#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৩৫
-আমার কথাটা একটু শুনুন!
কোনো রকম প্রতিক্রিয়া বা জবাব না দিয়েই দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো আহান
এ নিয়ে বার কয়েক চেষ্টা করল তুরা আহানের সাথে কথা বলার বরাবরই প্রতিক্রিয়া শূন্য।
দুপুরের বাড়ি আসার পর দুই ঘন্টা পেরিয়েছে গেছে। তখন বসার ঘরে আহান সবটার ব্যাপারেই অবগত হয়েছে। মাহিদ আর তার মায়ের সাথে তুরার সম্পর্ক নিয়ে সবটাই ওকে বলেছে আমেনা আর রুবি। সবকিছু শোনার পর শুধু একটা কথাই বলেছিল
-তাহলে আর কি! আমাকে তো কেও এটাও বলার প্রয়োজন বোধ করেনি,আমি আর কে যে সব বলতে হবে!
বলে আর কোনো বাক্য ব্যয় না করে চুপচাপ উপরে উঠে গেছে। তুরা তৎক্ষনাৎ আহানের পিছু পিছু এলেও ওর সাথে কথা বলার সুযোগ পাইনি। আহান দুপুরের খাবার টাও খাইনি। রুবি বেগম ডাকতে এলে তাকে ফিরয়ে দিয়েছে আর তুরার সাথে তো কথায় বলেনি। চুপচাপ এড়িয়ে চলছে ওর প্রতিটি শব্দ,কথা সহ পদক্ষেপ ও
কি আজব! কাল অব্দি তুরা আহানকে ইগনোর করছিল আর আজ আহানের এতটুকু সময়ের নিশ্চুপতা তুরার বুকটা কাঁপিয়ে তুলছে বেদনায়!
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নিচে নেমে এলো তুরা,আহান বেরিয়েছে গাড়ি নিয়ে। কখন আসবে জানে না।সবকিছু কেমন ফিকে লাগছে তুরার। বিষণ্ণতায় ঘেরা অপ্রতিরোধ্য মন খারাপ পাহাড় সমান জড়ো হলো। হেলতে দুলতে ড্রয়িং রুমের সোফার উপর বসল, আজকে মিনু ফুফুকে খুব মনে পরছে তুরার।উনি থাকলে নিশ্চয় কিছু না কিছু উপায় বলত, ফুফুর অনুপস্থিতি তুরার অসহায়ত্ব আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলো।এখন কি করবে সে!
-কি হলো এখন শান্তি হয়েছে তো?
কথাটি কর্ণগোচর হলেও কোনো উত্তর করল না তুরা, নিঃশব্দেই বসে রইল। প্রেমা বুকে ভাঁজ করে রাখা দু হাত টান করে তুরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আবারও বলল
-রাগ করে বেরিয়ে গেছে তো আহান? এবার খুব ভাল্লাগছে?আমি জানতাম তোমার মতো ষ্টুপিড আর ইমম্যাচিউর একটা মেয়ে কখনোই আহানকে হ্যাপি রাখতে পারবে নাহ, তুমি শুধু পারবে মেসড আপ করতে,যত্তসব
প্রেমার কথায় আজ আর তুরা গলা বাড়িয়ে কিছুই বলল নাহ,কি বলবে সে? আসলেই তো দোষটা তারই,সে যদি আহানকে জানিয়ে যেতো তাহলে তো এতো কিছুই হতো না। মাথা নিচু করেই বসে রইল তুরা,প্রেমা আরও কিছুক্ষণ ভালো মন্দ বলে বেরিয়ে গেলো, ওর যাওয়ার পানে চেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল কপোল বেয়ে। সত্যিই নিজেকেই সবচেয়ে বড় দোষী মনে হচ্ছে তার
কাঁধের উপর হাতের স্পর্শ পেয়েই তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে মুখে নকল হাসি টেনে তাকাল
-মা? বসুন না,কিছু লাগবে?
ঘাড় নাড়িয়ে না সূচক মৌন সম্মতি দিলো রুবি। তুরার পাশে বসল স্থির মুখাবয়ব নিয়ে, তুরা আবারও বলল
-চা খাবেন তো মা? আপনি বসুন আমি এক্ষুনি বানিয়ে আনছি
বলেই হাসি হাসি মুখ করে উঠতে নিলেই রুবি খাতুন এক হাত ধরে থামিয়ে দিলো তুরাকে। গুরুগম্ভীর ভঙ্গিমায় ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ নাড়িয়ে বসতে বলল তুরাকে তার পাশে, তুরা কৌতূহলী দৃষ্টিতে চেয়ে বাধ্য মেয়ের মতো বসল। ভদ্রমহিলা কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে তার বরাবরের মতো বিচক্ষণ ভঙ্গিমায় বলল
-আহান খুব রেগে আছে?
মৃদু কণ্ঠের স্পষ্টবাক্যে তুরার মেকি হাসিতে আবৃত মুখটা মিলিয়ে গেলো, মুখ জুড়ে মন খারাপের আধার নামল। কোনোরূপ উত্তর করল না তুরা, অপরাধীর মতো গতানুশোচনায় ঘাড় ঝুঁকিয়ে নিলো,বলতে শুরু করল রুবি
-আমার ছেলে ছোট থেকেই ভীষণ বাক্যসংযত স্বভাবের, তুলনামূলক স্বল্পভাষী আর খুব গম্ভীর। পরিবারের মধ্যেও ভালো সখ্যতা ওর কম, একা থাকত পড়াশোনা ক্যারিয়ার এসব নিয়েই ব্যস্ত ছিলো আমার ছেলেটা। এর মাঝেই একদিন ভীষণ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই তোমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো, যদিও আমরা জোরপূর্বক ওকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলাম।
খানিকটা দম নিলো, ভারি প্রশ্বাস ছেড়ে আবারও বলতে আরম্ভ করলেন
-শুরুতে ভেবেছিলাম আমার ছেলেটা হয়ত সম্পর্ক টা মেনে নিতে পারবে না,কিন্তু আস্তে আস্তে আমার এই ধারণা টা নিছক ভুল প্রমাণিত করেছে আহান। তুমি কতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছ আমি জানি না কিন্তু আমি সবটাই পেরেছি। আমি তো ওর মা, আমি খুব ভালো করে বুঝি ওকে। হয়ত তোমাদের মাঝে স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর মতো সখ্যতা বা চক্ষুগোচর হওয়ার মতো বন্ধন নেই,তবে যা আছে তা এর থেকেও সুগভীর। আহান তোমার প্রতিটি প্রয়োজন, সুবিধা, অসুবিধার খেয়াল নিজে রাখে। তোমাকে রোজ ভার্সিটিতে নিয়ে যাওয়া বাড়ি আনা তোমার কোন জিনিসে অসুবিধা কোনটাতে তোমার ভালো তোমার আঘাতে কিভাবে যত্ন করতে হবে সবটার খেয়াল কিন্তু ও খুব যত্নসহকারে রাখে,আমাদের বলে দিতে হয়নি! কিন্তু ওই যে বললাম ছেলে আমার একটু গম্ভীর। শামুকের খোলসের মতোই ওর উপরের ব্যক্তিত্ব টা প্রখর কঠোর। ভেতরে চিন্তা,মায়া, বা অনুভূতিতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকলেও ও নিজ থেকে কখনও প্রকাশ করবে নাহ। ভালোবাসা কি সবসময় মুখে বললেই হয়? এই যে যত্ন, তোমার জন্যে ওর দুশ্চিন্তা, তোমাকে না পেয়ে ওর পাগলপ্রায় অবস্থা এগুলো কি ভালোবাসা নয়,তুরা?
অশ্রুতে পরিপূর্ণ ছলছল নয়ন জোড়া তুলে তাকাল তুরা,বুকের ভেতর টা ধক করে উঠল! সত্যিই তো এভাবে তো সে আগে ভেবে দেখেনি?
-তোমার অনুপস্থিতি, তোমাকে না পাওয়ায় তোমার চিন্তায় ও উন্মাদের মতো আচরণ করেছে।আর তোমাকে কোনো ছেলের সাথে দেখে তা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে, পুরুষ কখনই তার পছন্দের নারীকে অন্য কারো পাশে সহ্য করতে পারেনা হোক না সে ভাই। আর মাহিদের সাথে তোমার সম্পর্ক টাও তো ও যানতো নাহ। এখন বলো তো যদি দ্বায়িত্ব বোধ নাই থাকত তাহলে কি এভাবে রাস্তায় রাস্তায় বেরাতো? যদি অধিকার বোধ নাই থাকত তাহলে কি মাহিদের সাথে তোমাকে দেখে জবাবদিহিতা চাইতো? যদি হারানোর ভয় নাই থাকত তাহলে কি এভাবে খুঁজতো? আর ভালোবাসা না থাকলে কি দ্বায়িত্ব, অধিকার, হারানোর ভয় এসব থাকতো?
অশ্রুপূর্ণ আখি যুগল থেকে টপটপ করে বয়ে গেলো বারিধারা। নিজের ভুল টা যেনো চোখে আঙ্গুল তুলে দেওয়ার মতো স্পষ্ট হলো। নিতান্তই বাচ্চামি করছিল সে এতদিন। কান্নার বেগ বেড়ে ফুঁপিয়ে উঠল তুরা, ভাঙা ভাঙা গলায় বলল
-আমার ভুল হয়ে গেছে মা,আমি বুঝতে পারিনি উনি এতটা চিন্তিত হবে। এমনটা হবে বুঝলে আমি কখনোই যেতাম না। আর কখনো আমি এমন অন্যায় করব না আমাকে ক্ষমা করে দিন মা
বলেই কান্নায় ভেঙে পরল। রুবি খাতুন পরম মমতার সহিত এক হাতে তুরাকে জড়িয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল
-ধুর পাগলি! এভাবে কাঁদতে নেই। মায়ের কাছে আবার ক্ষমা কিসের,আমিতো শুধু তোমাকে বোঝাচ্ছিলাম
স্নেহ ভরা ছোট আদরে যেনো মা মা গন্ধটা প্রকট ভাবে লাগল তুরার, মমতার সাহারা পেয়ে আরও দূর্বল হয়ে গেলো। কান্নামিশ্রিত স্বরে বলল
-আপনারা সবাই আমাকে কত ভালোবাসেন,আমার জন্যে চিন্তা করেন তবুও আমি ভুল করে বসি
-সন্তানরা তো ভুল করবেই মা। আমি না মা তোমার! তোমার বাবার সাথে আমাদের বহু বছরের সম্পর্ক, তোমার মায়ের সাথে বিয়ের পরেও তা বহাল ই ছিলো। কিন্তু পরে ব্যবসায়ীক খাতিরে দূর শহরে চলে আসায় যোগাযোগ টাও ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু হয়, তুমি হওয়ার পর আস্তে আস্তে তোমাদের বাড়িতে যাওয়া আসাও কমে আসে। কিন্ত আহানের বাবা আর তোমার বাবার সম্পর্ক বরাবরই অটুট ছিলো। তাই তো তারা একে অপরকে কথা দিয়েছিল যে প্রাপ্তবয়স্ক হলে তোমার আর আহানের বিয়ে দেবে। সময়ের সাথে কথাটা আমরা ভুলতে বসলেও বিধাতা সেটা ঠিকই মনে রেখেছিল তাই তো এভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই বিয়েটা হয়ে গেলো।
তুরা চমকিত দৃষ্টিতে তাকাল,তাহলে সেদিন দিদুন মামনীকে এই কথায় বলছিলেন?সে তো এ ব্যাপারে সম্পূর্ণই অজ্ঞাত ছিলো। তুরার ভাবনার মাঝেই রুবি খাতুন বলল
-ছেলেটার আমার অভিমান হয়েছে, জানি আমি তোমার সাথে কথা বলছে না, কিন্তু বলবেও যে না এমন কিন্ত না
তুরা কান্না থামিয়ে রুবির কথায় পূর্ণ মনোযোগ দিলো, তাই তো কথা বলছে না তো কি, বলবে যে না এমন ও তো না,
-কি পারবে না আমার ছেলের রাগ ভাঙাতে?
শাশুড়ির ইঙ্গিত বুঝতে সামান্য অসুবিধা হলো না তুরার,চোখ মুছে অধরে হাসি ফুটিয়ে বার কয়েক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।
••••
ঘরের ভেতর বিরতিহীনভাবে পায়চারি করছে তুরা, আবারও তাকাল দেওয়াল ঘড়িটার দিকে। রাত বারোটা পেরিয়েছে মিনিট সাতেক পার হয়েছে অথচ এখনো আহান ফিরল নাহ। ভেতরের অস্থিরতা ক্রমশ দুশ্চিন্তায় পরিণত হচ্ছে, টুনি এসে পায়ের কাছে গা ঘষতে লাগল৷ তুরা দুহাতে টুনিকে তুলে বারান্দায় গিয়ে রাখতে গেলেই গাড়ির হেডলাইটের আলো দেখেই চোখ মুখ চিকচিক করে উঠল, টুনিকে রেখে এক ছুটে ঘর থেকে বেরল। সিড়ি বেয়ে নেমে দরজা খুলতেই হাস্যজ্বল মুখ খানা চুপসে গেলো সামনে দাঁড়ানো আহানের হাত প্রেমার হাতে দেখে।
-কি হলো এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছ কেনো
কটমট করে প্রেমা বলল,তুরা হতভম্বিত হয়ে সরে দাঁড়াতেই আহান ঘরে ঢুকল,আর তার সাথে প্রেমাও। আহানের এক হাত ঝাপটে ধরে চিপকে লেগে আছে। আহান কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও বাঁধাও দিচ্ছে নাহ। নিমিষেই তুরার ছোট্ট মনটা আঘাতে জর্জরিত হলো, আহান প্রেমার হাতটা ঝামটা দিয়ে ছাড়িয়ে গটগট করে উপরে উঠে গেলো। প্রেমা অপ্রস্তুত হলেও তুরাকে দেখে মুখ ভেঙচে ওউ ঘরে ঢুকে গেলো।
কফির মগটা হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকল তুরা, আহান ওয়াশরুমের ভেতর। বেড সাইড টেবিলে মগটা রেখে বিছানা ঠিক করতে লাগলে আহান মাথা মুছতে মুছতে বেরলো। চোখে মুখে গাম্ভীর্যের ছাপ এখনো কড়াকড়ি। তোয়ালে টা হাত থেকে ফেলে বিছানায় সটান আধশোয়া হয়ে শুয়ে পরল এক হাত চোখের উপর দিয়ে। তুরা বিব্রতবোধ জড়তা কাটিয়ে নরম গলায় বলল
-আপনার খাবার আনবো?
নড়চড় হলো না আহানের,ঠাঁই রইল একই অবস্থায়, তুরা এগিয়ে গিয়ে বলল
-আ আপনার কফিটা..
তবুও উত্তর করল না আহান, এ পর্যায়ে আহানের এমন অগ্রাহ্যে তুরার ভীষণ খারাপ লাগল,মনের ভেতর সঞ্চিত অনুপ্রেরণা, প্রাণোদন নিভিয়ে গেলো। ততসত্ত্বেও মন খারাপের মেঘ দমিয়ে এগিয়ে দরজা টা লাগাতে গেলো
-সাথে থাকতে কেও বাধ্য নয়, ইচ্ছে করলেই অন্যঘরে গিয়ে থাকতে পারে
দরজার খিল থেকে হাতটা ছিটকে গেলো। ভেতরের উপহত মন থেকে সারা বদনে ছড়িয়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা দৃষ্টিতে ফিরে তাকাল প্রস্তর কঠিন মানুষ টার দিকে। ভেতরে দলা পাকানো কান্না গুলো উগড়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো। এ পর্যায়ে আহান মুখ থেকে হাত সরাল। নিভৃতে তাকাল সামনে দাঁড়ানো মেয়েটির দিকে, নির্লিপ্ত ভাবে পরখ করল তুরার কাঁপা কাঁপা লাল হয়ে আসা চোখ, ফুলে থাকা নেত্রপল্লবের গোড়া। কামড়ে রাখা ঠোঁট। চোখ মুখ খিঁচিয়ে কান্না আটকে দাঁড়িয়ে আছে। দু হাতে খামচে রেখেছে পরনের পোশাক, গুটি গুটি পা ফেলে এগিয়ে আসলো আহানের দিকে। আহান আবারও মুখ ঘুরিয়ে নিলো অন্যদিকে স্থৈর্য কণ্ঠে বলল
-আসবে না আমার কাছে
কথা বলা শেষ হতে না হতেই তুরা ঝাপিয়ে পরলো আহানের বুকে, দু’হাতে খামচে ধরল প্রসস্থ বুকে আট হয়ে থাকা সফেদ টি-শার্ট। আকস্মিক আক্রমণে আহান ধাতস্থ হওয়ার আগেই ডুকরে কেঁদে উঠল তুরা, কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে অস্ফুটে বলল
-আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ, আমি বুঝতে পারিনি আপনি এতটা চিন্তিত হবেন, তাহলে কখনও যেতাম নাহ। আর কখনও যাব না আমি,কোত্থাও যাব নাহ। আপনি এভাবে মুখ ফিরিয়ে থাকবেন নাহ। আপনি কথা না বললে আমার কষ্ট হয়, খুব কান্না পায়
হতবিহ্বলিত হয়ে বিমূর্ততায় স্থির হয়ে গেছে আহান,তুরার এহেন কৃতকর্ম তার ভাবনার বাহিরে ছিলো। ওকে যেতে বলা সত্ত্বেও এভাবে?! নিজের ভেতরের রম্য কৌতূহল দমিয়ে আলতো ভাবে হাত রাখল তুরার পিঠে। তুরার ওমন হেয়ালি কাজে তার অভিযোগ গূঢ়তা হয়েছিল, ভীষণ মনক্ষুণ্ণ হয়েছিল, তবে তার গভীরত্ব তুরার চোখের পানির সমান তো নয়!
নিজের উপর ছোট্ট শরীর টার উপস্থিতিতে কথা থেমে গেছে আহানের,আচমকা সমস্ত রাগের জোয়ার যেনো তলিয়ে গেলো। বুকের ভেতর মুখ ডুবিয়ে থেমে থেমে বলা ওই কথার নিকষ মায়ায় ডুবতে বাধ্য হলো
এখনো ফুঁপিয়ে হেঁচকি তুলে তুরা ভিজিয়ে দিচ্ছে আহানের বক্ষস্থল। কেমন চিনচিন যন্ত্রণাভুত হলো আহানের৷ তুরার কান্নাতে তিরতির করে কেঁপে উঠল রাগ জেদের পাল্লা। যেনো সবটা এই দুমড়ে মুচড়ে গেলো বলে।
-আপনি আমাকে যা খুশি বলুন,শাস্তি দিন কিন্তু এভাবে মুখ ফিরিয়ে নেবেন নাহ। আমি আর অবাধ্য হবো নাহ। তবুও আমাকে ছেড়ে প্রেমার হাত ধরবেন না
ভীষণ গুরুতর মুহূর্তেও যেনো আহানের হাসি পেলো তুরার কথা শুনে। মেয়েটা প্রেমা হাত না ধরার জন্য কাঁদছে!তবুও উপরে উপরে কপট জেদ ধরেই থাকল। তুরা আহানের বুক থেকে মুখ তুলে তাকালো আধবোজা চোখে, ভাঙা ভাঙা গলায় বলল
-আপনি এখনও রেগে থাকবেন? আমিতো সরি বলছি। কান ধরে উঠা বসাও করব আপনি বললে
তুরার বাচ্চামো কথা শুনে আহানের মনে মনে নিজেকেই দুটো বসাতে ইচ্ছে করল, কার উপরে রাগ দেখাচ্ছিল সে? যে কি না স্বামীর রাগ ভাঙাতে কান ধরে ওঠা বসা করতে চাই!
ভ্রু যুগল দাম্ভিকতার সহিত কুচকে নিলো, নির্লিপ্তে নিঃশব্দে অবলোকন করল তুরার আনন, চওড়া হাত তুলে আঙুলের সাহায্য মুছে দিলো ঘাম আর চোখের পানিতে একীভূত হয়ে ভিজে জবজবা হওয়া মুখ খানা, পরম যত্নসহকারে চোখের পানি মুছে বলল
-মনে থাকবে তো!
-হ্যাঁ,,খুব
বারবার মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিয়ে বলল তুরা। আহানের বুকের উপর হাত রেখে আদুরে গলায় বলল
-আপনি আর এমন গোমড়ামুখো করে থাকবেন না তো বলুন?!
ছোট্ট নরম হাত খানার স্পর্শ একেবারে হৃদযন্ত্রটার উপরে লাগলেই কম্পিত হলো আহানের কায়া! মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলো টাইফুনের গতিতে নিউরন গুলোতে অযাচিত আবেদন পাঠাতে লাগল। হৃদবক্ষের উপর নরম হাতের ছোঁয়া টা যেনো চামড়া ভেদ করে ভীষণ গহীন পর্যন্ত ছড়িয়ে গেলো। অস্ফুটস্বরে ‘উফফ!’ করে উঠল।
আহানের লাল হয়ে আসা চোখ দেখে তুরার কপালে কিঞ্চিত ভাঁজ পরল। আহানের রাগ কি তাও ভাঙল না? অহেতুক ভয়ে ভীত হয়ে আরও জোরে চেপে ধরল বুকে রাখা হাতটা, নিজের অজান্তেই বাড়িয়ে দিলো উঠাপরা অনুভূতির অদম্য প্রখরতা।
-কি করলে আপনার রাগ ভাঙবে স্বামী!
অল্প বিস্তর হাসল আহান, শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসা ঠোঁট প্রসারিত হলো মৃদু, পিঠ থেকে নামিয়ে এক হাত তুরার কোমরে স্থির করে বলল
-মাহিদের সাথে এত বেশি মিশবে না বুঝছ?
এটা আবার কেমন কথা হলো, কিসের ভেতর কি বলছে আহান। বোকা বোকা চাহনি দিয়ে তাকালো তুরা, ভাবলেশহীন ভাবে বলল
-আমাদের মাঝে ইয়াজ ভাই কোত্থেকে এলো?
-তোমার ইয়াজ ভাইয়ের সাথে কম মিশতে বলেছি, আমাদের মাঝে তো এক ইঞ্চির ও উপস্থিতি নেই
আহানের শেষোক্ত কথাটা শুনেই তুরা অপ্রতিভতায় নিজের অবস্থান টা উপলব্ধি করতেই শিউরে উঠল। বুকের রাখা হাতটাতে ভর দিয়ে সরে আসতে গেলেও লাভের লাভ কিছুই হলো না উলটে বাহুদ্বয়ের মাঝে দম বন্ধ করা চাপে পরল, অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল আহানের দিকে, কিন্ত আহান তা অহেতুক কথা যেমন এক কানে ঢুকিয়ে আরেক কানে বের করে দেয় ঠিক তেমন অভিব্যক্তির মতোই অগ্রাহ্য করল। তুরা ছাড়া পাওয়ার জন্য রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু করলে আহান মন্থর স্বরে বলল
-ছেড়ে দেব আমি?
ভরাট গলার গভীর কন্ঠস্বর তুরার ঠিক কতখানি গহীন পর্যন্ত গেলো ধারণার বাহিরে, অদ্ভুতুড়ে দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু,হোক ক্লান্তিতে বা মোহে সরাতে পারল না নিজেকে নিস্তব্ধতায় শুধু ফিসফিসানোয় নিঃশ্বাসের শব্দই কানে আসতে থাকলো
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
#Humu_♥