সংসারের_সাতকাহন পর্ব ৮

0
184

#সংসারের_সাতকাহন
পর্ব ৮

একা সোনিয়াকে বলে, “আমার ফোনে একটু আগে একটা ফোন এসেছিল। যে ফোন করেছিল তুমি হয়তো তাকে চিনবানা, কিন্তু সে তোমাকে চিনে বলল। সে বলতেছে সাদিক নাকি ড্রাগ এডিক্ট অনেক আগে থেকেই। সেজন্যই সে দেশে আসতোনা, বিয়েও করতে চাইতোনা। আজ কার কাছে নাকি শুনেছে তোমার সাথে সাদিকের বিয়ের কথা হচ্ছে আমার মধ্যস্থতায় তাই আমাকে কল করেছে এই বিয়ে ভেংগে দেয়ার জন্য। তুমি কি বল? সারাজীবনের ব্যাপার এইটা। সব সম্ভাবনাই যাচাই করা উচিৎ আমার মনে হয়।”

সোনিয়া একার হাত ধরে জিজ্ঞেস করে, “… ফোন করেছে?” একা বলে “হ্যাঁ, তুমি কেমনে জানলে?” সোনিয়া বলে তাকে আমি চিনি। সে কোনভাবেই আমার বিয়ে হতে দিবেনা। এর আগেও আপনারা চেষ্টা করেছেন ফল পেয়েছেন কিছু? পান নাই। বড় মসজিদের হুজুরের কাছে গেলেন উনি জ্বীন হাজির করিয়ে বললেন বিয়ে আটকে রেখেছে কেউ। মনে আছে? দেখেন তো হুজুরের বর্ণনার সাথে উনার মিলে কি না? হুজুর উনার বান ছুটানোর তদবীর করার সময় কি বলেছিল ভুলে গেছেন? এই তদবীরের ৩ মাসের মধ্যে আমার বিয়ে হবে আর আমার মন ও ঘুরে যাবে বিয়ের দিকে। আন্টি, সাদিককে আমি এই দুইদিনে যতটুকু দেখেছি তাতে আমার বিশ্বাস হয়না ও ড্রাগ এডিক্ট। আর যদি হয়েও থাকে তাও আমি ওকে বিয়ে করব। আমার ভালোবাসা দিয়েই ওকে ভালো করব। ভালো যদি না করতে পারি তাহলে বুঝব আমার কপালে এই ছিল। তাও আমি ঐ মহিলার ফোনে বিয়ে ভাংব না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সে মিথ্যা বলছে। আমি বিশ্বাস করিনা তার এক বর্ণও।”

সোনিয়ার কথা শুনে একা বলে, “ড্রইং রুমে তো সাইফ আছে, আমি ওকে জিজ্ঞেস করি।” এই কথা বলে একা রুম থেকে বের হতেই ওর হাসবেন্ড ওকে জিজ্ঞেস করে কি হইছে? একা ওর হাসবেন্ডকে সব খুলে বলে। ওর হাসবেন্ড ওকে দেয় এক ধমক। বলে “সাদিককে দেখে কোন পাগলেও বলবেনা সে ড্রাগ এডিক্ট। যার এডিকশন থাকে সে কোন মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেনা। তুমিই না বললে সোনিয়াকে দেখে যাওয়ার পর থেকে ও বিয়ের জন্য অস্থির হয়ে গেছে। ও যদি সত্যিই ড্রাগ এডিক্ট হত তাহলে সোনিয়াকে নিয়ে ওর কোন ফিলিংসই জাগত না। এইসব কথা তুমি ভাই ভাবীকে জানাইওনা, উনারা অযথা টেনশন করবেন।”

হাসবেন্ডের কথা শুনে একার জানে পানি আসে। এদিকে পাশের রুমে চলে আরেক ধুন্দুমার কান্ড। পাশের রুমে বিয়ের ব্যাপারে একবার সোনিয়ার চাচারা রাজি হয় তো মামারা হয়না, একবার মামারা রাজি হয়তো চাচারা হয়না। ওর মামারা চায় আরেকটু খোঁজ খবর নিয়ে বিয়ে দিতে, ওর চাচারা বলে আপনাদেরই এলাকার ছেলে তারপরও আপনারা খোঁজ খবর আরো নিতে চান? সবাই মুটামুটি রাজি হলেও সোনিয়ার এক মামা বলে আমরা আরো খোঁজ নেব, দরকার হয় সামনের মাসে বিয়েটা হবে।সাদিকের দুলাভাই জানায় সামনের মাসেই সাদিকের ছুটি শেষ, সাদিক চলে যাবে। তখন সোনিয়ার মামা ওকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে বলে, “আমরা সাদিকের ব্যাপারে আরো খোঁজ নিতে চাই, আমার কাছে একটা ফোন আসছে সে নাকি ড্রাগ এডিক্ট। আমরা তো কোন ড্রাগ এডিক্টের কাছে মেয়ে দেবনা। তুমি কি বল?” উত্তরে সোনিয়া বলে, “মামা আমার বিয়ের বয়স আজ নতুন করে হয়নি। অনেকদিন ধরেই আম্মু সবাইকে বলছে বিয়ের কথা, কেউ গায়ে লাগান নাই। একা আন্টি পরের মেয়ে হয়েও আমার বিয়ের জন্য যা করছেন তা নিজের কেউই করেনা। সাদিক ড্রাগ এডিক্ট সেই ফোন আমার কাছেও এসেছিল। সত্যিই যদি হয়েই থাকে ড্রাগ এডিক্ট তাহলে বুঝব আমার কপালের দোষ। এখন আমার পুরো হাতে পায়ে মেহেদী লাগানো হয়েছে, এখন যদি আপনারা আমার বিয়ে ভেংগে দিতে চান তাহলে আমি বিষ খাবো। পারবেন সেটা সহ্য করতে?”

সোনিয়ার মামা ওর উত্তর শুনে স্তব্ধ হয়ে যান। জাস্ট একটা কথা বলেন, “পরে আমাদের বলতে পারবেনা যে মামা আপনারা খোঁজ খবর নিলেন না। তুমি যদি নিজে সব জেনে বিয়ে করতে চাও তাহলে আমাদের কি আপত্তি?” ভাগ্নির এমন উদ্ধত জবাব শুনে একটু মন খারাপ করেই ওর মামা ফেরত যায়। পাশের রুমে গিয়ে বলে ঠিক আছে কালই বিয়ের আয়োজন করুন। তারপর কথা শুরু হয় দেনমোহর নিয়ে। সাদিকেরা চায় ২০ হাজার টাকা দেনমোহর করে একেবারেই উসুল করতে। কিন্তু সোনিয়ার মামাচাচারা কেউই ৫ লাখের নিচে দেনমোহরে রাজি না। পরে সাদিকের দুলাইভাইয়ের মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত হয় ২ লাখ টাকা মোহরানা হবে। ফাইনাল করার আগে একার হাসবেন্ড সোনিয়াকে ডেকে জানতে চায় ওর মত কি? সোনিয়া উত্তরে বলে, “আংকেল আমরা বিয়ে করতে চাই একসাথে জীবন কাটানোর জন্য। এখানে ভবিষ্যতের কোন নিরাপত্তার কথা হচ্ছে আমি বুঝতেছিনা। যদি সাদিকের সাথে আমার সংসার না হয় তাহলে কি ওর টাকা নিলেই আমি সুখে থাকব?” এই কথা শুনে উনি খুশি হন, বলেন তোমার থেকে এমন কথাই আশা করছিলাম মা।

কিন্তু পরদিন বিয়ে হওয়া নিয়ে সোনিয়ার মামারা আর দেনমোহরের সিদ্ধান্ত নিয়ে সোনিয়ার চাচারা ওর উপর অসন্তুষ্ট হন। সব কথা ঠিক হলে সাইফদের খাবার পরিবেশন করা হলে সাদিকের বাবা জানান আগে উনি মেয়ে দেখে আংটি পরাবেন তারপর খাবেন। সোনিয়াকে আনা হয় ওর হবু শ্বশুরের সামনে, সাদিকের বাবা সোনিয়াকে দেখেই বলে উঠেন “আরে তোমাকে তো আমি আগে অনেক দেখেছি। মনে মনে ভাবতাম এমন যদি আমার ছেলের বউ হত। দেখ আল্লাহ আমার ডাক শুনেছেন। দাও মা হাত দাও।” সোনিয়া ডান হাত এগিয়ে দিলে উনি সোনিয়াকে একটা আংটি পরিয়ে দেন। সবাই মিলে দুয়া করে তখন। তারপর সাদিকের বাবারা খেয়ে বের হয়ে যান, পরদিন জুমা নামাজের পরে বরযাত্রী আনবেন জানিয়ে।

সোনিয়া ভিতরের রুমে এসেই সাদিককে ফোন করে জানায় আংটির কথা। এরমধ্যে সন্ধ্যার পর থেকে যা যা ঘটছিল তার সবই সাদিক আপডেট নিচ্ছিল সাইফ, একা আর সোনিয়াকে ফোন দিয়ে দিয়ে। বিয়ে পেছানোর কথা শুনে খুব অস্থির হয়ে যায় সাদিক, তখন সোনিয়া ওকে আশ্বাস দেয় আমি আছিতো, চিন্তা করিওনা।

পরদিন দুপুরে বিয়ে। সোনিয়ার ইচ্ছে ছিল একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠবে কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনা। ওর মামাতো বোন বাসা থেকে একটু হলুদ বেটে আনে। ওদের কথা যতই অনাড়ম্বর বিয়ে হোক, আমাদের বোন হলুদ না ছুঁয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবে? একা পার্লারে কথা বলেছে, ওকে সকাল ১০টার মধ্যে নিয়ে যেতে বলেছে। সকালে ৯টার দিকে সোনিয়ার চাচা, বাবা, নানী, মা, মামী ও বোনেরা একটু করে ওর কপালে হলুদ ছুঁইয়ে দেয়। সোনিয়া গোছল করতে গেলে সাদিকদের বাসা থেকে স্যুটকেস নিয়ে আসে। সোনিয়া তারাতাড়ি বের হয়ে ওদের সাথে কথা বলে বিদায় দিয়ে একার সাথে পার্লারে চলে যায়।

এদিকে তখনও বাসর সাজানোর কোনও ঠিক ঠিকানা নাই। তখন সোনিয়া ওর পরিচিত এক ছেলেকে ডেকে দায়িত্ব দেয়। সে সোনিয়ার কাছে সব জেনে নিয়ে ঘর সাজানোর ব্যবস্থা করে। বাসর যেহেতু সোনিয়াদের এখানেই হয়েছে তাই এই চিন্তাটাও ওদের। একা ওর বেডরুম ছেড়ে দিতে চায় বাসর সাজানোর জন্য কিন্তু সোনিয়া রাজি হয়না। পরে আরেকটা এটাচ বাথরুম ওয়ালা রুমে সাজানো হয় সোনিয়ার বাসর।

সোনিয়া পার্লারে গিয়ে খেয়াল করে সকাল থেকে সাদিক একবারেও ওকে কল দেয়নি। ব্যাপারটা একাকে জানাতেই একা সাদিককে কল দিতে বলে। সোনিয়া কল দিলে রিসিভ করে রাদিক। একটু দুষ্টামি করে বলে ভাইয়া বলেছে আজ একেবারে বউয়ের সাথেই কথা বলবে, পরনারীর সাথে না। রাদিকের কাছেই জানতে পারে ওরা সবাই মিলে আয়োজন করে সাদিকের গায়ে হলুদ করছে। তখন সোনিয়ার একটু হলেও মন খারাপ হয়। ওর বিয়ের ব্যাপারে মাত্র ৩টা স্বপ্ন ছিল – হলুদের অনুষ্ঠান, পার্লারে বউ সাজা আর কাঁচা ফুল দিয়ে বাসর সাজানো। হলুদ যে হবেনা সেটা আগেই বুঝেছে ও, পার্লারে সাজাটাও অনিশ্চিত ছিল। সাদিক আর সোনিয়ার মা দুজনেই মানা করেছিল। কিন্তু সোনিয়ার শখের কথা শুনে সাদিক আর না করেনি। আর বাসর সাজানোর ব্যবস্থা তো সোনিয়া নিজেই করে।

পার্লার থেকে ফেরার পরে আরেক কাহিনী……..
#সংসারের_সাতকাহন
পর্ব ৮
©সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here