বৃষ্টিস্নাত_ভোর #পর্ব_০৯ (অন্তিম পর্বের ১ম খন্ড)

0
297

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্ব_০৯ (অন্তিম পর্বের ১ম খন্ড)
#লেখনীতে_নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা

সকালে চোখ খুলেই নিজেকে নেহালের বুকে আবিষ্কার করল মেহুল। আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল মেহুল। তারপর ফ্রেশ হয়ে নেহালকে ডাকার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াতে গিয়েও থেমে যায় সে। কেমন যেন অস্বস্তি কাজ করছে তার মাঝে। পরবর্তীতে সংকোচ দূরে ঠেলে সে নেহালকে ডেকে দিল তবে ভিন্ন পদ্ধতিতে। মনে মনে ভেবে নিল নেহাল তো কোনো পর পুরুষ নয়, তারই স্বামী। সুতরাং স্বামীকে ডাকতে আবার কিসের অস্বস্তি! মেহুল দুষ্টুমি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের ভেজা কেশগুচ্ছ নেহালের মুখের সামনে মেলে ধরল। নেহালের মুখে কয়েক ফোঁটা জল পড়তেই সে নড়ে উঠে। মেহুল মুচকি হেসে পুনরায় একই কাজ করল। যখন দেখল নেহাল উঠছে না তখন কাছে এগিয়ে নেহালের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেহুল আচমকা নেহালের বুকে আছড়ে পড়ল। পিটপিট করে চোখ খুলে মেহুল দেখল নেহাল এক ধ্যানে তার পানে চেয়ে রয়েছে। সেই চাহনী দেখে মেহুল লজ্জায় কুঁকড়ে গেল। নেহাল বলল,

‘ হচ্ছিলটা কী শুনি? একটু পর পর মুখে কেন পানির ফোঁটা এসে পড়ছিল? আর চুল ঝাঁড়ার আর জায়গা পেলে না? ‘

‘ আসলে না মানে, আমি মানে। ‘ কথা শেষ করার পূর্বেই নেহাল তার ওষ্ঠের সাহায্যে মেহুলের ওষ্ঠযুগল আঁকড়ে ধরল। ঘটনার আকস্মিকতায় মেহুলের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। নেহালের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করার পূর্বেই মেহুলের ঠোঁট আলগা হয়ে আসে। মেহুল তৎক্ষণাৎ উঠে বসে, অন্যদিকে দৃষ্টিক্ষেপ করে। তার সাথে কী ঘটে গেল? নেহাল হাসতে হাসতে বলল,

‘ ছোট্ট মাথায় এত চাপ নিচ্ছ কেন? একটু মিষ্টি নিয়েছি জাস্ট। তো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? যাও নিচে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ‘

মেহুল কিছু বলল না। মুখ গোমরা করে বাইরে বেরিয়ে গেল। তবে তার যে খারাপ লেগেছে বিষয়টা তো এমন না! তবে এই অহেতুক রাগ কাকে দেখাচ্ছে সে? একা একাই এসব বিড়বিড় করতে করতে কিচেনে গেল সে।

_________
তিন মাস পর,

সময়ের পরিক্রমায় কেঁটে গিয়েছে তিন তিনটি মাস। ভাবা যায়! যেই মেহুল বিয়ে করবে না বলে বাবার সাথে রাগ করেছিল সেই মেহুল এখন নেহালের প্রেমে পাগল। তবে পাগলামিটা দুপক্ষের। কোনো একপাক্ষিক, অবৈধ পাগলামি নয়। মেহুলের বাবার সাথে তার সমস্যার সমাধান হয়েছে। তাও এক অভিনব কায়দায়। নেহালের কাছে সবটা শোনার পরেই মেহুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে –

“বাবাকে আর কোনো মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে দেবে না। এমনিতেই সে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে আর না।”

এই উপলব্ধি থেকেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান। কত সুন্দর তাই না! প্রতিটি সন্তানের উচিত বাবা-মায়ের দোষ খোঁজ করার পূর্বে নিজের ব্যর্থতা তালাশ করা। আর জিয়া সাহেব তো নিরুপায় হয়ে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার একটা পন্থা খুঁজেছিলেন। সেই থেকেই পাপের সূত্রপাত এবং তা ঘনীভূত হয়ে মহাপাপে পরিণত হওয়ার পথেই ছিল। সে যাত্রায় কোনো মতে বেঁচে গেলেও সন্তানকে কালিমামুক্ত রাখতে অবশ্যই কঠোর হওয়ার অধিকার একজন পিতার রয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে মেহুলের বিয়ে। আর ভাগ্যে ছিল বলে মিহিরের বিয়েটাও হয়ে যায়। এই সামান্য বিষয় নিয়ে সপ্তাহজুড়ে মান অভিমানের পালা অবশেষে থামল। মেহুল কেঁদে কেঁদে জিয়া সাহেবের কাছে আক্ষেপ করে বলেছিল,

‘ সবটা আমাদের জন্য করে আমাদের ফেলেই হারিয়ে যেতে চেয়েছিলে? তখন কিছু বলিনি বলে খুব সাহসী হয়ে গিয়েছো তুমি তাই না! ‘

‘ নারে আম্মু। ভুল করেছি তো। আর হবে না। ‘

ব্যস আর কী কোনো সিকারোক্তির দরকার আছে? এভাবেই বাবা-মেয়ের সম্পর্ক লাভ করেছিল এক নতুন উচ্চতা। যা দেখে মিহির, মিসেস জিয়াও কেঁদেছিলেন অঝোর ধারায়। এ যে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বলা যায় কান্নার মহোৎসব! বাবা মেয়ের মিলনে নেহাল যেন শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। সেই থেকে মেহুলকে আর দুঃখেরা তাড়া করতে পারেনি। তবে মিহিরের কেস নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই তার!
কেননা সময়ের সাথে সাথে অন্যসব ঘটনার মতো এটাও প্রায় ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। যার ফলে সঠিক বিচার আজও পেল না মিহির। মেয়েটা এই ক’দিনে বেশ সংসারী হয়ে উঠেছে। রায়হানের সাথেও ওর সম্পর্কটা দিনকে দিন গাঢ় হয়েছে। আজকে মেহুল আর নেহালের একটু ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আর তারই প্রস্তুতিতে মেহুল লাগেজ গোছাতে ব্যস্ত ছিল। সেই সুবাদেই অতীত চারণ করে ফেলেছিল সে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল মেহুলের। ফোনের নাম্বারটা চেক না করেই রিসিভ করেছিল সে। কিন্তু যা শুনলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুতি ছিল না মেহুল।

‘ ভাবছিলি জামাই, বাপ আর বোইনরে লইয়া কাইট্টা পইরা বাঁইচা যাবি? তোরে দেইখ্খা নিব এই সাহেদ মিয়া। ‘

‘ আপনার টাকা তো আপনি পাচ্ছেন প্রতিমাসে সুদ সমেত। তাহলে এধরনের হুমকির কী মানে? ‘ প্রতিত্তরে বলল মেহুল।

‘ আমি আমার টেকা এক্কেবারে চাই। নাইলে কিন্তু! ‘ কথা উহ্য রেখেই হুমকি প্রদান করল সাহেদ মিয়া।

‘ আশ্চর্য তো! আপনার সমস্যা কী বলেন তো? এমন অসভ্য আচরণ কেন করছেন? ‘ বিরক্তি নিয়ে বলল মেহুল।

‘ তোর জামাই আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট মা*য়। ওয় কী জানে না আমি বাজিগর। মুহূর্তে চাল পাল্টায় দিবার পারি। কামডা কইলাম ভালা করতাছে না। এরপর যা হইব তার দায়ভার কিন্তু তোর জামাইয়ের। ‘ এতটুকু বলে কল কাটলেন সাহেদ মিয়া।

মেহুল আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। তবে তার নিকট পরিষ্কার হলো যে হঠাৎ টাকার উছিলায় সাহেদ মিয়ার কল করার রহস্য। মাঝে মাঝে নেহালের পেশা নিয়ে তার বড্ড ক্ষোভ হয়। কেন যে জীবন বাজি রেখে এসব করতে হবে? দেশে কী চাকরির অভাব ছিল? ঘুরে ফিরে তার বরকেই সাংবাদিক হতে হলো! আবার যখন সমাজের অসংগতি পূর্ণ অবস্থা তুলে ধরায় নেহাল প্রশংসিত হয় তখন মেহুলের প্রচণ্ড গর্ব বোধ হয়। তবে নেহাল যে বড়সড় কোন ঘটনা সৃষ্টি করেছে তা বেশ বুঝতে পারছে মেহুল। মেহুল কল লাগালো নেহালকে। দু’বার রিং হয়ে কেটে গেল। এবার মেহুলের মনে ভয়েরা দানা বাঁধল। হুমকি জনিত ফোন আগেও ধরেছে সে তবে কখনো এত ভয় কাজ করেনি তার মাঝে। কিন্তু আজ কেন যেন ভয় জেঁকে বসেছে মেহুলের মনে।

ঘণ্টাখানেক পর,

মেহুল টিভি ছাড়ল। উদ্দেশ্য আজকে কী এমন নিউজ প্রকাশিত হলো তা জানা। খবরের চ্যানেল প্লে করতেই তাতে লালরঙা গোটা অক্ষরে লেখা ব্রেকিং নিউজ মেহুলের শরীরে হাই ভোল্টেজের ইলেকট্রিক শক দেয়। তাতে লেখা রয়েছে –

“আলোচিত, বিতর্কিত সাংবাদিক নেহাল হাসনাত গ্রেফতার। বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত সংবাদ প্রচার করে ক্রাইম রিপোর্ট নামে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাহেদ মিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যে, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত রিপোর্ট করে সে। এরই প্রেক্ষিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ও মানহানির মামলায় আটক তিনি।”

এই সংবাদ দেখে মেহুল চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। সেই কান্না শুনে নিশি ও মিসেস রহমান ছুটে আসে। তারাও হতবাক হয়ে যায়। এ কী করে সম্ভব! তাদের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না নেহালকে এভাবে ফাঁসানো হয়েছে। বিভিন্ন চ্যানেলে টকশো আয়োজন করে নেহালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। নেহালের কর্মস্থলেই আয়োজিত হয়েছে একটি টকশো যার প্রধান অতিথি শিহাব মির্জা। যে কিনা মিহিরের কেসের প্রধান আসামী। মেহুলের কাছে একটু একটু করে রহস্যের জট উন্মোচিত হচ্ছে। হঠাৎ নেহালের গ্রেফতারের পেছনের রহস্য। নেহাল যেসকল প্রভাবশালী মহলের অপকর্মগুলো সমাজের প্রত্যেকের কাছে উন্মোচিত করছে। সেসকল প্রভাবশালী মহল মিলিত হয়ে নেহালের বিরুদ্ধে চরম কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একপ্রকার নিশ্চিত মেহুল। কিন্তু এখন কী করা যায়! তা নিয়ে মারাত্মক চিন্তায় পড়ে মেহুল।
__________

#চলবে_ইনশাআল্লাহ…

#NUSRAT_TABASSUM_METHILA

[ রিচেক হয়নি। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

[ আগামী পর্ব হতে চলেছে এই গল্পের প্রথম পরিচ্ছেদের সমাপ্তি পর্ব। ঘটনা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সামনে আরো চমক অপেক্ষমাণ। তাই সকলকে সাথে থাকার অনুরোধ। আমি হয়ত স্বল্প বিরতিতে যাব। তবে বিরতি থেকে ফিরেই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ লেখা শুরু করব। ইনশাআল্লাহ আপনারা নিরাশ হবেন না। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here