#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৩
“আপনি আমার বাড়িতে?”
অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে প্রতাপ নিয়ে সোফায় বসারত সরোয়ার সাহেবের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটি করে বসল মোহ। সরোয়ার সাহেব কিছুটা সময় চুপ করে রইলেন। যেন মোহের প্রশ্ন উনার কানে আসেনি। অপরদিকে বিষয়টি জানার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে মোহ। সরোয়ার সাহেব এবার গম্ভীর গলায় জবাব দিলেন,
“বড়োদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেই কায়দাও তোমায় তোমার মা-বাবা শেখায় নি? মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির এই এক সমস্যা! মা-বাবা এটাও শিখিয়ে দেয়না যে বড়োদের কীভাবে সম্মান করতে হয়।”
মোহ অনড় হয়ে কঠোর জবাব দিল তৎক্ষনাৎ,
“শিখিয়েছে তো অবশ্যই। আমি হলফ করে বলতে পারি, আমার বাবার মতো শিক্ষা আপনি সন্তানদের কখনোই দিতে পারবেন না। কিন্তু সম্মান জিনিসটা মন থেকে আসে, মন্ত্রী সাহেব।”
মোহের একেকটা জবাব যেন ধারা/লো অ/স্ত্রের ন্যায় বিঁধল সরোয়ার সাহেবের গায়ে। তবে তিনি প্রকাশ করলেন না। মেয়ের এমন কাঠকাঠ কথাবার্তায় মিসেস সুফিয়া দ্রুত কাছে এসে মেয়ের হাতের বাহু চেপে ধরে দৃষ্টি দিয়ে ধ/মক দিলেন মেয়েকে। মায়ের দৃষ্টির ইশারা বুঝে নিজেকে খানিকটা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করল মোহ। তবে সরোয়ার সাহেব এবার বললেন,
“তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম এতক্ষণ। এসে শুনলাম তুমি বাহিরে গিয়েছ। তাই ভাবলাম এসেছি যখন দেখা করেই যাই।”
“হঠাৎ আমার জন্য এত প্রতিক্ষা? এবার কি আমাকে জেলে বা ফাঁ/সিতে ঝুলানোর প্ল্যানিং আছে?”
সরোয়ার সাহেব বিস্তর হাসলেন এবার। অতঃপরই মুখটা ভার করে বললেন,
“তুমি কি জানো আমার একটা অর্ডারে শুধু তুমি কেন তোমার পুরো বংশের খোঁজ পাওয়া যাবে না? কিন্তু এমনটা করব না আমি। সামনে ইলেকশন। আমি চাইনা তোমার মতো এত তুচ্ছ একটা মেয়ের জন্য আমার ইলেকশনে কোনো সমস্যা তৈরি হোক।”
“তাহলে এই তুচ্ছ মেয়ের বাড়িতে প্রবেশ করার কারণ কী?”
“কারণ একটাই। আমার ছেলে।”
সরোয়ার সাহেবের সহজ উত্তর। তবে এই উত্তরের মানেটা ঠিক বোধগম্য হলো না মোহের। কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ল তার। ভাবুক হয়ে উঠল বেশ।
“মানে? ঠিক বুঝলাম না।”
“বোঝাচ্ছি তোমাকে। আজকাল একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি। তুমি আমার ছেলের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছ। আমি তোমাকে আমার ছেলের আশেপাশে দেখতে চাইনা।”
সরোয়ার সাহেবের কথায় কিছুটা সময় থম মে/রে দাঁড়িয়ে রইল মোহ। বেশ মনোযোগ দিয়ে বিস্ময়ের সাথে দেখতে লাগল তার সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে। এই মানুষটির ছেলের প্রাণ বাঁচাতে সে সাহায্য করেছিল। কিছু না হলেও হয়ত সামান্য ধন্যবাদ প্রাপ্য ছিল মোহের। কিন্তু উল্টে যেন নিজেই দো/ষী সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে মোহ। বড়ো একটা শ্বাস নিয়ে মোহ বলতে শুরু করল,
“আমি কোনোকালেই কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার ছেলের সামনে যাইনি। পরিস্থিতি আমাকে টেনেছে। যেমন উনার এক্সি/ডেন্টের পরেও আমাকেই সাহায্য করতে হয়েছে।”
সরোয়ার সাহেব সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ভঙ্গিতে বললেন,
“এসব বাহানা আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই। তোমার শ্রেণির মেয়েদের আমি হারে হারে চিনি। কিন্তু মনে রাখবে, আমার ছেলেকে আমি ফাঁসতে দিচ্ছি না। তোমার সামনে আমি দাঁড়িয়ে। দূরে থাকো স্বচ্ছের থেকে।”
সরোয়ার সাহেবের কথার মানে বুঝে সমস্ত শরীর যেন রি রি করে উঠল মোহের। নিজের ক্রোধ সামলে ওঠা গেল না আর। তাচ্ছিল্যের সহিত বলল,
“কৃতজ্ঞতা নামক শব্দ যেন আপনার সম্পূর্ণ জীবনেই নেই। জেনে রাখা ভালো, কৃতজ্ঞ হলে কেউ ছোটো হয়ে যায় না। আপনার ছেলেকে ফাঁসাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।”
মোহের কণ্ঠ শুনে ঘর থেকে দৌড়ে এলো ইথান। হুড়মুড়িয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে আনন্দের সহিত বলতে লাগে,
“মাম্মা এসেছে! মাম্মা এসেছে!”
ইথান এবং তার কথা শুনে উৎসুক হলেন সারোয়ার সাহেব। ভ্রু কুঁচকে তাকালেন ছোট্ট ইথানের দিকে। আরেকবার তাকালেন মোহের দিকে। মোহ চুপচাপ ইথানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কৌতূহল নিয়ে থাকতে পারলেন না সরোয়ার সাহেব৷ প্রশ্ন করে ফেলেন,
“তোমার ছেলে?”
মোহ সহজ কণ্ঠে বলল,
“জি। ও আমার ছেলে। কেন? কোনো সমস্যা?”
“সমস্যা তো একাই৷ তুমি সন্তানের মা। কী করে ভাবো একটা সন্তানের মা হয়ে আমার ছেলেকে ফাঁসানোর কথা? দেখো, সহজভাবে বোঝাই! আমি তোমার বাড়িতে এসেছি শান্তভাবে কথা বলতে। আমি শুধু চাই স্বচ্ছকে ওর মতো ছেড়ে দাও। ওর ত্রিসীমানায় আমি তোমার ছায়া দেখতে চাইনা। আমার সহজ কথা!”
মোহ আরো কিছু বলতে চাইলেও এবার মুখ খুললেন আজহার সাহেব। অতি শান্ত গলায় বললেন,
“মন্ত্রী সাহেব, আপনি তো অনেক কথাই বললেন! এবার না আমি কিছু কথা বলি৷ আপনি প্রথমেই আমার শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি আপনাকে জানিয়ে রাখি, আমার মেয়েকে আমি সর্বদা স্পষ্টভাষী হিসেবে গড়ে তুলেছি। আপনি যেসব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে করছেন। সেসব আমার মেয়ের চরিত্রে নেই৷ আপনার ছেলে আপনার কাছে যতটা দামী। আমরা গরীব হলেও আমার মেয়ে আমার কাছে ততটাই দামী। মোহ চাইলেও কখনো আপনার পরিবারের মতো একটা অগোছালো, শৃঙ্খলা বিহীন পরিবারের সদস্য হতে দেব না। আর মোহের শিক্ষাতেও এসব নেই।”
সরোয়ার সাহেব এবার এমনভাবে হাসলেন যেন আজহার সাহেব কোনো মজার কথা বলে ফেলেছেন। এবার সরোয়ার সাহেব ভার গলায় বললেন,
“এইযে এতসব লেকচার দিলেন। এটা সব মেয়ের বাবাই দেয়। কিন্তু শেষমেশ তাদের মেয়ে একই তালিকায় নাম লেখায়। আমার ধৈর্য শক্তির পরীক্ষা নেবেন না দয়া করে। আমি শেষবারের মতো বলছি, যদি আপনার মেয়েকে সত্যিই সামান্যতম শিক্ষা দিয়ে থাকেন আমার ছেলের পেছনে পড়তে দেবেন না।”
নিজের বাবার শিক্ষায় আঙ্গুল তোলার যন্ত্র/ণায় বাকরুদ্ধ হয়ে চোখ বুজল মোহ। মাঝে মিসেস সুফিয়া কঠিন গলায় বলে উঠলেন,
“ও যাবে না আপনার ছেলের কাছে। ও কখনো আর স্বচ্ছের সাথে যোগাযোগ রাখবে না। বিষয়টা আমি দেখব।”
মোহের মায়ের কথায় আজহার সাহেব এবং মোহ দুজনের চোখ বড়ো হয়ে এলো। পরক্ষণেই নিস্তেহ হলো মোহ। মা হিসেবে তার মা যা করছে ঠিকই করছে সেটাই উপলব্ধ হলো তার৷ সরোয়ার সাহেব আলতো হাসলেন। নরম সুরে বললেন,
“আপনি তো ওর মা। আশা করছি আপনি কথাটা রাখবেন। এতেই আপনার সহ আপনার পরিবারের
সবার মঙ্গল।”
আর বিলম্ব করলেন না সরোয়ার সাহেব। আস্তে-ধীরে সোফা থেকে উঠে বেরিয়ে গেলেন সদর দরজা দিয়ে। উনার প্রস্থানের সাথে সাথে আজহার সাহেব মিসেস সুফিয়াকে গম্ভীর গলায় ধমক দিলেন।
“তুমি ওই লোকটার কথায় সায় জানিয়ে আমার মেয়েকে ছোটো করলে মোহের মা?”
মিসেস সুফিয়া নেত্রপল্লব বড়ো বড়ো করে ক্রোধান্বিত হয়ে বলেন,
“তো কী করব? তোমাদের বাপ-মেয়ের এই বেশি বেশি কাণ্ড দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। যদি পরিবারটাকে বাঁচাতে চাও তাহলে আমার সাথে সায় দাও। মোহকে বড়ো দেখানো প্রয়োজন নাকি মোহের প্রাণ? ওই লোকটার ক্ষমতার আন্দাজ করতে পারো তুমি? আমার কাছে আমার মেয়ের জন্য যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছি। এ নিয়ে আমি কারোর মতবাদ শুনতে চাইনা।”
আর কারোর কথাবার্তা না শুনে হনহনিয়ে নিজ ঘরে চলে গেলেন মিসেস সুফিয়া। এতসব কাণ্ড দেখে ইথান খানিকটা অবাক হয়েই মাকে সরল মনে প্রশ্ন করে,
“নানুমনি রেগে গেল কেন মাম্মা?”
মোহ নিজেকে ধাতস্থ করে ছেলের জন্য হাসি ফুটিয়ে স্নেহের সহিত কোলে তুলে নিলো।
“কিছু না বাবু। আমি ভুল কাজ করেছি তাই রাগ করেছে। ঠিক হয়ে যাবে।”
“তাহলে তো তোমার সরি বলা উচিত নানুমনিকে।”
“হ্যাঁ বলব তো। খেয়েছ কিছু? দেখে তো মনে হচ্ছে না খেয়েছ। চলো খাইয়ে দিই।”
নিজেকে ব্যস্ত করতে ইথানকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে ধাবিত হলো মোহ।
আজকের সকালের ঘুমটা এক অন্যরকম স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে ভাঙল মোহের। স্বপ্নে দেখেছিল সে আজ সেই ধূসর এবং গভীর স্বচ্ছ সমুদ্রের ন্যায় লোচনের চোখজোড়ার মালিক স্বচ্ছকে। ওই মানুষটার চোখের অভ্যন্তরে আছে যেন গ্রাস করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই ভয়ে তার চোখে চোখ রাখেনা মোহ। যদি সেই গ্রাস গহ্বরে ডুবে যায়? যদি বাঁচিয়ে নিতে না পারে নিজেকে? তাহলে যে সারাজীবন সেখানে ডুবে থাকতে হবে। সাংঘাতিক সেই চোখজোড়ার মালিক যে ইনজেকশন দেখে ভয় পাবে সেটা ভাবনার বাহিরে ছিল মোহের। সেই ভীতু চেহারা স্বপ্নে দেখেছে ভেবেই হেসে ফেলে সে আনমনে। চোখ কচলাতে কচলাতে একা একা কথা আওড়াতে থাকে।
“এত বড়ো একটা লোক নাকি ইনজেকশনেও ভয় পায়!”
কথাগুলো নিজে নিজে বলা মাত্র মুখটা চুপসে গেল তখনি। নিজের প্রতি অজস্র ক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল তার। গতকালকেই এই মানুষটা তার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। আর আজকেই কিনা তার কথা মনে করে হাসছে? কথাটা ভাবলেই চোখমুখ শুঁকিয়ে যায় ওর। তৎক্ষনাৎ শুনতে পায় মায়ের প্রশ্ন।
“কোন লোক ইনজেকশনে ভয় পায়?”
মোহ থতমত খেয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে মায়ের দিকে তাকাল। পুরোনো ওয়ারড্রব থেকে মোহের সমস্ত জামাকাপর ব্যাগে তাড়াহুড়ো করে গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত মিসেস সুফিয়া। সেই সঙ্গে তুলে নিচ্ছেন ইথানেরও জামাকাপড়। মোহ কোনোরকমে উত্তর দিলো,
“স্বপ্ন দেখছিলাম মা। কিন্তু তুমি কী করছ? আমার আর ইথানের জামাকাপড় ব্যাগে তুলছ কেন?”
“জামাকাপড় কখন ব্যাগে গোছায়?”
“কোথাও যাওয়ার জন্য। আমরা সবাই কোথাও যাচ্ছি নাকি?”
মোহের প্রশ্নে মিসেস সুফিয়া গম্ভীর উত্তর করলেন,
“আমরা সবাই না তুই আর ইথান যাচ্ছিস গ্রামের বাড়ি।”
মোহ আশ্চর্য হয়ে শুধায়,
“কিন্তু কেন?”
“কারণটা তুই নিজেই মোহ। আমি চাইনা তুই স্বচ্ছের সাথে যোগাযোগ কর। এখানে থাকলে কে বলতে পারে ওই ছেলেটার সঙ্গে আবার যদি দেখা হয়ে যায়। তাই কালকেই তোর জন্য বাসের টিকিট কেটে এনেছিলাম। আমি আর তোর বাবাও যেতাম। কিন্তু তোর বাবার তো চাকরি আছে। কিন্তু আমরাও তোর মামার বাড়ি যাচ্ছি। তোর মামি টেনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মিনি স্ট্রোক করেছে৷”
“তাহলে আমিও যাই তোমাদের সাথে। গ্রামের বাড়ি কেন পাঠাচ্ছো? আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস নেই?”
“এই মুহূর্তে ভরসা করতে পারছি না মোহ। তুই গ্রামের বাড়ি যাবি এটাই আমার শেষ কথা। আর তোর ফোনটা কোথায়?”
মিসেস সুফিয়া আশেপাশে তাকিয়ে বিছানায় বালিশের পাশে ফোন দেখতে পেয়ে দ্রুত সেটা হাতে নিয়ে নিলেন। মায়ের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে মোহ এবার বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এবার ফোনটা কী করবে?”
“এটা আমার কাছে থাকবে। তুই গ্রামে পৌঁছানোর খবর আমি পাশের বাড়ির মামার কাছ থেকে নিয়ে নেব।”
মায়ের আচরণে এবার অতিষ্ঠ হয়ে উঠল মোহ৷ তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। তেতে উঠে বলল,
“আমি ক্লাস নাইন টেনের কোনো ছোটো মেয়ে না মা। যে আমার থেকে ফোন কেঁড়ে নিচ্ছো। আর এমন অদ্ভুত আচরণ করছ। এসব বিরক্ত লাগছে আমার।”
“লাগবেই তো তোর বিরক্ত। আমি তোর ভালো ভাবতে গেলেই বিরক্ত লাগে। স্বচ্ছের প্রতি তোর আচরণও আমার ঠিক লাগছে না। তাই এই ব্যবস্থা আমার গ্রহণ করতে হচ্ছে।”
“তুমি আমাকে সন্দেহ করছ মা? তুমি ভুলে যাচ্ছো যার সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করার জন্য তুমি এসব আচরণ শুরু করেছ তার সাথে বিয়ের সম্বন্ধ করছিলে?”
মেয়ের কড়া গলায় বলা কথার উত্তরে মিসেস সুফিয়া জোর গলায় বলেন,
“ভুল করেছিলাম আমি, মোহ। এত কঠিন পরিস্থিতি হবে জানতাম না। তুই আমার কথাটা রাখ। এর আগেও তুই আমাকে বলেছিলি তুই এসব ঝামেলায় জড়াবি না। কিন্তু তুই কথা রাখিস নি। এবার অন্তত রাখ কথাটা। ফ্রেশ হয়ে নে। খেয়েদেয়ে তৈরি হয়ে নে। বেশিদিন থাকতে হবে না। অন্তত এদিকের পরিস্থিতি ঠিক হওয়া অবধি অপেক্ষা কর। কাল ওই লোক এসে তোর বাবার দেওয়া শিক্ষাকে ছোটো করে গেছে। এরপর আরো না জানি কত অপবাদ দেবে। আশা করি তুই বুঝতে পারছিস আমার কথা৷ যা ফ্রেশ হয়ে নে।”
মায়ের কথায় এবার নিশ্চুপ রইল মোহ। ভেবে দেখল, মায়ের অনেক কথাই ঠিক। মিসেস সুফিয়া চলে গেলেন রান্নার উদ্দেশ্যে। মোহ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মনে মনে স্থির করল মায়ের কথা রাখার।
সকাল এগারোটা বাজতে দশ মিনিট বাকি। ইথানকে কোলে নিয়ে বাসের সিটে বসল মোহ। অস্থির মনকে শান্ত করার প্রচেষ্টা করল সে। এই অস্থিরতা কোন কারণে সেটা তার নিজেরও জানা নেই। অন্যদিকে চটপটে ইথানও শান্ত নেই মোটেও। প্রশ্নের শেষ নেই তার।
“মাম্মা আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
“গ্রামের বাড়িতে সোনা!”
“ওইযে, আগের বার গিয়ে ঘুরে এলাম সেখানে?”
“হ্যাঁ।”
ইথান বেজায় খুশি হলো। অনেকদিন ঘুরতে যাওয়া হয়না৷ এবার সে ঘুরতে যাচ্ছে।
জানালার বাহির থেকে চেনা মেয়েলি কণ্ঠ শুনে চকিতে সেদিকে তাকায় মোহ। হাতে বড়ো বাজারের ব্যাগ ধরে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে তানিয়া। সে ইশারায় মোহকে জিজ্ঞেস করল,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
মোহ শোরগোলের মাঝ থেকে কিছুটা চিৎকার করে উত্তরে বলে,
“গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।”
“হঠাৎ গ্রামের বাড়ি? মানে ওই গাজীপুরের গ্রাম? কোনো বিপদ হয়েছে নাকি?”
মোহ তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,
“বিপদ তো অনেক। কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি তোকে! ফিরে এসে সব বলব।”
“ঠিক আছে সাবধানে যাস।”
মোহ তানিয়ার প্রতিত্তোরে মৃদু হাসি দিলেই বাস ধীর গতিতে চলতে শুরু করে। মনে মনে ঠিক করে নেয় এবার থেকে স্বচ্ছ নামটি তার জন্য নিষিদ্ধ। আর কখনো দেখা হবে না তাদের। একথা ভাবতেই কেমন যেন ভার লাগে তার। মন বলে, সত্যিই কি আর দেখা হবে না?
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]