গভীর_গোপন #১১ম_পর্ব #অনন্য_শফিক

0
289

#গভীর_গোপন
#১১ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



জেবা চিৎকার চেঁচামেচি করেই চলেছে। সে বার বার বলছে,’ আশফাক, তুই কোনদিন আমার ভালোটা চাস নাই। সব সময়ই আমায় ঠকিয়ে গিয়েছিস তুই।আমি তোর প্রতি সব সময়ই উইক ছিলাম। তুই এটা জানতি।জেনেই এই সুযোগটা নিয়ে আমায় ইউজ করেছিস দিনের পর দিন। তোর জন্য আমার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে।এখনও তুই আমায় নিয়ে তোর মতো করে খেলতেছিস!’
আশফাক বললো,’ খেলেছিস তো তুই! তুই এখানে এসে আমার সংসারে ভাঙন ধরিয়েছিস।তুই একটা খা*রাপ মেয়ে।তুলি আমায় যে পরিমাণ বিশ্বাস করতো, এই বিশ্বাসে তুই ফাটল ধরিয়েছিস!এর জবাব তোকে দিতে হবে। ‘
জেবা বললো,’ আর কতো মিথ্যে বলবি তুই? তুই কসম করে বল তো টুকি তোর মেয়ে না? কসম করে বলতে পারবি তুই? ‘
আশফাক বললো,’ সবকিছুতেই কেন কসম কাটতে হবে? আমি কি তোর মতো নাকি যে কথায় কথায় কসম কাটবো শুধু!’
জেবা বললো,’ কসম কাটার সাহস নাই আসলে তোর। অতোটা পা*ষাণ হোস নাই যে নিজের মেয়েকে তুই কসম কেটে অস্বীকার করবি।’
আশফাক হাসলো। হেসে বললো,’ এটা নাটক পেয়েছিস? এরকম অভিনয় করছিস কেন? তোর সমস্যা কি জেবা? তুই আমার কাছে আসলে কি চাস? কিসের বিনিময়ে তুই তোর এই মিথ্যে বকবকানো থামাবি বল তো? কতো টাকা চায় তোর বল?’
জেবা বললো,’ টাকা দিয়ে সব হয় আশফাক?হয় না।আমি শুধু স্বীকৃতি চাই। তুই টুকিকে নিজের মেয়ে বলে স্বীকার করবি। আমাকে তোর স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবি। করতে হবে এইগুলো। না করলে আমি আইন আদালত দেখবো।’
আমি এসবের মধ্যে কোন কথা বলতে চাইলাম না। চুপচাপ বসে রইলাম। বসে থেকে ওদের এসব কথা শুনতেও ঘেন্না হচ্ছে। বিরক্তি লাগছে। তবুও এখানেই বসে আছি। কোন আশায় বসে আছি বুঝতে পারছি না!

জুঁই বললো,’ এখন দয়া করে তোমরা চুপ করো। তোমাদের দুজনের কেউই যে ভালো লোক না এটা তো পরিষ্কার। এখন টুকির পিতা ভাইজানই হোক অথবা অন্য কেউ হোক, আমার প্রশ্নটা জেবা আপুর কাছে।জেবা আপু তুমি বলো, তুমি তোমার পাপের মাধ্যমে কেন টুকিকে এই পৃথিবীতে আনলে? ও যখন আরেকটু বড় হবে।যখন সে তার জন্মের কাহিনী শুনবে। তখন যদি সে তোমায় প্রশ্ন করে কেন তাকে এভাবে পৃথিবীতে আনলে।কি জবাব দিবে তাকে তুমি? জবাব দিতে পারবে তুমি?’
জেবা কথা বলছে না।চুপ করে আছে।
আশফাক কথা বলে উঠলো এরিমধ্যে।বললো,’ আরে, এর তো চরিত্রেরই ঠিক নাই।এর কাছে সন্তান টন্তান কি আবার! দেখবি দুদিন পরে মেয়েরে ফেলে রেখে অন্য জনের সাথে ভাগবে !’
জুঁই কড়া গলায় তার ভাইকে বললো,’ ভাইজান, থামবে তুমি? দয়া করে চুপ করবে? তুমি যদি অতোটা ধোয়া তুলসী পাতাই হতে তবে জেবা আপু সম্পর্কে এতো কিছু জানার পরেও তাকে তোমার ঘরে তুলতে না। এখানেই প্রমাণ হয়, তালি এক হাতে বাজেনি।দু হাতেই বেজেছে।দু জনের দু হাতে। তাছাড়া তোমাকে কি করে বিশ্বাস করবো আমি বলো? আমার হাসব্যান্ড সম্পর্কে তুমি মানুষের কাছে কি সব বলে বেড়িয়েছো? সে তার সব সহায় সম্বল জোয়া খেলে নষ্ট করে ফেলেছে? ওদের সহায় সম্বল নষ্ট হয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু জোয়া তো সে খেলেনি। তার বাবার অসুখ ছিল।দেশে বিদেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সম্পদ বিক্রি করতে হয়েছে।ক্যাশ ভাঙতে হয়েছে। কিন্তু এই জন্য কি সে নিজে এসে কোনদিন তোমাদের কাছে দশ টাকা চেয়েছে? চায়নি।আমি এসে আমার ভাগের জমি দাবি করেছি। তুমি যদি বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ ভোগ করতে পারো তবে আমি কেন পারবো না? বাপ তো দুজনেরই সমান ছিল।আর তুমি যে মানুষের কাছে কেন এসব কথা ছড়িয়েছো তাও আমি জানি।যেন কেউ আমার পক্ষে না থাকে।যেন সবাই বলে, এখন সম্পদ ভাগ করে দেয়া যাবে না।দিলে আমার জোয়ারি হাসব্যান্ড তা বিক্রি করে শেষ করে ফেলবে।কতো বড় মিথ্যুক তুমি।কতো বড় চ*ক্রান্ত সাজাতে পারো তুমি।যে নিজের বোনের সঙ্গে এরকম করতে পারে, সে অন্যের সঙ্গে কি না করতে পারবে? তোমাকে বিশ্বাস করবো কি করে ভাইজান? তুমি তো বিশ্বাসযোগ্য লোক নও!’
আশফাক চুপ করে রইলো খানিক সময়। তারপর বললো,’ জুঁই, এটা আমাদের ফ্যামিলির বিষয়। আমাদের ভাই বোনের বিষয়। এখানে আমাদের অনেক ভুল বোঝাবুঝি আছে।এটা নিয়ে পরেও কথা বলা যাবে। আগে যে সমস্যা সামনে দাঁড়িয়েছে এটার সমাধান কর।’
জুঁই বললো,’ সমাধান কে করবে? তুমি যার কথা বললে সে তো আসছেই না। আসবে বলেও তো মনে হয় না।আমি এখানে সারাদিন রাত পড়ে থাকবো নাকি? আমারও নিজের ঘর আছে। সংসার আছে। এখানে বসে থাকলে তো আমার চলবে না!’
আশফাক পকেট থেকে ফোন বের করে আবার ডায়েল করতে চায়তেই কলিং বেল বাজলো। আশফাক তাড়াহুড়ো করে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখা গেল নিপাট এক ভদ্রলোক এসেছেন। ইনিই জেবার হাসব্যান্ড।আগেও একবার দেখেছি তাকে।
জেবার হাসব্যান্ড এলেই টুকি দৌড়ে গেল তার কাছে। জাপটে ধরে বললো,’ বাবা, আমার বাবা এসেছে।’
ভদ্রলোক বড় বিরক্ত হচ্ছে। মেয়েকে নিয়ে তার কোন আগ্রহ নাই।
টুকি বার বার ‘ বাবা বাবা ‘ করছে। দৃশ্যটা দেখে এতো খারাপ লাগছে!
আমার সত্যিই ইচ্ছে করছে জেবাকে ধরে গলা টি*পে মে*রে ফেলি। মানুষ এরকম কাজ কিভাবে করে? ভুল করবে নিজেরা কিন্তু এর মাশুল দিবে একটা বাচ্চা শিশু! ইশ্!
জেবার হাসব্যান্ড টুকিকে বললো,’ টুকি, আমি তোমার বাবা না। তুমি আমায় বাবা ডেকো না। ‘
টুকি কিছুতেই মানতে চায় না। সে কাঁদে।গলা জড়িয়ে ধরে।
বার বার,’ বাবা, বাবা ‘ বলেই ডাকে।
বলে,’তুমিই আমার বাবা। আমার বাবা।’
জুঁই ওকে টেনে আনতে চায়লে সে আসে না। ওই লোককেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে।
জেবার হাসব্যান্ড এবার একটু কোমল হলো।বললো,’ থাকুক আমার কাছে।’
মেয়ে যেন এতে ভরসা পেলো। সে তার বাবাকে খুব সূক্ষ্ম করে দেখছে।নাকে মুখে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কতোদিন পর যে দেখা! হয়তো এই লোক তাকে জন্ম দেয়নি। কিন্তু ছোট থেকে এই লোককেই তো সে বাবা বলে জেনে এসেছে।আদরও কম বেশি পেয়েছে। মানুষ যে কেন এরকম।এক সময় এই সন্তানকে পরের জেনেও যে আদর করলো, এখন আর এই সন্তানকে সহ্যই করতে পারছে না। এইটুকু একটা মেয়েকে শতো করে বোঝালেও তো আর সে বুঝবে না এই লোক তার পিতা নয়।তার পিতা অন্য কেউ।অন্য কোন কু*লাঙ্গার।

জেবার হাসব্যান্ড আসার পরেই যেন আশফাক হালে পানি পেলো।সে আবার কথার খৈ ফোটাচ্ছে। আশফাক জেবার হাসব্যান্ডকে বললো,’ আসাদ ভাই, আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার স্ত্রী আমার নামে যাচ্ছে তাই বলে গেলো।এসব শুনতেও ঘেন্না হয়। সে এখানে এসেছে আমার সুন্দর সুখের সংসার ন*ষ্ট করে দিতে। আপনি দয়া করে তার সম্পর্কে কি কি জানেন একটু কাইন্ডলি বলে দেন ভাই। আমাকে বাঁচান ভাই।আমি আর ওর দেয়া নোংরা অ*পবাদ গুলো নিতে পারতেছি না!’
আসাদ বললো,’ জেবা কি কি অ*পবাদ দিয়েছে আপনার নামে? বলুন শুনি। তারপর বলি আমি আমার জানা সবকিছু।’
আশফাকের মুখ ততোক্ষণে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সে গড়গড় করে বললো,’ আমি নাকি টুকির জন্মদাতা পিতা।টুকি নাকি আমার সন্তান। চিন্তা করেন কতো বড় অ*পবাদটা দিলো আমার নামে। আমাকে ফা*সাবার জন্য যা ইচ্ছে তাই করেছে এখানে এসে। আপনি তো ওর সম্পর্কে আর ওর করা সব কার্যকলাপ সম্পর্কে সব জানেন ভাই। আপনার ঘরে দিনের পর দিন কে এসে পড়ে থাকতো আপনি জানেন না? জানেন। তাছাড়া টুকির জন্মদাতা পিতা কে তাও তো আপনি জানেন। জানেন না?’
আসাদ সাহেব শীতল গলায় বললো,’ সব জানি। সবকিছু।’
আশফাক বললো,’ তাহলে বলুন ভাই। এক্ষুনি বলে আমাকে মুক্তি দিন দয়া করে।আমি আর এসব নিতে পারতেছি না ভাই।’
জেবার হাসব্যান্ড বললো,’ টুকির আসল জন্মদাতা পিতা —

আগামী দিন শেষ পর্ব ইনশাআল্লাহ –

#চলবে

১০ম পর্বের লিংক –
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/811678063887301/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here