#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ১৩
প্রচন্ড অপ্রতিভ আর কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে চেয়ে আছে তুরা,,তার সামনে দাঁড়িয়ে তারই ডিপার্ট্মেন্টের স্যার, যার শার্টে সস ফেলে বেশ অনেকক্ষানি স্থান জুড়ে দাগ করে ফেলেছে।
পথযচুত আর ক্লেশিত দৃষ্টিতে তুরা তাকালো মাহিদ স্যারের দিকে, আমতাআমতা করে বললো
-স স্যার,আপনি! ম মানে আমি এসব ইচ্ছে করে করিনি আম..
-ইটস ওকে, ডোন্ট প্যানিক
খুব সাবলীল স্বরের ভঙ্গিমা বজায় রেখেই উত্তর দিলো মাহিদ, তুরা বিমূঢ় হয়ে তাকালো মাহিদের চেহারায়,, নাহ কোনো রাগ বা বিরক্তির ছাপ নেই, এত বড় কান্ড করে ফেললো অথচ লোকটা একটু রাগ ও করলো না?
-স্যার আমি সত্যিই খুব দুঃখিত, আমার সাবধানে চলা উচিত ছিল, আমার জন্য আপনার পোশাক নষ্ট হয়ে গেলো
-না না ঠিক আছে, মানুষ মাত্রই ভুল। তুমিতো আর ইচ্ছে করে করনি, সো ইটস অলরাইট
এই ব্যাপার টাকে মাহিদ স্যার এত সহজভাবে নিবেন তুরা ভাবতেই পারেনি,,তুরার মনে হলো লোকটা ভীষণ ভালো, এর জাগায় জল্লাদটা থাকলে নিশ্চয় এতক্ষণে পুরো ভার্সিটি মাথায় তুলতো ডিসগাস্টিং বলে।
-স্যার আপনার শার্ট টা পরিষ্কার করা উচিত, এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে আর দাগ উঠবে নাহ
তুরা একটা টিস্যু মাহিদের সামনে ধরে বললো। মাহিদ বরাবরের মতোই স্বাভাবিকভাবেই তুরার হাত থেকে টিস্যু টা নিয়ে স্মিত হেসে ধন্যবাদ জানিয়ে পিছু ফিরে হাঁটা ধরলো ডিপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের দিকে।
-কিরে, আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি আর তুই এখানে হা করে দাঁড়িয়ে আছিস?
পেছন থেকে ফারিহার কথা শুনে তুরা ওর দিকে ফিরে, বললো
-আর বলো না, অকাজ করে ফেলেছি একটা
-ফার্স্ট অফ অল, তোর এই তুমি টুমি মার্কা ফরমালিটি বাদ দেহ,তারপর বল কি হয়েছে
-আমি ক্যান্টিন থেকে খাবার নিয়ে বেরোচ্ছিলাম ই তখন হুট করেই মাহিদ স্যার সামনে আসলে উনার সাথে ধাক্কা লেগে সব সস উনার শার্টে লেগে গেছে
-কিহ,মাহিদ স্যার?
-হ্যাঁ
-কিছু বললো তোকে,বকেছে নাকি?
-আরে না না,উনি তো স্বাভাবিকভাবেই হেসে কথা বলে চলে গেলো, কিন্তু আমারই খারাপ লাগছে। বেচারার সাদা শার্ট টাতেই দাগ বসিয়ে ফেলেছি
তুরা মুখ টা ছোট করে অপরাধীর ন্যায় বললো। ফারিহা এগিয়ে এসে ওর এক গাল টিপে বললো
-ওলে বাবুলে,,থাক এত গিল্টনেস দেখাতে হবে নাহ, যা হওয়ার হয়েই তো গেছে তুই বরং সারের সাথে দেখা করে আরেকবার সরি বলে দিস
তুরা তাও অন্যমনস্ক হয়ে বললো
-হ্যাঁ আচ্ছা
-তোর আচ্ছা টাচ্ছা বাদ দে তোহ,আমার ক্ষুধা পেয়েছে, একবার তো মাহিদ স্যারের উপরেই পরলো খাবার,এবার আমার পেটে না পরলে আমি পাগল হয়ে যাবো
বলেই তুরাকে টেনে নিয়ে ক্যান্টিনের ভেতরে নিয়ে যায় ফারিহা,, খাবার খেয়ে ব্রেক শেষ হলে আরও দুটো ক্লাস করে বারোটার দিকে বের হয় ভার্সিটি থেকে। ফারিহা আর সাদমান কে বিদায় জানিয়ে তুরা বাড়ির দিকে হাটা ধরলো।
আজ বাড়ি থেকে পাঠানো গাড়ি আর ওই ব’জ্জাত লোক কোনটাই নেই, তাই আজ ইচ্ছে মতো ঘুরবে,, তুরা আনমনেই হেঁটে এসে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ালো,, বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও কোনো বাস আসার নাম নেই,, অপেক্ষার কাটা বিশ মিনিট পেরোতেই একটা বাসের দেখা পেলো , বাসটা এসে থামতেই তুরা কাধের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে এগিয়ে গেলো। এভাবে একা লোকাল বাসে উঠার অভিজ্ঞতা তার নেই, সিড়িটাও কেমন উচু, হাত ফসকে পরলেই শেষ। তুরা মনে সাহস জুগিয়ে বাসের দিকে এগিয়ে গিয়ে হ্যান্ডেল টা শক্ত করে ধরে উঠতে গেলে হাতের বন্ধন টা আলগা হয়ে পরে যেতে নিলেই বাসের ভেতর থেকেই একটা হাত চেপে ধরে তুরার হাত। এক টানে তুরাকে বাসের ভেতর টেনে নিতেই বাসটা আবারও চলা শুরু করলো।
তুরা দরজার সাথে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।
সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা হালকা পাতলা গড়নের অল্পবয়স্ক ছেলে, পরনে একটা প্যান্ট আর জার্সির মতো টি-শার্ট,, গলায় কিসব চেইন ও ঝুলানো। একটা হ্যাংলা মার্কা হাসি দিলো তুরার দিকে তাকিয়েই। এতে তুরার ভীষণ অসস্থি হলেও ছেলেটা যেহেতু ওকে সাহায্য করেছে সেই সুবাদে ওউ সামান্য হেসে এগিয়ে দাঁড়ালো। বাস ভর্তি লোকজন, একটা সিট ও ফাঁকা নেই,অগত্যা তুরাকে দাঁড়িয়েই থাকতে হলো। তুরা দাঁড়িয়ে থাকলেও তার একদম পেছনে দাঁড়িয়ে সেই হ্যাংলা মার্কা ছেলেটা, একটু পরপর বাসের ঝাঁকুনিতে গায়ের মধ্যে ঢলে পরছে বারবার।এটা যে ইচ্ছে করেই করছে ছেলেটা তুরা বেশ ভালো মতোই বুঝতে পারছে৷ কিন্তু এগিয়ে যাবে কোথায় আশেপাশে লোকজন দিয়ে টইটম্বুর বাসটা, এক চিলতে পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখেনি। তবুও তুরা চেষ্টা করে এগিয়ে এসে দাড়ালো, অনেকক্ষানি এসে গেছে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সামনের তুরার স্টপ, এইটুকু পার হলেই বাঁচে, কিন্তু তুরার অসস্থি বাড়িয়ে ছেলেটা আবারও এগিয়ে এলো। তুরা মনে মনে দুয়া করছে যাতে রাস্তা টুকু তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়,, ছেলেটা আরেকটু এগিয়ে এসে দাড়ালেই বাস জোরেশোরে ব্রেক কষে থামলো আর এটার সুযোগ নিয়ে বখাটে ছেলেটা আবারও তুরার গায়ে হেলে পরতে আসলে তুরাও কনুই দিয়ে এক গুতা দিয়ে ফেলে দিলো ছেলেটাকে,, ভরা বাসে লোকজনের গায়ের উপর গিয়ে ছেলেটা পরতেই গ্যাঞ্জাম শুরু হয়ে গেলো, আর তুরাও এই সুযোগে ভীড় ঠেলে বাস থেকে নেমে এসে দাঁড়ালো। নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসটা আবারও চলা শুরু করলে তুরা যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো।
উফফ এতক্ষণ দম বন্ধ হয়ে আসছিলো মানুষের ভীড় আর অসস্থিতে, এবার যেনো প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলো। আবারও হাসিহাসি মুখ করে এগিয়ে যেতে লাগলো সে। বাসস্টপ থেকে দুই মিনিট হাটলেই বাড়ি। তাই নিশ্চিত হয়ে হাটতে নিলেই হুট করে ছোট্ট একটা বিড়ালছানা এসে পরলো তুরার পায়ের কাছে।
একেবারে বাচ্চা একটা বেড়াল, সাদা গায়ে মাথার কাছে লালচে ছোপ ছোপ দাগ,, ভীষণ মিষ্টি দেখতে বেড়াল টাকে কোলে তুলে নিলো তুরা। মাথায় আদর করে হাত বুলিয়ে দিতেই আহ্লাদিত হয়ে বাচ্চাটাও ‘মিও মিও’ করে উঠলো
-ইশ কি কিউট বাচ্চাটা!!
উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো তুরা, বিড়ালটাকে কোলে নিয়েই এদিক ওদিক তাকালো, এত ছোট বাচ্চা বিড়াল টা এখানে কোত্থেকে এলো?এখানে দুইটাই বাড়ি, রাস্তার ডান পাশের টা তাদের, আর অপরপাশের টা প্রতিবেশী লোকেদের,,ওদের ব্যাপারে তেমন কিছুই জানে না তুরা। ছোট থেকেই বিড়াল ভীষণ পছন্দের তুরার, নিজের বাড়িতে থাকতেও কতগুলো পুষতো। বিড়ালের বাচ্চাটাকে পেয়ে সাত পাচ না ভেবেই ওটাকে কোলে করেই বাড়িতে এসে গেলো তুরা।
বাড়ির ফটক পেরিয়ে ঘরে ঢুকে কোনো দিক না তাকিয়ে তুরা সোজা সিড়ি বেয়ে উঠতে নিলে পেছন থেকে রাইমার ডাকে পা থামিয়ে দাড়ালো।
-কিরে তুরা, তোর হাতে ওইটা কি?
তুরা ঘুরে দাঁড়াতেই দেখলো, টেবিলে মিনু রুবি আর আমেনা খেতে বসেছে, রাইমা পাশের সোফাতে ফোন হাতে বসেই প্রশ্নটা করেছে।
তুরা এবার সবার মুখের দিকে একবার করে তাকালো, রাইমার কথা শুনে উপস্থিত সকলেই কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালো তুরার দিকে,,তুরার হাতের বিড়ালটা দেখে মিনু মুখ কুচকে বললো
-এমা ছি ছি বউ,এইটাকে তুমি কোত্থেকে ধরে আনলা,আবার কোলেও করে রেখেছো?
ফুফুর কথা শুনে তুরা মুখটা আরও ছোট করে ফেললো, কাচুমাচু মুখ করে বললো
-এটাকে আমি ওই মোড়ের কাছেই পেয়েছি, রাস্তায় আমার পায়ের কাছে এসে কাঁদছিলো তাই আনলাম
-ওমা, বিড়ালছানা আবার কেঁদেছে? আর কাদঁলেই তুমি এসব পশুপাখি তুলে বাড়িতে নিয়ে আসবা
মিনু ফুফু বেশ বিরক্তি নিয়েই বললো কথাগুলো। তুরা ফুফুর হাবভাব দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পারছে তার বিড়াল একেবারেই পছন্দ নাহ। তুরা এবার এগিয়ে গিয়ে রুবির কাছে দাঁড়িয়ে বললো
-আমি এটাকে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি, ওকে দেখে আমার ভীষণ মায়া হয়েছে, আমি কি ওকে এ বাড়িতে রাখতে পারবো না মা?
একদম ধিমি স্বরে মুখটা ছোট করে বললো তুরা, রুবি কোনো রকম উত্তর করার আগেই আবারও বললো
-আমি কথা দিচ্ছি ও কাওকে বিরক্ত করবে নাহ,সবসময় আমার কাছেই ঘরের এক কোণায় রেখে দেবো, তবুও রাখি না মা? আমার বিড়াল খুব ভাল্লাগে
বলেই শুকনো মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। রুবি খাতুন তুরার এমন অসহায় করা মুখ দেখে হালকা কেশে বললো
-দেখো, তুমি যখন এত করেই বলছো আমি অনুমতি দিতে পারি, তবে বাকিরা যদি অমত করে তখন কিন্তু আমার কিছু করার থাকবে নাহ?
রুবির কথা শেষ করার আগেই তুরা হড়বড়িয়ে বললো
-আর কার অমত হবে মা, বাবাকে আমি সামলে নেবো, রাইমা আপুও কিছু বলবে না, আর দিদুন!
বলেই আমেনা খাতুনের কাছে গিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বললো
-ও দিদুন তুমিও আপত্তি করবে না বলো? দেখনা ও কত ছোট একদম বাচ্চা,ও কাওকে জ্বালাবে নাহ, তুমি মা কে বলনা তোমার কোনো আপত্তি নেই
তুরার এমন গড়গড় করে বলা কথায় আমেনা খাতুন কি বলবে ভেবে না পেয়ে রুবির দিকে তাকিয়ে বললো
-আ আচ্ছা ঠিকাছে, আমারও আপত্তি নেই, তবে দেখো কাওকে আ’চড়ে না নেই,
-ও আমি দেখে নেবো দিদুন ও কাওকে খা’মচি দিবে নাহ
-তুই না হয় ওকে দেখে নিলি,কিন্তু তোর উনিকে কে দেখবে?
রাইমার কথায় তুরা বিব্রত হয়ে বলে
-মানে?
-মানে আহানের বিড়ালের লোমে অ্যালার্জি আছে, ও বিড়াল এক প্রকার সহ্যই করতে পারেনা, ও যদি দেখে বিড়াল এনেছিস তাহলে আর নিস্তার নেই
রাইমার কথায় তুরার মুখাবয়ব যেনো ভীষণ অসহায়ত্ব ধারন করলো,,সবাইকে তো মানিয়ে নিলো সে,এবার কি করবে? আগে তো জানতো জল্লাদ লোকটার শুধু তাকে নিয়েই যত সমস্যা, এখন তো দেখছে এই বিড়াল টাও তার শত্রু। এখন কি হবে?
-এসব লোমশ জিনিস আমার ও পছন্দ নাহ,,এরা কখন কি খা’মচে দেয় আচরে দেয় ঠিক নেই। বাড়িঘর ও নোংরা করবে
মিনু ফুফুর কথায় তুরা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো
-ও কাওকে জ্বালাবে না ফুফু আম্মা, আমি দেখে রাখবো, আর উনার আশেপাশেও যেতে দেবোনা, তবুও রাখি না প্লিজ? আর কখনও কোনো অনুরোধ করবো নাহ, এটাকে রাখতে দিন না
তুরার এমন বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে কথা বলা দেখে মিনু রুবির দিকে তাকিয়ে বললো
-খুঁজে একটা বউ এনেছিস রুবি! কিছুই বলাই যায়না বাবা, এমন চেহারা করলো যেনো আমরা ওর সাত রাজার ধন কেড়ে নিতে চেয়েছি। ওর চেহারা দেখে নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে।
বলে আবার তুরার দিকে ফিরে বললো
-হইছে, এবার ন্যাকা কান্না টা থামিয়ে ওটাকে একটা জাগায় রেখে হাত মুখ ধুতে আসো, সেই সকালে বেরিয়েছ এখনো তো খাবার নাম নেই। আবার বিড়াল ছানা পালবে, তুমি তো নিজেই একটা বাচ্চা।
মিনু ফুফুর ধমকে তুরা মিনমিনিয়ে বললো
-কিন্ত উনি যদি..
-তোমার উনিকেও আমরা বুঝে নেবো,এখন এমন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে শিগগির ফ্রেশ হয়ে আসো তো
তুরা ফুফুর কথা শুনে উপরে চুপ থাকলেও ভেতরে ভেতরে তার আনন্দে লুঙ্গি ডান্স করতে ইচ্ছে করছে,,ফুফু মানুষ টা একটু কড়াভাষী হলেও ভীষণ ভালো, তুরা তো পারছে না জড়িয়ে ধরে দুটো চুমু দিতে। ভেতরের ইচ্ছে ভেতরেই দমিয়ে রেখে শান্ত ভাবে উপরে উঠে ঘরে এলো। ঘরে আসতেই ব্যাগ টা নামিয়ে বেড়াল টাকে হাতে নিয়েই উড়াধুড়া লাফানো শুরু করলো,,তার আনন্দ ধরে কে এবার!
আনন্দে আত্মহারা হয়ে লাফিয়ে বারান্দার দিকে যেতেই মুখটা চুপসে গেলো, জল্লাদ টা আসছে,এবার না জানি কি রকম হম্বিতম্বি শুরু করবে, লোকটা একেবারে অসহ্যকর, সব জিনিসেই জল্লাদপনা।
কালো রঙের শার্টের হাতাটা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা,, হাতের ব্যাগটা ঝুলিয়ে বড় বড় পা ফেলে বাড়ির ভেতরেই ঢুকছে আহান, হঠাৎ পেছন থেকে আসা ডাক শুনে থমকে দাঁড়ালো।
-আহান?
পেছন ঘুরে মাঝবয়েসী মোটাসোটা মহিলাকে দেখে সালাম দিলো আহান, ভদ্রমহিলা সালামের উত্তর দিয়ে এগিয়ে আসলো। বারান্দা থেকে তুরা এসব দৃশ্য স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, নিজে খানিকটা সরে দাঁড়িয়ে তাদের কথপোকথন শোনার চেষ্টা করলো
-তোমার সাথে একটা কথা ছিলো বাবা
মহিলার কথায়,আহান স্বভাবসুলভ ভদ্রতা বজায় রেখে বললো
-জ্বি বলুন?
-বাবা তুমিতো জানোই আমার ছোট ছেলেটার বিড়াল পোষার ভীষণ শখ,, আছেও ওর একটা বিড়াল। এইতো এক মাস আগেই দুটো বাচ্চা হয়েছে বেড়ালটার। কিন্তু সকাল থেকেই একটা বাচ্চা খুঁজে পাচ্ছিনা, আশেপাশে সব জাগায় দেখলাম। তোমাদের বাড়িতে কি গিয়েছে বিড়ালের বাচ্চাটা?
আহান পুরো কথাটা শুনে, খুব সাবলীলভাবেই বললো
-না তো,আমাদের বাড়িতে তো কোনো বিড়াল আসেনি। আর আসলেও তো মা অথবা আপি ফিরিয়ে দিয়ে আসতো। আমার ক্যাটস এ অ্যালার্জির কারণে বাড়িতে বিড়াল কেও রাখেনা
ভদ্রমহিলা আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে মুখটা চুপসে গেলেও আগের নমনীয়তা বজায় রেখেই বললো
-আচ্ছা ঠিকাছে, ছেলেটা আমার খুব কান্নাকাটি করছে তো তাই বাধ্য হয়েই খুঁজে বেরাচ্ছি। তুমি দেখলে একটু জানিও বাবা
আহানা মহিলার সাথে খানিক বাক্যব্যয় করেই বিদায় জানিয়ে আবারও বাড়ির ভেতরে হাটা ধরলো। পুরোটা কথা শুনেই তুরার চোখ কপালে উঠে গেলো, তার মানে বিড়ালটা ওই মহিলার বাচ্চার? এখন এটা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে? কোলে থাকা বিড়ালটার দিকে একবার তাকালো তুরা, কি সুন্দর গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে তার কোলে। নাহ..সে কিছুতেই এটা ফিরিয়ে দেবে নাহ!
তাইলে এখন কি করবে? ওই লোকটা দেখলেই তো বলে দেবে, এটাকে লুকাতে হবে! যা ভাবা তাই কাজ। তুরা বিড়ালটাকে হাতে নিয়েই এদিক ওদিক ছুটা শুরু করলো,,
বাথরুমের ভেতর? নাহ সেখানে তো এখনি এসেই যাবে,, তাইলে কোথায় বারান্দায়? নাহ সেখানে রাখলেও তো দেখে ফেলবে, কোথায় রাখা যায়! এদিক ওদিক ছুটে কোনো রাস্তা না পেয়ে বিড়াল শুদ্ধ খাটের নিচে ঢুকে পরলো তুরা।এখন এটাই একমাত্র জায়গা লুকানোর।
আহান গটগট করে ঘরে ঢুকেই হাতের ব্যাগটা টেবিলে রাখলো। ঘড়িটা খুলে রেখে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে খাটের উপর বসলো। আজ ভীষণ ক্লান্ত সে, দীর্ঘক্ষন ধরে পেপারস চেক করাই মাথা টাও কেমন ধরে আসছে, আপাতত গোসল করা প্রয়োজন। খাট থেকে উঠতে নিলেই পায়ের সাথে কিছু বাঁধলেই নিচে তাকায় আহান। নীল রঙের ওড়নার একাংশ বেরিয়ে আছে খাটের নিচ থেকে,, এই ওড়না এখানে আসলো কি করে? তার যতটুকু মনে আছে এই ওড়না টাই আজ মেয়েটা পরেছিলো,কিন্ত এটা খাটের নিচে কি করে আসলো। কি একটা মনে হতে আহান খাট থেকে নেমে ওড়না টা ধরে টান দিলো। কিন্তু পুরোপুরি না বের হওয়ায় আবারও টান দিতেই খাটের নিচ থেকে শুনতে পেলো
-এই জল্লাদটা আমার ওড়না কেনো টানছে আজব
পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনেই আহানের কপালে ভীষণ কৌতুহলের ভাজ পরলো। হাটু মুড়ে বসে খাটের নিচে তাকাতেই দেখলো তুরা খাটের নিচেই এক কোণায় উপর হয়ে আছে,,
-তুমি! খাটের নিচে কি করছো তুমি??
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
Humu_♥