সংসারের_সাতকাহন শেষ পর্ব

0
202

#সংসারের_সাতকাহন
শেষ পর্ব

সোনিয়ার সামনে থেকে মাংসের বাটি তুলে নেয়ায় অবাক হয়ে যায় সোনিয়া। ওর অবাক হবার রেশ না কাটতেই আরেক বাটি হাঁসের মাংস এনে ওর সামনে দেয় মালা। বলে, “ভাবি ঝাল খেতে পারেনা, খালাম্মা বলে দিয়েছেন। তাই আমি ভাবির জন্য আলাদা করে ঝালছাড়া রান্না করে তুলে রেখেছি।” কথাটা শুনেই মন ভরে যায় সোনিয়ার, ভাবে আসলে সব কিছুই আপাতদৃষ্টিতে যা দেখা যায় তা হয়না। পজিটিভ ভাবে ভাবলে সবই পজিটিভ রেজাল্ট আনে।

খাওয়া দাওয়া শেষে মোস্তারি বেগম ছেলে আর ছেলের বউকে রুমে পাঠিয়ে দেন। ওরা ঘরে আসার প্রায় সাথে সাথেই চা নিয়ে ঘরে ঢুকে মালা। সোনিয়ার হাতে চা দিয়ে আবারও আসে একটা এরোসল স্প্রে আর কয়েল হাতে নিয়ে। বলে, “সাদিক মশারিতে থাকতে পারেনা ভাবি। তাই স্প্রে কয়েল দুইটাই রেখে গেলাম যেটা সুবিধা হয় ব্যবহার করিও।”

সোনিয়া চা শেষ করার পরে সাদিক বলে চল বাইরে একটু হেঁটে আসি। সোনিয়াও রাজি হয়। বাইরে গিয়ে ওরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকে, টুকটাক গল্প করে। সাদিক বলে, “জানো আমি কখনও কোন মেয়ের দিকে তাকাতাম না, কারও সাথে কথা বলার ইচ্ছে হতনা। আমার সমবয়সী ছেলেরা যখন একের পর এক গার্লফ্রেন্ড পাল্টায় বা বিভিন্নজনকে ফ্লার্ট করত তখন আমি মনে মনে ভাবতাম সব ভালোবাসা জমিয়ে রাখব আমার স্ত্রীর জন্য। অপাত্রে ভালোবাসা দান করব না। তুমি দেখ, আমাদের জীবনে আর্থিক কমতি যদি কখনও আসেও আমার ভালোবাসায় কোনও কমতি পাবেনা। মেয়েদের প্রতি আমার নিস্পৃহ আচরণের জন্য অনেকেই অনেক বাজে কথা বলেছে। পাড়ার কিছু মানুষ ও বাদ যায়নি। তাই আমি ঠিক করেছি প্রতিদিন তোমাকে নিয়ে পাড়ায় কিছুক্ষন হাঁটব। সবাই দেখুক, আমার তপস্যার ফলে কেমন বউ পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।” সাদিকের কথা শুনতে শুনতে চখ ভিজে উঠে সোনিয়ার। শক্ত করে সাদিকের হাতটা চেপে ধরে।

সোনিয়া মনে মনে ভাবে মুনিয়াটাও যদি এমন ভালোবাসা পাইত। তাহলে আজ দুই বোন সুখের সাগরে ভাসত। সোনিয়ার দিকে তাকাতেই সাদিক দেখতে পায় রাস্তার আলোয় সোনিয়ার চোখে পানি চিকচিক করছে। অস্থির হয়ে যায় সাদিক, জিজ্ঞেস করে, “কাঁদছ কেন তুমি? আমার কোন কথায় কি কষ্ট পেয়েছ?” উত্তরে সোনিয়া জানায় মুনিয়ার কথা মনে পড়েছে তাই কাঁদছে।

সাদিক ওকে নিয়ে ভিতরে চলে আসে, ঘরে ঢুকে দেখে টেবিলের উপর প্লেটে মিষ্টি রাখা আর পানির বোতল রাখা। রাত প্রায় ১২টা হয়ে যাওয়ায় সারাদিনের ক্লান্তিতে বাসার সবাই প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে। সোনিয়াকে রুমে রেখে সাদিক গিয়ে মেইন এন্ট্রি সহ সবকিছু ঠিক মতো লাগানো হয়েছে কি না চেক করে আসে। এসে দেখে সোনিয়ার হাতে একটা চিরকুট। তাতে লেখা – ভাবি আমাদের বাসায় তোমাকে স্বাগতম। তোমাদের সামনের দিনগুলো আরো ভালো কাটুক। আমি আমার ভাইটাকে অনেক ভালোবাসি। তাকে কোন কষ্ট দিওনা প্লিজ। আমাদের কোন কিছু খারাপ লাগলে আমাদের জানাইও। আর হ্যাঁ, সকালে তাড়াহুড়া করে উঠার দরকার নাই। অন্তত আমি যে কয়দিন আছি রিল্যাক্স কর। শুভরাত্রি।

চিরকুটটা পড়ে সোনিয়ার মনে হল মালা রাদিকের ভাই হিসেবে সাদিককে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলনা। আগের রাতে সারারাত ঘুম না হওয়ায় সোনিয়ার অনেক ঘুম পায়। কিন্তু সাদিক অনুরোধ করে ওদের বাসার প্রথম রাতটা সারারাত জাগবে তাই আর ঘুমানো হয়না সোনিয়ার।

সোনিয়ার হাই তোলা দেখে সাদিক ওর হাত ধরে বলে, “দেখ আর মাত্র ৩৭ দিন পরে আমি চলে যাব। আসতে পারব হয়তো বছর দুই পরে, নইলে তোমাকে নিয়ে যেতেও দুই বছরই লাগবে। এই সময়টায় প্রচুর ঘুমাতে পারবে। এই কয়টা দিন প্লিজ আমরা যতটা কম ঘুমিয়ে দুজনের সান্নিধ্য উপভোগ করি।” সাদিকের কন্ঠের আকুতি প্রবেশ করে সোনিয়ার অন্তরে।

এভাবেই ভালোবাসা দিয়ে শুরু হয় সোনিয়ার সংসার, সাদিক ভালোবাসা দিয়ে জীবন ভরিয়ে দিয়ে ৩৭ দিন পরে পাড়ি জমায় জীবিকার উদ্দেশ্যে। খালি হয়ে যায় সোনিয়ার জগত। একসময় তারা একসাথে সংসার করতে শুরু করে। আসে নানান উত্থান পতন, দুঃখ বেদনা, এত ভালোবাসাও একসময় ফিকে হয়ে যায়। একেবারেই হারিয়ে যায়না। দুজনেরই মনের কোনে অনেকখানি জায়গাজুড়েই থাকে ভালোবাসা, হয়তো এখনকার মতো উথাল পাথাল বহিঃপ্রকাশ হয়না। কিন্তু ভালোবাসা রয়ে যায়।

কষ্টের সময়ের কথা পাঠক নাইবা জানলেন। সুখের শুরুর সাথী হয়ে সাথে থাকুন। হয়তো কোন একসময় সোনিয়ার প্রবাস জীবনের ছবি নিয়ে সামনে আসব। ততক্ষণ ওদের জন্য দুয়া করুন সবাই 🙂
#সংসারের_সাতকাহন
শেষ পর্ব
©️সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here