যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া #আনিশা_সাবিহা পর্ব ২০

0
651

#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২০

ঘরের মাঝে থাকা প্রিয় জানালার পাশ ঘেঁষে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে মোহ। জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে জট পাকানো মস্তিষ্ক স্বাভাবিক করার পরিচালনা করছে সে। এখনো মাথা থেকে সকালে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়টি সরতে চাইছে না। আঁটকে আছে সেই রাস্তার মোড়েই, সেই ফলের দোকানেই। সেই পরিচিত এবং নি/কৃষ্ট মুখ ভেসে উঠছে বারংবার। মাথা ঘুরিয়ে বিছানায় বসে আপনমনে খেলতে থাকা ইথানের দিকে দৃষ্টিপাত করল মোহ। ইথানের ছোট্ট মুখটার সাথে সেই মুখটার বিস্তর মিল আছে বলতে হবে। তবে সেই সঙ্গে রয়েছে আকাশপাতাল পার্থক্যও। সেই চেহারায় মোহ খুঁজে পায় নিকৃ/ষ্টতা এবং ভয়া/বহতা এবং ইথানের ছোট্ট চেহারায় খুঁজে পাওয়া যায় সুবিশাল মায়া।

সকল ভাবনার অন্ত ঘটলো আজহার সাহেবের ডাকে। বাবার এমন অস্থির হাক পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়াল মোহ। বিচলিত মনে বাহিরে এসে আজহার সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“কী হয়েছে বাবা? কোনো সমস্যা হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?”

আজহার সাহেব মৃদু হেসে শান্ত গলায় বললেন,
“না, না। কে আবার নতুন করে কী বলবে!”

মিসেস সুফিয়াও রান্নাঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে এসেছেন বসার ঘরে। আজহার সাহেবের কথা শুনে তিনি ক্ষোভ ঝেড়ে বললেন,
“তো এভাবে ডাক দাও কেন? ভালো করে ডাকা যায় না? যেভাবে মেয়েটাকে ডাকছিলে আমারই তো অন্তর কেঁপে উঠেছিল।”

“এখনই তোমার এই অবস্থা! আমি এখন যা বলব তা শুনে তারপর কী হবে বলো?”

মিসেস সুফিয়া এবং মোহ দুজনেই খানিকটা বিস্মিত হলো আজহার সাহেবের এমন হেয়ালিতে। মোহ উৎসুক হয়ে শুধাল,
“কী হয়েছে বাবা?”

“স্বচ্ছ এসেছিল আমার স্কুলে।”

স্বচ্ছের নাম শুনেই ভেতর থেকে বাহির অবধি এক আতঙ্কের শিহরণ বইলো মোহের। মানুষটাই এমন যার নাম শুনে মাথায় ঝামেলা শব্দটি ছাড়া অন্য কিছু আসে না। মোহ কম্পিত গলায় আবারও জিজ্ঞেস করল,
“কেন?”

“স্কুলে এসে ও যা কাণ্ড করল! আমাদের ভাবনার বাহিরে এসব। সকলের সামনে অডিটোরিয়ামে আমাকে নির্দোষ বলেছে সে। শুধু তাই নয় নিজে থেকে বাবার হয়ে ক্ষমা চেয়েছে ছেলেটা। ছেলেটার কাণ্ডে আমি হতভম্ব।”

“উনি ওই হাতেপায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে তোমার স্কুলে গিয়ে এই কাণ্ড করে এসেছে?”

মোহের মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কথায় চকিতে তাকালেন মিসেস সুফিয়া। মোহের দেরিতে বোধগম্য হলো তার একথা বলা উচিত হয়নি। মিসেস সুফিয়া দেরি না করে কঠোর গলায় প্রশ্ন করলেন,
“তুই কীভাবে জানলি ওই ছেলের হাতেপায়ে ব্যান্ডেজ?”

মোহ প্রশ্নটা এড়িয়ে যেতে চাইল।
“আসলে মা…”

“কথা ঘুরাবি না। সত্যি বল।”

“আহ! মেয়েটাকে সবসময় এমন জেরা করো কেন সুফিয়া?”

আজহার সাহেবের কথায় মিসেস সুফিয়া চোখ গরম করে তাকালেও মোহ এবার বাধ্য মেয়ের ন্যায় সত্যি বলার সিদ্ধান্ত নিলো।
“মা, সেদিন যে ইথানের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে মার্কেটে যেতে চেয়েছিলাম আর বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন আমি ওদিকে যেতেই পারিনি। স্বচ্ছ এক্সি/ডেন্ট করেছিলেন। আর সাহায্য করার কেউ ছিল না। আমি উপায় না পেয়ে উনাকে হাসপাতাল অবধি নিয়ে যাই। তুমি যদি রাগ করো তাই বিষয়টা এড়িয়ে গিয়েছিলাম। সরি, মা।”

আজহার সাহেবও নিজের স্ত্রীকে কিছু বলতে না দিয়ে তালে তাল মিলিয়ে বললেন,
“হ্যাঁ ঠিকই আছে। আমার মা যা করেছে ঠিকই তো করেছে, মোহের মা। কেন শুধু শুধু রাগছ!”

“হ্যাঁ আমি তো শুধু শুধুই রাগি। তোমরাই সব ঠিক কাজ করো। আমি যা করি সব ভুল।”

ক্রোধ ঝেড়ে কথাটা বলে গটগট করে রান্নাঘরে চলে গেলেন মিসেস সুফিয়া। উনার কাণ্ডে বাবা-মেয়ে চোখাচোখি করল। তারপর মিটমিটিয়ে হাসল।
“তোমার মা রাগারাগি করলেও আমি তোমার উপর রাগটা দেখাতে পারছি না। স্বচ্ছ আজ যে কাণ্ড করল সে কাণ্ডে আমার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত আমি বুঝতে পারছি না। তবে আজকে ওর যা করেছে তা দেখে মনে হয়েছে ও মন থেকে আমাদের জন্য কিছু করতে চেয়েছে। ক্ষমা চেয়েছে মন থেকে তাও ওর বাবার হয়ে। অন্যায়টা আদেও ও করেনি। অনুতপ্ত হয়েছে বাবার তরফ থেকে। আমার সম্মান খানিকটা ফেরানোর চেষ্টা করেছে। আমি তাতে অস্বস্তিতে পড়লেও পরবর্তীতে মনে হয়েছে সে একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য। যেটা আমি তখন লজ্জায় পড়ে দিতে পারিনি।”

মোহাবিষ্ট হয়ে কথাগুলো শুনছিল মোহ। স্বচ্ছ নামক পুরুষটির কথা এই মুহূর্তে মুগ্ধ হয়েই শুনতে ইচ্ছে করছে তার। মানুষটা এত কিছু কেন করল জানতে ইচ্ছে করছে ভীষণ। তার জায়গায় অন্যকেউ হলেও বুঝি কাজটা তিনি করতেন? যদি করত তাহলে খুশি হবে মোহ। কেননা, সে চায় অনুতপ্ত বোধ সকলের প্রতি একই থাকুক। আজহার সাহেব আরো বলেন,
“হয়ত সে আমার সম্পূর্ণ সম্মান ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবেনা। তবে তার এ কাজের পর আমার নামে আর একটাও কটু কথা কানে আসেনি।”

“তাই উনি তোমার কাছ থেকে ধন্যবাদ পান। তাই না বাবা?”

“ঠিক তাই।”

“কাল যাবে আমার সাথে হসপিটালে উনাকে দেখতে?”

মোহের কথায় আজহার সাহেব তৎক্ষনাৎ বারণ করে দিলেন,
“না, না। আমার সময় হবে না। স্কুলে যেতে হয় ওই সময়। তাছাড়া সবথেকে বড়ো কথা অস্বস্তির ব্যাপার আছে একটা। তাই বলছিলাম যে মোহ মা তুমি এই কাজটা আমার হয়ে করে দিলে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতাম।”

মোহ তার বাবার কথায় অস্বস্তি নিয়ে বলল,
“বাবা তুমি কী বলছ বলো তো! আমি কাল যাব উনাকে ধন্যবাদ দিতে তুমি না বললেও। এভাবে বলো না।”

আজহার সাহেব একটা মৃদু হাসি দিলেন। তারপর চললেন রান্নাঘরের দিকে। উদ্দেশ্য, স্ত্রীর রাগ ভাঙানো।

মোহ হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ছুটে এলো। বড়ো বড়ো শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ-ত্যাগ করে ফোন হাতে নিলো তড়িঘড়ি করে। কললিস্ট থেকে খুঁজে বের করল, ‘স্টোরহাউস ওফ ইগো” নামটি। নিঃসন্দেহে এই নামের ব্যক্তিটি স্বচ্ছ। তবে এই নামটি মোহের কাছে আজ বেমানান লাগল। দ্রুত মানুষটিকে কল দিতে গিয়ে মনে পড়ল সে সেদিনই এক্সি/ডেন্ট করেছিল। তার ফোন হয়ত তার কাছেই নেই। খানিকটা নিরাশ হয়ে ফোনটা আগের স্থানে রাখল মোহ। ইথান দৌড়ে এসে বসল তার কোলে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অধৈর্য হয়ে উঠল সে। কখন সে পরদিন হবে! কখন সামনাসামনি হবে স্বচ্ছের।

পায়ে অতিরিক্ত চাপ পড়াতে সেখানে টনটনে অসহ্যকর ব্যথা উঠেছে স্বচ্ছের। বালিশে ঠেস দিয়ে চোখ বুঁজে হাতের বাহু কপালে ঠেকিয়ে আধশোয়া হয়ে রয়েছে সে। দরজা খোলার শব্দ পেয়েও খুলল না তার চোখ দুটো। দেখা গেল না ঘোলাটে মণি দুটো। একসময় নিজের লাগা পায়ে হঠাৎ জ্বলে অতিরিক্ত ব্যথা করে উঠল স্বচ্ছের। ছটফটিয়ে উঠে বসল স্বচ্ছ। বুঝতে পারল কেউ তার পায়ে হাত দিয়ে চাপ দিয়েছে। সামনের মানুষটিকে হাসতে দেখে আরো ক্ষেপে গেল সে।
“হোয়াট দ্যা হেল ইয়ার! এমনি আধম/রা হয়ে পড়ে আছি। দেশে ফিরেই আমাকে পুরো মা/রার ট্রাই করছিস?”

আরিদ্র এবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। রাগে গজগজ করতে করতে অন্যদিকে তাকাল স্বচ্ছ। আরিদ্র হাসতে হাসতে স্বচ্ছের পাশে বসে তাকে আলিঙ্গন করে বলল,
“আমার জানের প্রাণের ভাইকে মা/রতে পারি বল? আমি শুধু পরীক্ষা করছিলাম এক্সি/ডেন্টের পর তুই কতটা মজবুত আছিস।”

“পরীক্ষা করতে গিয়ে আমার একটা নড়ে যাওয়া হাড়টা ভেঙে ফেলেছিস মনে হচ্ছে।”

এই কথা বলার পর স্বচ্ছ নিজেও হেসে উঠল এবার। আরিদ্র হোসাইন স্বচ্ছের একমাত্র মামাতো ভাই। যার জীবনের বিগত পাঁচ বছর কেটেছে লন্ডন শহরে। আজ হঠাৎ তার আগমনে খানিকটা অবাক হয়েছে স্বচ্ছ। আরিদ্র স্বচ্ছের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করল আরেকবার। তারপর প্রশ্ন করল,
“তারপর বল! এমন আধম/রা অবস্থা কী করে হলো তোর?”

“বাইক এক্সি/ডেন্ট! আর কী? যাই হোক, হঠাৎ তোর দেশের কথা মনে পড়ল কী করে?”

আরিদ্র মাথা নাড়ায়। কণ্ঠস্বর নিচু করে বলে,
“দেশ না রে, দেশ না। ব্যাপারটা হচ্ছে বিয়ের। মায়ের ডাক পড়ল বিয়ের জন্য। তাই চলে এলাম।”

“ওহ তাই বল। তাও ভালো। আমি তো ভেবেছিলাম তুই বিদেশী মেয়েকে বিয়ে করে সেটেল হয়ে যাবি।”

স্বচ্ছের কথায় আরিদ্র রসিকতা করে বলল,
“আরে ধুর। দেশী মেয়ের মাঝে যা আছে সেটা পুরো পৃথিবীর মেয়ের মাঝেও পাওয়া যাবে নাকি!”

স্বচ্ছ হালকা মাথা দুলিয়ে বলল,
“আমি ওসব বুঝিনা। তুই-ই ভালো জানিস।”

“তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। তুই তো কখনো টেস্ট করিস নি। আমি তো করেছি নাকি! সব জেনেই বলছি কথাটা।”

স্বচ্ছ আরিদ্রের হাতে চাপড় মে;রে বলল,
“তুই এখনো ভালো হলি না।”

চলবে…

বি.দ্র. অজস্র ক্লান্তি নিয়ে এর চেয়ে বেশি লিখতে পারিনি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here