গোধূলি_আলোয়_সাঁঝের_ছোঁয়া [৩]

0
182

#গোধূলি_আলোয়_সাঁঝের_ছোঁয়া [৩]
🍂হুমাইরা হুর🍂

‘তোমাকে আমায় বিয়ে করতে হবে গোধূলি। ‘

কথাটা শোনামাত্র চমকে উঠলো গোধূলি। হাসপাতালের করিডরে বসে ছিলো গোধূলি।মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল তার।কিভাবে সব কিছু সামাল দেবে তা ভাবতে না ভাবতেই সাঁঝে এমন কথা তাকে ভড়কে দিলো।

‘কি বলছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে আপনার সাঁঝ?’

‘দেখো গোধূলি আমার মাথা সম্পূর্ণ ঠিক আছে।তুমি চাও আর না চাও বিয়ে তোমার আমাকেই করতে হবে?’

‘আমার বাবা এখানে অসুস্থ।মৃ’ত্যু সাথে লড়াই করেছে। আর আপনি কিনা এখন এসব কথা বলছেন? সূর্য মারা যাওয়ার দিনও পেরোয়নি সাঁঝ। ভুলে যাবেন না আজ আমার বিয়ে ছিলো।

‘হ্যাঁ আমি জানি সূর্য মা’রা যাওয়ার ঘন্টা ও পেরোয় নি। বিয়ে তো আর হয় নি আর সূর্যকে তো তুমিই মে’রে ফেলেছো।খু’নী তুমি!বুঝেছো?তুমি শুধু আপন মানুষ কাউতেই জানো।’

আবারও খু’নী শব্দটা শুনে চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো গোধূলির। বাম হাতের মুঠো দিয়ে চোখের জলটা আলতো করে মুছে নিল। প্রচন্ড অভিমানে সাঁঝেকে বলল সে,

‘হ্যা খু’নীই আমি। খু’নীকে কেনো বিয়ে করবেন?’

গোধূলির কথা শুনে সাঁঝে গোধূলি দিকে এগিয়ে আসল।গোধূলি কে এটানে কাছে নিয়ে আসল।গোধূলি যেনো যায় যায় অবস্থা। গোধূলিকে পিছন ফিরিয়ে তার কাধের উপর মুখটা রেখে দুহাত চেপে ধরে আস্তে করে বলল,

‘খু’নী হও আর যাই হও।বিয়েতো আমি তোমায় করবোই।এটা আমার চেলেন্জ।তাই বলে এটা ভেবো না শাস্তি তুমি পাবে না। তুমি এর থেকে ভয়ানক শাস্তি পাবে। মৃত্যু জন্য আল্লাহ কাছে হাত পাতবে। তাও তুমি রেহাই পাবে না।’

বলে আরো শক্ত করে হাত দুটো চেপে ধরল গোধূলির।গোধূলি ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠল।তখনই কেবিন থেকে ডক্টর বেরিয়ে এসে জানাল আতাউর রহমান তাদের সাথে দেখা করতে চান।

————

কিছুক্ষন আগে গোধূলি যখন ওয়াসরুমে থেকে বের হয়েছিলো হুট করে সাঁঝ এসে তাকে থাপ্পর মেরে দেয়। অচমকায় এমন কিছু হবে তা বুঝতে পারে নি গোধূলি। সাঁঝ চিৎকার করে বলে উঠল,

‘কান্ড জ্ঞান নেই নাকি তোমার? কতক্ষণ ধরে ডাকছি তোমায়, কি করছিলে তুমি ? চিন্তায় আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল আর তুৃমি কিনা আমার ডাক না শোনার ভান করছিলে?’

গোধূলি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাঁঝ আবারো বলে উঠলো,

‘তাড়াতাড়ি চলো তোমার বাবা স্ট্রোক করেছে।যেহেতু তুমি ছাড়া তার কেউ নেই।সেই কারণে তোমাকে সেখানে নিয়ে যেতে হবে।তা না হলে একজন আসামিকে কখনোই আমি জেল থেকে বের হতে দিতাম না।নেহাৎ তোমার বাবা অসুস্থ। তাড়াতাড়ি আসো তোমার জন্য অপেক্ষা করার সময় আমার নেই।’

বলে সাঁঝ কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।বাবার অসুস্থতার কথা শুনে মাথায় এক আকাশ সমান বাজ পরেছিলো গোধূলির। বাবা ছাড়া যে তার কেউ নেই। মা তো থেকেও নেই তার। আর আলো! সে তো নেই এ জীবনে।

হাসপাতালে এসে জানতে জানতে পারল তার বাবাকে ডক্টর চেকাপ করছে।তাই বাইরে করিডরে বসে ছিলো গোধূলি। হঠাৎ সাঁঝের এরূপ কথায় কথায় চমকে উঠেছিলো গোধূলি। সাঁঝে কেনোই বা তাকে বিয়ে করবে? সাঁঝতো আলোকে ভালোবাসত। নাকি শুধু চেহারা এক বলেই? সাঁঝ তাকে বিয়ে করতে চায়। না সে সাঁঝকে কোনো মতেই বিয়ে করবে না।সাঁঝ যে তার বোনের ভালোবাসা আলোর ভালোবাসা।

হটাৎ এসব ভাবনার মাঝেই ডক্টর বের হয়ে আসল।তাদের উদ্দেশ্য করে বলল,

‘ আপনরা প্লিজ চেচামেচি বন্ধ করুন।ভূলে যাবেন না এটা হাসপাতাল। ‘

ডক্টর এর কথায় সাঁঝ কিছুটা লজ্জিত হলো।

‘গোধূলি কে?’

নিজের নাম শুনতেই গোধূলি হুরমুড়িয়ে উঠল। আর বলল,

‘আমি গোধূলি। ডক্টর আমার বাবার কি হয়েছে?তিনি সুস্থ আছেন তো?’

‘দেখুন মিস গোধূলি। আপনার বাবা আল্লাহর রহমাতে সুস্থ আছেন।কিন্তু অতিরিক্ত টেনশনের জন্য আপনার বাবা স্ট্রোক করেছে।মি. সাঁঝ যদি সময় মত তাকে নিয়ে না আসতেন তাহলে রোগী কে আমরা বাঁচাতে পারতাম না। খেয়াল রাখবেন রোগী যেনো টেনশন না করে।তাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন। আর হ্যাঁ আপনি এখন আপনার বাবার সাথে দেখা করতে পারেন।’

ডক্টরের কথা শুনে গোধূলি তাড়াতাড়ি কেবিনে প্রবেশ করলো। তার বাবাকে ক্যানেলা আর সেলাইন লাগিয়ে রাখা হয়েছে।তার বাবা চোখ বুঝে শুনে আছেন। গোধূলি নিরব পায়ে হেঁটে গিয়ে টুলে বসল। বাবা ছাড়া যে তার কেউ নেই। আলোটাও তাকে ছেড়ে বহুদিন আগে চলে গেছে। বাবার কিছু হয়ে গেলে সে কি করে বাঁচবে? সূর্য তাকে আজ ছেড়ে চলে গেছে। হ্যাঁ সাঁঝ বোধহয় ঠিকই বলছিলো সব দোষ তার। না হলে এতগুলো মানুষের মৃত্যু কারণ সে হতো না। এসব ভাবতেই চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে লাগল গোধূলির।

পানির ফোঁটা গড়িয়ে আতাউর রহমানের হাতে পড়তেই চোখ মেলে তাকালেন তিনি। মেয়ে কাঁদছে দেখে আলতো ভাবে হাতটা উঠিয়ে মেয়ের মাথায় রেখেলেন তিনি।পরম স্নেহে তিনি মানুষ করেছেন দুই মেয়েকে। গোধূলির কান্না যেন তীরের মত তার বুকে বাধছে।

মাথায় বাবার স্পর্শ পেয়ে বাবার দিকে তাকালো গোধূলি দেখলো বাবা তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। নিজেকে সামলাতে না পেরে কান্না করতে লাগলো সে। আতাউর রহমানও পরম যত্নে মেয়েকে আগলে নিলেন। কোনো মতে মেয়ের কান্না থামলে তিনি মেয়েকে বলেন,

‘আমি জানি আমার মেয়ে কারো ক্ষতি করে নি।না সূর্যকে মেরেছে।এটা তোমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। মা একটা কথা রাখবি আমার?’

‘বাবা তুমি এসব বিষয় নিয়ে ভেবো না।জলদি সুস্থ হয়ে যাও।তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।’

‘সাঁঝকে বিয়ে করে না মা।’

বাবার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল গোধূলি। বাবা কি বলছে তাকে? এ যেনো সে মানতে পারছে না।ছলছল চোখে

‘তুমি তো সব জানো বাবা? তাহলে সাঁঝকে কিভাবে আমায় বিয়ে করতে বলছো?’

‘তুই ভালো থাকবি মা। রাজি হয়ে যা।’

গোধূলি বাবার কথা মানতে না পেরে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। গোধূলির চলে যাওয়ার দিকে নিস্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলেন আতাউর রহমান। মেয়ের জন্য কিছুই করতে পারছেন না তিনি।ডক্টর তাকে জানিয়েছেন হার্টে ছিদ্র হয়েছে তার।খুব দ্রুত অপারেশন না করলে তিনি মারা যাবেন।গোধূলিকে এ কথা জানতে বাধন করেছেন তিনি।তিনি চান না তার মেয়ে কষ্ট পাক। মেয়েটাই যে তার শেষ সম্বল। আলোকে হারিয়ে ছিলেন তিনি, কিন্তু গোধূলিতে কোনোভাবেই তিনি হারাতে পারবেন না।

গোধূলিকে কোলে নিয়ে যখন তিনি পরম আবেশে জরিয়ে ধরেছিলেন তখনই নার্স তোয়ালে পেঁচানো আরেকটি শিশু এনে হাতে দেন তার। তখন অবাক হয়েছিলেন আতাউর রহমাম।। তিনি জানতেন না তার টুইস বেবি হবে।পরে অবশ্য খুশি হয়েছিলেন তিনি।। গোধূলির নামের সাথে মিলিয়ে আরেক মেয়ের নাম রেখেছিলেন আলো।’গোধূলি আলো’।

চলবে?
(আসসালামু আলাইকুম পাঠকমহল।আমার প্রতিদিন দুটো করে পরিক্ষা চলছে। তাই গল্প দিতে দেরি হয়েছে।ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here