মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ৯

1
715

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা ও ফাহিম বসে আছে কাজির সামনে। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করল। অতঃপর ইভানাকে কবুল বলতে জোর দিতেই ইভানা সময় নষ্ট না করে বলে দিল,
‘কবুল।’

অতঃপর ফাহিমও কবুল বলে বিয়েটা করে নিলো। বিয়ে সম্পন্ন হতেই আশেপাশে আবার নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হলো। কথা ছিল বড় ভাইয়ের সাথে বিয়ের, কিন্তু হলো ছোট ভাইয়ের সাথে। এ নিয়ে সবাই বেশ আলোচনা করছে। অনেকে বলছে, ছেলেটাকে ব’লির পা’ঠা বানানো হলো আবার অনেকের মতে মেয়েটার ভাগ্য ভালো। এমন নানা বিতর্কের মধ্যেই বিয়েটা মিটে গেল।

রিয়া ক্ষোভে ফুসছে। এত চেষ্টা করেও সে ইভানার বিয়েটা আটকাতে পারল না। বড় ভাইয়ের সাথে না হলেও ছোট ভাইয়ের সাথে তো বিয়েটা হলো। এটা নিয়ে তার খুব রাগ হচ্ছে।

এদিকে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর ইভানা ও ফাহিম উঠে দাড়ালো। কারণ এখন তাদের বিদায়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিয়েটা হয়ে যাওয়ায় ফারজানা বেগমের বুকের বোঝা হালকা হলো৷ এতক্ষণ মনে যেই অপরাধবোধ কাজ করছিল তা সম্পূর্ণভাবে না হলেও অনেকটাই দূর হলো। তিনি আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করে বললেন,
‘ইয়া মাবুদ আজ তুমি আমারে অনেক বড় একটা আফ’সোস থেকে বাচাইয়া দিলা। এহন সবকিছু ঠিক থাকলেই আমি খুশি।’

তারিকুল ইসলাম, ইশরাত খাতুন, তোহা সবাই বিয়েটায় মত না দিলেও, এখন যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে তাই মেনে নিয়েছেন। কিন্তু হাশেম আলী নিজের জেদে অটল। তিনি ম’রে যাবেন তবুও এই বিয়েটা মানবেন না।

ইভানা একটু সামনে এগিয়ে আসতেই তোহা তাকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে বললো,
‘জানি না ইভানা তোর মনে কি চলছে, কিন্তু বড় বোন হয়ে এটা বলতে পারি তুই ভালো নেই। তবে চিন্তা করিস না। কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবি। আমি সবসময় তোর পাশে থাকবো।’

ইভানা কিছু বলে না। শুধু চুপটি করে থাকে। তোহাও আর কিছু বলে না। ইশরাত খাতুন নিজের মেয়ের কাছে এগিয়ে এসে বললেন,
‘তুই যাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস আশা করি ভেবে চিন্তেই নিয়েছিস। এখন বাকিটা আমি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। আমার বিশ্বাস আছে আল্লাহর উপর। আমি জানি, তিনি যা করবেন মঙ্গলের জন্যই করবেন। তুই আল্লাহর উপর ভরসা রাখিস। নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করিস। আশা রাখি আল্লাহ তোকে নিরাশ করবে না।’

তারিকুল ইসলামের মতো গম্ভীর মানুষটাও চুপ থাকলেন না। ইভানার কাছে এসে তার মাথায় হাত রেখে বললেন,
‘তোমার বাবাও তোমার সাথে আছে ইভানা। আমি চেষ্টা করে দেখব যাতে কোন ভালো কলেজে তোমাকে ভর্তি করতে পারি। তুমি পড়াশোনা করে নিজেকে প্রমাণ করে দিও৷ একটাই কথা শুধু মাথায় রেখো আগেরবারের মতো গাফিলতি করবে না। মন দিয়ে পড়বে। তাহলে আশা রাখছি তুমি ইন্টারে ভালো রেজাল্ট করবে।’

১৭.
ইভানা তার পরিবারের সবার থেকে বিদায় নেয়। ইশরাত খাতুন শক্ত রাখেন নিজেকে। কিন্তু তোহা নিজের বোনকে জড়িয়ে কাদতে থাকে। ইভানাও ছোট বাচ্চাদের মতো কাদতে থাকে। তারিকুল ইসলাম গোপনে চোখের জল ফেলেন। হাশেম আলী নিজের ঘর থেকে বের হননি। ইভানার প্রতি ভীষণ রাগ জমেছে তার। তার বারংবার মনে হচ্ছে ইভানার এই বিয়ের সিদ্ধান্তটা সঠিক নয়।

তাই নিজে বুকে পাথর চেপে ঘরে বসে আছেন। তার মন আজ ভেঙ্গে গেছে। মানুষ যাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসে অভিমানও তার উপর বেশি হয়।

এদিকে ইভানা বিদায়ের সময় নিজের দাদাকে না দেখে কষ্ট পায় খুব। কান্নারত গলায় তোহাকে বলে,
‘দাদাজান কোথায় আপাই? তিনি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছেন? আমার বিদায়ের সময়ও আসবে না?’

তোহা কিছু বলার আগেই তারিকুল ইসলাম বলেন,
‘তুমি তো চেনো আব্বুকে। তিনি তোমাকে যতোই ভালোবাসুক, তার একরোখা স্বভাবের বাইরে তুমিও নও। আপাতত ওনাকে বিরক্ত করার দরকার নেই। ক’টা দিন যাক ওনার রাগ কমলে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

ইভানা তবুও মানতে চায়না। সবাইকে ছাড়িয়ে ছুটে যায় নিজের দাদার রুমের দিকে। দরজায় গিয়ে কড়া নে’ড়ে বলে,
‘দাদাজান আমি চলে যাচ্ছি। তুমি কি এখনো রাগ করে থাকবে? প্লিজ একবার বাইরে এসো না।’

তারিকুল ইসলাম আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেন না। ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। ইভানাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘তোর উপর কি আমি রাগ করে থাকতে পারি তানজিলা? তুই যে আমার নয়নের মনি৷ আমি শুধু তোর এই বিয়েটাই মানতে পারছি না। কিন্তু তোর উপর আমার দোয়া সবসময় থাকবে। সুখী হ তুই।’

এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ইভানা তার দাদার হাত ধরে বেরিয়ে আসে। অতঃপর গাড়িতে উঠে সকলের থেকে বিদায় নেয়। প্রত্যেক মেয়ের জীবনেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এটি। যখন তাকে তার চেনা পরিজন সবাইকে ছেড়ে যেতে হয়। এই মুহুর্তে নিজেকে সামলানো সহজ নয়।

ফাহিম ইভানার অবস্থা বুঝতে পেরে একটা রুমাল তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘নিজের চোখের জল মুছে নাও। এভাবে কাদলে শরীর খারাপ হবে।’

ইভানা ফাহিমের দিকে তাকায়। ফাহিমের দৃষ্টি তার দিকেই নিবদ্ধ। ইভানাকে ইশারা করে রুমালটা নিতে। ইভানা রুমালটা দিয়ে নিজের চোখের জল মুছে নেয়।

১৮.
বিদায়ের পরপরই তোহা বিয়েবাড়িতে উপস্থিত সব আত্মীয় স্বজনদের এক হাত নেয়। সকলকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আপনারা বিয়ে খেতে এসেছেন ভালো কথা। খেয়ে দেয়ে বিয়ে দেখে চলে যাবেন। তা না করে আপনারা এখানে আসেন সমালোচনা করতে। আপনাদের জন্য আমার বোনের বিয়েটা ভেঙে গেল।’

বিয়েবাড়িতে উপস্থিত কেউ কিছু বলে না। তোহা রাগ দেখিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। হঠাৎ করেই তার নজর পড়ে ক্যামেরার দিকে। আজকে বিয়ে উপলক্ষে ক্যামেরা ম্যান ছিল অনেক। তাদের মধ্যেই একজন ক্যামেরাম্যান কিছু একটা রেকর্ড করেছে। সেটা নিয়ে কথা বলছে।

তোহা ক্যামেরাম্যানের কাছে গিয়ে বলে,
‘ছবিটা দেখতে পারি?’

ক্যামেরাম্যান দেখতে দেয়৷ তোহা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখতে পায় রিয়া ফারহানের সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে। তোহার মনে পড়ে ঐদিকে সিসিটিভি লাগানো ছিল৷ তাই সে সিসিটিভি চেক করতে যায়।

সিসিটিভি চেক করেই তোহা দেখতে পায় ফারহানকে রিয়া নিজের ফোনে কি যেন দেখালো তারপর ফারহান রেগেমেগে চলে গেল। এই ভিডিওটা দেখে তোহা অনেক কিছুই আন্দাজ করতে পারল। কারণ রিয়া কেমন মেয়ে সেটা সে খুব ভালো করেই জানে।

তোহা আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে রিয়াকে খুজতে লাগল। রিয়া তখন খাবার খেতে বসেছে। তোহা এসে রিয়াকে টেনে তুলল। তাকে টানতে টানতে নিয়ে এলো নিজের মা-বাবার সামনে। রিয়ার সাথে রিয়ার মা-বাবাও ছিল। তারাও পেছন পেছন এলো।

তারিকুল ইসলাম বললেন,
‘তুমি রিয়াকে কেন এভাবে টেনে টেনে নিয়ে এলে তোহা?’

রিয়া নাটক করে বলে,
‘আমরা আপনাদের মতো এত বড়লোক নই চাচা। তাই এভাবে অপমান করছে আপনার মেয়ে আমাকে।’

রিয়ার মা-বাবাও তাকে সমর্থন করে। তোহা নিজের রাগ সামলাতে পারে না। রিয়াকে ঠা’স করে একটা থা’প্পর মা’রে। এভাবে পরপর ৪-৫ টা থা’প্পর মা’রে আবার মা’রতে গেলে তারিকুল ইসলাম তার হাত আটকে বলে,
‘এসব হচ্ছেটা কি? তোমাকে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি?’

তোহা এবার সব ঘটনা খুলে বলে। অতঃপর রিয়াকে বলে,
‘তোর ফোনের লক খুলে দে। ‘

রিয়া ভয়ে ভয়ে লক খুলে বলে,
‘এখানে কিছু নেই।’

তোহা রিয়ার প্রোফাইলে ঢুকতেই ইভানার বলা কথার ভিডিও দেখতে পায়৷ যেটা রিয়া ফারহানকে দেখিয়েছিল।

রিয়া মাথা নিচু করে নেয়। তোহা বলে,
‘দেখলে তো আব্বু, এই মেয়ে কত বদ।’

তারিকুল ইসলাম শক্ত গলায় বলেন,
‘রিয়া তুমি আমার মেয়ের ক্ষতির চেষ্টা করেছ। তোমাকে তো আমি ছাড়ব না।’

রিয়ার মা-বাবাও তাকে অনেক বকাবকি করে। অতঃপর তারিকুল ইসলামের কাছে ক্ষমা চায় যেন রিয়ার কোন ক্ষতি না করে। তখন তারিকুল ইসলাম রিয়ার বাবাকে বলে,
‘তুমি আমার কাছ থেকে যে ১০ লাখ টাকা নিয়েছিলে তা এক সপ্তাহের মধ্যে শোধ করবে। নাহলে তোমাদের বাড়িঘর সব হারিয়ে পথে বসতে হবে।’

রিয়ার বাবার মাথায় হাত উঠে যায়। আজ নিজের মেয়ের ভুলের জন্য তাকে এই সমস্যা দেখতে হচ্ছে!

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here