তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব- ২৮-২৯

0
1099

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ২৮-২৯

লাজের তীব্র বর্ষণে মিইয়ে গেলো তুরা, হিম অনিলে ছড়ালো সারা বদন,আহানের নৈকট্যে যতটা না হৃদ বক্ষে তোলপাড় তুলেছে, তার চেয়েও হৃদস্পন্দনের গতানুগতিক ধারার ব্যাঘাত ঘটলো শতগুণ আহানের শৈথিল্যে ভরা নিবিড় স্পর্শে।কিয়দংশ সময় পেরোতেই তুরা ভার হয়ে আসা চোখের পাতা তুলে তাকালো।
পানিশূন্যতায় শুকিয়ে যাওয়া মরুভূমির ন্যায় কাঠ কাঠ হওয়া গলা ঢক গিলে ভেজানোর ব্যার্থ প্রয়াস করে চোখ অনত্র ঘুরালো আহান। তবুও অনির্দেশ্য বেহায়া দৃষ্টি আবারও চুম্বকের মতো আটকে গেলো তুরার পিঠের একদম মাঝখানে অবস্থিত তিলটাতে। বুকের ভেতরে চলমান টাইফুনের একাংশ অনিল ঝড়ের বেগে টেনে নিলো ওষ্ঠভাজের ভেতর।
সামনে রাখা বর্গাকৃতির দর্পনতলে আহানের অবিন্যস্ত বিস্রংস অবস্থাটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তুরা। আহানের চোখের ঘোর লাগা দৃষ্টি তার বুকের দামামা যেনো কর্ণকুহর অব্দি পৌঁছে দিচ্ছে।
কাঁপা কাঁপা হাত টা ধীর গতিতে এগিয়ে নিলো আহান। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হোক, আহানের আঙ্গুলের স্পর্শ ছুঁয়ে যেতে লাগলো তুরার গলদেশ, কাঁধ,পিঠ। জমে এলো শরীর তুরার, অজানা ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো মন চিত্ত।
প্রচন্ড সংযতচিত্ত থাকা সত্ত্বেও বেপরোয়া মনের অবাধ ইচ্ছেতে স্বীকারোক্তি দিয়ে কম্পনারত হাতের হীম শীতল স্পর্শে ছুঁয়ে দিলো তুরার পিঠের মধ্যিখানের তিলটা। চমকপ্রদ ভাবে কেঁপে উঠলো তুরা, আহানের বেহায়া দৃষ্টিতে এতটা ডুবে গেছিলো যে অপ্রত্যাশিত স্পর্শ তার সারা বদনে অনুভূতির জোয়ার বইয়ে দিলো।
কিন্তু আহানের এখনো হুশ নেই, মন্ত্রমুগ্ধের মতো মুখ এগিয়ে নিতে থাকলো, মাঝামাঝি দূরত্ব নিবারণের সাথে সাথে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে উষ্ণ গরম শ্বাসেস বাড়িধারা। আহানের ওষ্ঠদ্বয়ের ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়ায় তুরা শরীরে কম্পন ধরলো, নিবৃত্তে অবশ হয়ে আসলো হিউমেরাস রেডিয়াস। ক্রমাগত স্রোতের মতো বয়ে যাওয়া অনুভূতি গুলোকে বাধ দিয়ে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কোনো মতে শব্দ টেনে বের করে তুরা কণ্ঠনালী মধ্য হতে

-আ আমিহ…ম মানে

ঠেলে ঠুলে শব্দগুলো কোনো রকমে বের করার আগেই আহান লেহেঙ্গার ওড়নার ভাজে হাত গলিয়ে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো কোমর। তুরার কানের পেছনে নাক ঘষে দিতেই চোখ গেলো সামনের আয়নায় প্রতিফলিত তুরার শুভ্র গালের রক্তিমা আভার স্নিগ্ধতায়। পুরু ঠোঁট টেনে মৃদু হেসে কোমরের বন্ধন আলগা করে সরে গেলো। তুরা এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে চোখ মুখ খিঁচিয়ে, তুরার পা থেকে মাথা অব্দি আবারও একবার চোখ বুলিয়ে চোখে মুখে স্বাভাবিকতা এনে বলল

-আরও কিছুক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে চাও?

বরফের ন্যায় শীতল কণ্ঠে নেত্রপল্লব খুলে তাকালো তুরা। উদভ্রান্তের মতো কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করে আমতাআমতা করে এক ছুটে ওয়াসরুমের ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
আহান আড়চোখে চেয়ে দুষ্টামি ভরা একটা হাসি দিলো।
মিনিট দশেক পার হবার পর ও তুরার বের হবার নাম গন্ধ নেই, আহান পরপর দু বার ডাকলেও কোনো সাড়া শব্দ নেই। আহান বিছানার বালিশ ঠিক করতে করতে গলা উচিয়ে বলল

-আমি লাইট বন্ধ করে দিচ্ছি, আরও কিছুক্ষণ থাকো তুমি বাথরুমে,পেত্নী টা আসলে একসাথে গল্প করিও বসে বসে

বলেই শুতে নিলে ধপ করে দরজা খোলার শব্দ হলো। আহান ঠোঁট টিপে হেসে চুপচাপ শুয়ে পরলো। তুরা হুড়মুড়িয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে খাটের উপর উঠে বসলো। লোকটা আচ্ছা ব’জ্জাত তো! তুরা লজ্জায় বেরোতে পারছিলো না বলেই ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়ে ছিলো দরজা লাগিয়ে। আর লোকজন ইচ্ছে করেই এমন বলেছে। কিন্তু তুরার ভূতে ভীষণ ভয় পরে সত্যিই যদি পেত্নী চলে আসতো। কাঁথা টা গায়ে টেনে নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পরলো তুরা। আহান কোনো নড়চড় ছাড়াই ওপাশ ফিরে আছে দেখে তুরা কৌতুহলবশত মাথা তুলে উঁকি দিতে গেলেই আহান চোখ বন্ধ রেখেই বলল

-তোমার উঁকি ঝুঁকি দেওয়া হলে দুই মিনিটের মধ্যে ঘুমাবে,নয়তো বাথরুমের পেত্নীর কাছে রেখে আসবো

আহানের কথার পৃষ্ঠে তুরা বিড়বিড়িয়ে ‘উগান্ডা’ বলে তুরা চুপচাপ অন্যপাশে ফিরে শুয়ে পরলো। লোকটাকে দিয়ে একদম বিশ্বাস নেই তার

•••

অন্ধকারের বুক চিড়ে সূর্যোদয়ে আলোকিত হলো ধরণী। ফুটফুটে নরম আলোতে পরিবেশে ছড়ালো গাছ পাতা আর ফুলের স্নিগ্ধতা। কাঠগোলাপ, সূর্যমুখী সহ নাম না জানা হরেক রকম ফুলের দল মাধুর্য পেলো সূর্যের প্রথম আলোয় গা বুলিয়ে। একে একে ঘুম ভেঙে জাগ্রত হলো সকলে। রান্নাঘরে টুংটাং শব্দে কাজ শুরু করেছে তুরা বহুক্ষণ আগেই। সকালের আলো না ফুটতেই তার ঘুম ভেঙেছে আজ। পাশে শুয়ে থাকা আহানের স্নিগ্ধ চেহারা পরখ করতেই গত রাতের কথা মনে হলো। লাজের হাসি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। তুরা ভেবেছে আজ সকলের জন্যে সেই নাস্তা বানাবে।

-মাংস টা হয়েই এসেছে ভাবিজান, এখন কি দুধের পাতিলে চাল ঢেলে দেবো?

মাংসের হাড়িতে নাড়া দিয়ে বলল চুমকি। তুরা ব্যস্ত হাতে পরোটা গুলো বেলতে বেলতেই উত্তর দিলো

-আরেকটু জাল হোক, তারপরেই ঢেলে দিও

চুমকি তুরার কথামতো সম্মতি দিয়ে,বেলে রাখা পরোটা গুলো তুলে ভাজার প্রস্তুতি নিতে নিতে বলল

-কিন্ত এসব তেলেভাজা তো ভাইজান খান না ভাবি?

-হ্যাঁ উনার জন্য,স্যান্ডউইচ আর অ্যাভোকাডো জুস করেছি আমি। উনি নামলেই তুমি দিয়ে এসো

বলে পরটা বেলতে বেলতেই আবারও জিজ্ঞাসা করলো

-দিদুন আর ফুফু আম্মা কি উঠেছে চুমকি? উঠলে উনাদের চা টা দিয়ে আসো। টেবিলের উপরে ফ্লাক্সে চা রাখা আছে।

-জ্বি আচ্ছা ভাবিজান

বলেই খুন্তি টা হাত থেকে নামিয়ে ট্রে তে কাপ গুলো সাজিয়ে নিয়ে ডাইনিং রুমে গেলো। টেবিলে রাখা ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে সোফাতে বসে থাকা দিদুন, ইলা, ইনসাফের হাতে তুলে দিলো
ততক্ষণে মিনু,রুবি আর নাজ ও এসে উপস্থিত হয়েছে। সকাল হতেই তত্ত্ব আর উপহারের ডালা গুলো সাজাচ্ছিলো তারা। আজ রাইমাকে আনতে যাবে সবাই এ বাড়িতে। সেই বিষয়ক ঝামেলা নিয়েই ব্যস্ত ছিলো তারা।

-বাবাহ,আজ যে চুমকি রাণী ফাস্ট হয়ে গেছে, আসতে না আসতে চা রেডি

সোফাতে বসতে বসতে বলল মিনু, নাজ এসে পাশে বসলেই তাদের দুজনের হাতে চা ধরিয়ে চুমকি স্বভাব সুলভ হেসে বলল

-আসলে আর ভাবিজান নাস্তা বানাচ্ছে। সেই সকালে উইঠাই উনি সকলের জন্য চা বানিয়ে রেখেছে।

-কি বলিস,তুরা এত গুলো কাজ একা করছে

রুবির কথায় চুমকি গাল ভরা হাসি বহমান রেখে বলল

-হ্যাঁ মেলা সকালে উঠছে ভাবিজান, আমিই তো গিয়ে দেখি উনার রান্নার অর্ধেক কাজ প্রায় শেষ। আপনি চিন্তা করবেন না আজকে আমি আর ভাবিজান মিলে সব রেডি কইরা ফালাম। আপনাগো রান্নাঘরে আসতে মানা করছে ভাবি

বলে ট্রে টা হাতে নিয়ে হেলতে দুলতে আবারও রান্নাঘরে ঢুকলো। মিনু মুচকি হেসে বলল

-তোর ছেলে বউ যখন বলেছে তবে যাস না রুবি। আজ তোর বউ ই নাহয় করুক সব

রুবি কিছু বলতে নিবে তার আগেই হইহট্টগোল করতে করতে জায়মা তনু রুহি নেমে এলো। এসেই টেবিলে বসে বলল

-মামী,রাই আপুকে আনতে কখন যাবো বলো তো, আমরা রেডি হবো তো

-ওমা সেকি, মাত্র বেলা সাড়ে সাতটা এখনি চলে যাবি নাকি তোরা

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল ইলা। রুহি নিজের বোকা বোকা কথায় নিজেই হিহি করে হেসে মাথা চুলকে বলল

-আচ্ছা সে ঠিকাছে, কিন্তু ভাবি কই সেটা বলো। সকাল থেকেই দেখছি না

বলতে বলতে সিড়ির দিকে চোখ যেতেই বিরক্তিতে মুখ কুচকে জায়মাকে খোঁচা দিয়ে ইশারা করলো।
হালকা গোলাপি রঙের একটা পাতলা টপস আর সর্ট পরেই হেলে দুলে নামছে প্রেমা। রাতের পোশাক পরেই এভাবে সবার সামনে নামাতে বেশ বিরক্ত বোধ করলো উপস্থিত সকলে। তবুও কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো নাহ। প্রেমা যেই কালচারে বড় হয়েছে তাতে এটা অনেক বেশি স্বাভাবিক, আর দুদিনের মেহমান ই তো। তাই ওর দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজেদের বিয়ে সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত হলো বড়রা। প্রেমা সিড়ি বেয়ে নেমে এসে রুহির সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-তোমাদের কিচেন টা কোনদিকে বলতে পারবে?

হাত উচিয়ে আঙুল তুলে রান্নাঘর দেখিয়ে দিলো রুহি,তার সাথে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো

-কিন্ত তুমি কিচেন দিয়ে কি করবে?

-আসলে সকালে কফি না হলে আমার ঘুম ভাঙে নাহ, তাই ভাবলাম কফি যখন খাবো আহানের জন্যেও করে নি, অনেক দিন ওর সাথে বসে কফি খাওয়া হয়না। এ্যানিওয়েস থ্যাংকস

বলেই আবারও গা দুলিয়ে হেঁটে রান্নাঘরের দিকে গেলো। প্রেমার যাওয়ার পানে চেয়ে তনু মুখ বাকিয়ে প্রেমাকে বিদ্রুপ করে বলল

‘এ্যানিওয়েস থ্যাংকস’

তার সাথে জায়মাও মুখ দিয়ে বিরক্তিকর শব্দ করলো। এই ঢঙ্গি মেয়েটাকে ওদের কারোই সহ্য হয়না,শুধু বয়সে বড় বলে সম্মান দিতে হয়।

পায়েসের পাতিল টা চুলা থেকে নামিয়ে প্যান বসিয়ে তাতে পরটা দিলো, তেলের বোতলের মুখ খুলে প্যানে দিয়ে পরটা টা এপাশ ওপাশ করে উলটে পালটে ভালো মতন ভেজে প্লেটে উঠালো।

-তুমি আহানের বউ?

মেয়েলী গলা কর্ণকুহর হতেই তুরা পরটা প্যানে দিতে দিতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। প্রেমাকে দেখে স্বাভাবিক ভাবে নিলেও ওর পোশাক দেখে তুরাও বেশ বিব্রত বোধ করলো, একটা মেয়ে কিভাবে এমন নির্লজ্জের মতো বড়দের সামনে এভাবে থাকতে পারে৷ বিরক্তিকে ভেতরে দমিয়ে পরটা প্যানে দিয়ে ছোট করে উত্তর দিলো তুরা

-জ্বি

-আহান তোমাকে আদও বউ মানে?

কথার সাথে চোখে মুখে তাচ্ছিল্য নিয়ে বলল প্রেমা। তুরা সেদিকে না চাইলেও কথাটা তার বেশ ভেতর অব্দি পৌঁছালো, এই প্রশ্নের উত্তর টা আদও তার কাছে নেই। তবুও মেকি হেসে কিছু বলার আগেই প্রেমা কণ্ঠের তাচ্ছিল্য বজায় রেখে আবারও বলল

-আমারতো মনে হয় না,বিকজ আমি যতটুকু শুনলাম তোমাদের বিয়েটা ওকে জোর করেই করানো হয়েছে, আর আহানকে আমি অনেক ভালো করেই চিনি, ফোর্স করে ওকে কিছুই করানো পসিবল নাহ। সংসার তো দূর

বলেই গাল বাকিয়ে হাসলো। তুরা আড়চোখে প্রেমার দিকে চেয়ে ওর কথাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলল

-সেটা আমাদের পারসোনাল ব্যাপার,তোমার কিছু মনে না করলেও চলবে আপু, তা তুমি সাত সকালে রান্নাঘরে?

তুরার কথায় প্রেমার মুখের ক্রুর হাসি মিলিয়ে বিরক্তির ছাপ পরলো। তবুও তা দমিয়ে রেখে বলল

-আসলে আমি আহানের কাছে যাচ্ছি, আমাদের জন্য কফি বানিয়ে দিতে পারবে? তা বউ হয়েছো কফি কেমন বানাও দেখতাম, কি পারবে না?

তুরা কিছু একটা ভেবে, মুখে হাসি টেনে বলল,

-হ্যাঁ অবশ্যই, কেনো পারবোনা। কিন্তু আমি বানালে তুমি খাবে তো?

-হ্যাঁ সিউর। আমি উপরে যাচ্ছি, তুমি পাঠিয়ে দিও,কেমন?

বলে আবারও মাজা বাকিয়ে হেঁটে উপরে উঠে গেলো, প্রেমা যেতেই রুহি আর জায়মা ঢুকলো রান্নাঘরে,এতক্ষণ আড়ি পেতে ওদের কথাই শুনছিলো। প্রেমার যাওয়া দিকে চেয়ে তুরাকে রুহি বলল

-তুই ও প্রেমা দ্যা আপদের জন্য এখন কফি বানাবে ভাবি

প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলল রুহি। জায়মাও একই সুর ধরে বলল

-আসলেই? তুমি এখন ওই প্রেমা দ্যা পেত্নীর জন্য কফি বানাবে? তাও আহান ভাইয়ের সাথে বসে গল্প করবে

-তোমরা শুধু দেখই না আমি কি করি

বলেই গাল বাকিয়ে হেসে আবারও কাজে মনোযোগ দিলো তুরা।কিছুক্ষণের মধ্যেই সব কাজ রান্না শেষ করে খাবার নিয়ে একে একে টেবিলে এনে রাখলো। বাড়ির সকলে এক টেবিলে খেতে বসলো,শুধু প্রেমা আর আহান বাদে।
তুরা একে একে ইনসাফ, ইউসুফ দিদুন মিনু ইলা সহ সকলের প্লেটে নাস্তা তুলে দিলো

-বাহ, মা রে খাসা রান্না করেছিস একদম। এভাবে খাওয়ালে তো লোভ হয়ে যাবে

পরোটা আর গোশত মুখে পুরে বলল ইনসাফ। তুরার রান্না সকলেরই বেশ পছন্দ হয়েছে, সকলে মিলে গল্প গুজব আর হাসি তামাশা করে নাস্তা শেষের পর্যায়ে গেলেই ইউসুফ মাহবুব বলল

-তুরা মা, দারুণ রান্না করেছো। খুব ভালো লেগেছে, পেট তো ফেটেই যাবে আজ

-এখনই ফাটবে হবে নাহ, ছোট বাবা। তোমার জন্য স্পেশাল জিনিসটাই তো বাদ আছে

বলেই পায়েসের বাটিটা ইউসুফ মাহবুব রর সামনে রাখলেই তিনি চমকিত হয়ে বলল

-পায়েস! এ তো আমার সবচেয়ে প্রিয়!

-হ্যাঁ জানি তো, সে জন্যেই তো করেছি

ইউসুফ চামচ দিয়ে পায়েস মুখে তুলে তৃপ্ততার সহিত তার স্ত্রী নাজের দিকে তাকিয়ে বলল

-দেখলে আমার বউমা কেমন আমার পছন্দের জিনিসটা এত সুন্দর করে রেঁধেছে? এত সুন্দর করে তো তুমিও কখনো রেঁধে খাওয়াও নি আমাকে

-হ্যাঁ এখন ছেলে বউ ছেড়ে কি আর আমার রান্নায় মন লাগবে। খাও তুমি তোমার ছেলে বউয়ের রান্না

বলেই ফিক করে হেসে দিলেন। সকলের হাসি মজা আর খাওয়ার মাঝেই তুরা হাতে দুই কাপ কফি নিয়ে উপরে হাঁটা ধরলো।
প্রেমা বেশ অনেকক্ষণ ধরেই আহানের ঘরে বসে অপেক্ষা করছে। বাথরুমের দরজা খুলে বেরোতে প্রেমাকে দেখেই আহান জিজ্ঞাসা করলো

-প্রেমা! তুই এখানে?

-হ্যাঁ আমি, কেনো কোনো প্রবলেম

মাথা মুছতে মুছতে আয়নার সামনে দাঁড়ালো আহান। নির্লিপ্ত স্বরে বলল

-নাহ তেমন কিছু না। কেনো এসেছিস?

-কেনো তোর রুমে আসতেও কি এখন আমার কারণ লাগবে?

-নাহ সেটা বলিনি। ইম্পর্ট্যান্ট কোনো কিছু নাকি তাই

বলে তোয়ালে টা রেখে ঘুরতেই প্রেমা উঠে এসে আহানের সামনে দাঁড়ালো। ওর হাত ধরে বলল

-আমার কাছে তো তুই ই অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট আহান

আহান বিব্রত হয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিবে তার আগেই দরজায় নক করার শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। কফি হাতে দাঁড়িয়ে তুরা দরজার সামনে। ওকে এভাবে দাঁড়িয়ে দেখে আহান ফট করে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। তুরার দিকে এগিয়ে যাবে তার আগেই প্রেমা গিয়ে তুরার হাত থেকে কফি নিয়ে বলল

-থ্যাংকস রুহি

-এই কাপটা উনার

আহান যেহেতু চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি খাই তাই ওরটা আলাদা দেখিয়ে দিলো তুরা। প্রেমা আহানের কাপটা ওর হাতে দিয়ে বসে কফি খাওয়া শুরু করলো। শুরুতে এক চুমুক দিতেই খকখক করে কাশাকাশি শুরু করলো

-ইয়াকক,এটা কি বানিয়েছো তুমি?

-কফি

খুব স্বাভাবিক স্বরেই উত্তর দিলো তুরা। ওদিকে প্রেমা কাশতে কাশতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। কাশি থামানোর চেষ্টা করে কোনোমতে বলল

-এত তেতো কেনো,ইয়াক!

-কেনো,আপনার বন্ধু তো তেতোই খাই? কেনো আপনি তো সওওব জানেন এটা জানেন নাহ?

-তো আমারটা এত যক্ষা তেতো কেনো করেছ তুমি,এত তেতো মানুষ খেতে পারে!

বলেই প্রেমা দ্যা ঢং, ওর ঢং স্টাইলে কাশতে কাশতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তুরা ওর যাওয়ার পানে চেয়ে নিজেও বেরোতে নিলে পেছন থেকে আহান বলল

-কফিটা তুমি ইচ্ছে করে তেতো করেছো?

পিছু ফিরে দেখলো আহান কফিতে চুমুক দিয়ে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে ল্যাপটপ খুলে স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে।

-কেনো খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার?

ঝাঝালো গলায় বলল তুরা। তুরার এহেন বাকা কথার ধ্বনিত স্বরে আহান তাকানোর সাথে সাথে তুরা মুখ বাকিয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেলো। আহান চোখ জোড়া ছোট করে বলল

-ষ্টুপিড!

••••

দুইতালা ছিমছাম আভিজাতিক বিল্ডিংয়ের সামনে এসে গাড়িটা থামতেই দরজা খুলে বেরোলো একে একে সবাই। বিহান ড্রাইভিং সিট থেকে বেরিয়ে চোখের চশমা টা খুলে তাকালো সামনের বাড়িটায়।

-ভাবি এসো

নিজে গাড়ি থেকে বেরোতেই জায়মা তুরার হাত ধরে বের করলো। রুহি জায়মা বিহান তুরা এগিয়ে গেলো তাদের সামনে দাঁড়ানো আহানের গাড়িটা থেকে। তুরা এগিয়ে যেতেই আহান চশমার ফাঁকে আড়চোখে তাকালেও তুরা মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকেই ফিরে থাকলো। তুরার পরনে আজ কালো রঙের জরজেট শাড়ি, তার সাথে হোয়াইট গোল্ডের পেনডেন্ট আর ইয়ারিংস। ফর্সা গায়ে কালো রঙের শাড়ি আর হালকা সাজে যেনো মেয়েটাকে একটু বেশিই ভাল্লাগছে? আহান বারবারই তাকাচ্ছে তুরার দিকে৷ কিন্তু তুরা নির্দয় রমণীর মতোই বারিবার এড়িয়ে যাচ্ছে ওকে।

-হেই গাইস লেটস গো

গাড়ি থেকে বেরিয়েই বলল প্রেমা। গাড়ি এসে থেমেছে প্রায় তিন মিনিট পেরিয়েছে, তবুও ভেতরে বসে লিপস্টিক ঘষা শেষ হয়নি প্রেমার। তুরা চোখ বাকিয়ে একবার দেখল প্রেমাকে। মনে তো চাচ্ছে পেত্নী টাকে ড্রেনে চুবাতে। ওর জন্যেই মুখ ফুলিয়ে আছে তুরা। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় তুরা আহানের গাড়িতেই বসতে যাবে তখনই কোত্থেকে এসে উদয় হয়ে সামনের সিটে ধপ করে বসে পরেছে পেত্নী টা। সেই রাগেই তুরা পেছনে না বসে বিহানদের গাড়িতে এসেছে। রাগ তো তার ব’জ্জাত লোকটার উপর। কই একবারও তো বলল না যে ‘তুরা তুমিই সামনে বসো’। হুহ, থাক গে পেত্নীর সাথে, তাকাবেও না উগান্ডা টার দিকে।
বিহানের এক হাত ধরে সবার সাথে ভেতরে গেলো তুরা।
ভেতরে ঢুকতেই ইসহাক চৌধুরী তার ভাই মারুফ সহ ইমানের বাড়ির অন্যেরা এসে স্বাগতম জানালো আজমেরি চৌধুরী এসে তুরাকে এক হাতে আগলে ধরে বলল

-বউমা আসলো তাহলে অবশেষে, তোমার জন্যেই তো অপেক্ষা করছিলাম মিষ্টি মামনী

বলেই তুরার কপালে আলতো চুমু দিলেন। তুরাও এমন সুহৃদ ব্যক্তির আদরের প্রেক্ষিতে জড়িয়ে ধরে। তুরাদের আসার কথা শুনে রাইমা ছুটে এসে বলল

-ভাই,এসেছিস তোরা

বলেই এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো আহানকে। আহানকে ছেড়ে রুহি জায়মা বিহান তিরা একে একে সবার কাছে এসে প্রফুল্লচিত্তে কথা বলতে লাগলো। ইমান রাইমার আসার কিছুক্ষণ পরেই এসে বলল

-কাল এসে থেকে আমার মাথা টা নষ্ট করে দিয়েছে তোমরা কখন আসবে আসবে করে, যেনো চব্বিশ ঘণ্টা না চব্বিশ বছর ধরে আটকে রেখেছি তোমার বোনকে

ইমানের কথায় তাল মিলিয়ে রুহি বলল

-হ্যাঁ তাই তো। আমাদের আদরের বোনকে এতক্ষণ রেখেছেন, তার বদলে ফি চাই ফি

ইমান রুহির নাক টেনে টুসকি মেরে বলল

-শুধু ফি কেনো চাইছো শালী সাহেবা,আমিতো পুরোটাই তোমার

-নাহ নাহ আপনাকে নিবো না ভাইয়া। তাইলে রাই আপু আমাদের কান মলে দেবে

বলেই ফিকফিক করে হেসে উঠলো জায়মা ও তার সাথে রুহি আর তনুও। আজমেরি চৌধুরী সকলকে একসাথে নিয়ে বসার ঘরে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। মেহমানে ভরা বাড়ির পরিবেশ। খানিক বাদে বাদেই লোকজন এসে দেখে যাচ্ছে চৌধুরী বাড়ির বউ রাইমাকে। আর হাতি ভর্তি উপহার। তুরা সকলের সাথে খেতে বসলেও শাড়ি পরে তার বেশ অস্বস্তি হচ্ছিলো৷ তাই খাওয়ার মাঝখানেই উঠে ওয়াসরুমের দিকে এসেছিলো। শাড়ি ঠিক করে বেরোতে নিলেই পেছন থেকে ডাক আসলো কানে

-হেই সুইটি!

পিছু না ফিরেও তুরা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে ডাক টা কার হতে পারে, লোকটা হুটহাট কোথা থেকে টপকে পরে তুরা বুঝে উঠতে পারেনা। বিরক্তিকে সামাল দিয়ে মেকি হেসে ঘুরে বলল

-আমার নাম তুরা

তুরার সূক্ষ্মভাবে এড়ানো টা সিফাতের ভাবাবেগের বাইরে গেলো নাহ। তবুও মাথা চুলকে বলল

-আসলে এই নামে ডাকতেই বেশি ইজি লাগে আরকি।

তুরা কিছু বলবে তার আগেই বাচাল স্বভাবের সিফাত বলল

-আসলে কাল আমি অনেক সিক হয়ে গেছিলাম। তাই এক মাত্র ভাই হয়েও আসতে পারিনি ইমান ভায়ের সাথে, সো স্যাড

ছোট করে ও বলে উত্তর দিলো তুরা। সিফাত এগিয়ে এসে আরও কিছু বলতে যাবে কিন্তু তুরার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে বরাবর তাকিয়ে দেখলো আহান দাঁড়িয়ে আছে আর প্রেমা ওর গা ঘেষে দাঁড়িয়ে অনবরত পকপক করেই চলেছে।

-ওটা তো ভাবির ভাই তাইনা?

-হ্যাঁ

দৃষ্টি সামনেই স্থির রেখে বলল তুরা। সিফাত তুরার মনোযোগচ্যুত করে প্রেমাকে উদ্দেশ্য করে বলল

-এটাই কি আহান ভাইয়ের বউ?

তড়িৎ তুরা সিফাতের দিকে তাকালো। এক তো এই প্রেমা মেয়েটার আহানের সাথে ঢলাঢলি দেখে তার গা জ্বলে যাচ্ছে, তার উপর সিফাতের এহেন প্রশ্ন আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো।

-উনাকেই গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন

বলেই গটগট করে চলে গেলো তুরা। ওর যাওয়ার পানে চেয়ে সিফাত স্তম্ভিত হয়ে গেলো। কি হলো! এমন রেগে গেলো কেনো হুট করেই? সে তো একটা সাধারণ কথায় জিজ্ঞাসা করেছিলো!

তার পরে পুরোটা সময় ই তুরা গাল ফুলিয়ে ছিলো। কেও কিছু জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর করেনি তুরা। বেশি ঘন্টা খানেক সময় অতিবাহিত করে চৌধুরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি আসতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গড়ালো। পুরোটা সময় তুরা মুখ ছোট করে রেখেছিলো। রাইমা বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসা করলে বলেছে শরীর টা ভালো নাহ। কিন্তু আসলে যে তার ভেতরে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে এটাতো কাওকে বোঝাতে পারেনি। আহান তার স্বামী, তাকে কারো পাশে কি করে সহ্য করবে তুরা। প্রেমা মেয়েটা এসে থেকেই ঢলাঢলি শুরু করেছে আহানের সাথে।

নতুন জামাই বরণ করে আড্ডা গল্প,রাতের খাবার শেষ করে প্রায় মাঝরাত গড়ালো। কালকের মতো আজও বিহান রুহি জায়মা তনু আরমান সকলে মিলে রাইমা আর ইমানকে নিয়ে ছাদে আড্ডায় বসেছিলো। কিন্ত তুরা সেখানে পাও মাড়াইনি। রুহি আর তনু এসে বেশ কয়েকবার জোড়াজুড়ি করে গেছে, শরীর খারাপের দোহায় দিয়ে আট করে বড়দের সাথে নিচেই বসে ছিলো। ড্রয়িং রুমের বড় ঘড়িটাতে সময় দেখে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো তুরা, ধীর পায়ে এগিয়ে ঘরের সামনে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো আহান আধশোয়া হয়ে খাটের উপর ফোনে তাকিয়ে আছে। তুরা ঘরে ঢুকতেই আহান ওর দিকে তাকিয়ে বলল

-এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি?

-জাহান্নামে

বলেই ব্যাগ থেকে জামা নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। আহানকে না দেখার ভান করে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে খাটে এসে বসে সব বালিশ গুলো এক করে মাঝখানে রাখলো।

-কি সমস্যা তোমার, এভাবে বালিশের পিরামিড বানাচ্ছো কেনো তুমি মাঝখানে?

তুরা আহানের কথায় কান না দিয়ে পরপর চারটা বালিশ সাজিয়ে মাঝখানে দেওয়াল সমান তুলল।

-কি বলছি কানে যাচ্ছে নাহ? এক্ষুনি সরাও এগুলো

-না সরাবো নাহ। এগুলো হলো সীমানা, এটা পেরিয়ে না আমি ওদিক যাবো আর নাহ আপনি এদিক আসবেন

বলেই আরও একটা বালিশ নিয়ে রাখলো উপরে। আহান কপালে ভাজ ফেলে দিয়ে বলল

-সব গুলো বালিশ দিয়ে পিরামিড বানালে শুবো কিসের উপর

-কেনো আপনার প্রেমিকাকে বলুন না এসে কোল পেতে দিবে সেখানে শুবেন

বলেই নিজের মাথার তলে একটা বালিশ রেখে থপ করে শুয়ে পরলো তুরা। আহানের মেজাজ সপ্ত আসমানে চড়ে গেছে, এক তো মেয়েটা সারা দিন ভরে তাকে এড়িয়ে চলেছে আবার এসে কিনা মাঝখানে আস্তো পিরামিড তুলছে, আর এতটুকু জায়গাতে সে শুবে কি করে। চোখ গরম করে তাকালো তুরার দিকে, তুরা সেটা দেখেও ইচ্ছে করে চোখ টিপে বন্ধ করে রাখলো।

-তুমি কি ভালোই ভালোই এগুলো সরাবে?

দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বললো আহান। তুরা চোখ খুলে তাকালেও আহানকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে মুখ ভেংচি দিয়ে ওপাশ ফিরে শুলো। আহানের মেজাজ টা পুরোপুরি বিগড়ে যেতেই মাঝখানের বালিশ গুলো সব তুলে নিচে ফেলে দিয়ে তুরার মাথার নিচের বালিশ এক টানে নিয়ে নিজের মাথায় দিয়ে শুয়ে পরলো।
ধপ করে বালিশ টেনে নেওয়ায় তুরার মাথায় বেশ জোরে লেগেছে, ও চোখ মুখ কুচকে উঠে আহানের দিকে তাকালো। একে তো সারাদিনের রাগ অভিমান জড়ো হয়ে আকাশ সমান অভিযোগ জমেছে তার উপর আহানের এরূপ ব্যবহারে তুরার চোখ ছলছল করে উঠলো, খাট থেকে নামতে নিলেই আহান তুরার হাত ধরে এক টানে এনে ফেললো বুকের উপর, হাতে রাখা হাত টা সরিয়ে তুরার কোমরে চেপে ধরে বললো

-খাট থেকে নামার চেষ্টা করলেও ঠ্যাং খোরা করে দেবো

তুরা আহানের দিকে না তাকিয়েই ওর হাত ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করে বলল

-শুধু খাট থেকেই নাহ, আমি এই ঘরেই আর থাকবো নাহ। ছাড়ুন আমাকে,ছাড়ুন। আপনার মতো নির্দয়, পাষাণ, ব’জ্জাত লোকের সাথে তুরা কিছুতেই থাকবে নাহ

হাতের বন্ধন আলগা হওয়ার বদলে আরও গাঢ় করলো আহান। কোমরে রাখা হাতে নখ বিধিয়ে আরও কাছে টেনে নিলো তুরাকে,মুখের কাছাকাছি এসে হিসহিসিয়ে বলল

-ঘর আর খাট তো দূর, এখন আমার থেকে এক ইঞ্চিও সরতে দিচ্ছি না। যা খুশি করে নাও

আহানের এমন বেখেয়ালি কথায় তুরার মান অভিমান,জেদ সব একত্রিত হয়ে গেলো। রাগের বশে ধুপধাপ করে পরপর কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো আহানের বুকের উপর। পরপর কয়েকবার কিল বসিয়ে শান্ত হলেও চোখে পানিতে টসটসে হয়ে আছে, যেনো যখন তখনই গড়িয়ে পরবে।

-রাগ কমলে,এবার বলোতো কি নিয়ে এতো রাগ হয়েছে তুরা রানীর

খুব স্বাভাবিকভাবেই নরম কণ্ঠে বলল আহান। তুরা ঠোঁট ভিজিয়ে আহানের দিকে তাকালো। ধরা গলায় বলল

-আমাকে কেনো ধরেছেন,ছাড়ুন আমায়। সরে যান। ওই প্রেমার কাছে যান,ওই পেত্নীটার সাথে চিপকে থাকুন আমি কে ওই তো সব। যাম পেত্নী টাকে কোলে করে রাখুন

একদমে হড়বড়িয়ে বলে দম ছাড়লো। আহান তুরার এমন রণচণ্ডী রাগী চেহারা দেখে মোটেও বিচলিত হলোনা। বরং ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে বলল

-হ্যাঁ চাই তো প্রেমার কাছে যেতে। কিন্তু কি করবো ঘরে বউ রেখে বাইরের মেয়ের কাছে গেলে লোকে খারাপ বলবে। আফটার অল আই’আম এ জেন্টেলম্যান ইউ নো।

-খুব শখ না? খুব শখ ওই পেত্নীর কাছে যাওয়ার

বলেই আবারও ধুপধাপ কিল বসাতে নিলেই আহান আরেক হাত দিয়ে তুরার হাত চেপে ধরে। মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা তুরার হাত টা টান করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল

-হিংসে হয়?

-মোটেও না,আপনার মতো অসভ্য লোকটাকে নিয়ে আমার হিংসে করতে বয়েই গেছে

বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো তুরা। আহান ভ্রু কুচকে তুরার মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল

-আমি অসভ্য?

-হু

-আমায় অসভ্য বলার সাহস হলো কি করে, আমি অসভ্যতা করলে নিতে পারবে তুমি?

আহানের বরফের ন্যায় শীতল কণ্ঠে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো তুরার মেরুদণ্ড বয়ে। এতক্ষণ রাগে জেদে তুলকালাম করলেও এবার নিজের অবস্থান টা উপলব্ধি করেই হৃদস্পন্দন থমকে গেলো তুরার। আহান ওর এক হাতে তুরার কোমর আরেক হাতে তুরার হাত চেপে নিজ বুকের উপর ঝাপটে ধরে রেখেছে। শুকনো ঢক গিললো তুরা। আহানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করতে নিলে আরও জোরে চেপে ধরলো আহান
পুরুষালি শরীরের এতো নিগূঢ় স্পর্শ নিজের সারা শরীরে মিশে যেতেই কেঁপে উঠলো বদন, ওষ্ঠদ্বয়ে অস্বাভাবিক কম্পন ধরলো। তুরার অনির্দেশ্য, অবিন্যস্ত, এলোমেলো মিইয়ে যাওয়া অবস্থা দেখে আহানের ভীষণ লোভ হলো আরেকটু ছুঁয়ে দিতে।

যাক না থেমে সময়টা, সুভশ্রীর কেঁপে উঠা নেত্রপল্লব, এষ্ঠধারে আরেকটু কম্পন ধরুক,হৃদযন্ত্রের গতানুগতিক ধারার উচ্চমাত্রার ব্যাঘাত দুজনের একসাথেই ধরুক। কামড়ে ধরা অধরের চাপ আরেকটু বেশি হোক না, টকটকে লালাভ মুখশ্রী থেকে ঠোঁট, গাল,নাক সহ সারা বদনে ছড়িয়ে যাক। লাজুকলতার মতো মিইয়ে যাওয়া নিজ চোখে বেহায়ার মতো তাকিয়ে দেখুক আহান। ভীষণ ইচ্ছে হলো, ভীষণ
তুরার কম্পনরত ঠোঁটের দিকে এগিয়ে গেলেই চোখ খিঁচিয়ে নিলো তুরা, আহান ওকে আরেকটু বিব্রত করে ঠোঁট ছাড়িয়ে থুতনিতে কামড় বসিয়ে দিতেই মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো তুরা
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥

#হীডিংঃ অনেক বড় পর্ব লিখেছি আজ, এতটা লিখতে গিয়ে রিচেইক করার সময় হয়নি, ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি
হ্যাপি রিডিং 🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here