#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৫২
বাসের ঝাঁকুনিতে মৃদু নড়েচড়ে উঠলো তুরা,তবুও ঘুম ভাঙার নাম নেই। আহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো, বা হাতের আঙুল তুলে মুখে উপচে পরা চুলগুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিলো।
তুরা মৃদু নড়চড় করে আবারও আহানের বুকের মধ্যে মিশে রইলো।
বাসের সীটে ঘাড় এলিয়ে দিলো আহান ,এই মেয়ে এত কি করে ঘুমাতে পারে মাথায় আসেনা আহানের। সেই রাত থেকে ঘুমে কাদা হয়ে আছে, আহান সরাতে গেলেও একচুল নড়াতে পারেনি ওকে। দুহাতে আহানের পেট জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে, ডান পাশটা অসার হয়ে গেছে আহানের,কিন্তু তুরার ঘুমন্ত মুখটা দেখে আর ওকে সরানোর ইচ্ছে হলো নাহ। কতক্ষণ ধরে যে তাকিয়ে ছিলো তুরার মুখের দিকে সেসময় বেহিসেবী।
তুরার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে টুপ করে একটা চুমু দিলে তুরা নড়েচড়ে উঠল। তুরার ঘুমন্ত চোখের পাতায় আবারও আলতো ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো আহান,এ দিয়ে যে কতবার তুরার মুখশ্রীতে অধর ছুঁয়ে দিলো তা হয়তো আহানের ও হিসেব নেই। কিন্তু সেই বা কি করবে তুরার গোলগাল মুখটা যখন ঘুমে বুদ থাকে, নিচের ঠোঁট কামড়ে মৃদুমন্দ নিঃশ্বাস ছাড়ে আহান বড্ড বেসামাল হয়ে যায়, আদুরে মুখ খানা দেখলে বারবার ছুঁয়ে দিতে মন চাই।
বাসটা আবারও ঝাঁকি দিয়ে উঠলে ঘুম নড়বড়ে হলো তুরার, চোখ বন্ধ রেখেই উষ্ণ আলিঙ্গনের স্পর্শ টের পাচ্ছে তুরা,ফুরফুরে হাওয়ার আদলে শরীরে যে শীতলতার সৃষ্টি হচ্ছে তা এমন নিবিড় আলিঙ্গনে অনেকটাই কেটে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে চোখ জোড়া খুললো তুরা, নিজেকে আবিষ্কার করলো আহানের বুকের মাঝে, আস্তেধীরে মাথা তুলে তাকালো, সীটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঁজে আছে আহান।ঘুমাচ্ছে কিনা সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না তুরা, চুলগুলো ছড়িয়ে আছে কপালে, একদম শান্ত বাচ্চার মতো লাগছে আহানকে,চোখ সরাতে ইচ্ছে করলো না একদমই তুরার। মৃদু হাসলো তুরা আলতো স্পর্শে ছুঁয়ে দিলো আহানের খোঁচা খোঁচা দাড়িতে আবৃত গাল।
নিজের অবস্থান বুঝে নজর বুলালে দেখলো আহান এক হাতে তার কোমর ঝাপটে ধরে রেখেছে আরেক হাত পায়ের উপর রাখা। নিজের পায়ের অবস্থান দেখেই ভড়কে গেলো তুরা, এক পা আহানের এক পায়ের উপর তুলে রেখেছে। এমা ছিছি! লজ্জায় কান গরম হলো তুরার।
তড়িঘড়ি করে ছিটকে সরে আসলে আহান চোখ খুললো, এমন তরস্ত হয়ে সরে যাওয়ায় আহানের সবেমাত্র ঘুমে লেগে আসা চোখ খুলে গেলো। লালচে হয়ে ফুলে আছে চোখ গুলো,দেখেই মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমাইনি
-এভাবে লাফালাফি শুরু করেছ কেনো তুমি
তুরা গাল ফুলালো,সে কখন লাফালাফি করলো,সরেই তো এসেছে শুধু। আহানের কথার উত্তর না দিয়ে জানালার দিকে সরে গেলো। জানালা দিয়ে ফুরফুরে বাতাস আসছে, বিশাল খাদ আর সরু পথের পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছে গাড়িটি। বাইরের পরিবেশ টা দারুণ মোহনীয়,পূর্ব দিগন্তে উঠি উঠি সূর্যটাও মনমাতানো দৃশ্য লাগছে।
হুট করে আহান তুরার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে সরিয়ে আনলো, তুরা অবাক প্রসন্ন হয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহান বলল
-ওভাবে জানালার দিকে সরে যাচ্ছ কেনো। বাসের ঝাঁকিতে তো উড়ে গিয়ে খাদে পরবা
তুরা চোখ কুচকে ফেললো, গোমড়া মুখ করে বলল
-আমি কি কোনো বাচ্চা যে জানালা দিয়ে বেরিয়ে যাব ঝাঁকিতে
-তোমাকে দেখলেই তো গুবলু বুবলু পিচ্চি টাইপ ফিলিং আসে, উড়ে যেতেই পার নট ইম্পসিবল।
তুরা মুখ ভেংচালো, আহান কে ছাড়িয়ে আবারও জানালার ধারে সরতে গেলে আহান চেপে ধরে রাখলো। তুরা ছোটখাটো হওয়ায় মাথাটা আহানের গলা পর্যন্ত ঠেকলো। আহান তুরার মাথায় নিজের গাল ঠেকিয়ে হেলান দেওয়ার মতো করে সীটে মাথা এলিয়ে দিলো, চোখ বন্ধ করে বলল
-এইটুখানি পিচ্চি বউ, কাঁধে তো মাথা রাখা যায় নাহ, একচুল নড়াচড়া করবা না,ঘুমাব আমি
-তো আপনি ঘুমান নিষেধ কে করেছে, আমাকে এভাবে চেপে রাখছেন কেনো
-সারারাত আমার বুক দখল করে ঘুমিয়েছ তখন কি আমি কিছু বলেছি? এখন আমি ঘুমাব, ডোন্ট মুভ
বলেই চুপ করে গেলো, তুরাও আর কথা বাড়ালো নাহ।
তখন প্রায় সকাল হতে শুরু করেছে,হয়তো ছয়টা/সাড়ে ছয়টা হবে সময়। প্রায় এক দেড় ঘন্টা পরে বাসটা এসে ব্রেক কষলো স্ট্যান্ডে। মৃদু ঝাঁকুনিতে আহান চোখ খুলে তাকালো। তুরাকে বলে উঠে দাঁড়ালে দুই সীট সামনে থেকেই মাহিদ ও উঠে দাঁড়ালো।
আহান, তুরা, মাহিদ তিনজনেই এসেছে শুধু। আমেনা খাতুনের হাঁটু কোমরের ব্যথার জন্যে তিনি ঠিক করে হাঁটতে অব্দি পারেন না,তাই এত দূরের পথ জার্নি করা তার পক্ষে অসম্ভব। রাইমাকেও এমতাবস্থায় সূদুর পথ ভ্রমন করায় একমত না ইমানসহ তার পরিবার। ইনসাফ আর রুবিও অসুস্থ মাকে শুধুমাত্র চুমকির ভরসায় রেখে আসতে পারেনি,তারা দুজন আসবেন তবে বিয়ের দিন যদি সম্ভব হয়।মাহিদ আসতে না চাইলেও সকলের অনুরোধ আর তুরার জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে এসেছে। কয়েকদিন ছুটিতে আছে এ সুযোগে একটু ঘুরাঘুরি হলেও মন্দ হয়না!
আশেপাশে মানুষের প্রচন্ড ভীড়, আহান এক হাতে লাগেজ আর আরেক হাতে তুরার হাত ধরে নামলো। বাস থেকে নামতেই দুটো অতি পরিচিত চেহারা দেখেই তুরার গাল প্রসারিত হয়ে এলো
-আহা অল্প বউউ! কতদিন পর দেখলাম..আসো বুকে আসো
বলে বিহান এগিয়ে আসতে লাগলেই আহান বিহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল
-কল হার ভাবি, বউ বললে মুখ ভেঙে দেব
বিহান মেকি ঘাবড়ানোর ভঙ্গিমায় বলল
-এহ দিল টুট গ্যায়া,কই ভাবলাম অল্প বউ আসলে ওকে দেখেই বউ দেখার চক্ষুতৃষ্ণা মেটাব,মাঝখান থেকে আমার বিয়ে বিদ্বেষী ভাইটা বউ বলে দিলো
বিহানের বলার ভঙ্গিতে ফিক করে হেসে উঠলো তুরা, আরমান এগিয়ে এসে তুরার সাথে কথা বললে আহান মাহিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো ওদের। বিহান আরমানের সাথে আরও একটা ছেলে এসেছে। মিনু ফুফুর দেবরের ছেলে নাম সিয়াম। সকলে স্বাগতভাষণ সরূপ কথা বলে গাড়ি ঠিক করে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।
বাড়িতে পৌঁছাতেই চেনা পরিচিত কয়েক জোড়া মুখ দেখে তুরা খুশিতে ডগমগ হয়ে গেছে, বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই তনু রুহি জায়মা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো
-ভাবি ভাবি,,আই মিসড ইউউউ,, আসতে এত দেরি কেনো করলে বলো তো। আমরা এসে থেকে ওয়েট করছি তোমার জন্য
বরাবরের মতোই চঞ্চল স্বভাবের রুহি হড়বড়িয়ে বলল, তনুও যোগ দিলো দুজন মিলে এমন গল্প জুড়ে দিলো যেনো উঠোনে দাঁড়িয়েই সব কথা সেড়ে ফেলবে। ততক্ষণে গাড়ি থেকে ব্যাগপত্র নামিয়ে আহান,মাহিদ,আরমান, বিহান সহ সিয়াম সকলে ঢুকলো। মাহিদ ঢুকে সামনে তাকাতেই স্তব্ধ হলো যেনো
-দেখি সর তো, আমার ছেলে বউকে বাইরের দাঁড় করিয়ে রাখবি তোরা?
পরিচিত নারী কণ্ঠ কর্ণগোচর হতেই তুরা সচকিত তাকালো। গোলগাল চেহারার প্রজ্জ্বলিত মুখ খানা দেখেই অধর বিস্তৃত করে হেসে এগিয়ে গেলো। মিনুর কাছে,দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলল
-কেমন আছ ফুফুআম্মা। তোমাকে ভীষণ মিস করেছি আমি
পরম আদরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো মিনু, তুরার কপালে আদর দিয়ে কপট অভিমান করে বলল
-থাক থাক,কত যে মিস করেছ,ফুফুকে তো মনেই পরে না তোমাদের
-আমার তো ঠিকই মনে পরে,কিন্তু এমন একটা জল্লাদ ছেলে তোমার কোথাও নিজে তো আসতেই চাইনা আমাকেও নিয়ে আসেনা
আরমান, বিহান মিলে ওদের ব্যাগ নিয়ে ঘরের ভেতর গেলো। আহান এগিয়ে এসে ফুফুকে সালাম দিলো, সাথে মাহিদ ও।
-ফুফু ও মাহিদ তুরার..
-তুরার ভাই তাইতো? এ তো আরেক আরমান,প্রথমে দেখে তো আমি আরমান ই ভেবে বসেছি।
আহানকে থামিয়ে বলল মিনু। হেসে উঠলো সকলে। আসলেই মাহিদের চেহারা টা কিছুটা আরমানের মতো, শুধু সাস্থ আর উচ্চতায় একটু বেশি হবে। সকলের কথাবার্তা চলমান তখনই হাতভর্তি মিষ্টির ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করলো আরেকজন
-আরে প্রফেসর সাহেবের আগমন ঘটলো তাহলে
এগিয়ে এসে মিনুর হাতে মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আহানকে,মাহিদের সাথেও কুশল বিনিময় করলো,তুরার দিকে তাকিয়ে বলল
-আসসালামু আলাইকুম ভাবিজান।আমিও এই বাঁদর গুলোর মতই আপনার দেবর। বয়সে আহানের চেয়ে কয়েক মাসের বড় হলেও জীবন যুদ্ধে পিছিয়ে বিয়ের পিড়িতে দেরিতে বসতে হচ্ছে আরকি
তুরা খিলখিল করে হেসে উঠলো ফুয়াদের কথা শুনে। সালামের উত্তর দিলে ফুয়াদ বলল
-সম্পর্কে সকলের বড় একমাত্র ভাবি আপনি। কিন্তু আহান ভুল কিছু বলেনি দেখতে কিন্তু ক্লাস এইট নাইনে পড়ুয়া বাচ্চাদের মতই
বলেই সশব্দে হেসে উঠলো ফুয়াদ।সাথে বাকি সকলেও। তুরা আড়চোখে তাকালো আহানের দিকে,ব’জ্জাত টাও ঠোঁট টিপে হাসছে। তুরার ভীষণ রাগ হলো। লোকটার হাড়ে হাড়ে ইতরপনা। কত বড় জাঁদরেল হলে এসব বলে বেড়ায় ভাবা যায়,তাও আবার নিজের বউয়ের নামে!
•••
এ বাড়িতে এসে পৌঁছাতে সকাল নয়টা বেজে গেছিলো। এখন দুপুর তিনটা, দুপুর বললে ভুল হবে প্রায় বিকেল হতেই চলল। দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে বড় ঘরে বসে আছে তুরা সকলের সাথে।
এবাড়িতে খুব বেশি লোকজন নেই। মিনু ফুফু তার স্বামী আর ফুয়াদ।সাথে ফুয়াদের চাচা চাচী আর দুই ছেলে মেয়ে। সিয়াম আর ওর ছোট বোন। এ বাদে যারা আছে তারা সকলে আত্মীয়। তনু, জায়মা রুহি,বিহান, আরমান আর আজ তুরা আহান আর মাহিদ এসে যোগ দিয়েছে।মাহিদ এসে ঘরেই বসে ছিল শুধু খাবার সময় বেরিয়েছে, ওর চোখ মুখ কেমন অন্যরকম ঠেকলো তুরার কাছে। মাহিদ তো বড়ই মিশুক স্বভাবের ছেলে,আর এখানে যারা আছে তারা সবাই তো ওর মতই। তবুও কেমন একটা অস্বস্তি দেখলো তুরা মাহিদের চোখে। ওকে দু তিনবার জিজ্ঞাসা করলে বলেছে জার্নি করাতে ক্লান্ত। তবে তুরা আহানের চোখে মুখে ক্লান্তি কম বিস্ময় আর হতবিহ্বলতা বেশি দেখেছে।
-পিচ্চি ভাবি, আপনাকে আহান ভাই ডাকছে
ছোট ছোট শব্দের বাচ্চা কণ্ঠস্বরে তুরার চিন্তা কাটিয়ে সচকিত হলো। তার পাশেই সায়মা দাঁড়িয়ে, সিয়ামের বোন।হবে হয়তো ছয় সাত বছর বয়স,মাথায় দুটো ঝুটি করা, পরনে ফ্রক।
-আহান ভাই দেখি বউ ছাড়া থাকতেই পারছেনা,যাও ভাবি যাও
তনু রম্যক গলায় বলল। সাথে সকলে হেসে উঠলো। তুরার বড্ড অস্বস্তি হলো,লজ্জায় মাথা কা’টা যাচ্ছে যেন। এই লোকটা এত ব’জ্জাতপনা শুরু করেছে যে কিছুতেই মান সম্মান থাকছে নাহ। এ দিয়ে দুবার ডাকতে পাঠালো তুরাকে। এখানে আহানের সব কাজিন সহ, ফুয়াদের চাচীও বসে আছে। সকলের সাথে বসে গল্প করছিলো তুরা, কি এত কাজ যে বারবার ডেকে পাঠাচ্ছে লোকটা
-তুমি গিয়ে তোমার আহান ভাইকে বলো আমি আসতে পারব নাহ
খিটমিট করে বলল তুরা, মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে তার, সকলের সামনে আর মুখ থাকলো নাহ।
-ওকে পিচ্চি ভাবি
বলে দৌড়াতে নিকেই জায়মা ওর হাত ধরে বলল
-এই এই দাঁড়া,,তুই ভাবিকে পিচ্চি ভাবি কেনো বলছিস
-ভাইয়া বলেছে
-কোন ভাইয়া
-আহান ভাইয়া,আমাকে বলল যে তোর ভাবিকে বল আমি ডাকছি। আমি যখন বললাম আমিতো চিনি না ভাবি কে তখন বলল, ওখানে গিয়ে দেখবি যেই মেয়েটা দেখতে সবচেয়ে পিচ্চি সেটাই তোর ভাবি। তাই উনি পিচ্চি ভাবি
বলেই ঝুটি নাচাতে নাচাতে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো মেয়েটা। সায়মার যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ থ মেরে তাকিয়ে থেকে হাহা করে হেসে উঠলো সকলে।
-লাইক সিরিয়াসলি, ভাই কিন্তু মোটেও ঠিক করেনি এটা,দুদিন পরেই একটা পিচ্চির মা হবে অথচ তোমাকেই পিচ্চি বলছে
তুরা ভীষণ ক্ষেপে গেলো। লোকটা এখানে এসে বেশি ইতরামি শুরু করেছে। পদে পদে হেনস্তা করছে, গাট হয়ে বসে রইলো। কিছুতেই যাবে না সে ওমন জাঁদরেল লোকটার কাছে। কিন্তু তুরার ভাবনা ভঙ্গুর করে আবারও সায়মা এলো
-পিচ্চি ভাবি ভাইয়া তোমাকে এখনই যেতে বলল নাতো ঠ্যাং খোরা করে দেবে নাকি
সায়মার কথায় তুরা হতভম্ব হয়ে গেলো, লোকটা কি শুরু করলো! পাগল টাগল হয়ে গেছে নাকি রীতিমতো। তুরা বসে থাকা অবস্থায় মিনু এলো
তুরার হাতে নাস্তার প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বলল
-এত বার করে যখন ডাকছে শুনেই আসো না। আর আহানতো খুব বেশি তেল মশলা দেওয়া খাবার খায়না,দুপুরেও একদম একটুখানি খেয়েছে,এই নাস্তা নিয়ে ওকে দিও
অগত্যা উপায়হীন হয়ে তুরা প্লেট হাতে নিলো। ফুফুকে না বলার স্পর্ধা, ইচ্ছে কোনোটাই তার নেই। মনে মনে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে হাঁটা ধরলো ঘরের দিকে।
ঘরে ঢুকেই ধপ করে প্লেটটা রাখলো। কোমরে দুহাত গুঁজে দাঁড়ালো আহানের দিকে তাকিয়ে। আহান একবারও তাকালো না,চিত হয়ে শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে টিভি দেখছে। এতক্ষণ ধরে ডেকে এখন তুরার দিকে তাকাচ্ছে পর্যন্ত নাহ, রাগ তরতর করে বেড়ে গেলো তুরার, অগ্নিমূর্তি হয়ে টিভির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো একদম,আহান ডানে বায়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করলেও তুরা টিভি দেখতে দিলো নাহ। থপ করে রিমোট টা রাখলো। মাথার চুলে হাত চালিয়ে বলল
-আই নো আ’ম সো হ্যান্ডসাম, বাট এভাবে হা করে না তাকালেও চলবে, তোমারই বর।কেও ছিনিয়ে নিয়ে যাবে না
তুরার মেজাজ আকাশচুম্বী হয়ে গেলো। থপথপ করে এগিয়ে এসে আহানের চুল টেনে ধরে বলল
-আমি পিচ্চি না? আমি পিচ্চি?আমাকে মানুষের সামনে অপমান করা, বুড়ো লোক কোথাকার। পেট মোটা মাস্টার মশাই কি সাধে বলেছি।
আহান এক হাতে তুরার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ওর দুহাত চেপে ধরে বলল
-আরে কি করছ কি,চুলগুলো ছিড়ে ফেলবে নাকি
তুরা ছুটাছুটি করার চেষ্টা করলেও আহানের শক্তির সাথে পেরে উঠলো নাহ,শেষমেশ ক্লান্ত হয়ে ধপ করে বসলো খাটের উপর, রাগের চোটে ফোসফাস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো ঘনঘন। আহান স্থবির চাহনিতে তাকিয়ে থেকে মুখ এগিয়ে ফু দিলো তুরার সারা মুখে, শীতল কণ্ঠে বলল
-রাগ কমেছে বউ?
তিরতির করে উঠলো তুরার সারা শরীর। আহানের এরূপ নরম গভীর কণ্ঠস্বরে দুম করেই মেজাজ খারাপ উড়ে গেলো। তবুও প্রকাশ করলো নাহ,মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। আহন হাসলো নিঃশব্দে, এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শাড়ির আঁচল ভেদ করে নরম পেট জড়িয়ে ধরলো,ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলল
-শাড়ি পরে তো এমনিতেই হট লাগছে,তার উপর যদি মেজাজ ও হট করে ফেলো।এত হটনেস সামলাতে গেলে তো পাগল হয়ে যাব বউ
প্রচন্ড মোহাগ্রস্থ নেশাক্ত শোনালো আহানের গলা,চোখ খিঁচিয়ে নিলো তুরা, আহানের হাতের উপর হাত রেখে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে আহান আরও জোরে চেপে ধরলো
-ক্ কি করছেন,কেও দেখে ফেলবে
-দেখুক,আমার বউকে আমি ধরেছি,এতে দোষের কিছু নেই,যদি দোষ করেই থাকে তবে সে করবে যে আমাদের রোমান্স দেখবে
তুরা ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে বলল
-কোনো রোমান্স না,ছাড়ুন আমাকে। আপনি ভীষণ খারাপ। ভীষণ ভীষণ ভীষণ খারাপ। আপনার সাথে কোনো কথা নেই আমার। আপনি সকলের সামনে আমাকে পিচ্চি বলেছেন,আবার বলেছেন ঠ্যাং খোরা করে দেব
গাল ফুলিয়ে বলল তুরা, আহান তুরাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করলো, তুরা হাত দুটো নিজের বুকের উপর রেখে কোমর পেচিয়ে ধরে বলল
-এসে থেকেই তো গল্প করে বেড়াচ্ছ,তোমার যে একটা স্বামী আছে সে খেয়াল আছে? কতবার ডাকছি বলো তো
-কেনো ডেকেছেন,দেখছিলেন না আমি সকলের সাথে গল্প করছিলাম কেনো ডাকবেন
-আমার বউ পাচ্ছে তাই
-বউ আবার কিভাবে পাই?
চোখে মুখে উপচে পরা কৌতূহল নিয়ে বোকা বোকা মুখ করে বলল তুরা, আহান ঠোঁট কামড়ে হাসলো,মুখটা আরও এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল
-ওটা বোঝানোর জন্যেই তো ডেকেছি
বলেই ঠোঁট দুটো আস্তে আস্তে এগিয়ে নিতে লাগলো তুরার দিকে। তুরা চোখ টিপে বন্ধ করে আহানের শার্ট খামচে ধরলো, দুজনের ঠোঁট ছুঁইছুঁই হতেই দরজার কাছ থেকে শব্দ এলো
-ভাইয়ায়া??
ফট করে সরে গেলো তুরা,আহানের বুকে ধাক্কা দিয়ে ছিটকে সরে গিয়ে দাঁড়ালো। তখনই ধপ করে দরজা টা খুলল সায়মা। ওদের দুজনকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে বলল
-কি হয়েছে? তোমরা দুজন এমন করে আছ কেনো?
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
#Humu_♥️