এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚 #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ০৬

0
437

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৬

অপূর্ব ভাইয়ের আনা খোলা তেল মামি মাথায় দিয়ে দিচ্ছেন। ঘুমানোর পূর্বে মাথায় তেল দেওয়া রোজকারের অভ্যাস। তেলের ভেতরে দুর্ভাগ্যবশত কেক পরেছে। তেলের প্রতিটি বিন্দুতে কেকের গন্ধ। নানি মা ঠাক্কুর ঠুক্কুর শব্দে পান ছেঁচে চলেছেন। নানি মা চুন তর্জনীতে নিয়ে বলেন, “আজকে তোদের নতুন গল্প শোনাব। গল্পের নাম ‘আলাল-দুলাল দুই ভাই’ বেশ পুরোনো।”

প্রায় দিনেই নানি মা গল্প শোনায়। আমি বাধা দিয়ে বললাম, “আজ আমি গল্প শুনাব, সবাই শুনবে।”

তিস্তা আপু পড়তে পড়তে বলেন, “তুই আর গল্প? আগের গল্পের নাম কি ছিল, জানিস?”

সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, “আমার তৈরি গল্প। গল্পের নাম, ‘চাঁদের বুড়ির রাম ছাগল।’ বুঝেছ?”

সবাই একসাথে চ্যাঁচিয়ে বলে, “কী? চাঁদের বুড়ি সুতা কা/টে শুনেছি। এখন কী ছাগলও পোষে?”

মামি বিনুনি করে দিলেন। দু’কাধে রেখে বললাম, “শুনেই নাও না, চাঁদের বুড়ি তখন সুতা কাঁ/টা/ত না, খামার করত। খামারে ছাগল পোষে, বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল। তার ভেতরে একটা ছিল রাম ছাগল। দুষ্টু ছাগল। চাঁদের বুড়ি ছাগলের জন্য বিরক্ত থাকত। একদিন ছাগলটা পালিয়ে যায়। দু’দিন বুড়ি খুঁজেও পায় না ছাগলটাকে। প্রচণ্ড রাগে সবগুলো ছাগল বিক্রি করে দিল। তারপরে সুতা কা/টা শুরু করে। গল্প শেষ।” [গল্পটা কালেক্ট করা]

অপূর্ব দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন‌। নানি মায়ের কোলে শুয়ে পড়লেন। হাতটা মাথায় রেখে বললেন, “পাঁদানিসা গল্প। হাস-কষ কিছু না।”

কোমরে হাত দিয়ে বললাম, “পাঁদানিসা হলো কেমনে?”

“তার নয়তো কী? ছাগল পোষত, ছাগল হারিয়ে গেছে বলে বিক্রি করে দিছে। ছাগলটা কোথায়? ফিরে এসেছে কি-না তাও বললি না।”

“ছাগলটা তো আমার সামনে। সে পৃথিবীতে এসে এখন আমাদের জ্বালাচ্ছে।” সবাই আমার আর অপূর্ব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। অপূর্ব ভাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই মুখে হাত দিল। অপূর্ব ভাই গম্ভীর গলায় বললেন, “আমি ছাগলই না, রাম ছাগল?”

“আয়না দিবো দেখবেন।” বলেই মামির কোলে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম। অপূর্ব ভাই উঠে চলে গেলেন। পুনরায় হেসে উঠল সবাই। আমাকে বাহবা দিচ্ছে। রাত বাড়ছে। ঘুমানোর জরুরি। আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম।

মাথা চুলকাচ্ছে। অতিষ্ঠ আমি। আমার মাথায় উকুন নেই, তবুও এমন হওয়ার কারণ বুঝতে পারলাম না। সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হওয়ার পর বিছানা ছেড়ে উঠলাম। মাথা চুলকে উঠে বসতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো বালিশে। কিছু চুল পরে আছে‌। মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কাঁথা সরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ালাম। গুড়ি গুড়ি লাল পিঁপড়া আর চুল। পিঁপড়া হঠাৎ আমার চুল কেন কা/ট/ল? কখনো তো এমন হয়নি। চুলগুলো নিয়ে ড্রাইনিং রুমে গেলাম। অপূর্ব ভাই রুটি ভিজিয়ে চা খাচ্ছেন আর বলছেন, “গতকাল মিহিরের সাথে দেখা হয়েছিল। আরুকে নিজেদের বংশের দাবি করতে চেয়েছিল।”

সেজো মামা তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, “মাটিতে পুঁ/তে দিলি না কেন?”

ছোটো মামা বলেন, “ফোন করে জানাতি, থর থেকে মাথাটা আলাদা করে দিতাম।”

বড়ো মামা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “থাম তোরা। ঠিকই তো বলেছে, আমরা যতই বলি, আরু আমাদের মেয়ে। আসলে ও আমাদের কেউ নয়। ওর শরীরে মৃধা বাড়ির রক্ত বইছে‌। আদালতের প্যাঁচে ফেলে ওরা আরুকে নিয়ে যেতে পারবে। আমাদের ক্ষমতা নেই রাখার। তবে আমার বোনের এই পরিণতি তাদের জন্য। কখনো পারুল কথা বলবে না।”

চুলগুলো দেখিয়ে কেঁদে ফেললাম, “দেখো মামি হিন্দু পিঁপড়া আমার চুল কে/টে ফেলেছে। আমি জানি এই কাজটা অপূর্ব ভাই করেছেন। আমি কাল ইঙিয়ে বিঙিয়ে রাম ছাগল বলেছিলাম, তার প্রতি/শো/ধ নিতে হিন্দু পিঁপড়া ধরে এনেছে।”

মামা হেসে ফেললেন। বলেন, “হিন্দু পিঁপড়া কী মা?”

মাথায় হাত দিয়ে বললাম, “ওমা! আপনি হিন্দু পিঁপড়া চিনেন না? লাল পিঁপড়া। ছোটো বেলায় অপূর্ব ভাই বলেছেন, লাল পিঁপড়া হিন্দু, কালো পিঁপড়া মুসলমান, সাদা পিঁপড়া খ্রিষ্টান।’ রাতে বিছানায় পিঁপড়া ফেলে এসেছে, সেগুলো আমার চুল শেষ করেছে।”

“সাদা পিঁপড়া তুই দেখেছিস কখনো?”

“না। অপূর্ব ভাই বলেছেন, ‘খ্রিষ্টান পিঁপড়া খ্রিষ্টানের সাথে থাকে।’ আমাদের এখানে তো হিন্দু আর মুসলমান ছাড়া কেউ নেই, তাই ওরাও নেই।”

সবাই হেসে উঠলেন। অপূর্ব ভাই চা’য়ে চুমুক দিয়ে বলেন, “গতকাল বারণ করেছি, এই তেল না কিনতে। এবার বুঝ? কেকের গন্ধ পেয়ে পিঁপড়া চলে এসেছে। কারণ পিঁপড়ার নাক বড়।”

আমার কষ্টে সবাই দুঃখ প্রকাশ করল। আজকের পর থেকে এই হিন্দু পিঁপড়া দেখলেই মে/রে ফেলল। আমার প্রিয় চুলগুলো কে/টে শ/ত্রুর খাতায় নাম লেখালি তোরা।

___

সময় চারটা বিশ। সূর্য পশ্চিমে হেলে তার তীক্ষ্ণ রশ্মি হালকা হয়েছে। মাটির রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছি আমি তুর ও শেফালী। আজ স্কুলে গিয়েছিলাম। এখন বাড়ির পথে ফিরছি। তুর হাঁটতে হাঁটতে বলে, “ইংরেজি স্যার অনেকগুলো কম্পোজিশন দিয়েছেন। বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসতে হবে। তাড়াতাড়ি হাঁটা দে।”

দ্রুত পা চালিয়ে বললাম, “আমার স্কুল ভালো লাগে না। প্রতিদিন যদি শুক্রবার হতো। কী ভালোটাই না হতো। বল তোরা?”

বইয়ের ফাঁক থেকে কলমটা পড়ল মাটিতে। শেফালী কলম তুলে হাঁটতে হাঁটতে বলে, “প্রতিদিন শুক্রবার হলে কী আর হতো? আমরা সবাই গরু হতাম।”

আবার আমাকে প্রিঞ্চ করল। বন্য লতার মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। অসাবধানতায় পা পড়ল একটা মোটা লতার উপর। পরক্ষণেই সাপের মতো ফণা তুলে উঠল। পিছিয়ে গেলাম তিনজনে। বোধগম্য হলো এটা সাপ, লতা নয়। পাতা রঙের বোরা সাপ। সাদাঠোটি বোরা সাপের দেহ মোটাসোটা, মাথার উপরিভাগে ত্রিকোণাকৃতির চ্যাপ্টা আঁইশ থাকে; তুন্ড। গোলাকার লেজ ছোট, কোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে। দৈর্ঘ্য প্রায় ১ মিটার। মাথার শীর্ষ ও দেহ সবুজ রঙের। পৃষ্ঠীয় আঁইশের নিচের সারির কিনারায় সরু ও সাদা ব্যান্ড। সাপে চোখের নিচে একটি সাদা রেখা থাকে। চোখের নিচের আঁইশ হলুদ। লেজের প্রান্ত দাগ। দেহের নিম্নভাগ ঈষৎ সবুজ হলদে।

আমি শেফালীর হাত চেপে ধরলাম। তিনজনের একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। আয়াতুল কুরসি পড়ছি। কাঁপা কাঁপা গলায় উচ্চারণ করতে পারছি না। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সাপটা কিছুক্ষণ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থেকে চলমান হলো। পাশের ডোবাতে নেমে গেল। পরক্ষণেই আমরা তিনজনে সর্বশক্তি দিয়ে ছুটলাম। ভয়ে ছুটছি। বন্য লতার মাঝে যদি অন্য কোনো বিষধর সাপ লুকিয়ে থাকে। পারলে পা খুলে হাত নিয়ে ছুটতাম।

আমাদের ঘরের পিছনে অনেক আমগাছ। তবে একটা বড়ো আমগাছ। শীতকালেও যাতে আম ধরে। মামি আম আর চালতা কা/ট/ছে। আমাদের ছুটে আসা দেখে উত্তেজিত হয়ে গেলেন। অসাবধানতায় আঙুল কে/টে ফেললেন। অপূর্ব ভাই বন্য লতা চিবিয়ে হাতে দিয়ে দিলেন এক ধমক, “এখানে কী শিরনি দিচ্ছে যে বাটি নিয়ে ছুটে আসছিস? দেরি হলে পাবি না। এসে সেই দোলনায় চড়ে বসে থাকবি। বয়সেই বেড়েছিস। আর একদিন যদি দেখি ঘোড়ার মতো ছুটে আসছিস। বেত গাছের কাঁটা দিয়ে আচ্ছা করে পে/টা/ব। বলে রাখলাম।”

হাঁটুতে হাত রেখে হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, “সাপ। বোরা সাপ।”

মামি বিচলিত হয়ে বললেন, “কোথায়? তোদের ছো/ব/ল দেয় নি তো?”

“না মামি। আমি ভুলে পা ফেলেছিলাম।”

তিয়াস ভাই ব্যঙ্গ করে বললেন, “চোখ আকাশে রেখে হাঁটলে তো পা পরবেই। তোদের যে খেয়ে ফেলেনি, এটাই বেশি। শুকরিয়া কর।”

নাক ফুলিয়ে মনে মনে বললাম, ” তিয়াস নয়, তিন হাঁস। হাঁসের মতো প্যাক ‌প্যাক করে।”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here