গোধুলি_আলোয়_সাঁঝের_ছোঁয়া [১] 🍂হুমাইরা হুর🍂

0
645

বিয়ের আসরে বরের বদলে পুলিশের আগমন চমকে দিয়েছিলো বিয়ে বাড়ির মহলকে।দুতলা সুসজ্জিত ডুপ্লেক্স বাড়ির কানায় কানায় ছিলো মেহমান ভর্তি।যেখানে এতক্ষণ অতিথিদের সমালোচনায় ভরে উঠেছিলো, ‘বর আসছে না কেনো? বিয়ে কি ভেঙ্গে গেলো?’ সেই জ’ল’ন্ত আ’গু’নে ঘি ঢেলে দিলো পুলিশ আশার খবর টা।পুলিশ আসতে না আসতেই করায় খবর চারিকান হয়ে গেলো মুহুর্তে ভিতরেই।’ বিয়ে বাড়িতে পুলিশের আগমন?’ কথাটা অগ্নিশিখার মতো দাউদাউ করে ছড়িয়ে পড়ল।

পুলিশ এসে থামল সোজা কনের সামনে।খু’ন করার মত বিশাল অপরাধে কনে তারা নিয়ে যেতে চাইলে বাধা সাধলেন কনের বাবা মো.আতাউর রহমান।যিনি কিনা দেশের সনামধন্য একজন আইনজীবী।

‘কনে খু’নী।’কথা মুহুর্তে সারা মহল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল।এতক্ষণ বর কেনো আসছে না?কনের দোষ আছে নাকি? এ নিয়ে কথা হলেও খু’নী হওয়ার ব্যাপারটা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। কনের বাবা ধীর গলায় প্রশ্ন করে বসলেন,

‘আমার মেয়ে খু’ন করেছে তার প্রমাণ কি?’

‘মি.আতাউর রহমান আপনার মেয়ের আঙ্গুলের ছাপ খুন হওয়া ব্যক্তির শরীরের উপর থেকে পাওয়া গিয়েছে। ‘

‘আমার মেয়ে যে কিনা র’ক্ত সহ্য করতে পারে না,সে করবে খুন? আপনি আমার সাথে রসিকতা করছেন? কিন্তু আপনাকে বলে দেই এখন রসিকতা সময় নয়।আমার মেয়ের বিয়ে আজ।কিছুক্ষণের ভিতরেই বর চলে আসবে।এসেছেন যখন বিয়েটা শেষ হলেই না হয় যাবেন।বসুন আপনারা। ‘

‘আমরা আপনার বাড়িতে বসতে বা বিয়ে খেতে আসি নি। না এসেছি আপনার সাথে রসিকতা করতে।আমরা খুনীকে নিয়ে যেতে এসেছি।’

‘মুখ সামনে কথা বলো সাঁঝ।ভুলে যাবে না আমি কে?আমার বাড়িতে এসে আমার মেয়েকে খু’নি বলো কোন সাহসে?এতক্ষণ তোমায় কিছু বলি নি এর মানে এই না যে আমি চুপ করেই থাকবো।’

‘এই ওড়না টা নিশ্চয়ই চিনবেন মি.আতাউর রহমান?দেখুন তো মিলে যাই নাকি আপনার মেয়ের বেনারসির সাথে?’

পুলিশের হাতে নিজের মেয়ের বেনারসির ওড়না টা দেখে মুহুর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেলেন। মেয়ের জন্য খুব সখ করে সিঙ্গাপুর থেকে আনিয়েছিলেন তিনি বেনারসি টা। দেশে এমন ডিজাইন বেনারসি নেই বললেই চলে।মুহুর্তেই তিনি বুঝে গেলেন ওড়না তার মেয়েরই। কিন্তু বেনারসির ওড়নাটা পুলিশের কাছে কিভাবে গেলো? পাশ ঘুরিয়ে মেয়ে দিকে তাকালেন তিনি ।ওড়নাটা যেখানে মেয়ের মাথায় থাকার কথা ছিল সেখানে সেটা পুলিশের হাতে।বর আসার টেনশনে এদিকটা সে খেয়ালই করে নি। বিচলিত হয়ে পড়লেন তিনি। তবে নিজেকে শান্ত করে নিলেন নিমিষেই।এই মুহূর্তে বিচলিত হলে চলবে না ।

‘এক ওড়না তো আর একজনের কাছে থাকে না । একই রকম বহু ওড়না রয়েছে। হবে কোনো একজনের টা। সামান্য ওড়না দিয়ে এটা প্রমাণ করা যায় না খু’নটা আমার মেয়েই করেছে।’

‘যুক্তি খাটাবেন না আমার সামনে আইনজীবী সাহেব।আপনি কোটে আইনজীবী হতে পারেন, এখানে নয়। এখানে আপনি শুধুমাত্র কনের বাবা।ওড়না টা যে আপনার মেয়ের তা স্পষ্ট আপনি বুঝতে পারছেন। এবং এখানে উপস্থিত সবাই তা বুঝতে পারছে।’

‘সামন্য ওড়নার উপর ভিত্তি করে তুমি আমার মেয়েকে নিয়ে যেতে পারেন না।’

‘হাহ! শুধুমাত্র ওড়না?’

বলে তাছ্যিলের হাসি হাসল সাঁঝ। আতাউর রহমান কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো কনের কাছে।ডান হাত চেপে ধরে একটানে সোজা করে দাড় করালো কনেকে।শাড়ি আঁচল হালকা সরাতেই গোলাপি বেনারসির নিচের এক কোণে লাল রঙের একটা দাগ ভেসে উঠল।শাড়ির আঁচল থাকার কারণে এতক্ষণ কিছু বোঝা না গেলেও দাগগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।দাগ টা যে র’ক্তের যা নিমিষেই বোঝা গেলো

মুহুর্তেই বোবা বনে গেলো আতাউর রহমান।সব প্রমাণ যে মেয়ের বিরুদ্ধে তার।কি করে সামাল দেবেন সে।বর এসে পড়ল পড়ল বলে। এই মুহূর্তে যদি পুলিশ তার মেয়েকে নিয়ে যায় তাহলে তার মান সম্মান তো সব ধুলোর মিশে যাবে।এমনকি বিয়েও ভেঙে যাবে। না কিছুতেই এমন হতে দিবেন না তিনি।
যে করেই হোক পুলিশ কে আটকাতে হবে।

শান্তস্বরে সাঁঝে বললেন,

–দেখো বাবা সাঁঝ।তোমার হয়ত ভূল হচ্ছে কোথায়। আমার মেয়ে খু’ন করতেই পারে না। কেউ তাকে ফাঁশানোর চেষ্টা করছে নিশ্চয়ই। আমাকে কিছু সময় দেও।আজ আমার মেয়েটার বিয়ে যে।

–মাফ করবেন আমায় স্যার আপনার কথা মানতে পারলাম না। আ’সা’মিকে আমরা খোলা ছেড়ে দিতে পারি না।এখন যা হবে কোর্টেই হবে। কনস্টেবল মিস গোধূলি কে নিয়ে থানায় চলুন।

আতাউর রহমান স্তব্ধ হয়ে গেলেন নিমিষেই। কি করে আটকাবেন পুলিশ কে।সাঁঝ কে তিনি যতটুকু চেনেন সাঁঝ মিথ্যা কথা বলার ছেলে না। সাঁঝ অনেক সৎ অফিস। সাঁঝের জায়গায় অন্য কোন পুলিশ থাকলে তিনি টাকা দিয়ে ব্যাপারটা এখানেই থামিয়ে দিতেন। কিন্তু এখন তিনি কি করবেন? তার সামনে তার মেয়েকে এভাবে নিয়ে যাওয়া হবে ভাবতেই তার বুকটা কেঁপে উঠছে তার।

গোধূলিকে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে চারদিকে হইচই রটে গেলো।’কনে খু’নী’ কথাটা যেনো বারবার তার বুকে আঘাত করছে। কেউ কেউ তো তাকে খু’নীর বাবা বলেও আক্ষায়িত করছে। দুতলা ডুপ্লেক্স বাড়িটা নিমিষেই খালি হয়ে গেলো। কি খুশিই না ছিলেন তিনি।মেয়ের বিয়ে বলে কথা। এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেলো।কিন্তু তিনি জানেন তার মেয়ে এমন কাজ জীবনেও করতে পারে না।কিন্তু করে বোঝাবেন তিনি সবাই।সবাই যে তার মেয়েকেই খু’নী ভাবছে।ভাবতেই বুকে হালকা হালকা ব্যাথা হতে শুরু করল। হালকা হালকা ব্যাথায় ক্রমশ বাড়তে শুরু করল।এক পর্যায়ে ব্যাথায় লুটিয়ে পড়লেন তিনি মেঝেতে।মানুষশূন্য এই ভবনে একা পড়ে রইলেন তিনি।

…………………

বধূরুপি আ’শা’মিকে জে’লখানায় বন্ধি দেখে অবাক হলো সবাই।কি সুন্দর করেই না সাজানো হয়েছে মেয়েটাকে। কি এমন হলো যে বিয়ের আসর থেকে এখানে আসতে হলো মেয়েটাকে? আর সাথে লোকজন ও তো নেই।

সবার মনে একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ।

গোধূলিকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে পাশ থেকে একটা মহিলা উঠে এসে গোধূলির গায়ের গহনায় হাত বুলাতে লাগল।মনে হচ্ছে সে যেনো কোনো বস্তু।মহিলার হাভভাব দেখে গোধূলি ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল। গোধূলির চিৎকারে সাঁঝ ছুটে গেলো গোধূলির সেলের দিকে। মহিলা কনস্টেবল কে বলল মহিলাটিকে আরেক সেলে রাখতে।কনস্টেবল সাঁঝের কথা মত মহিলাটিকে অন্য সেলে নিয়ে যেতে যেতে মিনমিনে গলায় আওরাতে লাগল,

‘বুঝিনা ব্যাপার স্যাপার।খু’নীর জন্য স্যারের এত দরদ কেনো? এর সাথে তো আরো খারাপ হওয়া উচিত। খু’ন করতেও হাত পা কাপল না।’

কথাগুলো গৌধূলির কানে পৌঁছল।মনে মনে বসে আওরালো খু’নী? হ্যা খ’নী সে।এতক্ষণ মনে পাথর চেপে রাখলেও এখন চোখের জল ধরে রাখতে পারল না সে।অঝোরে চোখের পানি পড়তে লাগল তার। কি থেকে কি হয়ে গেলো সে যেনো বুঝতেই পাড়ল না সে।আজ যে তার বিয়ে ছিলো।বাব যে খুব খুশি ছিলো। কিন্তু সে খুনী কিভাবে হয়ে গেলো?আর সব থেকে বড় কষ্ট তখন পেলো সাঁঝ নামক মানুষ টাও তাকে বিশ্বাস করল না? সে ভালো করে চেনে গোধূলিকে। সেই মানুষটাই খু’নের কাটগড়ায় দাঁড়া করলো তাকে? নিজের প্রতিই ঘৃণা হচ্ছে গোধূলির। তাহলে কি বাবাও তাকে অবিশ্বাস করবে?

চলবে..?

#গোধুলি_আলোয়_সাঁঝের_ছোঁয়া [১]
🍂হুমাইরা হুর🍂

পরের পর্ব
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/623221016066341/
(আসসালামু আলাইকুম পাঠকমহল। আশা করি ভালো আছেন সবাই। অনেকদিন পর নতুন গল্প নিয়ে হাজির হলাম। আপনাদের রেসপন্স এর ভিত্তিতে গল্প চলবে। আর কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here