বৃষ্টিস্নাত_ভোর #পর্ব_০৪ #লেখনীতে_নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা

0
318

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্ব_০৪
#লেখনীতে_নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা

_________

৪.

কী থেকে কী হয়ে গেলো! কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি মেহুল। আজ তার বিয়ে। কনের সাজে সেজে বসে রয়েছে মেহুল। তার অজান্তেই তার বাবা যে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তা দেখে মেহুলের খুব কষ্ট হচ্ছে। আরেকটি বিষয় বেশ আশ্চর্যজনক! আজকে মিহিরের বিয়েরও আয়োজন করা হয়েছে। ফলে ঘটনাটি দাঁড়ালো এই যে আজকে দুই বোনের একসাথে বিয়ে হচ্ছে। মিহিরকেও কনে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে। ঘটনার আকস্মিকতায় মেহুল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে মিহিরের মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই। সে স্বাভাবিক ভাবেই সবটা মেনে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে মেহুলের। হঠাৎ মিসেস জিয়ার আগমন ঘটল মেহুলের ঘরে। ঘরে মেহুল ও মিহির দুজনেই কনে সেজে বসে রয়েছে। মিসেস জিয়া গলা ঝেড়ে কাশলেন অতঃপর বললেন,

‘ মেহুল আম্মু এতটা উদাস দেখাচ্ছে কেন তোমায়? ‘

‘ আম্মু তোমরা আমাকে না জানিয়ে আমার জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে? ‘ নিষ্প্রভ হয়ে বলল মেহুল।

‘ মেহুল আমরা কী কখনো তোমার জীবনে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছি? ‘ মিসেস জিয়ার চটপটে উত্তর।

‘ আম্মু কিন্তু আমি তো বিয়ে করতে চাই না। আর আমায় বিয়ে দিচ্ছ ভালো কথা মিহিরকে কেন দিচ্ছ। ও তো অনেক ছোট। ওর তো বিয়ের বয়স হয়নি। ‘ একনাগাড়ে কথাগুলো বলে দম নিল মেহুল।

‘ মিহির কী কোনো আপত্তি জানিয়েছে? ‘ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন মিসেস জিয়া।

‘ না কিন্তু…? ‘ মুখ নিঃসৃত কথা শেষ করতে পারল না মেহুল। তাকে থামিয়ে দিয়ে মিসেস জিয়া বললেন,

‘ আমাদের ভরসা করে দেখ মেহুল। জীবনে নিরাশ হবে না মামণি। ‘

‘ আচ্ছা আম্মু আমার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে? ‘ মেহুল প্রশ্নবান তাক করল মিসেস জিয়ার প্রতি।

‘ তোমার বিয়ে নেহাল হাসনাতের সাথে আর মিহিরের বিয়ে হবে রায়হান কবিরের সাথে। ‘

‘ মম ম. মানে কী? চেনা নেই জানা নেই এমনি একজনের সাথে আমাদের জীবন জড়িয়ে দিচ্ছ আম্মু। ‘ বিস্ময় নিয়ে মনের ভাবগুলো ব্যক্ত করল মেহুল।

‘ এ নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাইছি না মেহুল। আমি আসছি। বর আসার সময় হয়ে গিয়েছে। ‘ বলেই কক্ষ থেকে প্রস্থান করলেন মিসেস জিয়া।

মেহুল হতাশাভরা চোখে মিসেস জিয়ার পথের পানে চেয়ে ছিল। তার চোখ অশ্রুতে টইটম্বুর। টুপ করে দু’ফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে বেনারসি শাড়ির ওপর পড়ল। মিহির ড্রেসিং টেবিলের সামনের চেয়ার ছেড়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালো, ঠিক যেখানটায় মেহুল বসে রয়েছে। তারপর মেহুলের পাশে বসে নিজের হাতে মেহুলের অশ্রুসিক্ত মুখখানা তুলে ধরলো। সযত্নে চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,

‘ আপাই তুই ভেঙে পড়ছিস কেন? নিশ্চয়ই সামনে আমাদের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। তাছাড়া নেহাল ভাই তো খারাপ মানুষ নন। তুই অযথা এত কী ভাবছিস? ‘

‘ মিহির কী এমন হলো যে এভাবে তড়িঘড়ি করে আমাদের বিয়ে দিতে হবে? আমার জীবন নিয়ে কত স্বপ্ন সাজিয়ে ছিলাম। সবটাই কী তবে বৃথা! ‘

‘ আহা আপাই মন খারাপ করো না। ‘ বলে আশ্বস্ত করলো মিহির।

‘ কাল রাতে কী হয়েছিল? নেহালকে আমি বাসায় আসতে বলেছিলাম। উনি বাসায় তো আসলেন না বরং আব্বু তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন। আর ফিরে এসেই বললেন তোর আর আমার বিয়ে। তাও বিয়ের পরে দেশ ছাড়তে হবে। কার সাথে বিয়ে সেটাও পরিষ্কার করলেন না। কেন? এসবের পেছনে কী এমন রহস্য লুকানো আছে? আর তুই সবটা মেনে নিচ্ছিস কী করে? কোনো প্রশ্ন জাগছে না মনে? নাকি তুই সবটা জানিস? বল ঠিক কী লুকিয়ে যাচ্ছিস আমার কাছে? ‘ কথাগুলো একনাগাড়ে বলে হাপিয়ে উঠল মেহুল।

‘ আপাই শান্ত হ। তুই আস্তে আস্তে সব জানতে পারবি। অস্থিরতা তোকে মানায় না। ‘ এতটুকু বলতেই মিসেস জিয়াসহ বেশ কিছু মহিলা মেহুল আর মিহিরকে নিতে আসল। বর এসেছে বলে হৈ হৈ করছে ছোট বাচ্চারা। যদিও তেমন কাউকেই এই বিয়েতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। মনে হচ্ছে বিয়েটার আয়োজন খুব গোপনীয়তা রক্ষা করে করা হয়েছে। যেন মানুষ জেনে গেলেই বিপদ! কেন এত গোপনীয়তা কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না মেহুলের। মিহিরের কথার প্রতিত্তোরে কিছুই বলার সুযোগ পেল না মেহুল। তার পূর্বেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বসার রুমে। যেখানে কাজীর উপস্থিতিতে মেহুল তানজুম ও নেহাল হাসনাত এবং মিহির তানজুম ও রায়হান কবিরের বিয়ে পড়ানো হবে। খুবই অনাড়ম্বরভাবে ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা আরম্ভ হয়। এই বিয়ের আয়োজনে না হয়েছে কোনো গায়ে হলুদ, না কোনো মেহেদীসন্ধ্যে আর নাইবা কোনো অন্য আয়োজন।

অবশেষে একজোড়া নবদম্পতির বিবাহ সম্পন্ন হলো। মিহির কবুল বলতে বিলম্ব না করলেও মেহুল সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সে কবুল বলে বিয়ে মঞ্জুর করে নেয়। নেহালের দিকে খানিকটা সময় আড়চোখে তাকিয়ে ছিল মেহুল। তবে নেহালের মাঝে কোনো অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়নি। যেন এটা অন্যান্য সকল বিয়ের মতোই স্বাভাবিক বিয়ে। নেহালের কোনো ভাবান্তর না দেখে মেহুলের বেশ খানিকটা খটকা লাগে। তবুও তো কিছুই করার ছিল না তার। অপরাগ হয়ে বিয়েটা সেরে নিতে হয়। মিহির স্বাভাবিক, প্রাণোচ্ছল থেকেই সম্পূর্ণ বিয়ে সম্পন্ন করেছে। এ নিয়ে মিহিরের যেন কোনো আক্ষেপ নেই! কী অদ্ভূত তাই না! হঠাৎ নেহালের কথায় ধ্যান ভঙ্গ হলো মেহুলের। কল্পনার জগতে সে এতটাই মগ্ন ছিল যে তৃতীয়বার ডাক দেয়ার পর তা কর্ণগোচর হয় তার। চমকে উঠে পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখে স্মীত হাসি ঝুলিয়ে বলল,

‘ কিছু বলছেন নেহাল? ‘

‘ বলছি তো অনেক কিছু। কিন্তু আপনি কোথায় হারিয়েছিলেন? এতবার ডাকলাম শুনতে পেলেন না! ‘

‘ আসলে মনটা কেমন যেন খচখচ করছে। অনেকগুলো রহস্য আমায় চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে। কিছুতেই এ থেকে বের হতে পারছি নাহ্। যতই গভীরে প্রবেশ করতে চাইছি ততই রহস্যজালে পেঁচিয়ে যাচ্ছি। ‘ অন্যমনস্ক হয়ে বলল মেহুল।

‘ নিজের মাথায় এত প্রেশার নিবেন না। আমি সময়মতো সব বলবো আপনাকে। ‘

‘ হুম। ‘

এতক্ষণ সোফায় পাশাপাশি বসে দুজনে কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছিলো। এখন সেই কাঙ্ক্ষিত বিদায় মুহূর্ত। আচ্ছা এই মুহূর্তটা কী কাঙ্ক্ষিত না অনাকাঙ্ক্ষিত! হয়তো একদল মানুষের জন্য এই মুহূর্ত পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়। আবার একদল মানুষের জন্য এরচেয়ে দুঃসময় বলতে আর কিছু নেই। মেহুলের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বাক্যটি প্রযোজ্য হয়েছে। তার এখনো বিশ্বাস হতে চাইছে না যে, ” মা-বাবাকে ছেড়ে আজীবনের জন্য চলে যেতে হবে তাকে। এত বছরের কর্তৃত্ব, হাসি-কান্নার স্মৃতি, মুহূর্তে জর্জরিত কুঠির ছেড়ে অন্য কারোর সংসারে যেতে হবে। এ সত্য বাস্তব হলেও বড্ড কঠিনই বটে। ” বাসার দরজার সামনে গিয়ে আবার পিছু ফিরে আসে মেহুল। মিসেস জিয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে সে। মিসেস জিয়া প্রকাশ্যে অশ্রু বিসর্জন না করলেও হৃদয়ে তার অশ্রু বর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে। কোনো এক *বৃষ্টিস্নাত ভোরে* তাদের কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিল মেহুল। চোখের নিমিষে সময় অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে কিন্তু কখনো তা পরিলক্ষিত হয়নি মিসেস জিয়ার। তবে আজ মেয়ের বিদায় লগ্নে সেই হিসেব যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দূরে দাঁড়িয়ে মেহুলের অশ্রুসজল চোখজোড়ার ভাষা, বেদনা পড়ার চেষ্টা করছেন জিয়া সাহেব। মেয়ে তার বড্ড অভিমানীনি। তার সাথে বিদায় মুহূর্তে একটা কথাও বললো না। জিয়া সাহেব আর মেয়ের সামনে যাওয়ার সাহস পেলেন না। তবে তার বিশ্বাস মেয়ে তার একদিন ঠিক বুঝবে ” তার বাবা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। ” এই প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষা করবেন জিয়া সাহেব। আর মেহুলের এমন হৃদয় বিদারী কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। মিহির থেকে থেকেই ফুঁপিয়ে উঠছে । তাকে বুকে আগলে রায়হান সান্ত্বনা দিচ্ছে। দীর্ঘ কান্নার পালা শেষে মেহুল আর মিহির উভয়ে রওনা হলো তাদের নতুন ঠিকানায়, নতুন গন্তব্যে; একটা সুন্দর সূচনার আশায়। মিসেস জিয়া আর জিয়া সাহেব একই সাথে দুই মেয়ের বিদায়ে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে। কিছুতেই মেয়েদের ছাড়া তাদের মন টিকছে না। তারা অত্যন্ত মনঃকষ্টে ভুগছেন।

__________

#চলবে_ইনশাআল্লাহ…

#NUSRAT_TABASSUM_METHILA

[ দীর্ঘ তিনদিন বিরতি দেয়ার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমি প্রচণ্ড অসুস্থ ছিলাম। ঘাড়ে ব্যথা আর পিঠের ব্যথার জন্য মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকাটা অসম্ভব ছিল। আবার ক্লাস, অ্যাসাইমেন্ট সবটা সামলে গল্প লিখে উঠতে পারিনি। আমার জন্য দোয়া করবেন। ]

[ রিচেক হয়নি। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here