বইছে আবার চৈতী হাওয়া ৫৪

0
232

বইছে আবার চৈতী হাওয়া
৫৪

আশিকের ঘুম ভাঙল একটা মিস্টি ফুলের গন্ধে। গন্ধটা কেমন মাতাল করা আর খুব চেনা। আশিক বুকের উপর কিছু একটা টের পেল। চোখ নামিয়ে দেখল ওর বুকের মধ্যে মুখ গুজে শুয়ে আছে মীরা। গন্ধটা আসছে ওর চুল থেকে। ওর বুকের কাছে পাঞ্জাবির একটা অংশ ভেজা। হয়েতো মীরা কাঁদছিল এতক্ষণ। এই বোকা আর আবেগি মেয়েটাকে নিয়ে ও কি করবে ভেবে পেল না।

আশিক মুখ নামিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিল, তারপর একহাতে মীরার চুলগুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে খুব আস্তে করে ডাকল
মীরা বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিল। ডাক শুনে ধড়মড় করে উঠল। তারপর ভীষণ লজ্জা পেয়ে সরে যেতে চাইল। আশিক ওকে দুই হাতে আগলে নিয়ে বলল
– মীরা চলে যেও ন প্লিজ
মীরা আবারো ওর বুকের মধ্যে মুখ গুজে বলল
-চলে তো আপনি যাচছেন, আমাকে ছেড়ে
আশিক বিস্মিত হয়ে বলল
-আমি কোথায় যাচ্ছি?
-কেন, আপনি ইন্ডিয়া চলে যাচছেন না?
-কে বলল?
-আমি জানি। আপনার চিঠি এসেছে। বাবা বলেছে আমাকে

আজ বিকেলে মীরা যখন আশিকের ফোনের জন্য ছটফট করছিল, নিচে নেমে জানতে পারল রাসেল এসেছে। চেম্বারে আছে বাবার সঙ্গে। মীরা একটু অবাক হয়েছিল। পরে মনে হয়েছিল হয়তো সেদিনের কেসের ব্যপারে কোন কথা আছে।

মীরা রাসেলের মুখোমুখি হতে চায়না। ও জানে একমাত্র রাসেলের কারনেই আশিকের সঙ্গে ওর এতটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। রাসেল ওকে ফোন করে যা বলেছে আশিক জানতে পারলে কি হবে ভেবে, ভয়ে ওর বুক কাঁপে। সেদিন টিএসসিতে ও দেখেছে আশিক কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। তখন মীরা ওর কেউ ছিলা না। তাতেই ও এতটা রেগে গিয়েছিল। এখন সবটা জানলে ও রাসেল কে কি করবে সেটা ভাবতেও ওর ভয় করে।

মীরা ইচছে করেই রান্নাঘরে ঢুকে গেল। সাতটা বেজে গেছে। আরিক সাহেব এই সময় দুধ চিনি ছাড়া এক কাপ ব্ল্যক কফি খান। আজকাল মীরাই সেটা তৈরি করে দেয়। রাসেল চলে গেছে বুঝতে পারার পর ও কফির মগ নিয়ে চেম্বারে ঢুকল। আরিফ সাহেব আন্তরিক ভঙ্গিতে হাসলেন। তারপর একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বললেন
-আশিকের একটা চিঠি এসেছে। ওকে দিয়ে দিও
-কিসের চিঠি বাবা?
-ও কোলকাতায় একটা ওয়ার্কশপ এর জন্য অ্যাপ্লাই করেছিল। কিছু লেখা ও পাঠিয়েছিল। সেটারই আপ্রুভাল লেটার এসেছে। মে মাসে যেতে হবে। ভালই হল ততদিনে ওর পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে।
মীরার বুকের ভেতরটা কেমন শূন্য মনে হল। এজন্য আশিক ওকে এড়িয়ে যায়। ও আর মীরার সঙ্গে থাকতে চায় না। রাগ , কষ্ট, হতাশা, অভিমান মিলে মীরার মিশ্র অনুভুতি হল। ও দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষন কাঁদল। তারপর উঠে দরজা খুলে শুয়ে পরল। বাতি ও নেভালো না। আশিক যখন ঘরে ঢুকলো মীরা ইচছা করেই বালিশে মুখ গুজে ঘুমের ভান করে পড়ে রইল। একসময় টের পেল আশিক বিছানায় এসে বসেছে। আলো না নিভিয়েই শুয়ে পরেছে মাথার নিচে হাত রেখে। ওর ভাড়ি নিশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচছে। তার ও আরো অনেক, অনেকক্ষণ পর যখন ও টের পেল আশিক ঘুমিয়ে পড়েছে, মিরা আস্তে আস্তে ওর কাছে এগিয়ে গেল। তারপর বুকের উপর মাথা রাখল। মীরা নিরবে কাঁদল অনেকক্ষণ। তারপর কখন ঘুমিয়ে পরল নিজেই টের পেল না। যতক্ষণে ঘুম ভাঙল আশিক ওকে ওই অবস্থায় দেখে ফেলেছে । লজ্জায়, সংকোচে ও কুঁকড়ে গেল। সরে যেতে চাইলেও সে যেতে দিচছে না। ভারী বাজে লোক তো! নিজেই চলে যাছহে আবার ওকে যেতে নিষেধ করছে। মীরার ইচছা করছে ছুটে পালিয়ে যেতে কিন্তু আশিক ওকে দুই হাতে শক্ত করে ধরে আছে, যেন বাধন একটু আলগা হলেই ও পালিয়ে যাবে। মীরার কান্না পাচছে। কি ভীষণ কান্না পাচছে। মীরা ওর বুকের মধ্যে মুখ গুজেই ডুকরে কেঁদে উঠল।

আশিক কিছুই বুঝতে পারছে না। মীরা কোথায় চলে যাওয়ার কথা বলছে? ইন্ডিয়ায়? কিসের চিঠি এসেছে? কোলকাতায় একটা ওয়ার্কশপ এর জন্য আপ্লাই করেছিল। সেটা কি ? উফ! এটা আসার আর সময় পেল না ? এতদিন যেটার জন্য এত অপেক্ষা করছিল এখন সেটাই অসহ্য লাগছে। মীরা এইভাবে কাঁদছে কেন ? ও কি ধরেই নিয়েছে আশিক ওকে ছেড়ে চলে যাচছে? আশিকের ভীষণ আসহায় লাগছে। এই বোকা মেয়েটাকে ও কি করে বোঝাবে এখন?

-তুমি চাও না আমি যাই?

-আমার চাওয়া না চাওয়ায় কি যায় আসে? আপনি তো আর আমাকে ভালবাসেন না। দয়া করে বিয়ে করেছেন।
আশিক খুব অসহায় কন্ঠে বলল
-যার জন্য একশ তেরটা কবিতা লিখলাম সে কিনা বলছে আমি তাকে ভালবাসিনা?
মীরার চোখ জলে ভরে আছে। ও মুখ তুলে বলল
-কি বললেন?
আশিক জবাব দিল না। দুই হাতের তালুতে ওর টুল্টুলে মুখটা তুলে ধরে ঠোটে
ঠোট ডুবিয়ে দিল।

বিস্ময়ের প্রথম ধাক্কাটা কাটতেই একরাশ লজ্জা এসে গ্রাস করল মীরাকে। ঘর ভর্তি এত আলোর মাঝে ও কেমন কুকড়ে গেল। কোনমতে বলল
-শুনুন আলোটা নিভিয়ে দিন না প্লিজ
-তুমি শিওর আলো নেভাতে চাও
-হু

আশিক বাতি নিভিয়ে তাকিয়ে দেখল মীরা খাটে বসে আছে। একটা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাইরে থেকে আসা নীলাভ আলো এসে পরেছে ওর চুলের উপর । আশিক চোখ ফেরাতে পারছে না। দৃশ্যটা কেমন অপার্থিব লাগছে। যেন এ মীরা নয়, কোন স্বর্গের অপ্সরী, যাকে ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না, কামনা করা যায় না। যে শুধু স্তবগানের, শুধু বন্দনার।

আশিক ওর হাত ধরল না। এগিয়ে এসে ওর চুলে হাত ছুঁয়ে বলল
– কে তুমি?
মীরার চোখে জল এসে গেল। বাড়িয়ে দেয়া হাত নিস্তেজ হয়ে এলিয়ে পরল। এসব কি বলছে ও? আশিক আরো কাছে এগিয়ে এলো তারপর দুইহাতে ওকে কাছে টেনে নিল। বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে বলল
-তুমি কি সত্যি, না আমার কল্পনা?
-মানে? এসব কি বলছেন?
আশিক মীরার ঘাড়ে মুখ গুজে হাসলো তারপর গালে ঠোট ছুঁয়ে বলল
-তোমার জবাব পেয়েছ?
-না, পাইনি
-পাওনি? আমি যে লিখে রেখে গেলাম
-কি ছাতা মাথা লিখেছেন আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। আমি কি আপনার মতন অত জ্ঞানী।
মীরার কন্ঠে অভিমান ঝড়ে পরল। আশিক দুই হাতে ওর মুখটা তুলে ধরে বলল
– আচছা, আমি আমার এই বোকা বউটাকে নিয়ে কি করি বলতো?
মীরার সব রাগ অভিমান মুহূর্তে গলে জল হয়ে গেল। মীরা ওর বুকের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে বলল
-আপনাকে একটা কথা বলব?
-বল
-আমার ভুল হয়ে গেছে। আপনাকে ওই কথাগুলি বলা আমার উচিত হয়নি। আমি ক্ষমা চাইছি।
– ইটস ওকে। এখন ভুল ভেঙ্গেছে?
-হু
-তুমি কি তোমার জবাব চাও?
-চাই
আশিক ওকে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরল। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল

ভুল ভেঙে গেলে ডাক দিও,
আমি মৃত্যুর আলিঙ্গন ফেলে আত্নমগ্ন আগুন
ললাটের সৌমতায় তোমার
লিখে দেবো একখানা প্রিয় নাম – ভালোবাসা।

চলবে…………

আজকের কবিতাটা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর লেখা। আজকের পর্ব টা লিখে আমি একেবারেই স্যটিস্ফাইড হতে পারিনি। আরো অনেক সুন্দর করে লিখতে চেয়েছিলাম। যদি কখনো এটা বই আকারে আনি তাহলে এই অংশটা আবার লিখব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here