প্রেমের_পরশ #পর্বঃ২৫

0
216

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

জান্নাতুল খাতুন বেশ অবাকই হলেন আমানের সাথে ছোয়ার বিয়ের কথা শুনে। তবে তিনি খুব একটা মন খারাপ করলেন না৷ তবে একটা অভিযোগ তার রয়ে গেল এই বিয়ে নিয়ে। হাজার হোক, আমান তার ছেলে, তাকে না জানিয়ে এভাবে হুট করে বিয়ে হওয়ার কারণে তিনি একটু নাখোশ হয়েছেন। তবে আব্দুল হোসেন তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
‘এই বার যেমন তেমন ভাবে বিয়েটা দিয়েছি। তবে কয়েক মাস পর, আমি অনেক সুন্দর ভাবে আয়োজন করে ওদের বিয়ে দেব৷ তাই তুমি আর এটা নিয়ে মন খারাপ করে থেকো না।’

স্বামীর কথায় জান্নাতুল খাতুন কিছুটা নমনীয় হলেন৷ অতঃপর ছোয়ার কাছে এসে বললেন,
‘চলো ছোয়া। আমার ছেলের সাথে যখন তোমার বিয়ে হয়েছে, তখন এটা মানতেই হবে যে তুমি আমার ছেলের বউ। এমনিতে তোমাকে নিয়ে আমার কোন অসুবিধা নেই৷ আদরের সাথে আমানের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছিল জন্যই আগের বার আমি তোমাকে ওভাবে বলেছিলাম। তবে এখন যখন আদরের সাথে বিয়ে টা হলো না আর তোমার সাথে বিয়ে হয়েছে তাতে আমি তোমাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য।’

ছোয়া প্রতিত্তোরে কিছু বলল না। এখনো তার কাছে পরিস্কার নয় এই সম্পর্কের ভবিষ্যত। তবে ছোয়া ভাবল, যেহেতু আমান তাকে পছন্দ করে তাই এই সম্পর্ক স্বাভাবিক হবেই। ছোয়ার মনেও তো আমানের জন্য লুকায়িত অনুভূতি রয়েছে। এখন যদি এই দুই অনুভূতির মিশেলে এক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাহলে তা হবে খুব গভীর একটি সম্পর্ক। হয়তো একে অপরের প্রেমের পরশে আবদ্ধ হবে দুটি মন!


ছোয়া বাড়িতে এসে সর্বপ্রথম নিজের মায়ের সম্মুখীন হলো। মতিয়া বেগম বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে আছেন নিজের মেয়ের দিকে। তাকে না জানিয়ে এভাবে হুট করে ছোয়ার বিয়ে করে নেওয়া তার মোটেই পছন্দ হয়নি। মতিয়া বেগম রাগী কন্ঠে বললেন,
‘এই ভাবে বিয়া করলি ক্যান? আমি কি ম’ইরা গেছি? নাকি আমাকে তুই মা মনে করস না?’

ছোয়া পরিস্থিতিটা বোঝানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু মতিয়া বেগম কিছু শুনতেই চাচ্ছেন না। অবশেষে জান্নাতুল খাতুন চলে তাদের মধ্যে আসেন। তিনি এসে মতিয়া বেগমকে বোঝান যে, বিয়েটা যখন হয়ে গেছে তখন মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এইজন্য মেনে নেওয়াই ভালো। মতিয়া বেগম মন থেকে বিয়েটা মানতে পারলেন না। কিন্তু ভেবে দেখলেন, আমান পাত্র হিসেবে তো খারাপ না। তাই বিয়েটা যখন হয়ে গেছে তখন আর ঝামেলা করে লাভ নেই। সে কারণে এই নিয়ে আর কথা বাড়ালেন না তিনি।

৪৯.
ছোয়া অনেকক্ষণ থেকে ঘরে বসে অপেক্ষা করছে আমানের জন্য। কিন্তু আমান এখনো আসেনি। ছোয়া একবার ঘরটা ভালো করে দেখে নিল। পুরো ঘর ফুল দিয়ে সাজানো। বাসরের প্রস্তুতি আগে থেকেই করা ছিল। তবে সেটা আদর এবং আমানের জন্য। এখন ছোয়া সেই স্থলে কনে সাজে এসেছে। বেশ অদ্ভুত লাগছে তার। তবে মনে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চও খেলে যাচ্ছে। না জানি আজকের রাতটা কেমন হবে তার জন্য!

ছোয়ার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আমান কিছু সময় বাদেই রুমে প্রবেশ করল। রুমে এসেই তিরিক্ষি মেজাজে বলল,
‘এই আলিয়াটা অনেক বদ। আমার থেকে ৫ হাজার টাকা উসুল করে তবে আসতে দিল।’

আমানের মুখে এহেন কথা শুনে ঠোট টিপে হাসল ছোয়া। আমানের নজর এড়ালো না সেই হাসি। আমান এবার ছোয়ার উপরেও চড়াও হলো। বেশ রাগী গলায় বলল,
‘তুই হাসছিস কেন রে? আমার খারাপ সময় বুঝি তুই আনন্দ পাস?’

‘না না সেটা না,,,’

ছোয়া একটু থেমে আবার বলল,
‘আপনি কি এখনো আমাকে তুই বলে ডাকবেন?’

আমান কোন ভনিতা না করে সোজা বলে দেয়,
‘হ্যা অবশ্যই। তুই যদি এখনো আমাকে আপনি করে বলিস তাহলে আমিও তোকে তুই করে বলবো। শোন ছোয়া সম্পর্ক কখনো একতরফা ভাবে হয়না। দুজন মিলে, দুজনের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার তোর প্রতি অনুভূতি রয়েছে কিন্তু তোর নেই,,,,এমতাবস্থায় কোন সম্পর্ক কি গড়ে উঠবে বল আমায়?’

ছোয়া বলার মতো কিছু খুজে পেল না। আমান ছোয়ার নিশ্চুপতা সেখে মলিন হেসে বললো,
‘তুই আসলে এখনো কিছু ঠিক করে উঠতে পারিস নি ছোয়া। তুই বুঝি হঠকারিতার বসে বিয়েতে সম্মতি জানিয়েছিস। এটা ঠিক যে আমি তোকে ভালোবাসি৷ আমি তোকে নিজের করে চাই। কিন্তু আমি কখনো এভাবে তোকে চাইনি। জানিস এই পৃথিবীর সবথেকে বেদনার জিনিস কি? যখন কাউকে অসীম ভালোবাসার পরেও তার থেকে বিন্দুমাত্র ভালোবাসা পাওয়া না যায়। তো যাই হোক, ভালোবাসা হীন একটা সম্পর্ক টিকে থাকে না কখনো।’

ছোয়া কিছু বলে না সব কথা মনযোগ দিয়ে শোনে। আমান পুনরায় বলে ওঠে,
‘তুই যতদিন চাইবি না আমি তোর কাছে আসব না। তুই যেদিন আমায় ভালোবাসতে পারবি সেদিন আমায় বলবি। তখন আমাদের সম্পর্ক আর চার-পাচটা দম্পত্তির মতো স্বাভাবিক হবে। তার আগে নয়।’

কথাগুলো বলে আমান শুয়ে পড়ে। কিছু মুহুর্ত পর ছোয়া তার পাশে শুয়ে পড়ে। আমান এবং ছোয়ার মধ্যে কোন কথাই হয় না। বাসর রাতটা রোমাঞ্চহীন ভাবেই অতিবাহিত হয়।

৫০.
আমান ও ছোয়ার বিয়ের পর এক সপ্তাহ কে’টে গেছে। তবে এখনো তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। এজন্য অবশ্য ছোয়ার জড়তাই দায়ী। সে এখনো আমানকে নিজের মনের অনুভূতি গুলো বলতে পারছে না।

আমান ও ছোয়ার মধ্যকার এই জড়তা বুঝতে আব্দুল হোসেনের বেগ পেতে হলো না। এখন তিনি খুব ভাবনায় পড়ে গেলেন। কত আশা করে আমান এবং ছোয়ার বিয়ে দিলেন যাতে সব কিছু স্বাভাবিক হয় কিন্তু ফলাফল শূন্য। তাদের মধ্যে কিচ্ছু ঠিক নেই।

আব্দুল হোসেন একটু চিন্তা করে দেখলেন, আমান বেশিরভাগ সময় অফিসেই থাকে। সকালে অফিসের উদ্দ্যেশ্যে বেড়িয়ে যায় এবং ফেরে একেবারে রাতে। ছোয়াও ভার্সিটি, পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। তাই হয়তো তাদের মধ্যে দূরত্ব ঘুচছে না। এখন আব্দুল হোসেন চিন্তা করলেন কিভাবে এই দূরত্ব দূর করা যায়।

অনেক ভেবে আব্দুল হোসেন একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। আমান এবং ছোয়া যদি কিছু দিন একসাথে বাইরে কোথাও কা’টিয়ে আসে তাহলে তাদের মধ্যে এই দূরত্ব লাঘব হতে পারে। এই ভাবনা থেকেই তিনি একটি খুব সুন্দর পরিকল্পনা করে নিলেন।


সেদিন রাতে ডিনারের সময় আব্দুল হোসেন আমানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন,
‘আমান তুই তো জানিস আমাদের সাথে একটি থাই কোম্পানি কো-অপারেট করতে চাইছে। তো আমি ভাবছিলাম একটু থাইল্যান্ডে গিয়ে যদি সব দেখে আসা হয় তাহলে ভালো হবে। মানে এভাবে খোজ খবর না নিয়ে হুট করে তো আর আমরা একটা কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে পারি না। আমি ক’দিন একটু ব্যস্ত থাকব। তাই তুই থাইল্যান্ডে গিয়ে দেখে আয় সবটা।’

আমান সায় জানিয়ে বলে,
‘ঠিক আছে আমি যাবো।’

আব্দুল হোসেন ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘একটা কাজ কর ছোয়াকেও নিয়ে যা তোর সাথে।’

আমান প্রশ্ন করে,
‘ছোয়া আমার সাথে গিয়ে কি করবে?’

‘তোদের সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে। আর থাইল্যান্ডে সব কিছু দেখে আসতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ লাগবে। এই সময় তোদের এতদিন আলাদা থাকা ঠিক হবে না। তাই বলছি ছোয়াকে নিয়ে যেতে। এই সুযোগে তোদের
হানিমুনটাও হবে।’

‘কিন্তু,,,’

আব্দুল হোসেন জোড়ালো গলায় বললেন,
‘কোন কিন্তু নয়। নেক্সট উইকে তোরা দুজনে একসাথে থাইল্যান্ড যাচ্ছিস এটাই ফাইনাল। আমি অলরেডি তোদের পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করে রেখেছি তাই আর কোন এক্সকিউজ শুনব না।’

আব্দুল হোসেনের উপর আর কিছু বলতে পারে না আমান। তাই তাকে এই কথা মেনে নিতেই হয়। ছোয়া মনে মনে খুশিই হয়। বিদেশ ভ্রমণ কার না পছন্দের!

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here