#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫
নামাজ পড়ে এসেই আদ্রিয়ান মিশিকে কোলে নিয়ে রুমে এলো। রোদ ফোনে কথা বলছিলো প্রাণ প্রিয় বেস্টফ্রেন্ড ইয়াজের সাথে যে কিনা বছর দুই এক বড় রোদ থেকে। মেডিক্যালে পড়ে ইয়াজ। হঠাৎ আদ্রিয়ান আসাতে রোদ “পরে কথা বলি” বলে কল কেটে দিলো। আদ্রিয়ান একটু পরখ করে তাকালো। আদ্রিয়ানকে দেখে কল কেটে দেওয়াটা তেমন একটা পছন্দ হয় নি আদ্রিয়ানের। গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— কে ছিলো?
— ইয়াজ।
— ইয়াজ?
— ফ্রেন্ড।
— শুধু ফ্রেন্ড?
— না।
না বলাতেই যেন কিছু একটা হলো আদ্রিয়ানের। ফ্রেন্ড না মানে কি এর থেকেও বেশি? জিজ্ঞেস করবে এমন সময় হুরমুর করে জারবা রুমে ডুকে বললো,
— ছোট ভাইয়া ছোট ভাইয়া?
আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বললো,
— এমন হুরতার না করে আস্তে করে বল কি হয়েছে।
— হুরতার তো করতে হবেই। ছোট ভাবীর বাসা থেকে ডালা এসেছে দুপুরের। এত সব কোথায় রাখবে বুঝতে পারছে না কেউ। আব্বু আসছে বাসায় আর বড় ভাইয়া তো বাসায় নেই। তুমি তারাতাড়ি আসো আম্মু ডাকে তো। আর জানো সাথে ইয়া বড় এক ছাগল ও দিয়েছে।
একদমে সব কথা বলে হাফ ছাড়লো জারবা। ততক্ষণে সাবা রুমে এসে বললো,
— জারবা তোমাকে পাঠালাম কেন আর তুমি কি করছো?
— আল্লাহ বড় ভাবী আমি তো ছোট ভাইয়াকে শিরোনাম বললাম। বিস্তারিত নিচে চলছে তাও বললাম। বলো বলি নি ছোট ভাইয়া? সাথে ছাগলের কথাও বলেছি।
সাবা ওর মাথায় গাট্টা মে’রে বললো,
— পাগলী ওটা খাসি ছাগল না।
বলেই আবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— রোদকে নিয়ে নিচে আসো তারাতাড়ি। ও বাড়ী থেকে ডালা এসেছে। তারাও গাড়িতে আছে। এসে পরবে যে কোন সময়ে।
বলেই জারবার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। রোদ হাবলার মতো তাকিয়ে সব শুনে গেল এতক্ষণ। আদ্রিয়ান ওকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
— কি ভাব সারাদিন?
— কই কিছু না।
আদ্রিয়ান ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। একটা প্লাজুর সাথে কুর্তি পরে আছে রোদ। আদ্রিয়ান একটা চিরুনি এনে পেছন থেকে ওর চুল আঁচড়ে দিতে দিতে বললো,
–আজ কিন্তু যেতে চেও না। আমরা পরে যাব। ঠিক আছে?
রোদ আশ্চর্য চোখ করে তাকালো। যেই চাহনির মানে হলো, কেন রোদ যাবে না? একশত বার যাবে সাথে মিশিকেও নিয়ে যাবে। তাই ঘাড় কাত করে বললো,
— আমি যাব মিশিকে নিয়ে।
— না বললাম তো।
— আমি হ্যাঁ বললাম তো।
আদ্রিয়ান চুলগুলো একসাথে করে বেঁধে দিয়ে বললো,
— জামাইয়ের কথা না শুনলে পাপ হবে কিন্তু।
রোদ অসহায় মুখ করে হয়ে তাকিয়ে রইলো। আদ্রিয়ান সেই মুখে তেমন পাত্তা না দিয়ে রোদের মাথায় ঘোমটা দিয়ে হাত ধরে নিয়ে নিচে এলো। ওরা আসতেই দেখলো রাদের কোলে মিশি৷ বিয়ের আগে মিশির সাথে তাদের তেমন একটা মেলামেশা হয় নি তবুও কেমন করে মিশে আছে রাদের সাথে। মায়ের ভাই মামা বলে কথা। এটা ভিন্ন রঙের একটা সম্পর্ক যা শুধু মাত্র মামা আর ভাগ্নি, ভাগ্নের সঙ্গে হয়ে থাকে৷ রোদকে দেখেই রুদ্র এসে জড়িয়ে ধরলো বোনকে। রোদও ভাইকে পেয়ে আদর করে দিলো। রাদ মিশিকে কোলে নিয়েই এসে বোনকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো। মিশি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
— মাম্মা মামা দিয়েছে।
বলে হাত এগিয়ে দেখালো। অনেক গুলো চকলেট।
এগুলো সব রুদ্র এনেছে। ওর একমাত্র ভাগ্নি বলে কথা। কত শত দায়িত্ব আছে রুদ্রর। রাগ চটা রাদও কম না ভাগ্নিকে আদর আদরে ভরিয়ে তুলছে সে। রোদদের বাসা থেকে রাদ,রুদ্র, ইশান তার বউ সহ বাকি সব কাজিনরা এসেছে। এসব ডালা নাকি কাজিনদের ই আনতে হয়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে রোদদের বাসা থেকে জামাই ডালা হিসেবে বিশদ জিনিস পত্র পাঠানো হয়েছে। ৫ ভ্যান ভর্তি খাবার সাথে ফল, মিষ্টি আলাদা। নিজেদের ঐতিহ্য বজায় রাখতে বড় খাসি হাঁটিয়ে পাঠিয়েছেন। এত সব গোছাতে গোছাতে সাবা, আদ্রিয়ানের মা সহ কাজের খালা অস্থির। আরিয়ান ও ততক্ষণে বাসায় এসে পরেছে। মেহমানদের একেবারে ডায়নিং টেবিলেই বসানো হলো। এমনিতেই ২ টার বেশি বাজে।
রোদ একপ্লেটে একটু পোলাও আর চিকেনের পিস নিলো সাথে অল্প ভেজিটেবলও নিলো। মিশি এখনও না খেয়ে। আসছে পর থেকেই মামাদের নিয়ে ব্যাস্ত সে। কোল থেকে নামাচ্ছেই না রাদ, রুদ্র। রোদ রাদের সামনে এসে বললো,
— ভাইয়া ওকে দাও। খাবে এখন।
— দিতে হবে ক্যান। এখানেই খাওয়া।
অগত্যা রাদের কোলে বসে থাকা মিশিকে খাওয়াতে লাগলো রোদ। আদ্রিয়ান সহ পুরো পরিবার মুগ্ধ নয়নে তা দেখলো। রোদ মিশির অগচড়ে পোলাওর ভিতরে ভেজিটেবল ডুকিয়ে মিশিকে খাওয়াচ্ছে যেখানে মিশিকে এই পর্যন্ত কেউ সবজি খাওয়াতে পারে নি। মিশিকে খাওয়ানো শেষ হতেই রোদ ওকে কোলে তুলে নিলো। রুদ্র আবারও চাইলেই রোদ বললো,
— ঘুমাবে এখন। আমি ঘুম পারিয়ে আসি।
বলে মিশিকে নিয়ে উপরে চলে গেল। নিচে সবাইকে যত্ন আদি করতে লাগলো আদ্রিয়ানের পরিবার। রোদ মিশিকে বুকে নিয়ে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই মিনিট দশ একের মধ্যে ঘুমিয়ে গেল মিশি। রোদ ওর কপালে চুমু খেয়ে দুই সাইডে বালিশ দিয়ে আটকে আস্তে করে উঠলো। ওমনি রুমে ডুকলো আদ্রিয়ান। মিশির দিকে একবার তাকিয়ে বললো,।
— ঘুমিয়ে গেল এত তারাতাড়ি?
— হুম।
বলে উঠে দাঁড়িয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ান ওর দিকে এগিয়ে এসে আঙ্গুল দিয়ে রোদের চুল গুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বললো,
— চুল না বেঁধে দিয়েছিলাম এত এলোমেলো হলো কিভাবে?
— মিশি নাড়ছিলো শুয়ে শুয়ে।
— ওহ।
বলে রোদকে নিয়ে নিচে নামলো। এত বড় ডাইনিং টেবিল হলেও সবার একসাথে জায়গা হয় নি হবেই বা কিভাবে? একগাদা শালা শালী আদ্রিয়ানের। তাও নাকি ছোটদের আনে নি। রাদরা শেষে বসলো। রোদকেও সাবা বসিয়ে দিলো।রাদ নিজের প্লেট থেকেই বোনের মুখে তুলে তুলে দিলো। এতে করে রোদ নিজের প্লেটের গুলো শুধু হাত দিয়ে একটু নেড়ে চেড়ে রেখে দিলো। আদ্রিয়ানকে বসতে জোর করায় আদ্রিয়ান রোদের পাশে বসে রোদের প্লেটটা নিয়ে ওটা থেকেই খাওয়া শুরু করলো। রোদ টেনে নিয়ে বললো,
— এটা কেন খাচ্ছেন?
— তুমি তো আর খাচ্ছ না।
— তাতে কি? নেড়েছি আমি।
— তাতে কি? খাব আমি।
বলে খেতে শুরু করলো। রাদ রোদের মুখে আরেক লোকমা ডুকিয়ে দিলো। রাদের হঠাৎ করেই যেন মনে হলো, আদ্রিয়ান তার বোনের জন্য বেস্ট। রোদ আর খাবে না দেখে রাদ হালকা ধমকে বললো,
— হা কর।
— দেখ না পেট ফুলে গিয়েছে।
— মাইর খাবি কিন্তু রোদ।
অগত্যা শেষ লোকমা মুখে পুরে চিবুতে চিবুতে বললো,
— এটাই শেষ আর খাব না।
রাদ মুচকি হেসে বোনের ঠোঁটের নিচে থেকে পোলাওর দানা ফেলে দিলো। আজও ছোট্ট তার এই বোন। কিভাবে যে কি হলো ভাবতে পারে না রাদ।
_________________
বিকেল দিকে নাস্তা করেই যাওয়ার তাড়া দিলো রাদ। কাবিনের পর দিন যদিও বাবার বাড়ী যাওয়ার নিয়ম নেই তবুও রাদ জোর করে নিবেই নিবে। রোদকে বললো,
— মিশিকে নিয়ে আয়।
আদ্রিয়ানের মা এগিয়ে এসে বললো,
— বাবা কয়েকদিন পর যাক। আসলে এদিকের আত্মীয়রাও বউ দেখবে। আদ্রিয়ানের নানু, খালারাও কেউ বউ দেখে নি।
— আসলে আন্টি আজকে রোদকে নিয়ে যাই পরে আসলে নাহয় দেখিয়েন।
আদ্রিয়ানের মা বুঝলো এই ছেলে বোন নিয়েই যাবে। আদ্রিয়ানের কথা মানতেও নারাজ রাদ। অবশেষে রোদকে জিজ্ঞেস করতেই রোদ মিনমিন করে বললো,
— ভাইয়া আমি পরেই যাব নে।
রাদ কি আর বলবে। রুদ্র বেঁকে বসে বোনকে আঁকড়ে ধরে রাখলো। রাদ একটু হেসে বললো,
— কিরে তোকে কি কালকের মতো কাঁধে তুলে নিব নাকি?
রোদ না বুঝে বললো,
— মানে?
ইশান হেসে দিয়ে বললো,
— কাল তুই যাওয়ার পর রুদ্র সেন্টারে হাত পা ছড়িয়ে কান্না করছিলো। না পেরে রাদ কাঁধে তুলে গাড়িতে বসিয়েছে।
রোদ জানে রুদ্র কেমন। সবার সামনে বলায় রুদ্র একটু লজ্জা পেল। তাই বোনের হাত ধরেই গাড়ি পর্যন্ত গেল। রাদ বোনের মাথায় চুমু খেয়ে আদর করে দিলো। একসময় দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে গেল অতিপরিচিত মুখগুলো। রোদের ভেতরে যেন মুচড়ে উঠলো। গতকাল রাতেও ওতো এত কষ্ট হয় নি তবে আজ কেন? হয়তো গতকালের এত ধকলে ওতটা ফিল হয় নি তবে আজকে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে মন চাইছে রোদের। চোখ জ্বালা করছে। আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই রোদ সাইড কেটে চলে গেল। একদম রুমে ডুকে ওয়াসরুমে ডুকে সবগুলো কল ছেড়ে কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি এসে দরজা নক করলো কিন্তু লাভ হলো না। রোদ মুখে হাত চেপে কেঁদেই যাচ্ছে। ও তো আজ যেত বাসায় কিন্তু আদ্রিয়ান দিলো না। এক দফা কেঁদে কান্নার রফাদফা করে মুখে পানি দিয়ে বের হলো রোদ। আদ্রিয়ান এতক্ষণ দরজায় নক করছিলো। রোদ বের হতেই কিছু বলবে তার আগেই রোদ সাইড কেটে মিশির পাশে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বালিশে মুখ গুজে রইলো। আদ্রিয়ান চিন্তিত মুখ করে এগিয়ে গিয়ে রোদের মাথায় হাত রাখতেই রোদ ঝামটা মে’রে হাত সরিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান আবারও হাত দিলে একই কাজ করলো রোদ। এবার চটে গেল আদ্রিয়ানও। বাহু ধরে একটানে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো রোদকে। হাত চেপে ধরে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে?
………
— কিছু জিজ্ঞেস করেছি?
………
— রোদ?
হঠাৎ আদ্রিয়ান ধমকে উঠায় কেঁপে উঠলো রোদ। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালো। মিশি ঘুমের মধ্যেই নড়ে উঠলো।আদ্রিয়ান নিজেকে শান্ত করলো। আস্তে করে টেনে সামনে বসিয়ে বললো,
— আচ্ছা কেঁদো না। আমরা যাব তো কিছুদিন পর।
কে শুনে কার কথা? বাসায় যেতে না পারার শোকে কাতর রোদ হাত ছাড়িয়ে নিলো। উল্টো ঘুরে শুয়ে রইলো। আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই জারবা রুমে নক করে বললো,
— ছোট ভাইয়া?
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদ্রিয়ান বললো,
— আয়।
জারবা ভেতরে ডুকে ইনমিন করতে লাগলো। আদ্রিয়ান জানে এই পাগল জারবার কিছু একটা চাই। তাই জিজ্ঞেস করলো,
— কি চাই? আবদারটা কি?
খুশিতে দুই লাফে ভাইয়ের সামনে এলো জারবা। আদুরে গলায় বললো,
— ভাইয়া আমি পুটকুকে পালি?
আদ্রিয়ান মুখটা কেমন করে জিজ্ঞেস করলো,
— কে পুটকু?
— ঐ যে খাসিটা।
— তুই ওর নামও রেখেছিস?
— হু হু আমি, মিশি আর আলিফ মিলে রেখেছি।
এমন সময় আলিফ উঁকি দিয়ে ভেতরে এলো। আদ্রিয়ান হেসে ওকে কোলে তুলতেই আলিফও আবদার করলো,
— চাচ্চু আব্বু বলছে পুটকুকে পালতে দিবে না। তুমি না করো না আব্বুকে।
আদ্রিয়ান জানে এই সবকিছুর হোতা হলো এই জারবা। সারাদিন ওর যতসব আজাইরা আবদার। রোদ ঘুমিয়ে গিয়েছে একটু পরই মিশি পিটপিট করে চোখ খুললো। আলিফকে আদ্রিয়ানের কোলে দেখেই উঠে ঠেলে নিজেই জায়গা বানালো বাবার কোলে। কোলে বসেই বাবার গালে গাল লাগিয়ে আদর করে দিয়ে ডাকলো,
— বাবাই?
— পুটকুকে পালতে চায় আমার মা, এটাই তো?
মিশি খুশিতে বাবার ঠোঁটে চুমু খেল। জারবা দাঁত বের করে হেসে কোলে তুলে নিলো মিশিকে। গালে চুমু খেয়ে বললো,
— সাব্বাস আমার ভাইয়ের মে। আমি জানতাম তুমি পারবে। আফটার অল আ’ম ইউর ট্রেইনার।
মিশি খুশিতে হেসে উঠলো। ফুপি ওর প্রশংসা করছে তা ও বুঝতে পেরেছে। আলিফ আর মিশিকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল জারবা। আদ্রিয়ান তাকালো রোদের দিকে। একগালে হাত দিয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। কতটা নিষ্পাপ এই মুখ, কতটা শান্তিদায়ক এই চেহারা। কেউ কিভাবে পারে এই মেয়েকে কটু বাক্য শুনাতে? কিভাবে পারলো ছোট মেয়েটার ছোট হৃদয়ে এতটাই আঘাত করতে যে….
আর ভাবতে পারলো না আদ্রিয়ান।
_________________________
মাগরিবের পরই চোখ খুললো রোদ। প্রায় এক দেড় ঘন্টা ঘুমিয়েছে ও। এত অল্প সময় কখনোই ঘুমায় না ও। হাই তুলে উঠে ওযু করে নামাজ পড়ে নিলো। একটু পরই মিশি রুমে এলো। রোদ ওকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে নামলো। নিশ্চিত মিশির ক্ষুধা লেগেছে। কিচেনে উঁকি দিতেই দেখলো আদ্রিয়ানের মা আর সাবা দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে কিছু করছে। রোদ একটু এগিয়ে গিয়ে ডাকলো,
— আন্টি।
আদ্রিয়ানের মা হেসে বললো,
— আরে মা তুই নামলি যে? কিছু লাগলে কাউকে বলতি?
রোদ মুখ লটকিয়ে বললে,
— আসলে মিশিকে কিছু খাওয়াতাম। দুপুরের পর তো কিছু খায় নি তাই এলাম।
— আরে বোকা মেয়ে আমি ওভাবে বলি নি। তোর যখন যেখানে মন চায় আসবি। তোর বাসা এটা।
রোদ একটু হেসে বললো,
— আমি কিছু বানাই?
আদ্রিয়ানের মা না করলেও সাবা বললো,
— আচ্ছা বানা আয়। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।
রোদ হাসি মুখে সাবার সাথে মিলে বাচ্চাদের জন্য স্নাক্স বানাতে লাগলো। আদ্রিয়ানের মায়ের চোখটা ছলছল করে উঠলো। মাইশা কোন দিনও এমন ভাবে কিচেনে ডুকে কাজে হাত দেয় নি। সে ছিলো কিছুটা মডার্ন যাকে বলে অতিরিক্ত মর্ডান। যদিও সাবা তার বিপরীত। একদম শান্ত এবং মিলমিশ স্বভাবের।
আদ্রিয়ান রুমে এসে দেখলো রুমে খালি। ভ্রু কুচকে নিচে এসে দেখলো জারবা, মিশি আর আলিফ টিভিতে ব্যাস্ত। আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করতেই জারবা জানালো,
— ছোট ভাবী কিচেনে।
ভ্রু কুচকানোটা আরেকটু দৃঢ় হলো আদ্রিয়ানের। পা বাড়িয়ে সামনে যেতেই নজরে এলো গরমে ঘেমে লাল হওয়া রোদের দিকে যে আপাতত পাসতা রান্না করতে ব্যাস্ত। নিজের বউকে এমন ভাবে প্রথম দেখেছে আদ্রিয়ান। সংসার সে আগেও করেছে তা আদও সংসার ছিলো কি না তা জানা নেই আদ্রিয়ানের।
#চলবে……
[ যদের মনে হচ্ছে পুরাণ ঢাকার খাবারের বা ডালার বর্ণনা বেশি দিয়ে ফেলেছি। তাদের জন্য বলছি,”Habibi come to puran Dhaka.”]