#গোধূলি_আলোয়_সাঁঝের_ছোঁয়া[৪]
🍂হুমাইরা হুর🍂
প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট হাতে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে গোধূলি।এই সময়টা টা তো সবচেয়ে আনন্দের হতো যদি সাঁঝের সাথে বিয়ে হওয়ার কিছুদিন পরে কথাটা সে জানত।সেদিন রাতের ঘটনা যে তার সামনে এভাবে এসে দাঁড়াবে আকষ্মিক কালেও ভাবেনি সে।সে ভুলে গিয়েছিলো সে ঘটনা।সরিয়ে ফেলেছিলো তার জীবন থেকে সে রাতের ঘটনা।তবুও আজ কেনো? সাঁঝের বাচ্চার মা হতে চলেছে সে।ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে তার।এখন কি করবে সে? কোন মুখে সাঁঝের সামনে দাঁড়াবে? এতক্ষণ হয়তো সাঁঝ ও জেনে গিয়েছে এ ব্যাপারে।
——–
অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আবারো বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছিলো আজ গোধূলিকে। বাবাকে সুস্থ করে তোলাই যেনো তার একমাত্র কাম্য। তবুও ভালোবাসার মানুষকে পাওয়া যে আনন্দ তার বিন্দু মাত্র রেস নেই তার মাঝে। ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়েছে অবশ্য কিন্তু এই পাওয়ার থেকে না পাওয়াই ভালো ছিলো বলে মনে করে গোধূলি। সূর্যকে ভালো না বাসলেও যথেষ্ট শ্রদ্ধা করত সে। সূর্য জন্যই সে আজও বেঁচে ছিলো।বাবার কথা রাখতে সূর্যকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো।
সূর্য ছিলো তার বাবার বন্ধুর ছেলে।তিন মাস আগে নিজের ভালোবাসা হারিয়ে, নিজের বোনের মৃত্যুতে সে ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। এমনকি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। আতাউর রহমান মেয়ের এমন অবস্থা সহ্য না করতে পেরে মেয়েকে সাইক্রেটিস দেখান। সাইক্রেটিস ছিল আর কেউ না তার বন্ধুর ছেলে সূর্য। সূর্যের গোধূলিকে ঠিক করতে তিন মাস সময় লেগেছিলো। গোধূলির যখন মন খারাপ হয়েছে সারা রাত সে গোধূলির মন ঠিক করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এমন কিছু নেই যা সে গোধূলির জন্য করে নি।
মেয়ের প্রতি সূর্য এত যত্ন দেখে আতাউর রহমান তার বন্ধুর সাথে মিলে ঠিক করেন গোধূলি সাথে সাঁঝের বিয়ে দিবেন।সূর্য অবশ্য দ্বিমত করে নি।কিন্ত গোধূলি রাজি ছিলো না। আতাউর রহমান তার দোহাই দিয়ে মেয়েকে রাজি করিয়েছিলেন বিয়ের জন্য।
——–
বাবার কথা শুনে গোধূলি বের হলে গেলেও দাঁড়াতে না দাঁড়াতে শুনতে পেলো ডাক্টরদের চেচামেচি। যা শুনে বুঝতে পারল বাবা শ্বাস নিতে পারছেন না।অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া হয়েছে তাকে।গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।যে কোনো মুহুর্তে তিনি মারা যেতে পারেন।
ডাক্তার এর কথায় পাশে থাকা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল গোধূলি। তার জন্য তার বোনের মত তার জীবন থেকে তার বাবা ও হারিয়ে যাবে? এ বিশাল পৃথিবীতে একা হয়ে রবে সে?
তখন ডক্টর এসে বলল,
‘মিস গোধূলি। আপনার বাবার যে অবস্থা তার বেঁচে থাকার সম্ভবনা খুবই কম।আপনার বাবা আমাকে জানাতে বারন করেছিলেন।কিন্তু আপনার বাবার যে অবস্থা তাকে বেশিদিন বাঁচাতে পারব না আমরা। তাই কথা আপনাকে বলে দেওয়া উচিত। ‘
‘কি কথা স্যার? দয়া করে বলুন আমার বাবার কি হয়েছে?সুস্থ হয়ে যাবে তো আমার বাবা? প্লিজ বলুন স্যার।’
‘দেখুন আপনার বাবার হার্টে ছিদ্র হয়েছে। সমস্যাটা অবশ্য ধরা পরেছিলো আপনার বোনের মৃ’ত্যুর পর যখন আপনার বাবা হাসপাতালে এসেছিলেন।সেদিন তিনি দূর্বলতার কারণে অঙ্গান হয়ে যান।তখন তার চেক আপ করে জানতে পারি তার হার্টে ছিদ্র রয়েছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলেও তিনি গুরুত্ব দেন নি।সমস্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকলেও তিনি চিকিৎসা করান নি।এখন তার অবস্থা গুরুতর। আমাদের দ্রুত অপারেশন করতে হবে। কিন্তু?’
‘কিন্তু কি ডাক্তার?’
‘অপারেশন সাকসেসফুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আপনারা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করব।কিন্তু রোগীকে আপনাদের হাসি খুশি রাখতে হবে।দেখবেন তিনি যেনো কষ্ট না পান।আপাতত তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে।কিছুক্ষণ পর আপনি দেখা করতে পারবেন।’
বলে ডক্টর সেখান থেকে চলে গেলো।রেখে গেলো বিধস্ত গোধূলিকে। সাঁঝ এসে গোধূলির পাশে দাড়ালো। বিয়ের সাজে বেনারসি তে বি’ধ’স্ত অবস্থায় গোধূলিকে দেখে মোটেও তার ভালো লাগছিলো না। এই চেহারার মায়ায় পরেছিলো সে একদিন।হোক চেহারা ছলনাময়ী ভালোবাসা তো ভোলা যায় না। পেয়েও হারিয়েছিলো সে তার ভালোবাসাকে।
গোধূলি যেনো আজ নিশ্চুপ।প্রকৃতি যেনো গোধূলিকে শান্ত করে দিয়েছে। কিছুক্ষন আগে বাবার জ্ঞান ফিরলে বাবার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো সে। বাবার করুন আকুতি আবারও তাকে হার মানিয়েছিলো।সে সাঁঝকে বিয়ে করবে বলে বাবাকে মানিয়েছে।সাঁঝকে বিয়ে না করলে তিনি কিছুতেই নিজের অপারেশন হতে দিবেন না।বাবাকে বাঁচাতে রাজি হয়েছে সে এ বিয়েতে।
রাজি হতে না হতেই সাঁঝ গোধূলিকে নিয়ে রেজিস্টি অফিসে যায়। আইন মোতাবেক বিয়ে করে নেয় তারা।আইনি মোতাবেক তারা স্বামী স্ত্রী হলেও দুজের ছিলো ভিন্ন কোনে উদ্দেশ্য।গোধূলির বুকে চলছিলো তখন এক বিশাল ঝড়।আর সাঁঝ?তার মনে তো প্রতিশোধের আকাঙ্খা।
———-
সাঁঝ বাসায় যাওয়ার বরাবর জোর করলেও গোধূলি তার কথার অটুট।সে হাসপাতাল থেকে এক পাও সরবে না।সে সারারাত বাবার কাছে থাকবে।কখন কি দরকার হয় বলা তো যায় না,তাই সে আজ রাত হাসপাতালে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলো। থানার কাজে বাধ্য হয়ে গোধূলিকে রেখে বেরিয়ে পড়লো সাঁঝ।তবে গোধূলি এখনও আসামি।তাই দুজন কনস্টেবল রেখে গেলো পাহারা দেওয়ার জন্য। তবে যাওয়ার সময় হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকে গোধূলির জন্য খাবার কিনে দিয়ে গেলো।
সারাদিনের ধকল পেরিয়ে কেবিনের সোফায় বসল গোধূলি।সামনে তার জন্য সাঁঝের রাখা খাবার দেখে এক চিতলে হাসি ফুটে উঠল গোধূলির। নিমিষেই সব ক্লান্তি ভুলে গেলো তার। খিদের কারনে খাবার খাওয়া শুরু করল।কিন্তু দু তিন নলা মুখে দিতে না দিতেই বমি আসতে শুরু করল তার।তাই কাবারটা খেলো না তেমন। বসে ভাবতে লাগল পুরোনো দিনার কথা।কতই না খুশি ছিলো সে আর আলো। যখন তারা বিদেশের মাটিতে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলো।
স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে পারি দিয়েছিলো তারা বিদেশের মাটিতে। সেখানে সাঁঝ নামক ব্যাক্তিটি কেড়ে নেয় দুটি মন। বাঁধা পরে যায় সাঁঝ দুটি অন্তরে। তবে গোধুলি আর আলো দুজনে কাউকে একে অন্যের ভালো লাগার কথায় জানায় নি।কে জানত তাদের ভালোবাসার মানুষটাও এক হবে?
চলবে?
(আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। প্রথমেই আমি আন্তরিকবাবে দুঃখিত কেননা গল্প দিতে পারি নি এতদিন।যেহেতু আপনারা জানেন আমি এসএসসি পরিক্ষার্থী, এখন আমার চাপ প্রচুর।গল্প লিখার টাইম পাই না।গল্প যেহেতু শুরু করেছি , ইনশাহআল্লাহ শেষ করব।পাশে থাকবেন।ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।)