তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব- ৫৪

0
1056

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৫৪

-ত্ তুরা ভাবি!

বিষম খাওয়ার মতো করে তুতলিয়ে বলল জায়মা। তুরা সেদিকে লক্ষ্য না দিয়ে মন্থর গতিতে এগিয়ে গেল মাহিদের দিকে। মাঝামাঝি এক হাত সমান দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে বিস্মিত নয়নে একবার জায়মা আর মাহিদের দিকে তাকাল। মাহিদ ইতস্তত হয়ে

-আ..আব্ বুড়ি?

-তোমরা কবে থেকে চেনো একে অপরকে?

মাহিদের কথা থামিয়ে প্রশ্ন করল তুরা, মাহিদের বেশ অস্বস্তি লাগছে ছোট বোনের সামনে এহেন অবস্থায় পরে। কিছু বলতে গিয়েও গুলিয়ে ফেলছে। খানিক অপ্রস্তুত হয়ে আমতা-আমতা করে বলল

-দেড়..দেড় বছর

চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো তুরা, চোখে মুখে উপচে পরা বিস্ময়। জায়মার দিকে তাকিয়ে বলল

-ঠিক বলছে?

-হ্যাঁ, হ্যাঁ ভাবি

প্রচণ্ড জড়তা, বিভ্রান্তি নিয়ে বলল জায়মা। ভয়ে চিন্তায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ওর। এখন যদি সব জানাজানি হয়ে যায় তাহলে কারো সামনে দাঁড়াতে পারবে নাহ। মিনু, ফুয়াদ আর আহান! আহান ভাই যদি জানে? বাবা মায়ের কানে যদি যায়?

-ভাই দেশে ফিরেছে ছয় মাস হয়েছে হয়তো,,পরিচয় পর্বটা এত আগে থেকেই?

জায়মার আকাশ কুসুম দুশ্চিন্তার তার কেটে তুরার আবারও প্রশ্ন।

-সোশিয়াল সাইট থেকে পরিচয়, তারপর আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব আর..

-আর ভালোবাসা তাই তো?

সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়ালো মাহিদ। তুরা দুহাত বুকে গুঁজে ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে আছে। আর মাহিদ আর জায়মা পড়া না করা স্টুডেন্ট এর মতো আসামী চেহারায় হাসফাস করছে। বেশ কিছুক্ষণ ওদের অস্থিরতা, অস্বস্থি অবলোকন করে, উদ্বিগ্নতা বাড়িয়ে দিয়ে হঠাৎ করেই নিরবতা ভেঙে হাহা করে হেসে উঠলো তুরা।
বিস্মিতরূপে তাকাল জায়মা আর মাহিদ তুরার দিকে। ও রীতিমতো পেটে খিল ধরা হাসি দিয়ে যাচ্ছে। হাসির শব্দ জোরে হতেই মুখে নিজ হাতে চেপে ধরলো, তবুও হেসেই যাচ্ছে
মাহিদ আর জায়মা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে, হচ্ছে টা কি!

-এই,শোনো ভাবিকে ভূত টুত ধরলো নাকি

-হোয়াট,কি যা তা বলছ

-যা তা না,সত্যিই। ভাবি এভাবে একা একাই হাসছে কেনো তাহলে

মাহিদ নিজেও বিব্রতকর চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে। আগামাথা কিছুই বুঝছে নাহ।
তুরা বহু কষ্টে হাসি দমিয়ে থামলো। ওদের দুজনের ভীত শঙ্কিত মুখ দেখে আবারও হাসি পাচ্ছে কিন্তু তবুও সেটা দমিয়ে বেশ ভাব ধরে বলল

-সেদিন সকাল বেলা মামনীকে কাজের বাহানা দিয়ে জায়মার সাথেই দেখা করতে গেছিলে তাই না ইয়াজ ভাই?

মাহিদ হতভম্বিত হয়ে ঘাড় নাড়িয়ে উত্তর দিলো। তুরা আবারও একই স্বরে বলল

-আর আমার ননদিনীকে নিয়েই সারাদিন গাড়িতে করে ঘুরেছ তাই তো?

-তোকে এসব কে বলেছে বুড়ি? তুই কি করে জানলি?

তুরা মুখাবয়ব গম্ভীর করলো। জায়মা আর মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলতে আরম্ভ করলো

-সেদিন তোমাদের রেস্টুরেন্টের বাইরে থেকে আমি দেখেছিলাম,জায়মা উল্টো দিকে মুখ করে ছিল বলে ওর চেহারা দেখতে পাইনি। আবার শেষ পরীক্ষার দিন আমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়েছিলে তুমি,মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে পানি আনতে গেছিলে মনে আছে? সেদিন আমি তোমার গাড়িতে একটা পায়েল দেখেছিলাম। তোমাকে সে ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করিনি তবে ওটা আমার কাছেই ছিল। আর এ বাড়িতে এসে থেকে তোমার আর জায়মার কারো অস্বস্তি, আর উশখুশ করা আমার চোখ এড়ায়নি। আজ দুপুরে জায়মার পায়ের পায়েল দেখেই আমার প্রবল সন্দেহ হয়েছিল,কারণ ওটা হুবহু সেই পায়েলের মতই।
তোমাকে পায়েলটার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম মনে আছে? তুমি বললে আরেক পায়েরটা হারিয়ে গেছে?

জায়মাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো তুরা,উত্তরে জায়মা শুধু ঘাড় উঠা নামা করিয়ে সম্মতি দিলো। তুরা আবারও বলল

-তখন তো কড়া সন্দেহ হয়েছিলই। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে দুজনের চোখাচোখি ও এড়ায়নি আমার নজরে । আর এখন তো হাতে নাতে ধরলাম ই

এক দমে শেষ করে থামলো তুরা। মাহিদ আর জায়মা হা করে শুনলো তুরার সম্পূর্ণ কথাটা। তার মানে তুরা ইনডাইরেক্টলি সবটাই জানে শুরু থেকে!
মাহিদ কিঞ্চিৎ অবাক হলেও ভার গলায় বলল

-হাতে নাতে ধরা আবার কেমন কথা হলো। চুরি করেছি নাকি যে হাতে নাতে ধরেছিস

ভ্রু কুচকে মাহিদ বলল। তুরা তার উত্তরে ঝাঝালো গলায় মৃদু চেঁচিয়ে উঠে বলল

-তুমি তো মুখটা বন্ধই রাখো ভাইয়া। এক তো চোরের মতো প্রেম করেছ,দেখা করেছ। এখন ধরা
পরেও তোমার প্রেসটিজ কমেনা। বাড়ি আগে যাই দাঁড়াও, মামনীর কানে দেই,,চুরি করে প্রেম, দেখা সব বাহাদুরি ঘুচিয়ে দেবে খুন্তি পেটা করে

মাহিদ থতমত খেলো, তবুও এগিয়ে এসে তুরার হাত ধরে একটু এগিয়ে এনে ফিসফিসিয়ে বলল

-কি করছিস বোন, গার্লফ্রেন্ড হয় আমার! ওর সামনে একটু মান সম্মান দে। এমনেই তো সারাদিন নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায়

-বেশ করে বেশ। তোমারই গার্লফ্রেন্ড, বেশ করেছে। তুমি আমাকেও বললে না ভাই! আমি এত পর হয়ে গেছি

শেষের কথাটা তীব্র আফসোস মিশিয়ে বলল তুরা। আহান তুরার গাল ধরে আদুরে গলায় বলল

-আহা,তুই না আমার বুড়ি। আমার ছোট বনু,ডল। তুই কেন পর হবি। আসলে আমার একটু হেজিটেশন হচ্ছিল তোকে বলতে, আর তাছাড়াও আমিতো জানতাম নাহ জায়মা তোর ননদ। ও আমি দুজনেই অজ্ঞাত ছিলাম এই আত্মীয়তার ব্যাপার টাই। প্রথমে ওকে এই বাড়িতে দেখে তো আমারই বিশ্বাস হয়নি,তোকে কিভাবে বলতাম

আড়চোখে তাকালো তুরা, মাহিদ মেকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

-হেহে,তুই যা চাইবি দেব। বাট প্লিজ মায়ের কাছে পিন লাগাইস না বইন আমার

-দেখি সরো, তোমার আর কোনো কথাই শুনতে চাচ্ছি না

বলে মাহিদ কে সরিয়ে ঘুরে এসে জায়মার সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-আর এই যে ননদিনী, ভালই তো ইটিস পিটিস করছ তলে তলে। এত কিছু বলো অথচ এইটুকু আমাকে বললে নাহ

-আম..ভাবি আসলে লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ ছিল তো,আমি নিজেই তো দোটানায় ছিলাম কখন ছেকা মেকা দিয়ে চলে যায় নাকি। ওই সেদিন ই ওর সাথে আমার প্রথম সামনা-সামনি দেখা রেস্টুরেন্টে। আমি নিজেই সম্পর্ক টা নিয়ে ভয়ে ভয়ে ছিলাম

-আচ্ছা সেসব পরে দেখা যাবে। এখন তোমরা যে যার ঘরে যাও।এভাবে রাত বিরেতে চিপায় দাঁড়িয়ে ফুসুরফাসুর করতে শুনলে চোর ভেবে তক্তা পেটা করবে দুজনকেই

জায়মা ঘাড় নাড়িয়ে, একবার মাহিদের দিকে আড়চোখে তাকালো, তারপর এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়ে রুমে চলে গেলো। মাহিদ ও আর দাঁড়ালো নাহ। তুরা পানি নিয়ে ঘরে গেলে সেও ফিরে গেলো।

•••

বেশ পুরাতন আমলের মতো দেখতে দোতালা বাড়িটা।নিচের তালা ভাড়া দেওয়া, দুই সন্তান সহ বাবা মায়ের একটা পরিবার থাকে। আর উপরের তালাতে ওরা তিনজন। মোট পাঁচটা ঘর উপরে। তিনটে শোবার ঘর,একটা রান্নাঘর আরেকটা স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়তোবা।
ঘরে আসবাবপত্র খুব বেশি নেই, তবে যা আছে তা বেশ পুরোনো বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু সব গুলো জিনিসপত্রই দেখতে বেশ অন্যরকম, সৌখিনতার সাথেই যে সবগুলো বানানো তা স্পষ্ট।
অল্প কিছু আসবাবপত্রে সাজানো ঘরটা বেশ পরিপাটি করে গোছানো। বসার ঘরে একটা সিঙ্গেল আর একটা ডাবল সেটের কাঠের সোফা, তার সামনেই টি-টেবিল। সামনে টিভি, এক পাশে ফ্রিজ। সবকিছুতে নজর বুলিয়ে বুলিয়ে দেখছিলেন এর মাঝেই মাঝ বয়স্ক মহিলার কন্ঠস্বর কানে এলো

-ভাই সাহেব, গরীবের ঘরের এতটুকু আতিথেয়তা গ্রহণ করলে ভীষণ খুশি হবো

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই, বাদামি রঙের সুতি শাড়ি পরিহিতা মাঝারি গড়নের মহিলাটিকে দেখতে পেল। চায়ের কাপ তুলে ফিরোজ ইসলামের সামনে ধরতেই উনি সাদরে গ্রহণ করলেন

-এমা সে কেমন কথা। আপনার ঘর দেখে তো আমারই হিংসে হচ্ছে। এত সুন্দর ঘর আর এত ভালো মানুষের বসবাস যেখানে তারা কি করে গরীব হয়।

বলেই চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। পাশেই দাঁড়ানো ফ্রক পরনে চিকন শরীরের ছোট খাটো একটা মেয়ে। বয়স কতই বা,হয়তো সাত কি আট! ফিরোজ ইসলাম ইশারায় কাছে আসতে বললেন। মেয়েটি এগিয়ে এলে তার মাথায় হাত রেখে বললেন

-তোমার নাম কি মামনী?

-সুহানা ওয়াহিদ

-বাহ,খুব সুন্দর নাম তো, কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?

-ক্লাস টু

-বাহ বাহ,কোন স্কুলে মামনী?

-এই পাশেরই একটা স্কুলে পড়াই। ছোট তো বেশি দূর যেতে পারে নাহ। আর আমিও তো হাটা চলা তেমন করতে পারিনা

সায়েরা বেগম উত্তর করলেন। সুহানা তাদের কথার মাঝেই উঠে চলে গেলো। ফিরোজ ইসলাম চায়ের কাপটা রেখে স্পষ্ট গলায় বললেন

-আপা,সবটাই তো শুনলেন। ফারিহা বড্ড আদরের মেয়ে আমার, ওর মা মারা যাওয়ার পর সেই ছোট্ট থেকে নিজে বাবা মায়ের আদরে মানুষ করেছি ওকে। কখনো কোনো ইচ্ছেই অপূর্ণ রাখিনি। সবসময় বন্ধুর মতই সম্পর্ক ওর আর আমার। তাই তো কোনো কিছুই আমার থেকে গোপন করেনি ও। আপনি সাদমানের মা,আমি যতই বলি সবার আগে আপনার অনুমতিটাই প্রয়োজন। সম্পর্ক তো শুধু দুটো মানুষে নাহ। দুটো মন,দুটো পরিবারেও, এ ব্যাপারে আপনার সহমত আমার একান্তই প্রয়োজন আপা

সবিনয়ে বললেন ফিরোজ, সায়েরা বেগম সবটা শুনে তার নরম গলার স্বরে জবাব দিলো

-আমার কাছে আমার ছেলে মেয়ের খুশির চেয়ে বেশি কিছুই নেই ভাই। ওর বাবা গত হওয়ার পর থেকে ছেলেটা আমার নিজের উপর সমস্ত দ্বায়িত্ব নিয়ে সংসার সামলে যাচ্ছে। আপনার মেয়ে রাজরানীর মতো মানুষ হয়েছে আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে কি সে খুশি হতে পারবে?

-কেনো পারব না আন্টি? আমি তো বেশি খাইনা, দু বেলা ভাত আর এক বেলা রুটি দিলেই হবে। আপনারা যেটুকু খাবেন ওখান থেকেই নাহয় দিয়েন

ফারিহা এসে বাবার পাশে বসতে বসতে বলল। ফিরোজ হাসলেন মেয়ের কথায়। সায়েরা হাসলেও পরমুহূর্তে মলিন গলায় বলল

-মারে, তোমার ওত ভালো বাড়ি গাড়ি ছেড়ে তুমি কি আর এখানে মানিয়ে থাকতে পারবে

-অবশ্যই পারব আন্টি। আর কে বলেছে এখানে কেও নেই। এই যে কত সুন্দর ঘর,বারান্দা, ছাদ। আর একটা মা আর বোন আছে তোহ! এর চেয়ে বেশি কি হতে পারে!

সায়েরা বেগমের হাতের উপর হাত রেখে বলল ফারিহা।

-আমাকে নিজের মেয়ে করে নিতে পারবেন না?

ভরা চোখে হাসলো সায়েরা বেগম। এক হাতে জড়িয়ে ধরলো ফারিহাকে।

-তোমার মতো লক্ষিকে আমার মেয়ে করতে পারার চেয়ে বেশি খুশির কি আছে বলো,কিন্তু

-আবার কেনো কিন্তু

-সাদমান? ও কি জানে?

সাদমানের নাম শুনতেই মুখ কালো করে ফেলল ফারিহা। চুপসে যাওয়া মুখে চুপ করে বসে রইলো।
/
সিড়ি বেয়ে ধুপধাপ পায়ে উপরে উঠছে, আজ রিমঝিমকে একটু তাড়াতাড়িই ছুটি দিয়েছে। পড়ানোর মন মানসিকতা আসছে নাহ। তার উপর সকাল করে ফারিহাকেও বাসায় পেলো নাহ,সব মিলিয়ে মেজাজ টা কেমন দুম ধরে আছে।
দরজা খুলে ঘরে ঢুকে কোনো দিকে না তাকিয়ে হনহন করে ঘরের দিকে যাচ্ছিল সাদমান

-সাদমান ওয়াহিদ?

চেনা একটি কন্ঠের ডাকে ঘুরে দাঁড়ালো সাদমান। নিজের ঘরে সোফাতে ফিরোজ ইসলামকে বসে থাকতে দেখে ভূত দেখার মতো চমকালো। দিনে দুপুরে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে না তো?

-ফারিহার বাবা এসেছে তোর সাথে দেখা করতে

মায়ের কথায় ঘোর ভাংলো সাদমানের। মন্থর পায়ে এগিয়ে এসে সালাম দিলো ফিরোজ ইসলামকে। উনি উত্তর দিয়ে বললেন

-তেমন কিছু নাহ, তোমার বাড়ি একটু দেখতে ইচ্ছে হলো তাই এসে পরলাম, তুমি অসন্তুষ্ট হওনি তো?

হতবিহ্বল হয়ে ঘনঘন মাথা নাড়ালো সাদমান।

-না না, আপনি এসেছেন এটা তো অনেক ভালো কথা, আমি কেনো অসন্তুষ্ট হলাম। আমি তো ঝুমঝুমকে পড়াতে গেছিলাম। ওখানে আপনাকে দেখিনি, বাড়ি এসে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনাকে দেখে একটু চমকে গেছি আরকি

-ব্যাপার নাহ, আগে ফ্রেশ হয়ে আসো, আজ তোমার সাথে ব্রেকফাস্ট করব।

সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সাদমানের। কি দিয়ে কি হচ্ছে,কিছুই তো বুঝতে পারছে নাহ। তবুও মায়ের ইশারায় হতবুদ্ধির মতো মাথা নাড়িয়ে ঘরের ভেতর গেলো। ফোনটা পকেট থেকে বের করে আনমনা হয়ে শার্টের বোতাম খুলছিল

-আরে কি করছিস কি। মেয়ে মানুষের সামনে নির্লজ্জের মতো জামা কাপড় খুলছিস ক্যান

একের পর এক চমক পেয়ে সাদমান কথার খেই হারিয়ে ফেলেছে, হা করে তাকিয়ে আছে বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ফারিহাকে দেখে। হচ্ছে টা কি, সকাল বেলা করে বাপ বেটি দুজনেই হাজির!

-হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। তোর বডি দেখতে আমি মোটেও ইন্টারেস্টেড নাহ। বোতাম লাগা

ফারিহার কাঠ কাঠ কথা শুনে সাদমান হড়বড়িয়ে বোতাম লাগালো শার্টের। বিব্রতকর চেহারা নিয়ে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল

-কি হচ্ছে টা কি, তুই কি করছিস আমার ঘরে?

-আমার ইচ্ছা

-তোর ইচ্ছা মানে কি,এভাবে হুট করেই একটা ছেলের ঘরে ঢুকে বসে থাকতে পারিস না তুই

-আলবাৎ পারি, ফারিহা কি পারে কি না সেটা তোর থেকে শুনতে হবে নাহ। আমি টাকা পাই তোর কাছে আমাকে কথা শোনাবি নাহ

-তো তুই কি সকাল বেলা করে বাপসহ তাগাদা দিতে এসেছিস আমার বাড়ি?

-সে আমি যাই করতে আসি আমার ইচ্ছে।

বলেই থপ করে খাটের উপর বসে পরলো। সাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল

-ভালই তো মেয়েবা’জি করে বেড়াস ইদানীং

-হোয়াট ননসেন্স, এসব কোন ধরণের কথা!

-যা সত্যি তাই তো বলছি, ওই ধিঙ্গি মেয়েটার সাথে তো ভালই আলাপ তোর প্রায় ই দেখি একসাথে

-হ্যাঁ তাই৷ এ্যানি প্রবলেম?

-উহু, যা খুশি করে বেড়া।আমিও যা মন তাই করব

বলেই সাদমানের টেবিলের উপর থেকে একটা ডায়রি হাতে নিয়ে খুলতে গেলেই খপ করে কেড়ে নিলো সাদমান। উত্তেজিত হয়ে বলল

-কারো পারসোনাল জিনিসে অনুমতি ছাড়া হাত দিতে নেই জানিস নাহ। ম্যানারলেস। বের হ আমার ঘর থেকে আমি চেঞ্জ করব

ফারিহা চোখ রাঙিয়ে উঠে দাঁড়ালো। টেবিলের উপরে রাখা বই খাতা এলোমেলো করে ছিটিয়ে খিটমিট করে বলল

-তোকে আমি দেখে নেবো ভদ্দরলোকের ছা

বলেই গজগজ করতে করতে বেড়িয়ে গেলো, সাদমান হা করে তাকিয়ে রইলো। কি হচ্ছে টা কি! এই মেয়ে কি পাগল হয়ে গেছে!

•••

আয়নার সামনে চরম বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তুরা, নিজের গলার কাছে দাগটা বারবার দেখছে আর কঠিন চাহনি দিয়ে তাকাচ্ছে আহানের দিকে। কিন্তু তাতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, আরামসে পায়ের উপর পা তুলে বসে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে।
এই অসময়ে কফি খাওয়ার মানে টা কিছুতেই বোঝে না তুরা, তবে সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই এখন,তার চেয়েও বেশি চিন্তিত তুরা তার গলার দাগটা নিয়ে। এটা নিয়ে মানুষের সামনে যাবে কি করে

-এই আপনি মানুষ নাকি রাক্ষস, খেয়ে ফেলতে চান আমাকে? ঘুমের মধ্যে কি আমাকে আপনার চকলেট মনে হলো যে বাইট দিয়ে দিলেন

ঝাঝালো গলায় বলল তুরা,তবে তাতে আহানের কি! সে এমন একটা ভাব ধরে আছে যেন নিষ্পাপ শিশু,কিছুই যানেনা। হাতের কাপটা পাশে রাখতে রাখতে বলল

-মনে হওয়ার কি আছে, তুমি তো চকলেট ই। ছোট খাটো একটা চকলেট উইদ এক্সট্রা সুইটনেস

তরতর করে তুরার রাগ বেরে গেলো। এক তো ঘুমের মাঝে তুরার গলায় কামড় বসিয়ে দাগ করে দিয়েছে আবার বেপরোয়া কথাবার্তা। এখন এসব নিয়ে বেরবে কি করে তুরা। একটু পরেই সকলে বেরবে ফুয়াদের বউ আনতে। আর তুরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলার দাগ ঢাকার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেই যাচ্ছে।
আহান উঠে দাঁড়ালো। সুটকেস থেকে নেভি ব্লু রঙের একটা পাঞ্জাবি বের করে সেটা পরে তুরার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে চুলে হাত দিয়ে ব্যাক ব্রাশ করতে করতে বলল

-এত ঢাকাঢাকির কি আছে, ওভাবেই রাখো কেও দেখলে বলবে স্বামীর ভালোবাসার চিহ্ন। না তো এমনিতে যেই পিচ্চি তোমাকে দেখে যদি সিঙ্গেল ভেবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবে

আহানের অযাচিত কথা শুনে তুরা রীতিমতো বিরক্ত হচ্ছে। একটা লোক কতটা ঠোঁট কাটা হতে পারে, মিচকা শয়তান পুরো। আহানের কথায় কান না দিয়ে একটা চোকার নেকলেস গলায় পরে নিলো, নেভি ব্লু রঙের জরজেট শাড়ির সাথে সিলভার নেকলেস টাতে মন্দ লাগছে নাহ।
রেডি হয়ে বেরতে নিলেই আহান হাত ধরে বলল

-কোথায় যাচ্ছ

-কোথায় আবার সবাই যেদিকে যাচ্ছে

-তুমি আমার সাথে যাবে,চুপচাপ বসো

-আপনার সাথে যাব মানে কি। সবাই তো বেরচ্ছে পরে গাড়ি ছেড়ে দিলে যাব কিসে

বলে আবারও পা বাড়াতে নিলে খপ করে হাত ধরে ধমকে বলল

-বলছি না আমার সাথে যাবে। কথা শোনো না কেনো তুমি। কতগুলো ছেলে আছে ওদের সাথে যাওয়ার কোনো দরকার নেই

মুহুর্তেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো? এই লোকটাকে কিছুতেই বুঝতে পারেনা তুরা, এই তো ভালো ছিলো। আবারও গোমড়ামুখো হলো। আহান আয়নার দিক থেকে ফিরে আবারও কিছু বলবে তুরা ফট করে আহানের ঠোঁটে আলতো ভাবে একটা চুমু দিয়ে দিলো, আহান বিস্মিত হয়ে গেলে তুরা ছোট করে বলল

-সরি, রেগে যাচ্ছেন কেনো

-এখন তো দেখছি কিছু বলাও যাবে নাহ, এই জন্য উইকনেস দেখাতে নেই,সবাই সুযোগ নেয়

একা একাই বিড়বিড় করতে করতে হাতের ঘড়িটা পরলো। আরও একবার চুলে আঙুল চালিয়ে বলল

-হু চলো এবার, আর হ্যাঁ ওখানে গিয়ে মুরব্বিদের সাথে সাথে থাকবা বেশি করে। ভাবি আর আন্টি টাইপ মহিলাদের আশেপাশেও ভিড়বে নাহ, ওরা এক একটা চলন্ত শাদি ডট কম। যেখানেই সুন্দরী মেয়ে দেখবে সেখানেই ওদের দেবর,ভাই,ছেলে,নাতনীর কথা মনে পরে যাবে।

বলে তুরার হাত ধরে বেরোলো। সকলে ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে। বাড়িটা প্রায় ফাঁকা। হয়তো আহান বলেই রেখেছিলো আলাদা যাবে। তাই আর ডাকেনি
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here