#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৩৬
-ওমাহহ দেখিইই!! সোনার মুখটা তো একেবারে টকটক করছে বলছি দুলাভাই স্যার কি রাতে একটু বেশিই ডোজ দিয়েছে নাকি
ফারিহার বেলাজ নিয়ন্ত্রণহীন কথা শুনে তুরা হড়বড়িয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো, চোখ রাঙিয়ে কপট শাসিয়ে বলল
-চুপ,কিসব বলছিস ছি ছি। কেও শুনলে কি ভাববে
ফারিহা তুরার হাতটা মুখের উপর থেকে সরিয়ে নাক ঘষে বলল
-হুহহ,তোমরা ইটিস পিটিস করবা তখন কিছু না আমি বললেই ছি ছি
-উফ তোর ফালতু কথা বন্ধ কর তো ফারু, চুপচাপ ক্লাসে চল
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বলল তুরা, ফারিহা কাধ থেকে ব্যাগ টা নামিয়ে সামনে ধরে ভেতর থেকে চুইংগাম বের করে তুরার হাতে একটা ধরিয়ে নিজে একটা মুখে পুরলো। চিবোতে চিবোতে বলল
-সিরিয়াসলি ইয়ার, আহান স্যার পারসোনাল লাইফেও ওমন সিরিয়াস সিং টাইপ! আমিতো ভেবেছিলাম উনি রোমান্টিক শাহরুখ খান
ভীষণ আফসোসের স্বরে বলল ফারিহা যেনো, তুরার চেয়ে ওর দুশ্চিন্তা বেশি,তুরা চুইংগাম মুখে দিতে দিতে বলল
-শুধু সিরিয়াস হলে মানা যায়, আস্ত গোমড়ামুখো,কাঠখোট্টা, ব’জ্জাত লোক উনি
-ওমাহ, ওমাহ। না না এটা তো ঠিক না, তুই দুলাভাই স্যারকে নিয়ে এধরণের মন্তব্য করতেই পারিস না তুরা
-মন্তব্য নাহ,যা সত্যি তাই বলছি
বলেই মুখ ভেংচি দিলো, দুজন গল্প গুজব করতে করতে উপরে ক্লাসের দিকে গেলো। ক্লাসে ঢুকার পথেই চোখ গেলো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিফা আর মারিয়ার দিকে। সারা মুখ জুড়ে ক্রুর হাসি যেনো বাধ ভেঙেছে। তুরাকে সেদিন সিড়ি থেকে ফেলে দিয়ে যেনো কোনো এক অসাধ্য সাধন করেছে
-সকাল করেই শাকচুন্নির মুখ দর্শন, দিনটা যে ওদের চেহারার মতোই জঘন্য যাবে বোঝা হয়ে গেছে
প্রতুত্তরে তুরা কিছু বলল নাহ, চুপচাপ এগোতে লাগলো। রিফাদের সামনে দিয়ে দরজা পার করে ঢুকতে গেলেই রিফা ল্যাঙ মারার জন্য তুরার পায়ের সামনে পা দিতে গেলেই তুরা এক কদম এগিয়ে রিফার পায়ে উল্টো পারা দিতেই অপ্রস্তুতায় মুখ থুবড়ে পরতে গেলে পাশের মারিয়ার জামা খামচে ধরতেই দুজন একে অপরের ধরে হুড়মুড়িয়ে পরলো।
আকস্মিক পরে যাওয়ার ধুপ করে শব্দ হলে সবাই চমকিত হয়ে তাকালেও ভরা ক্লাসের সামনে এভাবে বেখাপ্পা ভঙ্গিতে দুজনের পরে যাওয়া দেখে সারা ক্লাস হাহা করে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। রিফা আর মারিয়া নিজেদের অবস্থান বুঝে উঠে দাঁড়ালো
চুলগুলো মুখের উপর উপচে পরেছে, জামা কাপড়ের বেসামাল অবস্থা। তুরার ভীষণ হাসি পেলেও মুখ টিপে হাসি দমিয়ে বলল
-একি রিফা, পরলে কি করে?
রিফা অগ্নিদৃষ্টিতে তুরার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে জামার ময়লা ঝারতে লাগলে তুরা আবারও বলল
-আহারে খুব লেগেছে বুঝি, থাক থাক মন খারাপ করবেন নাহ অন্যের পেছনে লাগতে গেলে এমন দু একটা ঝটকা খেতেই হয় বুঝলে!
বলে রিফার কাঁধের উপর আলতো চা’পড়ে বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের জাগায় গিয়ে বসলো।রিফা আর মারিয়া পারছে না চোখ দিয়ে তুরাকে ভস্ম করে দিতে, কিন্তু আশেপাশের অবস্থা দেখে চুপ করে রইলো, আপাতত গেড়াকলে সেই পরেছে চুপচাপ হজম করা ছাড়া উপাই নেই।
আজকে দুটো ক্লাস করেই বেরিয়ে এসেছে ফারিহা আর তুরা, সাদমান টাও আজ আসেনি। তার নাকি মায়ের শরীর টা ভালো না তাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গেছে
-সাদমানের আম্মু এখন কেমন আছে জানিস কিছু?
তুরার কথায় ফোনের স্ক্রিন অফ করে তুরার দিকে চেয়ে ঠোঁট উলটে বলল
-নাহ, কাল কথা হয়েছিলো, আন্টি হসপিটালে ভর্তি এতটুকুই বলেছে শুধু সকাল থেকে তিনবার ফোন দিয়েছি সুইচড অফ দেখাচ্ছে
বেশ আনমনা হয়ে বলল ফারিহা, তুরারও বেশ চিন্তা বোধ হলো।শুনেছে সাদমানের বাবা নেই। ছোট একটা বোন আছে পাঁচ বছরের মায়েরও নাকি শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নাহ।
এর বেশি কিছুই জানে নাহ। পরিবারের কথা বললেই ছেলেটা কেমন এড়িয়ে যায়
আরও কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যেই কথা বার্তা বলে দুজনই বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। আজকে তুরা আর অবাধ্যতা করেনি আহানের সাথেই ফিরেছে। বাড়ি আসতেই বরাবরের মতোই তুরা গাড়ির দরজা খুলেই দৌড় দিলো।
ঘরের ভেতর ঢুকতেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ভীষণ প্রিয় মুখটা দেখে চোখ মুখ চিকচিক করে উঠল আনন্দে
-আপুউউউ!!
বলেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল রাইমাকে। তুরাকে দুহাতে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো, রাইমাকে ছেড়ে তুরা উত্তেজিত হয়ে বলল
-আপু! তুমি কখন এলে? কতক্ষণ হলো? তুমি আসবে আগে বলোনি কেনো
বলে ঘাড় ঘুরিয়ে রুবির দিকে তাকিয়ে বলল
-মা আপনি কেনো বললেন না যে আজকে আপু আসবে, আগে জানলে তো আমি ভার্সিটিতে যেতামই না
-হ্যাঁ তোমার তো সুযোগ চাই ফাঁকি দেওয়ার। পড়াচোর কোথাকার
ফিচেল স্বরে বলল আহান। রুবি আহানের কথা শুনে হাসলেও পরমুহূর্তে ওকেই থামিয়ে বলল
-এসব কি কথা আহান,তুরা মোটেও পড়াচোর নাহ।
বলে এগিয়ে এসে চায়ের খাবারের প্লেট গুলো টেবিলে রেখে তুরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-আমি নিজেই তো জানতাম না যে রাইমা আসবে,আসলে তো তোমাকেই আগে বলতাম
-আমি যদি আগেই জানিয়ে আসি তাহলে সারপ্রাইজ কি করে হলো বলো তো।
-থাক আপি, আমরা বহুত সারপ্রাইজ পেয়েছি তোর থেকে এখন ইমান ভাইকে দে তাহলেই হবে
বলেই সোফাতে গা এলিয়ে বসলো আহান। পাশেই ইমান বসা,ওকে দেখে সালাম দিলে ইমান বলল
-কেমন আছেন প্রফেসর?
-ভালো আছি, আপনার কি খবর, এই পেত্নী টা খুন জালাই তাই না
-তা আর বলতে সারাদিন এটা ওটা বাইনা তো আছেই, একটু পরপর দিন গুনবে আর বলবে ‘এত দিন হলো বাড়িতে যায় না,ওত দিন হলো বাড়িতে যায় না’ যেনো কারাগারের আসামি জামিনের জন্যে দিন গুনছে
বলেই হাহা করে হেসে দিলো ইমান। আহান ঠোঁট কামড়ে হেসে দিলো। উচ্চস্বরে হাসার স্বভাব ওর নেই। তবে ইমানের কথা শুনে ওউ হাসতে বাধ্য হলো।
আহানের ঠোঁট কামড়ে হাসার দিকে তাকাতেই তুরার চোখ আটকে গেলো। এলোমেলো চুলের ফরমাল পোশাক পরিহিত ব্যক্তিটির হাসিটা যেনো আকাশের মতোই নির্মল ঠেকলো তুরার কাছে। এতদিনেও তুরা আহানকে অল্প বিস্তর হাসতে দেখেছে বলেও মনে পরে না!
তুরাকে আহানের দিকে হা করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে থাকতে দেখে রাইমা টুক করে একটা খোঁচা দিয়ে বলল
-আমার ভাইকে দেখার জন্য সারাজীবন পরে আছে ভাবি, এখন আমাদেরও দেখো একটু
টুসকি মেরে রাইমার বলা কথাতে তুরা হকচকিয়ে তাকালো, ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সকলের দৃষ্টিই তার দিতে নিবন্ধিত। ভীষণ অপ্রস্তুত বোধ করলো তুরা, এভাবে সবার সামনে রাইমা এভাবে বলবে ও ভাবতেও পারেনি লজ্জায় কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরোচ্ছে যেনো।
-আসলে ভাইজান এতো হ্যামসাম যে ভাবি চোখ ই সরাতে পারতাছে না
বলেই মুখে হাত রেখে ফিকফিক করে হেসে উঠলো চুমকি। তুরা পারছে না মাটি ফাঁক করে ভেতরে ঢুকে যেতে। ইস! আজকে সবাই তার পেছনে লাগছে? কেনো যে তাকাতে গেলো লোকটার দিকে। রুবি খাতুন মুখ টিপে হাসলেও তা দমিয়ে নিলেন।যত যাই হোক ছেলেমেয়েদের সামনে তো আর এ নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা যায় না। উনি চোখ রাঙিয়ে চুমকির দিকে তাকাতেই চুমকি জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল
-এহ, ভুল হয়ে গেছে আন্টি। ছোরি ভাবিজান
-ওটা ছোরি না, সরি হবে চুমকি। হ্যান্ডসামকে হ্যামসাম বলে আমার চেহারা টাও তোর ইংরেজির মতো ভাঙাচোরা করে দিসনা। দেখছিস ই তো এমনেই আজকাল মানুষ আমার চেহারায় নজর দিচ্ছে
আড়চোখে তুরার দিকে চেয়েও কথাটা বলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো আহান। তুরা মাথা ঝুকিয়ে ওড়না খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছে, নিজের শাশুড়ী, ননদ আর তার স্বামীর সামনে এভাবে লজ্জার তোপের মুখে পরতে হবে কল্পনায় ও ভাবেনি। গাল গরম হয়ে আসছে, বেহায়া লোকটা এভাবে সকলের সামনে অপদস্ত করে গেলো!
তুরার কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া অস্বচ্ছন্দিত অবস্থা বুঝতে পেরে রাইমা এগিয়ে এসে বলল
-ছাড়ো তো! আমার ভাবিটাকে আর লজ্জা দিও নাহ। এসে থেকে ঘন্টা পেরিয়ে গেলো অথচ এখনো আসল কথাটাই বলতে পারলাম নাহ
-কি আসল কথার ব্যাপারে বলছিস রাই?
আমেনা খাতুনের কথা রাইমা হাস্যরস মুখ করে বলল
-আজকে আমার ননদ মানে ফারিন আপুর মেয়ে ফারাহ এর জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি আছে চৌধুরী বাড়িতে, তাই তোমাদের ইনভাইটেশন দিতেই এসেছি
হাসি হাসি মুখ করে বলা রাইমার কথায় রুবি খাতুন ভ্রু কুচকে বলল
-জন্মদিনের পার্টি?
-হ্যাঁ মা। বাবা মা ই আসতে চেয়েছিলেন আপনাদের বলতে তবে রাইমা অনেক দিন ধরেই বাড়ির সবার সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলো তাই আমরা দুজনই চলে আসলাম, আপনারা সকলে আজ চৌধুরী বাড়িতে উপস্থিত হলে বাবা মা সহ আমরা সকলেই ভীষণ খুশি হবো!
-তা তো অবশ্যই বাবা। কিন্তু রাইমার বাবা ই তো বাড়িতে নেই। জানোই তো উনি ব্যাবসায়ীক কাজে কতটা ব্যস্ত থাকেন। আর পাঁচদিন হলো উনি শহরের বাইরে
-সে ব্যাপারে রাই বলেছে মা। কিন্তু আপনি কিন্ত আসবেনই সবাইকে নিয়ে আপনাদের আগমনে আমাদের অনুষ্ঠান টা পরিপূর্ণ হবে মা
-হ্যাঁ মা, আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। তোমাকে যেতেই হবে
রাইমা জিদ করে বলল। রুবি খাতুন কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরেকটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো
-হেই রাইমা। হোয়াট অ্যা সারপ্রাইজ! কখন এলে?
প্রেমার কথায় রাইমা তাকাতেই প্রেম সিড়ি বেয়ে নেমে আসলো। এগিয়ে এসে রাইমার সামনে দাঁড়াতে রাইমা বলল
-এইতো কিছুক্ষণ আগেই। কেমন আছো?
-আই’আম টু গুড। তা তুমি আসবে জানতাম না তো!
-আসলে সকলকে ইনভাইটেশন দিতে এসেছি,
-ইনিভাইটেশন!!
-হ্যাঁ আমার ননদের মেয়ের বার্থডে সেই পারপাসেই
-অও,ইস আজ তো আমার এক পুরোনো ফ্রেন্ড এর ও বার্থডে পার্টি আছে, সেখানে যাওয়ার কথা বলে দিয়েছি নাহ তো তোমার বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ কিছুতেই মিস করতাম নাহ
শুরু হলো ন্যাকামি, প্রেমা দ্যা ঢং এর ঢংঢং দেখলে তুরার মেজাজ বিগড়ে যায়,একে তো আহানের হাত ধরায় তার ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ জমে আছে তার উপর এই আদিক্ষেতা। তাই ওর ওসব ন্যাকামো দেখলে মেজাজ তুঙ্গে উঠবে। চুপচাপ ব্যাগটা হাতে নিয়েই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসলো।
•••
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বসে আছে তুরা, সারা খাট ভর্তি জামা কাপড় দিয়ে। কোনটা ছেড়ে কোনটা পরবে বুঝে পাচ্ছে নাহ। এ দিয়ে চারটা জামা ট্রাই করে দেখল,কিন্তু কোনোটাই ভালো লাগছে নাহ
-ধুর! শুয়ে বসে খেয়ে খেয়ে মটরশুঁটি হয়ে গেছি যাই পরিনা কেনো টেপি লাগছে
একা একাই বলে মুখ গোমড়া করে বসল খাটের উপর, এদিকে আহান ও নেই, সেই কখন বেরিয়েছে এখনও আসার নাম নেই লোকটার। থাকলে একটু ড্রেস সিলেক্ট করতে যদি সাহায্য করত। পরক্ষণেই আবার তুরা বলে উঠলো
-হুহ,ওই গোমড়ামুখো ব’জ্জাত লোকটা কিনা ড্রেস সিলেকশনে হেল্প করবে। উনি তো পারবে শুধু লোকজনের সামনে আমায় হেনস্তা অপদস্থ করতে,আস্ত রাক্ষস একটা। মাঝে মধ্যে তো মন চাই..
-তোমার মন সবসময় ভুলভাল ই চাই!
চেনা সুপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে বকবক থামিয়ে তাকালো তুরা। আহান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে একটা প্যাকেট। তুরা ঘাড় উচিয়ে প্যাকেট টা দেখতে গেলেই আহান পেছনে লুকিয়ে নিলো
-কোথায় ছিলে এতক্ষণ, আর আপনার হাতে ওটা কি দেখি,লুকাচ্ছেন কেনো?
-কোথায় ছিলাম সেটা তোমার না জানলেও চলবে। আর আমার হাতে যাই থাক না কেনো তোমার কি, ইটস পারসোনাল
বলেই এগিয়ে এসে ঘরে ঢুকলো
-কিসের পারসোনাল? আমাকে একটু দেখান আমি কাওকে বলব নাহ?
-হোয়াট ননসেন্স, তোমাকে কেনো দেখাব? পারসোনাল মানে ব্যক্তিগত। কাওকে দেখানো যাবে নাহ
বলেই আলমারি খুলে প্যাকেট টা রেখে তোয়ালে হাতে নিয়ে বলল
-এখনও রেডি হওনি কেনো তুমি? পরে তো সং সাজতে তিন ঘন্টা লাগাবে।আমি কিন্তু কারো জন্য ওয়েট করতে পারব না বলে দিলাম।
-আপনাকে ওয়েট করতে হবে নাহ,আমি একাই যেতে পারব
-পকপক থামিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হও, বেশি পাকনামি করলে আজ একটা হাড় ও আস্ত রাখব না
বলেই ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো, তুরা আহানের যাওয়ার পানে চেয়ে দুবার মুখ ভেংচি দিয়ে আবার জামা কাপড় ঘাটাঘাটি করতে লাগল।বেশ কিছুক্ষণ পর ক্লান্ত হয়ে ধপ করে খাটের উপর বসতেই ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা লাল রঙের ব্র্যান্ডেড সপিং ব্যাগটার দিকে নজর গেলো।এটাই তো আহান এনেছিলো হাতে করে! খপ করে ব্যাগটা হাতে নিলো তুরা ভেতরে কি আছে দেখার জন্যে। সপিং ব্যাগের ভেতরে সাদা রঙের আরেকটা প্যাকেটে মোড়ানো জিনিসটা। ড্রেস মনে হচ্ছে! প্যাকেট টা খুলতেই তুরার চোখ মুখ জুড়িয়ে গেলো বেশ বড় সড় লম্বা একটা গাউন মতো। কালো রঙের জরজেট কাপড়ের উপর অল্প কিছু স্টোন বসানো ভীষণ সুন্দর জামাটা। এটা আহান এনেছে? এত সুন্দর জামাটা আহান কার জন্য আনলো? পরমুহূর্তেই আনন্দে নেচে উঠল তুরা, জামাটা দু’হাতে জড়িয়ে মিটমিটিয়ে বলল
-থাংকুউউ মাস্টার মশাইইই!!!
~
-এতক্ষণ লাগল তোমার আসতে?
ধমকে উঠে বলল আহান, পরক্ষণেই তুরার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো। কালো রঙের পাতলা গাউনটা তুরার শরীরের সাথে মিশে আছে, ঘাড়ের কাছের খোপা আর অল্প কিছু অর্নামেন্টস এর সাজে একদম মোহময়ী লাগছে তুরাকে, আহানকে হা করে চেয়ে থাকতে দেখেই তুরা বলল
-সরি আসলে ড্রেস টা পরতে একটু ঝামেলা তাই দেরি হয়ে গেলো। চলুন
বলে গাড়িতে উঠে বসল,আহান তুরার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। স্টার্ট করে গাড়িটা চলতে শুরু করলে তুরা জানালা দিয়ে মুখ বের করে রাতের পরিবেশ টা দেখতে লাগল। খোলা বাতাস আর ল্যাম্পপোস্টের আলোতে পরিবেশ টা দারুণ লাগছে!
-সুন্দর লাগছে
আহানের কণ্ঠে ভাবনাচ্যুত হলো তুরার। মুখ ঘুরিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে বলল
-হ্যাহ?
-নাথিং
-শুনেছি, সুন্দর বলেছেন
মুচকি হেসে বলল তুরা, আহান সে হাসির দিকে এক পলক চেয়ে বাকা হেসে স্টিয়ারিংয়ে হাত ঘোরাতে ঘোরাতে বলল
-হ্যাঁ ভীষণ সুন্দর, ড্রেসটা
হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেলো তুরার আহানের শেষোক্ত কথাটা শুনে। মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। আহান আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিলো।
কেমন অদ্ভুত লাগছে তুরার, বড়রা সকলে নিচে অথচ বয়সে ছোটরা সবাই উপরে পার্টি করছে। চৌধুরী বাড়িতে আসার পর তুরা চুপচাপ বসে আছে ফারাহ কে কোলে নিয়ে। মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি। আহান ও নেই আশেপাশে। ইনসাফ তো বাড়িতে নেই ই, আমেনা খাতুনের শরীর টা হঠাৎ ই খারাপ হওয়াই রুবি খাতুন ও আসতে পারেনি শেষ মুহুর্তে তাই বাধ্য হয়ে আহান আর তুরার একাই আসতে হয়েছে।
-তুরা,তুই এখানে একা কি করছিস, উপরে চল সবাই ওখানে?
বলেই হাত ধরে টেনে উঠালো রাইমা। তুরা কোনো রকম সামনে বাচ্চাটাকে ওর মায়ের কাছে দিতেই ওকে টেনে উপরে নিতে লাগল রাইমা
-আরে আপু আস্তে। এই জামাটা পরে আমি ঠিকমতো হাঁটতেও পারছিনা
নিজের হড়বড়ে স্বভাবে নিজেই বোকা হাসি দিলো রাইমা। তুরাকে নিয়ে উপরে আসতেই আবার কোথাই উধাও হয়ে গেলো রাইমা। একা একা এক কোণায় দাঁড়িয়ে রইলো তুরা। উফ এভাবে একা একা নিজেকে কেমন ভূতনি মনে হচ্ছে, এর চেয়ে ওই পেত্নী টা আসলেও ভালো হতো ওকে পচানো যেত।
-হেই সুইটি!!
আবারও সেই সুপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনেই তুরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেকি হেসে তাকালো। তুরার জবাবের আগেই সিফাত উচ্ছ্বসিত হেসে হাত বাড়িয়ে বলল
-হোয়াটস আপ সুইটি?!
দ্বিধাবোধ নিয়েই তুরা হাত এগিয়ে দিলে তুরার পরিবর্তে আরেকটি বলিষ্ঠ হাত বাড়িয়ে দিলো সিফাতের দিকে। ওর হাতটা ধরে বলল
-গুড, সি ইজ ভেরি গুড
-স্যার! আপনি?
-হ্যাঁ, কেনো আমায় এক্সপেক্ট করোনি?
আহানের বরাবরের মতোই গম্ভীর ভঙ্গিমার কথায় খানিকটা ভড়কে গেলো সিফাত,যেনো অস্বস্তিতে পরল ভীষণ। তবুও জড়তা সামলে বলল
-নাহ মানে
-আমি রাইমা মানে ইমানের ওয়াইফের ভাই এটা তো জানো?
কিঞ্চিৎ ঘাড় নাড়াল সিফাত সম্মতি সূচক। এবার আহান ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি টেনে তুরার কাঁধে এক হাত রেখে বলল
-সী ইজ মাই ওয়াইফ। মিসেস. ইরফান মাহমুদ আহান।
আহানের সহজ স্বীকারোক্তিতে সিফাত তুরা দুজনেই চমকিত হলো। তবে সিফাত যেনো একটু বেশিই ভড়কে গেলো। বিস্ফোরিত চাহনিতে চেয়ে আমতাআমতা করে বলল
-মানে? স্যার আপনি বিয়ে করেছেন? আর তুরা ম মানে উনি আপনার বউ??
-ইয়েস সি ইজ মাই ওয়াইফ। বিয়েটা সাডেনলি হয়েছে তো তাই এখনো জানানো হয়নি
জবাবে আরও একটা প্রশ্ন করারা আগেই সিফাতকে ইমান এসে ডেকে নিয়ে গেলো জরুরি কোনো দরকারে,বেচারা চোখ মুখ ভর্তি কৌতুহল আর একরাশ বিহ্বলতা নিয়ে চলে গেলো
-আপনি এমন কেনো করলেন?
আহান এখনো নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে আছে তুরার কাঁধে হাত রেখে, তুরা সরে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলে আহান দায়সারা ভাবে বলল
-কেমন করলাম?
-কাঁধে হাত দিয়েছেন কেনো
ক্রুদ্ধ চোখে বলে তুরা সরে গেলে আহান এগিয়ে এসে কোমড় ধরে নিজের সাথে ঘেষে দাঁড় করাল তুরাকে, বাকা হেসে বলল
-কেনো, হাসব্যান্ড আমি তোমার। কাঁধে,গলায়, পিঠে,কোমড়ে সব খানেই হাত দিতে পারি। আরও অনেক জাগায় ই দিতে পারি তবে..
-চুপ করুন,ছিহহ!
-কেনো কি হয়েছে বউউ!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
#Humu_♥