তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব- ৪১

0
1100

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৪১

সূর্য ডোবার সাথে সাথে ধরণী আলোকে গোগ্রাসে গিলে টেনে এনেছে কৃষ্ণাভ কুচকুচে পরিবেশ। আশপাশ টা ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ, গাছপালা সটান দাঁড়িয়ে দাম্ভিক্যের সহিত,এক চুল নড়াচড়ার উপস্থিতি নেই। ক্লান্ত সন্ধ্যার অবসরে জুতার থপথপ শব্দে ছুটছে সুপুরুষ, এলোমেলো চুলগুলো লেপ্টে আছে কপালে,তা থেকে চুইয়ে চুইয়ে ঘাম ঝরছে, ইস্ত্রি করা শার্টের ভাঁজ কুচকে ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে লেপ্টে আছে শরীরে

ক্লান্ত শরীরে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো, হাঁটু ভাজ করে বসে পরলো রাস্তার উপরেই। ফোস ফোস করে জোরে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস টানছে আর ছাড়ছে। ভার্সিটির আশেপাশে হসপিটালের দিকে, আর বাড়ি ফেরার পথের সব জাগায় খুঁজে খুঁজে পাগল হবার উপক্রম তবুও তুরা কোথাও নেই, পরপর তিনবার ঘুরেছে একই রাস্তায় তবুও তুরাকে পাইনি। বিরতিহীন ছুটায় শিরদাঁড়ার জুড়ে চিনচিনে ব্যথার আবির্ভাব হয়েছে, শিরা উপশিরায় টনটনে ঘাড় টা এলিয়ে দিলো গাড়ির সাথে। নিষ্প্রভ মলিন দৃষ্টিতে তাকালো আকাশের পানে৷ চাঁদটা আজ দেখা যাচ্ছে না, তারা গুলো লুকানো মেঘের আড়ালে। নিষ্প্রাণ দৃষ্টির অভ্যন্তরে ভেসে উঠছে তুরার খিলখিলিয়ে হাসার দৃশ্য টা।,বোকা বোকা চাহনি আর বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উলটে কেঁদে দেওয়া। আহানের আত্মচেতনের অজান্তেই গাড়িয়ে পরলো এক ফোঁটা পানি। এতটা অসহায় কখনও লাগেনি নিজেকে,এতটা বেচ্যান, অস্থির,উন্মাদনায় কখনোই জর্জরিত হয়নি মন মস্তিষ্ক। রোন্থন ম্লান কণ্ঠে বলল

-কোথায় তুমি তুরা, কোথায় আছো, কেমন আছো? কত খুঁজেছি তোমাকে,পাচ্ছি নাহ,কোথাও পাচ্ছিনা তোমাকে। একবার সাড়া দাও প্লিজ,তোমাকে কোথাও পাচ্ছিনা, একটা বার বলো তুমি কোথায়। তোমার গোমড়ামুখো ব’জ্জাত লোকটা তোমার অনুপস্থিতি আর এক লহমাও সহ্য করতে পারছে না তুরা। আহান পাচ্ছে না তোমাকে কোথাও পাচ্ছে না!

দাম্ভিকতায় ভরা শক্ত কণ্ঠস্বরটা যেনো হারিয়ে গেছে, ভরাট গলার দাপট নিমিষেই উবে গেছে, কথা গুলোও কেমন ভাঙা ভাঙা, স্থুল শোনাচ্ছে। কথার সাথেই দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো আহানের চোখ থেকে, ডান হাতের তর্জনী উঠিয়ে অশ্রুবিন্দু হাতে নিয়ে তাকালো নিমিষে, বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে, শূন্যতা বেদনার শূঁড় বুকটা এফোড় ওফোড় করে দিচ্ছে। হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিলো তপ্ত নেত্রধারা।
নাহ্ এভাবে বসে থাকলে চলবে না,খুঁজতে হবে। তুরার কিচ্ছু হয়নি ও ঠিক আছে, ওকে এক্ষুনি খুঁজে ফেলবে আহান বুকের ভেতর ফাল হয়ে ঢুকে পরা তিক্ত যন্ত্রণার অবসানের জন্যে হলেও তুরাকে চাই, এক্ষুনি লাগবে। তুরার কিচ্ছু হতে পারে না!

হুড়মুড়িয়ে উঠলো আহান, দুহাতের এলোমেলো স্পর্শে চোখের পানি মুছে, গাড়ির দরজা টা খুলতে যাবে তখনই ফোনের সিস্টেমেটিক টোন টা বেজে উঠলো। তীব্র অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু একটা ভেবে পকেট থেকে ফোনটা বের করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকেই চোখ মুখ চিকচিক করে উঠলো। ঘুটঘুটে অন্ধকারেও ফোনের স্ক্রিনের মৃদু আলোটাতে আহানের বিষন্নতা লেপ্টানো চেহারা জ্বলজ্বল করে উঠলো, তিন লাইনের ছোট মেসেজ টা দেখে প্রেরকের নাম নিয়ে মাথা না ঘামিয়েই গাড়িতে উঠে বসলো। মরুভূমির বুকে এক চিলতে পানির খোঁজ পাওয়া তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো চাঞ্চল্যে আর উচ্ছ্বাসে ভরা আখিযুগলে সামনের রাস্তায় তাকিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটিয়ে নিলো গাড়িটা।

একজোড়া নয়ম বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঝকঝকে টাইলসের ফ্লোরে, আশেপাশের পরিবেশ থেকে মন মস্তিষ্ক শ-শ মাইল দূরে কেবল নিচের দিকে তাকিয়ে অপলক দৃষ্টিতে অবলোকন করতে ব্যস্ত। চোখে মুখে পানি চিকচিক করছে, বুকের ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মতো ঝাপসা হয়ে আছে। হাত মুষ্টি করে খামচে ধরলো পরনের জামা,চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস ফেললো,আহানের মুখ খানা মনের ভেতর ভেসে উঠতেই চোখ দিয়ে টুপটাপ করে অশ্রু ঝরে পরলো, কাঁধের উপর একটা হাতের স্পর্শ পেয়েও তাকালো না তুরা, ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে

-কাঁদিস না মা, কিচ্ছু হয়নি তো। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শোকরানা উনি তোকে সহি সালামত রেখেছেন,ভাগ্যিস ইয়াজ তখন ওই পথে গেছিলো। না তো..

পুরোটা না বলেই চুপ করে গেলো তহমিনা, আজ যদি আল্লাহ সহায় না হয়ে মাহিদ তুরাকে না পেতো,কি হতো সেটা ভাবতেই বুকের ভেতর তোলপাড় উঠে গেলো। পাশবিক বিপদের মুখ থেকে বেঁচে আসায় ও অস্থিরতা কমেনি। একহাত তুরার মাথায় বুলিয়ে আরেক হাতে তসবিহ গুণে গুণে দুয়া পড়ে বিড়বিড়ালো।

-অন্তত গ্লাসের পানিটুকু খা বুড়ি, একটু বেটার লাগবে

স্থির কণ্ঠে বলল মাহিদ,তুরা এসে থেকে শুধুমাত্র অস্ফুটস্বরে দু তিনবার আহানের নাম করা বাদে একটা শব্দও করেনি,আর নাইবা এক ফোঁটা পানি পর্যন্ত গলাধঃকরণ করেছে। তহমিনা আর মাহিদ দুজনেই ব্যস্ত তুরাকে শান্তনা দেওয়ার,কিন্ত তুরা তো আগে থেকেই স্থির শান্ত,থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। মাহিদ এক হাত উঠিয়ে তুরার হাত ধরবে তখনই কলিং বেলের ধাতব শব্দ হতেই উচ্ছ্বসিত নেত্রে মাথা তুলে তাকালো, বসা থেকে উঠতে নিলেই কাধে হাত রেখে থামিয়ে দিলো তহমিনা, চোখের ইশারা করতেই মাহিদ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই চক্ষুগোচর হলো গম্ভীর পরিপাটি চেহারার বিধ্বস্ত অবস্থা টা।
আহান মাহিদকে দেখেও উপেক্ষা করে হন্তদন্ত হয়ে ঘরের ভেতর ঢুকতেই তুরার কান্নামিশ্রিত ব্যথাতুর মুখশ্রী দেখে ধক করে উঠলো বুকের গহীনে লুক্কায়িত জাগায়।
মন্থর গতিতে তুরার দিকে এগোতে লাগলো। তুরার অশ্রুভরা চোখের ঝাপসা ঝাপসা দৃষ্টি স্পষ্ট হতেই দৃশ্যমান হলো আহানের অজস্র ক্লান্তিতে ছেয়ে থাকা মুখ, চোখের মণি শান্ত স্থবির হলো স্বামী নামক মানুষটার মুখ খানা দেখে।
ত্রস্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো,কোনো রূপ চিন্তাভাবনা ছাড়াই ছুটে গিয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পরল আহানের বুকে,পিঠ খামচে ধরে কান্না ভাঙা গলায় বলল

-আ আমাকে, ও ওরা..

পুরোটা শেষ না করেই হাউমাউ করে কেঁদে দিলো, বুকের ভেতর প্রখর চিনচিনে ব্যথা করে উঠলো আহানের।তুরার কম্পিত অস্পষ্ট কণ্ঠ আহানের মন গহীনে সূচালো তীরের মতো গেঁথে গেলো। কাঁপা কাঁপা হাত উঠিয়ে পরম আবেশে রাখলো তুরার মাথায়। খানিক সময় নিয়ে তুরাকে শান্ত করে দুবাহু ধরে ছাড়িয়ে নিয়ে সোফাতে বসালো। সামনে রাখা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে তুরাকে পানি খাইয়ে দিলো।
তহমিনা আর মাহিদ তাকিয়ে আছে শুধু নিষ্পলক।কিছুক্ষণ আগ অব্দিও মেয়েটা জমে পাথর হয়ে ছিলো,আর এখন কান্নার জোয়ারে ভেঙে পরছে।

-তুরা? উহু কান্না করে না,কিচ্ছু হয়নি। দেখি এদিকে তাকাও

বলে তুরার মুখটা দুহাতের আঁজলে নিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে এক হাতে তুরাকে আগলে ধরলো।
তহমিহা বেগম এবার গলা খাকারি দিয়ে বলল

-তোমার সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিলো তবে সেটা এমন অপ্রিতিকর পরিস্থিতিতে হবে ভাবতে পারিনি

ভদ্রমহিলার সাবলীল স্বরে কথায় আহান এবার ধাতস্থ হয়ে তাকালো সামনে দাঁড়ানো মাঝ বয়স্ক মহিলা আর তার পাশেই দাঁড়ানো ছেলেটির পানে যাকে যে আগে থেকেই চেনে। তবে আজকের চেনা টা অন্যরকম। সম্পর্ক, স্থান কাল পুরোটাই ভিন্ন।

-তুরাকে কোথায় পেয়েছেন?

জড়তা ছাড়াই প্রশ্ন করলো আহান। মাহিদ চোখের চশমা টা ঠিক করে এগিয়ে এসে বলল

-সন্ধ্যার দিকে আমি বাড়িতে ফিরছিলাম। তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য শর্টকাট রাস্তায় গাড়ি ঢুকালে গাড়ির সামনে দিয়েই কাওকে দৌড়ে আসতে দেখে কৌতুহলবশত থামিয়ে বাইরে আসতেই তুরাকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছিলাম তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছি ওকে ধাওয়া করা পেছনের দুটো ছেলেদের দেখে তার চেয়ে বেশি ভয় পেয়েছি। সেসময়ে যদি আমি ওই রাস্তায় না আসতাম..

বলেই চুপ করে গেলো, লোমকূপ তিরতির করে উঠলো না হওয়া পাশবিক মুসিবতের কথা ভেবে। ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো বুকের মাঝে লেপ্টে থাকা তুরার পানে। এক হাতে আরও শক্ত করে ঝপটে আগলে নিলো বুকের মাঝে।

-এসব থাক না মাহিদ,যা হওয়ার হয়ে গেছে রবের কছে শুকরিয়া যে আমার মেয়েটা সহি সালামত আছে। এটাই অনেক।

প্রত্যুত্তরে কি বলবে ভেবে পেলো না আহান।তুরার নিষ্পাপ মুখে চেয়ে এখনো বুকের ভেতর দিয়ে ঝড় বইছে। ঢোক গিলে শান্ত করলো বেচ্যাইন হওয়া ভেতরাঞ্চল, ভরাট গলায় বলল

-বিকেল থেকে খুঁজে বেরাচ্ছি ওকে। ভার্সিটি হসপিটাল বাড়ি যাওয়ার রাস্তা কোনো টা বাদ রাখিনি। এভাবে অফসাইডে..

বলেই থামলো। এ ব্যাপারে আর একটা শব্দও মুখ থেকে বেরচ্ছে না। ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল

-আমি তুরাকে নিয়ে ফিরতে চাই আন্টি!

তহমিনা কখন থেকে কিছু বলার জন্যেই পায়তারা করছিলো। আহানের কথার পৃষ্ঠে উনি সাফ গলায় বললেন

-আসলে তোমাকে আমার কিছু বলার আছে আহান। তুরা আমার অনেক আদরের, মূলত ওর জন্যেই দেশে ফিরেছি। মেয়েটা আমার অনেক দিন দূরে ছিলো,তাই আমি চাই তুরাকে কিছুদিন আমার কাছে রাখতে

খানিক থেমে আবারও বলল

-এরকম একটা ঘটনার সাপেক্ষে ও যখন বাড়িতে এসেছে, আর রাত ও অনেক হয়েছে আমি চাইনা ও আজ ফিরুক। আর তোমার মা আর দিদুনও তো বাড়িতে নেই। এসময় তুরার একটু সাপোর্ট আর মমতার প্রয়োজন। তাই আমি স্পষ্টত তুরাকে আমার কাছে কিছুদিন রাখতে চাই। আশা করছি এতে তোমার কোনো আপত্তি নেই?

তহমিনার কথায় তুরা ঘাড় তুলে সোজা হয়ে বসলো, মামনীর দিকে তাকিয়েই ফিরে চাইলো আহানের চেহারায়। তুরার চোখে দুদন্ড দৃষ্টি স্থির রেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো আহান। কিছু একটা ভেবে মুখাবয়ব গম্ভীর স্থির করলো। ভারি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

-ঠিকাছে। তুরা কিছুদিন থাকুক তবে এখানে

চোখ ছলছল করে উঠলো তুরার, মন্থর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আহানের চেহারা পানে। তার মাঝেই মাহিদ বলল

-রাত ও তো হয়ে গেছে, আজকে এখানেই থেকে যান স্যার

আহান ঠোঁট এলালো অল্প বিস্তর,হাসলো কি না তা স্পষ্ট নয়। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল

-স্যার শব্দ টা ভার্সিটির বাইরে ব্যবহার না করলেই খুশি হবো।

সৌজন্য সুলভ হাসলো মাহিদ তবে প্রত্যুত্তর করলো নাহ, তহমিনা এগিয়ে আসলো আহানের কাছে, সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-মাহিদ ঠিক ই বলেছে আহান, এতো রাত করে তুমি ফিরোনা বাড়িতে

-সমস্যা নেই আন্টি, আমি কাল এসে ওকে দেখে যাবো

-তবুও এতো রাত করে আজ আর ফিরো না বাবা, আজ প্রথম এসেছ তুমি আমার বাড়িতে

তহমিনার কথার মাঝেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো তুরার দিকে। চাইলো না তুরা আহানের মুখে,মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলল

-উনাকে যেতে দাও মামনী,লাগবে না থাকা

বলে বসা থেকে উঠে গটগট করে ঘরের দিকে গেলো। সেদিকে চেয়ে আহান ঠোঁট কামড়ে হাসলো, শুষ্ক ঠোঁটের মৃদু হাসিটা এবার স্পষ্ট দৃশ্যমান হলো। হোক নিষ্প্রাণ অথবা ক্লান্তি মিশ্রিত তবে মুখ জুড়ে একটা প্রশান্তি ছড়িয়ে আছে, বিষাদের ঘন কালো মেঘ যেনো অবিরাম ধারায় ধুয়ে মুছে গেছে, হোক অভিমান বা রাগ। চোখের সামনে থাকলে সব সহ্য করে নিবে সে!

~

ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে হাতে নিয়ে চোখ মুখ মুছতে লাগলে দরজার দিকে চোখ গেলে হাত থেমে গেলো। থপ করে তোয়ালে টা রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।

আহান হাসলো সামান্য, দরজার ছিটকিনি তুলে দিয়ে এগিয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়ালো একদম তুরার পেছনে। তুরা সেটা লক্ষ্য করলেও অগ্রাহ্য করলো পুরোটা। ভ্যাপসা গরমে থমথমে হয়ে থাকা আকাশটা এখন মেঘের বজ্রপাতের দাপটে ধরণী কাঁপিয়ে তুলছে। থেকে থেকে বিদ্যুতের ঝলকানি আর বেপরোয়া বাতাসের সহিত সঙ্গ দিতে ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামলো। ঝরঝরে বাতাসের এলোমেলো দাপটে বৃষ্টির পানি উপছে ছিটকে পরছে বারান্দার ভেতরে। চোখে মুখে পানির ঝাপটাই অনেকটাই ভিজে গেলো তুরা,তবুও স্থির দাঁড়িয়ে রইলো বুকে দুহাত গুঁজে, নিরবতার লগ্ন চ্যুত করে এবার শোনা গেলো আহানের শান্ত কণ্ঠস্বর

-ভিজে যাচ্ছো তুমি,ঘরে এসো

-যাবনা আমি,আপনি যান

ঝট করে বলে ফেলল তুরা,শুনবে না কথা। এখানে কেনো এসেছে। যাক না চলে যাক থাকতে বলেছে কে। ক্ষুদ্র সময় পার হলো,আহানের সাড়া শব্দ নেই। তুরাস সংশয় হলো,সে বলল আর আহাম ভালো ছেলের মতো চলে গেলো এমন তো হওয়ার কথা না! কপাল কুচকে পেছনে তাকাতেই ভড়কে গেলো, আহান ঠাই দাঁড়িয়ে, দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বুকে দুহাত গুঁজে, তুরা মুখটা ছোট করে বলল

-আ আপনি যাননি কেনো?

এগিয়ে এলো আহান,দূরত্ব ঘুচিয়ে গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। শান্ত আখিযুগল আটকে গেলো তুরার ভেজা মুখমন্ডলে। গোলগাল মুখে বিন্দু বিন্দু স্নিগ্ধতা জমে আছে যেনো। নিষ্পলক চেয়ে থেকেই ঠোঁট নাড়িয়ে নরম গলায় বলল

-ঘরে এসো তুরা, শরীর ভিজে যাচ্ছে। অসুস্থ হয়ে যাবে

মুখে না বলতে চাইলেও অদ্ভুত এক জড়তা ঘিরে ধরলো তুরাকে। ঠান্ডা হিম অনলে শরীরে ঝাকুনি লাগছে বারংবার। তার উপর আহানের এতটা নৈকট্য, চোখ নামিয়ে কোনো মতে জবাব দিলো

-আরেকটু থাকি

কিছুক্ষণ চোখ ছোট করে তাকিয়ে থেকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো তুরাকে। বিছানায় এনে শুইয়ে ওর উপর ভর করে থেকে আঙুল তুলে তুরার মুখের ছোট ছোট পানিকণা মুছে দিতে দিতে বলল

-তীব্র বর্ষণের বাড়িধারার অনুমতি নেই তোমাকে ভেজানোর, জমিয়ে রাখো। সঠিক সময় আসুক, ভেজাবো তোমায়, সিক্ত করবো স্নিগ্ধ অনলের অন্যরকম বৃষ্টিতে। ততদিনে জমা থাক? এভাবে আমার সামনে আর বৃষ্টিতে ভিজে নিয়ন্ত্রণহীন করে দিও নাহ

কণ্ঠনালী ধরে এলো তুরার, অনুভূতির প্রখরত্ব দিগুণ হলো। হুট করেই আদরের আহ্লাদী হয়ে আহানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। কান্নামিশ্রিত গলায় বলল

-আমি আপনাকে অনেক ডেকেছি, কেনো আসেননি আপনি। আমার খুব ভয় করছিলো। ওরা খুব খারাপ,যদি একবার আমাকে ধরতে পারত..

-হুসস,ওসব আর একটুও নাহ

বলেই তুরাকে ঝাপটে ধরে নিজের স্থান পরিবর্তন করলো। বুকের উপর তুরার ছোট শরীর টা চেপে ধরে আদর মিশ্রিত স্বরে বলল

-এখন আছি তো, কিচ্ছু হয়নি তোমার আর হবেও না।

টলমল চোখে আহানের দিকে তাকালেই গাল বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো। আহান চোখের জল মুছে দিয়ে ওষ্ঠপরশ বুলিয়ে দিলো তুরার কম্পিত অক্ষিযুগলে। তড়িৎ উথাল পাথাল ঢেউ শুরু হলো তুরার সমস্ত কায়ায়। দু’হাতের বন্ধন আরও শক্ত করলো। আহান দুর্বোধ্য হাসলো বুকের মাঝেই চেপে ধরে রাখলো নিজ অর্ধাঙ্গিনীকে
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#Humu_♥️

#হীডিংঃ অসুস্থতার দরুন লিখা এলোমেলো হয়েছে,রিচেইক ও করা হয়নি। ভুল ত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here