বইছে আবার চৈতী হাওয়া ৫৫

0
350

বইছে আবার চৈতী হাওয়া
৫৫

এতো সুন্দর একটা রাত এইভাবে শেষ হবে মীরা ভাবতেও পারেনি। নির্ঘুম মিস্টি রাতটা যেন নিমিষেই কেটে গেল। ভোরের আগে মীরা যখন আশিকের বুকের সাথে লেপ্টে ছিল, আশিক ওর চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আচমকাই প্রশ্ন করেছিল
-আচছা মীরা, সেদিন তুমি আমাকে ওই কথাগুলো কেন বলেছিলে?
মীরার বুকটা ধক করে উঠল। ঠিক এই প্রশ্নটা আসতে পারে এটা ধারণা করেছিল তবু মনে মনে আশা করেছিল হয়তো আশিক এই নিয়ে আর কথা বলবে না। ও আদুরে গলায় বলল
বলেছি তো আমার ভুল হয়েছিল
তুমি ভুল করে এই কথাটা বলনি। নিশ্চয় কোন একটা কারণ ছিল। আমি সেটাই জানতে চাচ্ছি
মীরা মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলল
আমি বলব কিন্তু আগে কথা দিন আপনি এটা নিয়ে কোন ঝামেলা করবেন না
আশিক হেসে ফেলল, তারপর বলল
ঝামেলা করবো কেন ?
আমাকে রাসেল ভাই ফোন করেছিল, বিয়ের দিন রাতে। বলেছিল ওই লোকগুলিকে আপনি পাঠিয়েছেন।
আশিক চমকে উঠলো, এরকম কিছু শুনতে হবে ও মোটেও আশা করেনি। সবটা শোনার পর ও কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। মিরা এগিয়ে এসে বলল
আপনি কোন ঝামেলা করবেন না তো ?
আশিকর জবাব দিল না। ভয়ে মীরার বুক কাঁপতে লাগলো। আশিককে কেমন অন্যরকম দেখাচ্ছে, একটু আগের সেই কোমল মুখটা আর নেই।

——-

-বাবা আমি চাই এই কেসটা তুলে নেয়া হোক
আরিফ সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন, যেন তিনি জানতেন যে আশিক এমনি কিছু একটা বলবে। ঘোড়া তার চাল দিলে নৌকা পিছিয়ে যায়। পেয়াদা কে এগিয়ে দেয়া হয় আত্মাহুতি দেয়ার জন্য। নিজের ছেলেকে উনি কিছুতেই পেয়াদা হতে দেবেন না। ঊনি হাতের ইশারায় ওকে বসতে বললেন।
– কফি খাবে আশিক?
আশিক জবাব দিল না। একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এর মধ্যে কফি কোথা থেকে এলো। আরিফ সাহেব ভ্রুক্ষেপ করলেন না, বেল বাজিয়ে রফিককে ডাকলেন । রফিক যথারীতি এসে ঘরের কোনায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছে। আরিফ সাহেব ওকে কফির কথা বলে আশিকের দিকে ফিরে বললেন
ব্রাজিল থেকে খুব ভালো ব্রান্ডের কফি আনিয়েছি, খেয়ে দেখো ভালো লাগবে। কি বলছিলে তুমি? আমি কেসটা তুলে নিতে চাও? এর কোন বিশেষ কারণ?
আশিক আমতা আমতা করে বলল
আপাতদৃষ্টিতে যে সমস্যা গুলো তৈরি হয়েছিল সেগুলো তো মিটে গেছে এখন শুধু শুধু আর ঝামেলা রেখে কি লাভ।
আরিফ সাহেব চশমা খুলে টেবিলে রাখলেন, তারপর ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন
অপরাধ করলে শাস্তি কেন পেতে হয় জানো? দুটো কারণে, প্রথমত অপরাধকারী যেন পরেরবার অপরাধ করার সময় সেই শাস্তির কথা ভেবে পিছিয়ে যায় আর দ্বিতীয়টা হল শাস্তি না পেলে একটা সময় তার আর সেটাকে অপরাধ বলে মনে হয় না এবং সে সেই কাজ বারংবার করতেই থাকে। তুমি কি চাও যেটা ঘটেছে সেটার পুনরাবৃত্তি হোক?
না সেটা চাই না, কিন্তু এই কেসটার কারণে আমার আশেপাশের মানুষজন সমস্যায় পড়ুক সেটাও চাই না।
যারা সমস্যায় পড়ছে তারা নিজের কৃতকর্মের কারণেই পড়ছে। এটা তাদের প্রাপ্য
আশিক একগুয়ে কন্ঠে বলল
তবুও আমি চাইনা। আমি চাই কেসটা তুলে নেওয়া হোক

আরিফ সাহেব হাসলেন। বেশ প্রশ্রয়ের হাসি। ছোটবেলায় আশিক ওনার কোট গায়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে রেগে যাবার বদলে যে রকম হাসি হাসতেন অনেকটা সেই রকম। তারপর বললেন
তুমি যাকে সেভ করতে চাচ্ছ তার মোটিভ জানলে হয়তো তুমি এটা বলতে না
মোটিভ তো একটাই, আমাকে নিয়ে একটা স্ক্যান্ডেল তৈরি করা, এর বেশি তো কিছু না। সেটা তো মিটে গেছে।
ব্যাপারটা কে তুমি যত সহজ ভাবছো ততটা সহজ নয়। সেদিন পুলিশ না এলে কি হতো তোমার কোন ধারণা আছে?
আশিক ভুরু কুচকে তাকিয়ে রইল। আরিফ সাহেব আবারও বললেন
ওরা মোট এগারো জন ছিল, আর তুমি একা। যদি ওরা মীরার কোন ক্ষতি করত?
আমি বেঁচে থাকতে সেটা সম্ভব হতো না। আমি মিরার কিছুই হতে দিতাম না
আর তুমি বেঁচে না থাকলে?
আশিক চমকে উঠলো
ওরা যদি তোমাকে মেরে মিরাকে তুলে নিয়ে যেত?
আশিকের চোয়াল শক্ত হলো। নিজের অজান্তেই হাত মুঠো পাকিয়ে এলো। আরিফ সাহেব আবারো বললেন
– ওদের উপর সেই রকমই ইনস্ট্রাকশনই ছিল। জীবনটা সরল অংক নয় আশিক। ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দাও।
– কিন্তু বাবা কেউ যদি অনুতপ্ত হয় তাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া উচিত না?
– অবশ্যই উচিত। তাকে বলো নিজের দোষ স্বীকার করে এভিডেন্স দিতে।
– কিন্তু সেটা হলে তো তৌহিদের লোক ওকে ছাড়বে না
– এটা ওর প্রাপ্য। ওর কাছে এখন দুটো অপশন আছে। স্বাভাবিক ভাবে কেস কোর্টে উঠবে এতে ওর যা শাস্তি হবে সেটা ওকে মেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে জেল খাটবে, অথবা দোষ স্বীকার করে এভিডেন্স দেবে। পরে যদি তৌহিদ ওর সাথে কোন ঝামেলা করে সেটা ওকে নিজেরই ট্যাকেল করতে হবে। ধরে নিতে পারো এটাই ওর শাস্তি। এখন ও কি করবে সেটা ওকে ঠিক করতে দাও।

রফিক কফি নিয়ে চলে এসেছে। আরিফ সাহেবের মাঝে মাঝে মনে হয় রফিকের কাছে আলাদিনের চেরাগ আছে। এত দ্রুত আলাদিনের জিন ছাড়া আর কেউ কাজ সম্পন্ন করতে পারবেনা। আরিফ সাহেব কফিতে চুমুক দিয়ে ছেলের দিকে তাকালেন। আশিক কিছু একটা মনে পড়েছে এই ভঙ্গিকে বলল
-বাবা আমি এখন কফি খেতে পারব না। আমার খুব জরুরি একটা কাজ বাকি রয়ে গেছে।

আশিক দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সকালে রাসেলের কথাটা শোনার
পর ওর মাথা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। এরপর মিরার সঙ্গে আর একটাও কথা বলেনি ও। মীরা অনেকবার ফোন করেছে, ধরেনি। ও নিশ্চয়ই খুব মন খারাপ করে আছে। এক্ষুনি ওর কাছে না গেলেই ন। আশিক ঘরে ঢুকে মিরাকে দেখে চমকে উঠল।

চলবে………।

আজকের পর্বটা দিতে অনেক দেরি হয়ে গেল। এই জন্য ক্ষমা চাইছি । পরের পর্ব দ্রুতই দেয়ার ইচছা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here