনি এখনো। আশিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল বোতলটার দিকে। এগুলো এখন আর টানে না ওকে। মীরা ওকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে। আশিক বোতল খুলে পুরোটা পানীয় বালিতে ঢেলে দিল। তারপর বোতলটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে শুয়ে পরল। মেঘ কেটে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেছে। মিটি মীটি তারার অস্তিত্ব চোখে পরছে। আশিক চোখ বন্ধ করল তারপর অনুচ্চ স্বরে আবৃত্তি শুরু করল। বলতে বলতে একসময় কেমন নেশা ধরে গেল।
যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে
সে যেন আজ রানীর মত
ব্যক্তিগত রাজ্যপাটে
পা ছড়িয়ে সবার কাছে
বসতে পারে
বলতে পারে মনের কথা
চোখের তারায়
হাত ইশারায়
ঐ যে দেখ দুঃখি প্রেমিক
যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর
ভিক্ষে দিলে ভিক্ষে নেবে
ছিন্ন বাসে শীর্ন দেহে
যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর
কিন্তু শোন প্রজাবৃন্দ
দুঃসময়ে সেই তো ছিলো
বুকের কাছে হৃদয় মাঝে
আজকে তারে দেখলে শুধু
ইচ্ছে করে
চোখের পাতায় অধর রাখি
যে আমাকে প্রেম শেখালো
প্রেম শিখিয়ে চিনিয়েছিলো
দুষ্টু গ্রহ অরুন্ধতী
বৃষ্টি ভেজা চতুর্দশী
জোৎস্না রাতের উজ্জ্বলতা
ভোরের বকুল শুভ্র মালা
নগর নাগর ভদ্র ইতর
রাজার বাড়ি
সেই তো আবার বুঝিয়েছিলো
যাওগো চলে আমায় ছেড়ে
যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে
নিজের দেহে আগুন জ্বেলে
ভেবেছিলাম
নিখাদ সোনা হবোই আমি
শীত বিকেলের টুকরো স্মৃতি
রাখবো ধরে সবার মত
হৃদয় বীণার মোহন তারে
ভুলেই গেলাম
যখন তুমি আমায় ডেকে
বললে শুধু
পথের এখন অনেক বাকি
যাও গো শোভন
যাও গো চলে বহুদুরে
কণ্ঠে আমার অনেক তৃষা
যাও গো চলে আপন পথে
এই না বলেই
হাসলে শুধু করুন ঠোঁটে
বাজলো দুরে শঙ্খ নিনাদ
কাঁদলো আমার বুকের পাথর
কাঁদলো দুরে হাজার তারা
একলা থাকার গভীর রাতে
একলা জাগার তিন প্রহরে
তাইতো বলি সবার কাছে
যে আমাকে দুঃখ দিলো
সে যেন আজ সবার চেয়ে
সুখেই থাকে
যে আমাকে প্রেম শেখালো
প্রেম শিখিয়ে বুকের মাঝে
অনল দিলো
সে যেন আজ সবার চেয়ে
সুখেই থাকে
সুখেই থাকে।।
আশিক চোখ মেলে আশ্চর্য হয়ে গেল। অনেক লোক ঘিরে আছে ওকে চারদিক থেকে। কেউ কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার ভিডিও করছে। চিনেছিস? অই যে কবি, আমি যার পেইজের ফলোয়ার। ওহ! আমার ক্রাশ। এই জাতীয় মন্তব্য ভেসে আসছে আশপাশ থেকে। আশিক তড়িৎ গতিতে উঠে দাড়াল তারপর কোনদিকে না তাকিয়ে হন হন করে হাটা দিল। পেছনে পরে রইল অসংখ্য মুগ্ধ চোখ।
আশিক একটা ঘোরের মধ্যে হাঁটছে। কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছে বহুদিন পর। মীরার কথা খুব মনে পড়ছে। ও ভালো আছে তো? ওর শরীরটা ভাল ছিল না। শুভ পারবে তো সবটা সামলে নিতে? মীরা বড় আযত্ন করে নিজের। রিসেপসান থেকে চাবি নেয়ার সময় টের পেল কেউ একজন কাধে হাত রেখেছে। পেছন ফিরে ও চমকে গেল।
চলবে…………
এতবড় কবিতাটা দেয়ার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু মাকিদ হায়দারের এই কবিতাটা আমার এত প্রিয় যে চেষ্টা করেও কোন লাইন বাদ দিতে পারলাম না। পাঠকেরা বিরক্ত হলে ক্ষমা চাইছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here