তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব: ৫৯

0
1047

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব: ৫৯

-কোথায় যাচ্ছিস তুই?

এড়িয়ে যেতে গিয়েও পারল না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাঁড়াতে হলো। তবে জবাব করল নাহ, ব্যস্ত ভঙ্গিতে ফোন চালাতে লাগল। সাদমান আবারও জিজ্ঞাসা করল

-কি হলো বল কোথায় যাচ্ছিস?

-বাইরে, একটু নিউমার্কেটের দিকে

-কেন?

-কেন আবার, মার্কেটে তো মানুষ কেনাকাটার জন্যেই যাই

ফারিহার দায়সারা জবাবে তুষ্ট হলো না সাদমান। ফারিহার সাথে আবারও সেই ছেলেটাকে দেখে গা পিত্তি জ্বলে উঠছে ওর। তবুও নিজেকে যথাযথ সংযত করার চেষ্টা করে বলল

-এই সন্ধ্যা বেলা করে কেন যাবি? তাও আবার ওই ছেলেটার সাথে?

ফোন থেকে মুখ তুলে সাদমানের থমথমে চেহারার দিকে তাকাল ফারিহা। তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে ঘুরাল। বেশ গম্ভীর গলায় বলল

-ওই ছেলেটা মানে কি? ওর নাম রবিন। আমার মামার বড় ছেলে, এর আগেও এসেছিল

-হ্যাঁ এর আগেও এসেছিল,আর তুই তার বাইকে করে সারা শহর টইটই করে চড়েছিস

ফারিহার কথা শেষ হতে না হতেই সাদমান কটমট করে বলল। ফারিহা কিছুক্ষণ কটাক্ষ করে তাকিয়ে থেকে বলল

-তো কি হয়েছে, আর তুই এখান থেকে যা, ও বাইক বের করতে গেছে চলে আসবে

ফারিহার কথায় যেন সাদমানের ক্ষোভ দরদর কয়েকাংশ বেড়ে গেল,কপালের রগ গুলো স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হলো, তবুও নিজের অহেতুক ক্রোধ সংবরণ করে চাপা স্বরে বলল

-কেন? আমি থাকলে কি? তোর সাথে কথা বলতে দেখলে কি তোর সেই ভাই রেগে যাবে নাকি?

-দেখ ফাও কথা বলতে একেবারেই ইচ্ছে নেই। তুই যেই কাজে এসছিস যা, আমি চাইনা কোনো ঝামেলা হোক

এবার আর সাদমান নিজেকে সংযত রাখতে পারল নাহ, কিসব বলছে ফারিহা? ওর সাথে কথা বলতে দেখলে ছেলেটা ঝামেলা করবে কেন? সাদমান ফারিহার সাথে কথা বলবে এতে ওর কি!

-ঝামেলা কেন হবে?আমার সাথে কি এর আগে কথা বলিস নি তুই? আর আমার সাথে কথা বলবি তো ওর কি? কে হয় ও?

প্রায় এক প্রকার চিৎকার করে বলল সাদমান। ফারিগা স্তম্ভিত সাদমানের এহেন রূপে। এতটা উত্তেজিত ওকে আগে দেখেছে বলে মনে হয়না নিজের উৎকণ্ঠা ভেতরে দমিয়ে শান্ত গলায় বলল

-দেখ এটা বাড়ি, সবাই আছে। এভাবে চেঁচামেচি করবি নাহ। ও আমার যাই হোক সেটা আমার পারসোনাল ব্যাপার, তোকে তো আর জ্বালাচ্ছি না। তাহলে সমস্যা কোথায় তোর?

বলেই আর কিছু বলার বা শোনার প্রতীক্ষা না করে গেইটের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ততক্ষণে ওর মামাতো ভাই গ্যারাজ থেকে বাইক বের করে এনেছে। স্টার্ট করতেই ফারিহা হাসিমুখে পেছনে উঠে বসে কিছু একটা বললে ছেলেটাও হাসতে হাসতে গিয়ার ঘুরিয়ে ধুলো উড়িয়ে চলে গেলো। সাদমান হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল ওর যাওয়ার পানে। ফারিহা গত এক সপ্তাহ ধরেই কথা বলছে না ওর সাথে। যদিও তার কারণ সাদমানের নিজেরই উপেক্ষা। বারবার ফারিহাকে এড়িয়ে চলত পিছু ছাড়াতে চাইত কিন্তু এখন যখন ফারিহা নিজে থেকেই তাকে এড়িয়ে চলছে ব্যাপার টা একেবারেই সহ্য হচ্ছে না ওর। আর রবিন নামের ছেলেটার সাথে ফারিহার এমন মেলামেশা ও একেবারেই দেখতে পারছে নাহ।

খানিক স্থির দাঁড়িয়ে থেকে মন্থর পায়ে হাঁটা ধরল বাড়ির ভেতরে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে, রিমঝিম কে আর এখন পড়ানোর একেবারেই ইচ্ছে নেই। কিন্তু কিছু করার ও নেই।
মৃদুমন্দ পদক্ষেপে বাড়ির ভেতরে গিয়ে বসল পড়াত ঘরটাতে রিমঝিম আগে থেকেই বই খুলে বসে আছে, মেয়েটা এখন আর আগের মতো জ্বালায় নাহ। খুব বেশি না হলেও লেখাপড়াতেও বেশ উন্নতি হয়েছে। সাদমান অতিরিক্ত কোনো শব্দ খরচ না করে চুপচাপ পড়ানো শুরু করল। ঘণ্টা খানেক সময় অতিবাহিত হলে রিমঝিম ওর চিকন কণ্ঠে প্রশ্ন করল

-স্যার আপনি কি অসুস্থ?

নিরবে মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিল সাদমান। তবে রিমঝিম দমে গেল নাহ। আবারও বলল

-তাহলে কি কোনো ব্যাপারে চিন্তিত?

সাদমান নিরুত্তর রইল খানিক। অতঃপর বলল

-তোমার এমন মনে হওয়ার কারণ?

চিকন কণ্ঠে তৎক্ষনাৎ জবাব এলো

-আপনার চেহারা দেখেই কেমন একটা চিন্তিত এলোমেলো ভাব আসছে। আর আপনি একটা অংক ভুল ও করিয়েছেন,এই যে দেখুন

বলে খাতা এগিয়ে দেখাল সাদমানকে। ঘোলাটে দৃষ্টিতে খানিক থ মেরে থাকল সাদমান। আসলেই তার খারাপ লাগছে। মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠছে। রিমঝিমের বলায় যেন অস্বস্তি, ছটফটানি আরও দ্বিগুণ হলো। বেশ কিছু সময় চুপ থেকে বলল

-আজকে যদি এই পর্যন্তই শেষ করি তোমার কি প্রবলেম আছে? আসলে আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে।

-ইটস ওকে স্যার, আপনি বরং কাল আবার পড়াবেন। যেটা আপনার ভালো মনে হয়

কিঞ্চিৎ মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিয়ে উঠে দাঁড়াল।দরজার দিকে পা বাড়াতে গেলেও কিছু একটা ভেবে ঘাড় ঘুরিয়ে রিমঝিমের দিকে তাকিয়ে বলল

-বাড়িতে কি কোনো অনুষ্ঠান হবে? না মানে এনভাইরনমেন্ট দেখে এমন মনে হচ্ছে

-কেনো স্যার আপনাকে আপু বলেনি? রবিন ভাই আর ফারিহা আপুর এঙ্গেজমেন্ট কাল

বলেই আবারও বই গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পরল। কিন্তু সাদমানের পা আর এক চুল নড়াতে পারল নাহ। গলা থেকে শুরু করে সারা শরীরে তরতর করে প্রখর জ্বলন ছড়িয়ে গেল। প্রচণ্ড তৃষ্ণায় কাঠ কাঠ হয়ে এলো গলা। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এমন রুক্ষ অনুভূতিতেও তার হাত পা কেমন জমে এলো।
বহু কষ্টে পা তুলে আস্তেধীরে আগালো। ঢুলু ঢুলু পায়ে সিড়ি বেয়ে নেমে রাস্তার সামনে দাঁড়াতে একটা রিকশা দাঁড় করাল। সে সবসময়ই হেটে যাতায়াত করে। কিন্তু আজকে যেন শরীরের সমস্ত শক্তি টুকুও ফুরিয়ে গেছে।
রিকশা চলতে শুরু করলে কি একটা মনে করে রিকশা চালককে নিউমার্কেটের সামনে দিয়ে যেতে বলল। আর হলোও তাই, ঠিক যেটার আশঙ্কা করেছিল। টপটপ করে কপাল বেয়ে ঘাম ঝরে পরল। তার সামনেই ফারিহা রবিনের হাত ধরে একটা শাড়ির দোকান থেকে বেরচ্ছে। মুখ জুড়ে অমায়িক হাসি।
এমনটাই তো চেয়েছিল সাদমান। তবুও বুকের ভেতর কেমন চিনচিনে ব্যথা শুরু হলো। আর এক মুহূর্ত অবলোকন করতে পারল না সে দৃশ্য। চালককে দ্রুত চালাতে বলল, বাড়ির সামনে আসতেই ভাড়া চুকিয়ে এগিয়ে গেল সিড়ির দিকে। কিন্তু শরীর যেন আর চলল নাহ, টলমলে পায়ে দু কদম বাড়াতেই শরীর ভার ছেড়ে দিল। ধপ করে পড়ে গেল সিড়ির মুখে

…………

-কি বলিস, শেষে কিনা আমাদের জায়মা আর মাহিদ! এটা তো কল্পনাতেও ভাবিনি রে

-তুমি এ কথা বলছ, আমি যেদিন প্রথম ওদের একসাথে দেখেছিলাম সেদিনই তো আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। শেষে কি না বিলাতি ফিরিঙ্গি আর সিলেটিয়ান উপজাতি একসাথে, তাও আমার মাখোঁ মাখোঁ প্রেম

বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো তুরা,সাথে রাইমাও। হাসির দাপটে রাইমার উঁচু হওয়া পেট টাও নড়ছে। পেটের উপর হাত রেখে ক্লান্ত স্বরে রাইমা বলল

-তুই আর হাসাস না রে আমাকে, পেটের মধ্যে অলিম্পিক শুরু করে দিয়েছে এই বিচ্ছু

-নড়ছে বাবু?

উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল তুরা,রাইমা মাথা উপর নিচ করলে ও হুড়মুড়িয়ে এসে রাইমার পেটের সাথে কান পেতে ধরল। কিছুক্ষণ কান চেপে ধরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল

-ওমা ছেলে কি বলল, যে মামি খিলখিল করে উঠল একেবারে?

-হুমম, সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আপু তোমাকে বলা যাবে নাহ। তাই না ঘাপুস?

বলেই আলতো ভাবে রাইমার পেটে হাত বুলিয়ে দিল। রাইমা তুরার কথা বলার ভঙ্গি দেখে আবারো হেসে দিল। কিন্তু বসার ঘরে ওদের দুজনের পাশে আরেকজন ও উপস্থিত, এতক্ষণে ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে তাকাল, তাও রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে

-হোয়াট রাবিশ,,ঘাপুস আবার কেমন নাম, যেমন ষ্টুপিড তেমন ষ্টুপিড টাইপ নাম তার

-শাট আপ, আমি ষ্টুপিড তো আপনার কি, মাস্টার গিরি করছেন সেটাই করুন। এদিকে মেয়েলী কথায় কান দিতে বলেছে কে আপনাকে

কটমট করে বলল তুরা, রাইমা মুখ টিপে হাসছে ওর কথা শুনে। আবারও দুজনের ফুসুরফাসুর গল্প শুরু হলো। ছোট ছোট চোখ করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল আহান তুরার দিকে।
বউটা তার খুব অবাধ্য হয়ে গেছে, একটা কথাও শোনে না। কিছু বলতে গেলে উল্টো দুটো শুনিয়ে দেয়। ঠিক করে খেতে চাইনা,কাছে আসতে চাইনা, তার সাথে ঘুমাতেও চাইনা, একটু আদর করতে গেলেও দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। হতাশা ভরা নিঃশ্বাস ছাড়ল আহান। এই যে বউয়ের জন্য ল্যাপটপ নিয়ে বসার ঘরে এসে বসে আছে কিন্তু তার বউ তো নিষ্ঠুর একবার তাকাচ্ছেও নাহ। রাইমা এসে থেকে সারাদিন ওর সাথেই পরে থাকে।
আরও বেশ কিছুক্ষণ সময় উঠে দাঁড়িয়ে বলল

-তুরা, একটু ঘরে আসো

-আমি? কেনি? যাব না আমি

পটপট করে মুখের উপর না বলে দিল। আহান রেষপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল, কি সাহস হচ্ছে মেয়েটার দিনদিন! তাকে গুণেই না এখন আর। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল

-দুই মিনিটের মধ্যে ঘরে আসো তুরা

বলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। রাত বারোটা বাজতে চলল অথচ মেয়েটার ঘরে আসার নাম নেই, আবার মুখের উপর বলে যাব না। এখন তো কিছু বলাও যায় না,একটু কিছু বললেই কেঁদে দেয়,দূরে দূরে থাকে। আহানের ভীষণ আক্ষেপ হতে শুরু করল। বউটা তার পালটে গেছে। আগের মতো পিছে পিছে লেগে থাকে নাহ এমন তুরাকে একেবারেই ভাল্লাগছে নাহ আহানের। এতসব ভাবতে ভাবতে হুট করেই রাগ হলো আহানের ভীষণ। ল্যাপটপ টা সোফার উপর ছুড়ে মেরে গগণচুম্বি স্বরে চিৎকার করল

-তুরায়ায়া

অকস্মাৎ এমন চিৎকারে কেঁপে উঠলো তুরা, হকচকিয়ে উপরে তাকালে রাইমা বলল

-ভাই মনে হয় রেগে গেছে তুরা, তুই যা ওর তো কিছু দরকার ও হতে পারে তুই এক্ষুনি যা

তুরাও আর দ্বিমত করল নাহ। দ্রুতপায়ে হেঁটে ঘরে গেলেই আহানের অগ্নিদৃষ্টির শিকার হলো। কটমট চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এবার বেশ ভয় ভয় হলো তুরার। মৃদু পায়ে এগিয়ে এসে বলল

-কি হয়েছে,কিছু লাগবে?

আহান ভীষণ শক্ত চোখে তাকিয়ে থেকে ওর হাতের কব্জি ধরে এক টান দিয়ে বসালো কোলের উপর। তুরার গাল চেপে ধরে বলল

-তোমাকে ডেকেছি না আমি? মুখের উপর না বলা শিখেছ খুব তাই না?

তুরা আহানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারল না। বাঁধা গলায় বলল

-ছাড়ুন, লাগছে আমার

-আর নিজে যখন আমাকে রেখে দূরে দূরে থাক, কাছে ডাকলে আসো না। রাতেও ও ঘরে গিয়ে ঘুমাও তখন, তখন আমার লাগে না?

তুরা জবাব দিল না, আহানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে, এক পর্যায়ে আহান ছেড়েও দিল। তুরাকে কোল থেকে নামিয়ে অন্যপাশে গিয়ে উপর হয়ে শুয়ে পরল। আড়চোখে তাকাল তুরা আহানের দিকে। এবার সত্যিই খারাপ লাগছে তার। আহান যে কষ্ট পাবে এটা বুঝতে পারেনি। আস্তেধীরে উঠে দরজা লাগিয়ে দিল। খাটে এসে পাশে বসে আহানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল

-শুনুন

জবাব এলো নাহ, তুরা আবারও ডাকল। কিন্তু আহানের নড়চড় নেই। তুরার ঠোঁট ভেঙে কান্না এলো। সে নিজে দূরে দূরে থাকলেও আহানের একটু এড়িয়ে যাওয়াও ওর সহ্য হয়না। এগিয়ে গিয়ে আহানের পিঠে হাত রাখল, ধরা গলায় বলল

-একটু তাকান না আমার দিকে?

তবুও আহান নড়ল নাহ। এবার তুরা কান্না আটকাতে পারল নাহ। চোখ বয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলে হাতে উল্টো পিঠে মুছে আহানের পিঠের উপর শুয়ে মুখ গুঁজে দিল ঘাড়ের কাছে, কাঁদো কাঁদো গলায় বলল

-এমন করছেন কেন, আমার কান্না পাচ্ছে। আপনি আমার দিকে কেন তাকাচ্ছেন নাহ। আপনি আমাকে ভালোবাসেন নাহ আর

বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। তুরার চোখের পানি আহানের ঘাড় বয়ে বুকে গিয়ে পরল। এক হাতে তুরার পিঠ চেপে ধরে ঘুরল আহান। তুরার অবস্থান ঠিক ওর বুকের উপর। এইটুকু সময়ে কেঁদে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। গাল বয়ে টুপটুপ করে আহানের বুকে পরছে চোখের পানি। আহান নরম স্পর্শে তুরার গাল মুছিয়ে দিয়ে বলল

-কি করলাম আমি, কাঁদছ কেন?

-আপনি আমার সাথে কথা কেন বলছেন নাহ

-আমি বলছি না? নিজে যে এতদিন ধরে আমার থেকে দূরে দূরে থাক, তখন কিছু না আর আমি চুপ করে থাকলাম পাঁচ মিনিট হলো কি না আর কান্নাকাটি শুরু, এই জন্য মানুষকে উইকনেস দেখাতে নেই,সবাই সুযোগ নেই

-আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন

ঠোঁট ভেঙে বলল তুরা, আহান ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে বলল

-তো কি করব। যাও যেখানে ছিল সেখানেই যাও তাইলে কেও খারাপ ব্যবহার করবে নাহ। আমার কাছে তো আস না এখন কেন এসেছ?

-এই যে এখন এসেছি, এখন আদর করুন

বলেই আহানের গাল টুস করে একটা চুমু খেলো তুরা। আহান চাইলেও আর কপট রাগ ধরে থাকতে পারল নাহ। দুহাতে তুরাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলল

-এইবারই শেষ। এরপর যদি এমন করেছ তাহলে আমি আর একটাও কথা বলব না বলে দিচ্ছি

তুরা প্রত্যুত্তর করল নাহ। সাপের মতো দুহাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল আহানকে। পরপর কয়েকবার ওর বুকে চুমু দিয়ে মুখ গুঁজে রইল।

~

দরজায় সশব্দে কয়েকবার করাঘাতে ঘুম ভেঙে গেল রুবি খাতুনের। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল ছয়টা। এত সকালে কে এলো,তাও এভাবে!
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে উঠে দরজা খুলতেই আহানের অবিন্যস্ত, এলোথেলো চেহারা দেখে আতকে উঠল রুবি। আহানকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে তার আগেই ও অস্থির হয়ে বলল

-মা, মা শিগগিরী আসো, তুরা কেমন করছে মা।তুমি এক্ষুনি আস

রুবি সবেমাত্র ঘুম ভেঙে এমন কিছু একেবারেই প্রত্যাশা করেনি। রুবিকে ধাতস্থ হওয়ার সময় না দিয়েই ওর হাত ধরে হাঁটা শুরু করতে নিলে ইনসাফ মাহবুব বেড়িয়ে এসে বলল

-কি হয়েছে আহান, তুরার কি হয়েছে ও ঠিক আছে?

-বাবা তুরা কেমন করছে। ওর শরীর খুব খারাপ করেছে। তুমি এক্ষুনি ডক্টরকে কল করো বাবা। মা চলো না আমার তুরা কেমন করছে

রুবি, ইনসাফ আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল নাহ। ছুটে গেলেন আহানের ঘরের দিকে। ঘরে ঢুকেই আতকে উঠল সবাই। আহান এক ছুটে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে তুরাকে মেঝে থেকে কোলে তুলে নিলো

-মা দেখ না তুরার কি হলো। তুরা,তুরা ওঠ। তুরা তুমি তাকাচ্ছ না কেন?

চেঁচিয়ে উঠলো আহান।তুরার গালে আলতো কয়েকটা চাপড় দিল। রুবি ইনসাফ তুরার এহেন অবস্থা আর আহানের এমন অস্থিরতা দেখে প্রচন্ড বিচলিত হলো। রুবি এগিয়ে এসে দেখল তুরার সমস্ত মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, আহান পাগলের মতো তুরা হাত পা ঘষছে

……..

সকালের কড়া রোদ চোখে উপচে পরতেই ঘুম হালকা হলো, কুচকে এলো চোখ। কপাল ভাঁজ করতে গেলে তার উপর কিছু একটার উপস্তিতি অনুভব করতে পারল। সারা শরীরে ব্যথা,ঝিম ধরে আছে। কোনো মতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চোখ টেনে খুলল সাদমান।
সব হালকা ঝাপসা দেখছে, তৎক্ষনাৎ তার মনে পরে গেল কাল রাতে সিড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে পরে গেছিল। কিন্তু তারপর কি হলো? এটা কোথায়? খানিক ঝাপসা দৃষ্টিতেই এদিক ওদিক তাকালে উপলব্ধি করল এটা তারই ঘর। কনুই এ ভর করে উঠতে গেলে অনুভব করল সামান্য উঠে বসার ও শক্তি নেই শরীরে। সারা গায়ে ঘাম জবজবে। চোখ টেনেও তাকাতে পারছে নাহ।
কিছুক্ষণ চোখ বুজে থেকে আবারও তাকানোর চেষ্টা করল। মুখের উপর হালকা, ঝাপসা একটা মেয়েলি অবয়ব দেখে বলল

-মা? মা আমি উঠতে পারছিনা কেন। কি হয়েছে আমার?

জবাব এলো নাহ। কিন্তু ঝাপসা চোখে হলেও সে স্পষ্ট বুঝতে পারল তার সামনেই বসা তার মা। কপালের উপর হাত রাখে লেপ্টে থাকা ভেজা একটা কাপড় তুলে সরাল। সারা শরীর কেমন জ্বলে উঠছে, সাদমান ক্লান্ত গলায় আবারও বলল

-মা এটা কি আমারই ঘর?

-হু

ক্ষীণ স্বরে জবাব এলো এবার। সাদমান উঠতে চেষ্টা করলে কড়া গলার ধমক শুনতে পেলো

-চুপ করে শুয়ে থাক। রাতে তো সিড়ির উপর পড়েছিলি, নিচ তলার ভাড়াটিয়া তুলে না আনলে তো ওখানেই চিত হয়ে থাকতি

মায়ের এমন রূঢ় আচরণ বোধগম্য হলো না সাদমানের। তবে কালকের কথা মনে হতেই ওর ফারিহার কথা মনে হলো। অজান্তেই চোখের কোণা ভিজে এলো। ক্ষীণ স্বরে বলল

-মা, ফারিহার বিয়ে

-হ্যাঁ তো বিয়ে তো হতেই পারে।

-ও বিয়ে করে নেবে মা? ও পরের বাড়ি চলে যাবে

-তো বিয়ে করলে তো পরের বাড়ি যাবেই। আর এসব দিয়ে তোর কি। তুই নিজেও তো চাইতিস ওর বিয়ে হয়ে দূরে চলে যাক

সাদমান অনেক্ষণ চুপ করে থাকল। অবশেষে চোখ টিপে বন্ধ করে বলল

-আমি চেয়েছি ও দূরে চলে যাক,কারো সাথে বিয়ে হয়ে যাক। কিন্তু আমি চাইনা ওর বিয়ে হোক

-কি যা তা বলছিস। জ্বরে পরে কি মাথার তার ছিড়েছে?মেয়েটাকে তো দূর ছাই করতিস

-দূর ছাই করতাম কারণ আমি ওকে ভালোবাসি

অপরপক্ষ থেকে উত্তর এলো নাহ।সাদমান অপেক্ষাও করল না উত্তরের। নিজে থেকেই বলতে শুরু করল

-আমি ওকে খুব ভালোবাসি মা, আর ভালোবাসি বলেই দূরে সরিয়ে রেখেছি। কারণ আমি চাইনি আমার মতো গরীব, বেকার ছেলের সাথে জুড়ে ওর জীবনটা নষ্ট হোক। ওর বাবা ওকে যতটা বিলাসিতা, আভিযাত্য দিয়ে বড় করেছে আমি তা কখনও দিতে পারব নাহ। ও আমার মতো দুপয়সার ছেলেকে না অনেক বড় ঘরের ছেলেকে ডিজার্ব করে। আমি তো নিজেই ওর বোনকে টিউশনি করিয়ে টাকা পাই,সেখানে আমার মতো ছোটলোক কি ওরে পাওয়ার যোগ্যতা রাখে

কথাগুলো শেষ হতে যতটুকু দেরি, সপাটে ঠাস করে একটা শব্দ হলো। বা গালের উপর জোরে একটা তামাশা পরতেই হকচকিয়ে উঠল সাদমান। চোখের হালকা ঝাপসা দৃষ্টি এক লহমায় ঝকঝকে হয়ে গেল
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#হীডিংঃ হুট করেই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরেছি, টাইপ করতে পারছিনা,লিখতে খুব দেরি হচ্ছে। যার দরুন এলোমেলো ভাবেই উপস্থাপন করতে বাধ্য হলাম,রিচেইক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং ❤️

#Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here