যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া #আনিশা_সাবিহা পর্ব ৪৪

0
467

#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪৪

ঈশানী মোহকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করে দিলো। কেটে গিয়েছে কত গুলো বছর। কীভাবে বদলে গেছে জীবন! সেসব ভেবে ঈশানীর কান্নার বেগ বাড়ল। মোহ তখন হতবিহ্বল হয়ে শুধু মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল। তার বিস্ময় কাটতে চাইছে না। এতদিন পর নিজের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী যাকে জীবিত দেখার কথাই নয় তাকে সরাসরি দেখতে পারছে সে। অনুভব করতে পারছে তার স্পর্শ। মোহের মনে তখন রাজ্যের কৌতূহল। সে ঈশানীকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে রেখে অবাক হয়ে শুধাল,
“এতগুলো বছর কেটে গেছে ঈশানী! তুই জীবিত আছিস? কখনো ভাবিনি। তুই যোগাযোগ করলি না কেন কারোর সাথে? না আমার সাথে, না তোর মামা-মামীর সাথে। কেন এমনটা করলি?”

ঈশানী কাঁদতে কাঁদতে মাথা নুইয়ে বলল,
“তোকে কী করে বোঝাব? কোন মুখে বলব? সবই আমার বাধ্যবাধকতা ছিল। আমাকে মিথ্যে বলা হয়েছিল। এতদিন মিথ্যার রাজ্যে বসবাস করে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম।”

মোহ ভ্রু কুঁচকায়। টলমল চোখে তাকিয়ে জানতে চায়,
“তোর কথার অর্থ বুঝিনি।”

ঈশানী চোখ বুঁজে নিজের সকল লজ্জা এড়িয়ে বলল,
“আমার ভালোবাসা আমাকে প;তিতা বানিয়ে ছেড়েছে। পুরো আড়াই লাখ টাকাই নিষি’দ্ধপ/ল্লীতে ব্রিকি করা হয়েছে আমায়। এই পাঁচটা বছরে কতগুলো পুরুষ আমাকে ছুঁয়েছে তার হিসাব আমার কাছে নেই। আমি অপবিত্র। আমার স্থান ডাস্টবিনে। কিন্তু আমি পালিয়েছি। শুধু একটাই উদ্দেশ্যে পালিয়েছি সেটা হচ্ছে আরিদ্রকে খু/ন করতে চাই আমি। আজ নতুন সব মেয়েদের অন্য জায়গায় পাঠানো হচ্ছিল তার মাঝে আমি ঢুকে পড়েছিলাম। তারা জানতে পেরে গেছিল। ততক্ষণে আমি পল্লীর বাহিরে। সবটা দিয়ে ছুট লাগিয়ে আসতে তোর সাথে দেখা হবে ভাবিনি৷”

“ওই জা/নোয়ার তোকে ওই জায়গায় বিক্রি করে দিলো আর তুই মেনে নিলি? একবার তো খবর দিতে পারতিস। কিছু না কিছু করতাম। আমি তোর খোঁজ করেছি কত জানিস?”

ঈশানী নিজের বুকের একপাশে হাত রেখে শুষ্ক এবং কাঁপা ঠোঁটজোড়া দিয়ে বলল,
‘আমার সন্তানের জন্য আমি চুপ করে ছিলাম বিশ্বাস কর। আরিদ্রকে আমি দ্বিতীয় বারের মতো বিশ্বাস করি এই ভেবে আমার বাচ্চা তারও বাচ্চা। সে বলেছে আমি নিজের করুণ সেই দশা মেনে নিলে সে আমাদের বাচ্চাকে সুন্দর করে বড়ো করে তুলবে। কিন্তু কয়দিন আগে জানলাম আমার বাবু নেই তার কাছে। সেদিন সে হসপিটালে খোঁজ নিতে যায়নি। বাবুর বেঁচে আছে নাকি নেই সেটার খোঁজও সে রাখেনি। আমার বাবু আর বেঁচে নেই। ও মে/রে ফেলেছে।”

ঈশানীর বুক কাঁপল নিজের সন্তান নিয়ে এ কথা বলতে। ফের শব্দ করে কাঁদল সে। মোহ একবার ইথানের গোল চেহারার দিকে চাইল। ইথানের চোখেমুখে বিস্ময়। হয়ত ঈশানীকে চেনার চেষ্টা করছে। তার বড়ো বড়ো চোখ দিয়ে একনজরে ঈশানীকে দেখে যাচ্ছে সে৷ মোহ তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে ঈশানীর দুটো হাত চেপে ধরল শক্ত করে। ঈশানী তার চোখের দিকে চাইল কান্না থামিয়ে। মোহ থেমে থেমে বলল,
“তোর বাবু আছে। ভালো আছে, সুস্থ্য আছে।”

ঈশানীর অশ্রু ভরা নয়ন দুটো জ্বলজ্বল করে উঠল যেন। থরথর করে কেঁপে উঠল সর্বাঙ্গ। ঘনঘন শ্বাস ফেলে উত্তেজিত হয়ে বলল,
“তুই জানিস তার খবর?”

উত্তরে মোহ মুখে কিছুই বলল না। শুধু নিজের দুচোখের ইশারা দ্বারা ইথানের দিকে তাকাল। এতকিছুর মাঝে ঈশানী খেয়াল করেনি তার সংলগ্নে থাকা ইথানকে। ঈশানী নির্বিকার হয়ে অপলকে দেখল ইথানকে। ঘন চোখের পাপড়ি দ্বারা আবৃত তার ছোটো ছোটো দুচোখ, জোড়া ভ্রু, নাক এবং মুখের ধরণ যেন একেবারেই আরিদ্রের মতো। রাস্তার মাঝে ধপ করে বসে পড়ল ঈশানী। নেত্রযুগল থেকে বেয়ে বেয়ে পানি পড়ে বোরখা ভিজে যাচ্ছে। নিস্তব্ধ ঈশানী দুহাতে ছোট্ট ইথানের গালে হাত রাখল। হাতটাও তার ভীষণ কাঁপছে। ইথান কৌতূহলী নয়নে চেয়ে রইল। মুহূর্তেই অসংখ্য চুম্বন একে দিলো ইথানের মুখে। এ এক মিশ্র অনুভূতি যা ঈশানী কথায় প্রকাশ করতে পারল না। জাপ্টে ধরে রইল ইথানকে। ইথান তখন থতমত খেয়েছে। তার কাছে ঈশানী অপরিচিত একজন। অসহায় পানে সে চাইল মোহের দিকে। কিছু সময়ের মাঝেই ছটফটিয়ে ঈশানীর থেকে ছাড়া পেয়ে ছুট লাগাল মোহের দিকে। মোহকে জড়িয়ে ধরে রইল সে। মিনমিন করে বলে উঠল,
“ওটা কে মাম্মা? আমাকে এভাবে চুমু খেল কেন?”

মোহ একটু ইথানের দিকে ঝুঁকে আদুরে কণ্ঠে বলল,
“মনে আছে? একদিন ওর সাথে আমার ছবি দেখেছিলে?”

ইথান মাথা নাড়ায়। এরপরই বলে,
“এটা সেই আন্টি?”

আন্টি সম্বোধন শুনে বিষণ্নতা আরো বাড়ে ঈশানীর। পরক্ষণেই ভাবে এটা স্বাভাবিক। ইথান তো কখনোই তাকে দেখেনি। তবে মোহ তাকে সন্তানের স্নেহে বড়ো করেছে তাও একা। এটা ভেবে স্বস্তি লাগছে ঈশানীর। মনে উদয় হয়েছে পরম শান্তির। মোহ ইথানকে ভালো করে ধরে বলল,
“না বাবু। ও তোমার আন্টি নয়। তোমার মা হয়।”

বিচলিত কণ্ঠ মোহের। জানে না সে ইথানের প্রতিক্রিয়া কী হবে। সে আদেও সত্যিটা ইথানকে বলে ঠিক করল কিনা! তৎক্ষনাৎ ইথান মোহকে অবাক পানে জিজ্ঞেস করল,
“মা কয়টা হয়? তুমি তো আমার মা।”

ঈশানী ঢক গিলে হাসার চেষ্টা করে বলল,
“আসলে বাবু, আমি তোমার মায়ের বান্ধবী যে তাই তোমার মা বলতে চেয়েছে আমিও তোমার মায়ের মতোই।”

ইথান সরল মনে ঈশানীর কথা বিশ্বাস করে। মোহকে জড়িয়ে বলে,
“হুঁ, আমার মা তো একটাই।”

মোহ বুঝতে পারে ইথানের সামনে আর কোনো কথা বলা চলবে না। তাই সে ইথানকে বলে,
“যাও তো বাবু। স্কুলে ওদের সাথে আবার খেলা করো। আরো কিছুক্ষণ এখানে থাকব আমরা।”

ইথান কোনোকিছু না ভেবেই দৌড়ে গেল অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলা করতে। ঈশানী তখন বলল,
“ও তোকে মা ভাবে। আমাকে ও কোনোদিন দেখেই নি। তুই ওকে বড়ো করেছিস। তাই তোকে মা ভাববে স্বাভাবিক। এখন ওর এই ছোট্ট মনে এসব ঝামেলা ঢুকিয়ে দিস না। ও তোকে অনেক ভালোবাসে। ও আমাকে মা ডাকবেই বা কেন বল? আমি মা হিসেবে কী করেছি ওর জন্য? এক সময় তো এবোরশন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই বুঝিয়ে দিলি ও নিষ্পাপ। আমার পাপে ও কেন ভুগবে। তাই ওকে জন্ম অবধি দিয়েছি। তারপর আর ওর জন্য কী করতে পেরেছি বল? কিছু না। ওর মা হিসেবে তুই ঠিক আছিস।”

“এসব কথা পরে হবে। তুই এখন আমার সাথে আমার বাড়ি চল। তোকে আর ওখানে ফিরতে হবে না। তুই নিজের জীবন নিজে গড়বি এখন থেকে।”

ঈশানী তড়িঘড়ি মোহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলল,
‘”না,না। আমি যেতে পারব না এই মুখ নিয়ে আঙ্কেল, আন্টির সামনে। তুই মাফ কর আমায়।”

মোহের কণ্ঠ কড়া হলো। খানিকটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
“তো কোথায় থাকবি? তোর ওই মামা-মামীর কাছে? ওরা তো আর এই দেশেই থাকে না।”

“আমার কাছে টাকা আছে। কিছুদিনের জন্য কোনো হোস্টেল বা অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দে আমায় দয়া করে। তোর বাড়িতে যেতে বলিস না। এই মুখ আমি উনাদের দেখাতে পারব না। আমি তোর চোখেই চোখ রাখতে পারছি না। বিশ্বাস কর।”

মোহ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বুঝল ঈশানীর মনের জটিলতা। সে ভালো করে দেখল ঈশানীর মুখটা। আগের মতো উজ্জ্বলতা নেই তার মুখে। শুঁকিয়ে গিয়েছে। চোখ বসে গিয়েছে। তার এই করুণ অবস্থার জন্য যে দায়ী তাকে জানা আছে মোহের। খুব ভালো করে চেনা আছে।

ড্রয়িংরুমে বসে কোনোরকম চিন্তাভাবনা ছাড়াই ইচ্ছেমতো ফোনে গেম খেলছে সৌমিত্র। এমন সময় তৈরি হয়ে নিজ ঘর থেকে বাহিরে এলেন মিসেস যামিনী। ব্যস্ত কণ্ঠে সৌমিত্রকে বললেন,
“রিহান কোথায় রে? রেডি হয়েছে? বের হতে হবে আবার। সাথে না হয় তুইও চল।”

সৌমিত্র গেম খেলতে খেলতে সহজ কণ্ঠে বলল,
“রিহান ভাই তো বাড়িতেই নেই মনে হয়। আমার ঘরে তো দেখলাম না তাকে।”

মিসেস যামিনী চমকালেন। বললেন,
“কী বলিস? ও কোথায় যাবে এসময়? ও জানে তো এসময় আমরা পাত্রীর বাড়িতে যাব।”

“ভাই কোথায় গেছে সেটা তো বলতে পারব না। কিন্তু বাড়িতে নেই এটা জানি।”

মিসেস যামিনী ভীষণ চিন্তিত হলেন। তারপর সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হয়ে বললেন,
“আমি উপরে গিয়ে দেখে আসি।”

সৌমিত্রের গেম খেলা বন্ধ হয়ে গেল। ফোন রেখে উদ্বেগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
“আরে উপরে নেই। ওখানেই তো আমি ছিলাম। আমার ঘরেও নেই। তাই তো দরজা লক করা। তুমি হাঁটুর ব্যথা নিয়ে কষ্ট করে উপরে না গিয়ে যাও ফোন দিয়ে রিহান ভাইকে কল করো।”

মিসেস যামিনী সৌমিত্রের কথায় আশ্বস্ত হলেন যেন। বিড়বিড় করতে করতে নিজের ঘরের দিকে যেতে উদ্যত হলেন।
“ছেলেটা এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে কোথায় যাবে?”

সৌমিত্র তা শুনতে পেয়ে বলল,
“আমার তো মনে হয় ভাইয়ের একদমই পছন্দ হয়নি পাত্রী। তোমার তো তাড়া বেশি। বিয়েটা দিতেই হবে। তাই ভাইয়ের পছন্দ অপছন্দ দেখছ না। আমিও পাত্রীকে ছবিতে দেখলাম। আমারও কিন্তু ভালো লাগেনি। রিহান ভাইয়ের সঙ্গে মানাবেই না।”

বেশ ডাহা মিথ্যা কথাগুলো বেশ আরামে বলে চুপ করে রইল সৌমিত্র। মিসেস যামিনী এবার বেশি চিন্তিত হলেন। দ্রুত ঘরের দিকে এগোলেন। ফের ফোনের গেমে মগ্ন হলো সৌমিত্র। মিনিট দুয়েক পরেই কে যেন বারংবার তার কাঁধে হাত দিয়ে ডাকতে থাকল। সৌমিত্র বিরক্তি বোধ করে বলল,
“কী সমস্যা? যা বলার আছে পরে বলো। এখন ব্যস্ত আছি।”

“আমাকে ওয়াশরুমে লক করে দিয়ে গেম নিয়ে প্রচুর ব্যস্ততা দেখাচ্ছিস তুই?”

রিহানের কণ্ঠে ভড়কে গিয়ে নিজের ফোনটি ফেলে দিলো সৌমিত্র। ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের শার্টের বুকের অংশ ফাঁক করে ফুঁ দিয়ে বলল,
“এভাবে কেউ চমকে দেয় ভাই? আমি ভাবলাম ওয়াশরুমে ওখানেই তোমার ইন্না-লিল্লাহ হয়ে গিয়েছে আর তোমার অতৃপ্ত আত্মা আমার উপর প্রতিশোধ নিতে এসেছে।”

রিহান তখন বেশ গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রয়েছে। তা বুঝে থমথমে হয় সৌমিত্রের মুখ। আমতা আমতা করে শুধাল,
“কীভাবে বের হলে?”

“ঘর মুছতে এসেছিল একজন। ও খুলে দিয়েছে। তুই আমায় বলেছিলি দরজা নাকি লক নেই। কিন্তু দরজা তো লক করাই ছিল। তার মানে সেটা তুই করেছিলি। কেন?”

সৌমিত্র শুকনো ঢক গিলে এগিয়ে আসে। বেশ জড়োসড়ো হয়ে রিহানের হাতটা চেপে ধরে। রিহান তখন রিহান বিস্ময়ের শেষ সীমানায়।
“রিহান ভাই, তুমি আর যাই করো এই বিয়েতে রাজি হবে না প্লিজ। এর জন্য আমাকে তোমার হাত-পা যাই ধরতে হোক সব ধরব। তুমি তবুও রাজি হবে না।”

“কেন রে? কী হয়েছে? ব্যাপার কী বল তো? ওই মেয়েকে তুই চিনিস? ওর সাথে কোনো চক্কর আছে নাকি?”

সৌমিত্র বেশি আবেগপ্রবণ হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
“শুধু চক্কর না। টক্কর, বক্কর সব আছে। তুমি এই বিয়েতে নাকচ করো জলদি!”

রিহান চোখজোড়া সরু করে তাকাল। সৌমিত্রের চোখেমুখে তখনও রাজ্যের আতঙ্ক। গাম্ভীর্য ধারণ করে বলল,
“আগেই সন্দেহ করেছিলাম। কত দিন এগুলা করিস? তোর না আগে বেশ কয়েকটাই গার্লফ্রেন্ড ছিল। এখন ওই মেয়েকে ধরেছিস?”

সৌমিত্র লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে বলল,
“নাউজুবিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ! আমি খাঁটি প্রেমিক। কোনো খাদ নেই ভালোবাসায়। ওরা শুধু আমার বান্ধবী ছিল। আর কিছু না।”

“বাট তুই তো এখনো ভার্সিটি শেষ করে উঠতে পারছিস না। ওদিকে মেয়ের অনার্স করা শেষ! ও তোর সিনিয়র হচ্ছে।”

“আরে রাখো তো তুমি সিনিয়র জুনিয়র! প্রিয়াঙ্কা-নিক এদের দেখো না? আমি তো বলব তুমিও সিনিয়র খুঁজে নাও।”

রিহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হতাশা নিয়ে বলল,
আপাতত মাকে বোঝানোর চেষ্টা করি! কী করে বিয়ের সম্বন্ধ কাটিয়ে ওঠা যায় তাই ভাবি। তারপর সিনিয়র নাকি জুনিয়র খুঁজব দেখা যাবে।”

সৌমিত্র খুশিতে গদগদ করে রিহানের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

আজ নিজ হাতে খিচুড়ি রান্না করেছে মোহ। কিছুক্ষণ আগেই রৌদ্রময় দিনটি কালো মেঘ মেঘলা করে তুলেছিল। বৃষ্টিও হয়েছে ফের। নিজের বান্ধবীর এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আগমন খুশি করে দিয়েছে তাকে। অতঃপর তার খুব করে মন চাইল স্বচ্ছকে তার হাতের রান্না খাওয়াতে। লোকটা নিজের সকল বিলাসিতা ছেড়ে পড়ে আছে বাহিরে। তার জন্য মায়া হয় মোহের। তাই নিজের ইচ্ছে না দমিয়ে সৌমিত্রের থেকে স্বচ্ছ যেখানে থাকে সেখানকার ঠিকানা নিলো সে। বেরিয়ে পড়ল সে। ক্লাবে পৌঁছানোর পর দরজায় টোকা দিতেই তার মনে হলো দরজা একটু খোলা। মোহ একহাতে দরজা ঠেলতেই দুপাশে খুলে গেল দরজা। মোহ হতবাক হলো। দরজা খোলা কেন? একটু ইতস্ততবোধ করেই ভেতরে প্রবেশ করল সে। বাহিরের ঘর পেরিয়ে ভেতরের ঘরের কাছাকাছি যেতেই তার নজরে পড়ল ভেতরে এক সোফায় মাথার নিচে হাত দিয়ে শুয়ে থাকা স্বচ্ছের উপর। ভ্রু কুঁচকে বিনা শব্দে এগিয়ে গেল সে। তার সংলগ্নে এগিয়ে গিয়ে নিচু সুরে ডাকল,
“শুনছেন!”

অতিরিক্ত জ্বরের ঘোরে নিজের চোখ দুটো যেন জোর করেই মেলল স্বচ্ছ। আচানক মোহকে দেখে চমকালেও প্রকাশ করল না সে। গম্ভীর মুখে ধীরে ধীরে উঠে বসে মাথা নিচু করে নিজের কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে রইল। মোহ খেয়াল করল, স্বচ্ছের গায়ে ভেজা টিশার্ট। সে হকচকিয়ে উঠল।
“এ কী! আপনার না জ্বর? আপনি ভেজা টিশার্ট গায়ে দিয়ে শুয়ে রয়েছেন?”

স্বচ্ছ তেমন কোনো আগ্রহ দেখাল না যেন। ছোট্ট করে জবাব দিল,
“হুঁ। তো?”

“আপনার কি সত্যিই বুদ্ধিভ্রম হয়েছে? ভেজা জামাকাপড় পরে কেউ শুয়ে থাকে? এটা কেমন অভ্যেস।”

“স্বচ্ছের একান্ত অভ্যেস এটা।”

মোহ কিছু না ভেবেই স্বচ্ছের গালের কাছে হাত রাখল। অতঃপর চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
“জ্বরে ম/রতে চান?”

“আমার মনে হয় আগুনে পু;ড়ে ম/রার চেয়ে জ্বরে ম;রাটা অনেক ভালো। কষ্ট অন্তত কম হবে।”

স্বচ্ছের কথার আগামাথা কিছুই বুঝল না মোহ। চোখমুখ কুঁচকে বলল,
“জ্বরে আপনার মাথাও গেছে। দেখি এখনি টিশার্ট খুলে ফেলুন।”

স্বচ্ছ স্পষ্ট জবাব করল,
“না।”

“জেদ করছেন কেন?”

“আমার জেদ সহ্য করছ কেন তুমি?”

মোহ হতাশ হয় স্বচ্ছের ত্যাঁড়া উত্তরে। কড়া সুরে বলে ওঠে,
“টিশার্ট খুলবেন কি না?”

স্বচ্ছ জবাব দেয়না এবার। মোহের মুখের দিকে একবার দেখলও না সে। মোহ ক্ষিপ্ত হচ্ছে এবার। আবারও বলল,
“এমন জেদ করলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

তবুও স্বচ্ছ নীরব। এবার মোহের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। কিছুটা দূরে থাকা লম্বা টেবিলে ছু/রির দেখা পেল সে। বিলম্ব না করে দ্রুত ছু/রি হাতে নিয়ে এলো স্বচ্ছের কাছে। এবার স্বচ্ছ খানিকটা থতমত খেল বটে। ছু/রিটা স্বচ্ছের বুকের কাছে ধরলে স্বচ্ছ ভড়কে যায়।
“একি! এবার সত্যিই মে/রে দেবে নাকি?”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here