তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব – ৪৬

0
1128

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব – ৪৬

মুখ ভেটকিয়ে গাড়ির মধ্যে বসে আছে তুরা, খানিক বাদে বাদে আহানের দিকে অগ্নিশর্মা হয়ে তাকাচ্ছে। বাসায় ফেরার নূন্যতম ইচ্ছে ছিলো নাহ,তাও আবার এই উগান্ডার সাথে, তুরা তো রেগে আছে। এই লোকটার থেকে দূরে দূরে থাকতে চেয়েছিলো। এখন দূরে থাকা তো দূর এই কুম্ভকর্ণটার সাথেই থাকতে হবে। বাড়িতেও তো কেও নেই, অন্যঘরে গিয়ে যে থাকবে তুরার তো আবার ভুতের ভয়! উফ কি একটা জ্বালা…
কিন্তু আহান সম্পূর্ণ মনোযোগী গাড়ি চালানোতে,তুরা হাজার বার বলা সত্ত্বেও নিয়ে এসেছে নিজের সাথে,সে তার কথায় অনড়। তুরার মেজাজ তুঙ্গে চড়ে আছে,এই লোকটাকে একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত। ভালোবাসার বেলায় নেই তাহলে এমন হম্বিতম্বি করা লাগে কেনো সবসময়।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে আটটা প্রায়,তুরার মেজাজ তখনও আকাশচুম্বী। গাড়ি থেকে নেমে ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে গেলো। আহান গ্যারাজে গাড়িটা রেখে বাড়ির দরজার সামনে আসলেই দেখলো তুরা মুখ লটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিচের ঠোঁটটা চেপে ধরে হাসলো আহান,পকেট থেকে চাবি বের করে তালা টা খুলে দিতেই তুরা আবারও হাঁটা ধরলো।
কেমন ভ্যাপসা গরম পরেছে, আবহাওয়া টাও থমথমে গাছ গুলো স্থির সটান দাঁড়িয়ে, পাতাগুলোর কোনো নড়চড় নেই। ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো তুরা। ধীরে সুস্থে খানিক বসে থেকে উঠে গেলো সিড়ি বেয়ে। রাইমার ঘরের সামনে দাঁড়িয়েই থ মেরে গেলো। একি ঘরটাতে তালা দেওয়া কেনো? গরমে ঘেমে সারা শরীর জবজবে হয়ে আছে, ভেবেছিলো লম্বা একটা শাওয়ার নিবে।মেজাজ টা আরও চড়াও হয়ে গেলো, রাগান্বিত হয়ে বড় বড় পা ফেলে আহানের ঘরে গেলো।
বিছানার উপর গায়ের শার্ট টা খুলে রাখা ওয়াশরুমের ভেতর থেকে পানির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তুরা এগিয়ে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজায় ধুপধাপ ধাক্কাতে লাগলো

-হোয়াট রাবিশ,,দরজা ভেঙে ফেলবে নাকি ষ্টুপিড?

আহান চেঁচিয়ে বলল। তুরা মাজায় হাত দিয়ে কটমট করে বলল

-রাইমা আপুর ঘরে তালা লাগানো কেনো, যাওয়ার সময় ও তো ছিলো না এখন তালা লাগলো কিভাবে

-তো সেটা আমি কি করে বলবো,এখান থেকে সরো আমাকে গোসল করতে দাও

তুরা কিছুক্ষণ পায়চারি করলো। আবারও ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কাধাক্কি করে বলল

-আমাকে চাবি দিন,আমি ও ঘরেই থাকবো

কিন্তু ভেতর থেকে কোনো প্রত্যুত্তর এলো না,তুরা আহানের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ভ্রু কুচকালো। ‘কি ব্যাপার,লোকটা লোকটার কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না কেনো? ফিট লেগে গেলো নাকি?’ কিছুক্ষণ ধরে কান পেতে থেকেও কোনো শব্দ শুনতে পেলো নাহ দেখে আবারও দরজায় কি’ল ঘু’ষি বসিয়ে বলল

-আপনি কথা বলছেন না কেনো? কি হয়েছে, পরে টরে গেলেন নাকি? তাহলে কিন্তু আমার কাছে সাহায্য চাইবেন নাহ,আপনার মতো সত্তর কেজিকে আমি তুলতে পারবো না বলে দিলাম। কি হলো কথা বলছেন না কেনো আজব,অকালে আমাকে বিধবা বানানোর ইচ্ছে আছে নাকি..

বাকিটা বলার আগেই ধড়াম করে দরজা টা খুলে গেলো। তুরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওকে এক টানে ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো আহান, সাবানের পানিতে পিছলে পরতে নিলে এক হাতে কোমর ঝাপটে ধরে আহান নিজের ভেজা গায়ের সাথে চেপে ধরলো তুরাকে।
আকস্মিক ঘটনায় তুরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আশপাশে তাকিয়ে নিজের অবস্থানটা উপলব্ধি করে ধাতস্থ হতে মিনিট খানেক লেগে গেলো। কিন্তু তার চেয়েও বেশি অপ্রস্তুত হলো আহানকে এই অবস্থায় দেখে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল

-ইয়া খোদা,ছি ছি। এমন বেহায়া পুরুষ আমি জীবনে দুটো দেখিনি, এভাবে উদাম হয়ে আমার সামনে এসেছেন কেনো। ছাড়ুন আমাকে ভিজে যাচ্ছি আমি

বাহুডোর আলগা হওয়ার বদলে আরও দৃঢ় হলো। শক্তপোক্ত হাতের বন্ধন তুরাকে ধরেই এক পা এক পা করে এগিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করালো।
এক হাতে কোমর ঝাপটে অন্যহাতে শাওয়ার টা অন করে দিতেই ঝুমঝুমিয়ে পানির প্রবাহে ভিজে গেলো তুরার সারা শরীর নিমিষেই,,ধাক্কা দিয়ে সরে আসতে নিলে আহান দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো তুরাকে। পানির বিন্দুকণা মাথার চুল থেকে টপকে মুখে এবং অধর ছুঁয়ে গড়িয়ে পরছে। অনিমেষ তাকিয়ে থাকলো আহান তুরার কম্পমান অধর যুগলের দিকে,ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি তুলে ঘষে দিলো তুরার নরম পাপড়ির ন্যায় ঠোঁট দুটো। বিদ্যুতের ঝলকানির মতো কেঁপে উঠলো তুরা,এতক্ষণের ভ্যাপসা গরম কর্পুড়ের মতো উবে গেছে, তার বদলে একরাশ হীম শীতল হাওয়া স্থান করে নিয়েছে, যা আহানের স্পর্শকে সঙ্গ দিয়ে ঝক্কি দিয়ে কাঁপিয়ে তুলছে তুরার সারা শরীর।
এক হাত তুলে আহানের বুকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিতে গেলো তুরা, বিনিময়ে আহান ওর ওই হাতটাও চেপে ধরলো, এখন তুরা অসহায়। দু’হাত দুটো বলিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ। এক চুল নড়ার শক্তিরাও অপারগ।
কোনো রকম কণ্ঠনালী ঠেলে এলোমেলো শব্দগুচ্ছে বলল

-সরে যান প্লিজ

-আমার এতটুকু স্পর্শ সামলাতে পারো নাহ, অথচ আমাকেই বিরক্ত করতে আসো

তুরা এদিক ওদিক অপ্রতিভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, আমতা-আমতা করে বলল

-আমি রাইমা আপুর ঘরে যাবো।

-একদম নাহ, একচুল অবাধ্য হলে আমি কিন্তু সীমালঙ্ঘন করে ফেলবো

বলেই টাওয়াল টা হাতে নিয়ে চুল মুছতে মুছতে ভেজা গায়েই বেরিয়ে গেলো আহান। আহান বেরতেই ধপ করে দরজা টা লাগিয়ে দিলো তুরা। বুকের বা পাশে হাত রেখে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো।
কিছুতেই স্থির হতে পারছে না। আহানের প্রতিটি স্পর্শ আগুন জ্বা’লিয়ে দেয় তুরার সমস্ত বদনে। ওমন দৃঢ় পুরুষালি স্পর্শের প্রখরতা একদম সইতে পারেনা তুরা একেবারেই নাহ।
আরও কিছুক্ষণ পানিতে ভিজে শাওয়ার টা অফ করলো। কিন্তু বিপত্তি তো এখানে ঘটলো!
পরনের শাড়ি তো পুরোপুরি ভিজে গেছে৷ আর আসার সময় জামাকাপড় ও তো আনেনি। এখন সে পরবে কি? এ অবস্থায় বাইরেও তো যাওয়া যাবে না! দ্বিধাদ্বন্দ্বিত হতে কিছুক্ষণ থ দাঁড়িয়ে থেকে চোখ গেলো পাশেই হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখা আহানের কালো রঙের শার্টটার দিকে।
সকালে তো আহান ভার্সিটি থেকে সোজা এখানে এনেছে, জামা কাপড় গুলো তো মামনীর বাড়িতেই রয়েছে এখনো, আর বাকি কিছু যা জামা ছিলো তাও রাইমার ঘরে এখন সে কি পরবে? সারা দিন দুনিয়া ভেবেও তুরা কোনো সমাধান না পেলে শেষ রক্ষা হিসেবে আহানের কালো রঙের শার্ট টাই পরে নিলো উপয়ান্তর হীন হয়ে।
পঁচিশ মিনিট পর তুরা বের হলো। দরজা টা খুলে ঘাড় বের করে দেখলো আহান ঘরে নেই, এই সুযোগে বেরিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। শার্টটা যে এতো ঢিলা হবে সে আগে বুঝেনি,
কাঁধ বেয়ে নেমে যাচ্ছে গলাটা, দৈর্ঘ্যেও হাটুর উপর পর্যন্ত। ‘ইস লোকটা মানুষ নাকি তালগাছ’ একা একাই বিড়বিড়ালো তুরা। এখন তার কোনো উপায়ও নেই। একেই বলে কপাল যখন খারাপ হয়,সব দিক দিয়েই হয়। কই ভেবেছিলো আহানকে এড়িয়ে চলবে,ওর থেকে দূরে থাকবে। তা না এখন ওর সাথে ওর ঘরে ওর ই জামাকাপড় পরে থাকতে হচ্ছে।
দু’হাতে পরনের শার্ট টা আঁকড়ে ধরলো। ধপ করে বিছানায় উঠে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।
বেশ কিছুক্ষণ বাদে আহান ঘরে ঢুকলো তুরা তখন স্থির খাটে বসে, আহানকে ঢুকতে দেখেই হুড়মুড়িয়ে কাথাটা টেনে ধরলো গায়ে। তুরাকে ভীষণ অপ্রস্তুত চেহারাতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো, তুরা বারবার এক হাত দিয়ে শার্টের গলা টা টেনে তুলছে। আহান তুরার লজ্জা অস্থিরতা আরও কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিয়ে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো বুকে হাত গুঁজে। তুরা আবারও চাদর টেনে তাকালো আহানের দিকে,মিনমিনিয়ে বলল

-ওই ঘরের দরজা টা খুলে দিন না

-নেভার এভার

মৃদু ঠোঁট নাড়িয়ে উত্তর দিলো আহান৷ এখনো ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ালে। অবাধ্য চোখের বিচরণ তুরার সারা শরীরে। তুরা আরও জড়সড় হয়ে বসলো। আহান বুক থেকে হাত নামিয়ে দরজার দিকে গেলো, তুরার চোখে মুখে খুশিক ঝিলিক দেখা গেলো,নিশ্চয় রাইমার ঘর খুলে দেবে?
কিন্তু তুরার সমস্ত চিন্তা ভাবনায় জল ঢেলে আহান দরজা লাগিয়ে এসে বসলো তুরার পাশে। বিছানার হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে ফোন হাতে নিলো। তুরা গুটিসুটি মেরে বসে আছে আহানের দিকে না তাকিয়েই,খানিক বাদে আড়চোখে আহানের ফোনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো কয়েকজনের হাস্যজ্বল চেহারার ছবি। আহান সঙ্গে সঙ্গেই সরিয়ে দিয়ে আবারও কিছু একটা টাইপিং করতে ব্যস্ত হলেই তুরা খপ করে আহানের হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে দেখতে গেলো কিন্তু হাতের চাপে ফোনটা আবারও লক হয়ে গেছে,
আহান বিস্মিত হয়ে কপাল কুচকে তুরার দিকে তাকালেই দেখলো ও ফুসতে ফুসতে তাকিয়ে আছে আহানের দিকে,তুরার এহেন অভিব্যক্তি দেখে আহান ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করলো

-কি হলো ফোনটা ছিনিয়ে নিলে কেনো?

-ওটা কিসের ছবি ছিলো হ্যাঁ?কি মনে করেন আমি কিচ্ছু দেখিনি? আমি স্পষ্ট দেখেছি আপনি দুটো ধিঙ্গি মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে ছবি তুলেছেন,আমি দেখতে গেলেই সরিয়ে দিলেন

আহান ললাটে ভাঁজ ফেলে তুরার দিকে তাকালো। ফোনে ইমেইল গুলো চেক করছিলো। হুট করে টাচ লেগে গ্যালারি অন হলেই ওদের ফ্রেন্ডস দের একটা গ্রুপ ফটো সামনে এসেছিলো। সেটা সরিয়েই আবারও ইমেইল গুলোর রিপ্লাই দিচ্ছিলো আহান। এতে এতো ক্ষেপে গেলো কেনো।

-তুরা তুমি ভুল বুঝছো? ব্যাপার টা তেমন না

-তেমন না তো কি হ্যাঁ, আপনি কেনো মেয়েদের সাথে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন,ঘরে বউ রেখে আপনি এসবই করে বেড়ান তাই তো? তাই তো আমাকে ভালোবাসেন না,এ্যটেনশন ও দেন না। আপনি সত্যিই একটা চরিত্র হীন,অসভ্য,বেহায়া লোক

তুরা হটকারিতায় চাদর সরিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আহানের সামনে। আহান তুরার পুরো কথাটা নিঃশব্দে শুনে ওর হাত থেকে এক টানে ফোন কেড়ে নিলো। ফোনটা আনলক করে ছবিটা বের করে ধরলো তুরার সামনে। তুরা ছবিটার কিছুক্ষণ তাকিয়ে হুট করে চুপসে গেলো।
ছবিটা নিউইয়র্কের সেই ভার্সিটি থেকে তোলা,সকলের পরনে একই রকম এপ্রোন টাইপ পোশাক। আর মেয়েদের পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা আহান নয়,ভুল দেখেছিলো সে।
ছবিটার থেকে চোখ তুলে আহানের দিকে তাকালো তুরা,
তীক্ষ্ণ সূক্ষ্ম চোখের তেজী চাহনিতে তাকিয়ে আছে আহান। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে অত্যাধিক রুষ্ঠ তুরার এহেন আচারণে।
তুরা এবার নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে মিইয়ে গেলো। কিন্তু আহানের রাশভারি চাহনি অবস্থানান্তরিত হয়ে কেমন একটা স্থির, নিষ্পলক ঘোর লাগা মতো লাগছে।
ভ্রুকুটি করে তুরা আহানের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের দিকে তাকালে থ হয়ে গেলো, সমস্ত বদন শরমে রক্তাভ হয়ে গেলো। মুহুর্তেই লালের প্রলেপ পরলো ফর্সা গালে। চাদর টা হুড়মুড়িয়ে টেনে গায়ে জড়ালো।
রেগে গিয়ে ওঠে ঝগড়া করতে গিয়ে কখন গলা বেয়ে শার্টের হাতা টা নেমে গেছে খেয়ালই করেনি। আহান ফোনটা সাইডে রেখে একটানে কাঁথা টা সরিয়ে দিলো কোমরে হাত চেপে টান দিয়ে তুরাকে কোলের উপর বসালো, তুরা চিকচিক গলা চোখে মুখে আহানের দিকে তাকিয়ে আবারও ঘাড় নামিয়ে নিলে আহান বলল

-কি হয়েছে তোমার, এমন কেনো করছো?

শান্ত নির্মল কন্ঠস্বর আহানের। তুরার হৃদপিণ্ডটা থেকে থেকে ঝিলিক দিয়ে উঠছে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না আমতাআমতা করে কিছু বলবে তার আগেই আহান ভরাট উত্তপ্ত কণ্ঠে বলল

-তুরা? আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরি?

নিরুত্তর হতবাক তুরা,আহান তুরার জবাবের অপেক্ষা না করেই দুহাতের বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনীতে আবদ্ধ করে নিলো, মুখটা এগিয়ে নিলো তুরার গালের দিকে।
খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শ ছুঁয়ে গেলো তুরার নরম পেলব গাল দুটোই, তাৎক্ষণিক তুরার চিকন আঙুল গুলো খামচে ধরলো আহানের পরনের টি-শার্ট।, আহান মৃদু হাসলো। কোমরের বাধন কঠিন হতে কঠিনতর করে মিশিয়ে নিলো চিকন দেহখানি। তুরার কাঁধ বেয়ে নেমে পরা শার্টের ফাঁকে মুখ ডুবালো। ঝক্কি দিয়ে কাঁপিয়ে তুললো তুরার সারা কায়া! অত্যাধিক মাত্রার কম্পনে মৃদু আওয়াজ করলো। মুখ তুলে তাকায় আহান, নেত্রে ভাসে রক্তাভ চেহারা,নীমিলিত আঁখিপল্লব। কোমর থেকে মন্থর গতিতে বৃদ্ধাঙ্গুলি ছুঁয়ে দিলো তুরার চিকন,সরু, নরম ওষ্ঠাধর।
তুরা সামলে উঠতে পারেনা, কি ভয়ংকর অনুভূতি!কতখানি গভীর, নির্মল। অন্তঃস্থলে ঝড় উঠেছে, প্রবল ঝড়ে চুরমার হচ্ছে সকল সংযম আত্মগড়িমা। হেসে উঠলো আহান,পুরু অধর ছড়িয়ে বলল

-কিসের ভালোবাসা চাও বলোতো? কোন অধিকারে তোমার মাঝে বারংবার বিলীন হয়ে যায় বোঝো না? অহর্নিশি তোমার নামের বাধ ভাঙা অনুভূতির প্রবলতা জোয়ারের স্রোতধ্বনি শুনতে পাওনা? তোমায় ঘিরে মাতাল করা ওঠাপড়া আবেগ,মায়া,তৎপরতা আমাকে বেহায়া অসভ্য উপাধি দেয় কেনো বোঝো না? কেনো বোঝো না নিঃসাড়কালের মতো তোমার নামের অনুভূতি আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে, আর কতভাবে বোঝাবো বলো তো,,

কথার মাঝে কিঞ্চিৎ তফাত টা হয়তো সইতে পারলো না আহান,তুরার হাতটা নিয়ে বুকের বা পাশে চেপে ধরলো, আবারও বলল

-এইখানটার ছন্দময় ক্রীয়াটা কার নামে এলোপাথাড়ি তোলপাড় তুলেছে বোঝো না?কেনো বুঝছো না তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও এইখানটাতে শান্তি মিলছে না,তুমি ছাড়া বেখাপ্পা, বেপরোয়া, অস্তিত্বহীন লাগে! এমন প্রেমে মাতাল করে কোথায় পালাতে চাও

তুরা থমকে গেলো,স্তব্ধ হলো। অনিয়ন্ত্রিত হলো হৃদস্পন্দন। আহানের বুকে উপস্থিত হাতটা বারবার কেঁপে উঠছে। হৃদয়জুড়ে কেমন খুশির জোয়ার বয়ে গেলো।
এটাই তো,এটাই তো শুনতে মরিয়া হয়েছিলো! আহানের মুখ থেকে ভালোবাসার দুটো কথা শোনার জন্যেই তো এতটা অস্থির হয়ে উঠেছিলো, লজ্জায় জবাব দিলো না তুরা। আহান আবারও ওর মুখটা এনে তুরার গলা ছুঁইয়ে দেয় অতীব নেশাক্ত প্রগাঢ় গলায় বলে

-তোমার সমস্ত অনুভূতি, প্রগাঢ়তা, ভালোবাসা স্পর্শ সবটুকু আমি চাই,তোমার মাঝে তুমি আমি দুজনে বিলীন হতে চাই, দেবে সেই অনুমতি? এক জীবনের জন্য আমার হবে তুরা?

কি নিঃসংকোচ মায়াময় আবেদন!এতো হৃদয় নিংড়ানো কেনো লাগছে কথাগুলো, কি করে জবাব দেবে তুরা? আহান প্রচন্ড গাঢ় স্পর্শে হাত গলিয়ে দিলো তুরার শার্টের ভেতর। বুকের মাঝখানটায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। পরপর তিনবার ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিয়ে বলল

-এতটা লজ্জা পেওনা লজ্জাবতী, মুখে বলতে না পারলে অন্যভাবে বুঝিয়ে দাও তোমারও সম্মতি,,অপেক্ষার প্রহর আর বাড়িও নাহ,এ যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে নাহ!

এই ঘোর ধরানো নেশাক্ত কণ্ঠস্বর আর শুনতে চাইনা তুরা। অধরযুগলের কম্পন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়, পায়ের তালুতে প্রচন্ড জ্বলন অনুভূত হচ্ছে। অসাড় হয়ে আসা তপ্ত হাতটার কম্পমান স্পর্শ রাখলো আহানের ঘাড়ের পেছনে। রক্তিম গালটা এগিয়ে নিয়ে উষ্ণ তপ্ত অধরযুগল ছোঁয়ালো আহানের গলার অ্যাডাম আপেল ঠিক উপরে,তার স্থায়িত্ব হলো কয়েক সেকেন্ড। সরে এলো তড়িৎ গতিতে।
রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে গেলো শিহরণ আর পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে প্রিয় মানুষটার হাতের বিচরণ। নিস্তব্ধতায় প্রেয়সীর ছোট্ট সাড়াতেই আহান খুঁজে পেলো সম্মতি।
এক ঝটকায় আহান তুরাকে শুইয়ে দিয়ে ওর উপরে উঠলো। এক হাত বাড়িয়ে লাইটটা বন্ধ করে তাকালো তুরার দিকে,অন্ধকারেই দেখে নিলো লালাভ প্রেলেপে রক্তিম প্রেয়সীর লজ্জায় কাবু হওয়া মুখ খানা। মুচকি হেসে তুরার শার্টের দুটো বোতাম খুলে দিলো গলায় কাঁধে থুতনিতে বিরতিহীন ছোট ছোট অসংখ্য উষ্ণ চুম্বনে অস্থির করে তুললো তুরাকে। এক হাতে পিঠ আরেক হাতে আহানের চুল খামচে ধরলো তুরা, শুষ্ক গলায় অস্ফুটস্বরে বলল

-আ আহানন..

আহানের অবাধ্য স্পর্শের বিচরণ ছড়িয়ে পরলো তুরার সর্বাঙ্গে, প্রগাঢ় প্রচন্ড গভীর পুরুষালি স্পর্শ পেয়ে বেসামাল হয়ে গেলো সমস্ত কায়া,বদন! শরীরের প্রত্যেকটা ভাঁজে ভাঁজে খেলে গেলো আহানের উষ্ণ আদরমিশ্রিত স্পর্শ।
মা-দকতায় সিক্ত অনুভূতির জোয়ারে মিশে একাকার হয়ে গেলো দুটো মানব-মানবী। বাইরের দমকা হাওয়া থেকে সৃষ্ট তুমুল ঝড়, বর্ষনের চেয়েও বেশি তান্ডব তুললো বদ্ধ ঘরে ভালোবাসার উন্মাদনার তাড়নায় মত্ত হওয়া দুজনের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#Humu_♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here