প্রেম_প্রেম_পায় #স্বর্ণালী_সন্ধ্যা পর্ব দশ

0
566

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব দশ

১০.
ফায়াদের কথায় কাশি উঠে গেল অপরাজিতার।যেন তেন কাশি না একেবারে দম আটকানো কাশি । এই গম্ভীর, কথা কম বলা নিরামিষ ডাক্তার ফ্লার্ট ও করতে পারে? তাও একেবারে হৃদয় ভেদ করা ফ্লার্ট!! ভাবতেই অপরাজিতার কাশি যেন আরো বেড়ে গেলো।তার কাশি দেখে ফায়াদ অস্থির হয়ে উঠলো। টেবিলে পানির বোতল ছিল। সে একটা বোতল ছুটিয়ে পান খাওয়ালো অপরাজিতা কে। কাশি একটু কমতেই স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়লো সে। নিজের জায়গায় ঠিক করে বসে অপরাজিতার পানে দৃষ্টি দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘এভাবে রিয়েক্ট করলে কেন?’

অপরাজিতা এখনো পানি খাচ্ছে। খাবার নিয়ে এসেছে একজন।খাবার রেখে গেলো। কিন্তু অপরাজিতা এখনো পানি খাচ্ছে। কোনো কথার জবাব দিচ্ছে না।
শেষে ফায়াদ তার বোতল টা কেড়ে নিল।

‘আরে পানি খা..’

‘খাবার খাও’

‘আচ্ছা’

শান্ত এই কন্ঠ শুনলে অপরাজিতা আর দিরুক্তি করতে পারে না। তাছাড়া একটু আগে যা করলো এই লোক! গালে হাত বুলিয়ে দাওয়া আর সে সব আদুরে দুষ্টু শব্দ যেন মাথায় গেথে বসে গেল। ভাবতে লজ্জাও লাগছে৷
আচ্ছা! ফায়াদ যদি কখনো অপরাজিতাকে ভালোবাসি বলে তাহলে অপরাজিতার কি হবে? সামান্য ফ্লার্ট এই অপরাজিতার গরম লেগে গেছে। আচ্ছা ফ্লার্ট তো শব্দ দিয়ে করতে পারতো। চুল গুছিয়ে দেওয়া, গালে হাত বুলিয়ে চোখে চোখ রেখে বলা টা তো হৃদয়ে ছুড়ি চেপে ধরার মতো।ইশশ!
এগুলো ভাবছে আর খাচ্ছে অপরাজিতা।খাওয়া আর ভাবা ছাড়া অন্যদিকে মন আপাতত তার নেই। তার ভাবনাতে ফায়াদ এতোটাই বিচরণ করছে যে বাস্তব ফায়াদ পাত্তা পাচ্ছেনা ।
ফায়াদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে অপরাজিতা কে। কিন্তু অপরাজিতার কোনো খবর নেই৷ বেশ কিছুক্ষন পর অপরাজিতার হুশ হলো। সে যে খেতে আর ভাবতে গিয়ে পাশের জনকে ভুলেই বসেছে তার মাথায় এখন খেলেছে বিষয়টা।পাশে তাকাতেই দেখতে পেল ফায়াদ তার পানের চেয়ে আছে। অপরাজিতা ফায়াদের পানে তাকাতেই ফায়াদ একটা হাসি দিয়ে উঠে দাড়ালো। দাঁড়িয়ে অপরাজিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘বাকিটুকু শেষ করে এখানেই বসো।বিল দিয়ে আসছি।’

বলে সে মিটিমিটি হাসতে হাসতে চলে গেল। ফায়াদের কথা শুনে সে টেবিলের দিকে নজর দিল। টেবিলে তাকিয়ে তার কান্না করতে ইচ্ছা করছে৷ এতো গুলা খাবার সে একাই খেয়ে ফেলেছে। অল্প আছে কিছু এখনো। এজন্যই কি ফায়াদ হাসছিল?
ভাবতেই অপরাজিতার লজ্জাতে সব খাবার আবার পেট থেকে বের করতে ইচ্ছে করছে৷ সে ভাবলো,
‘উনি যদি আমাকে খাদক ভাবে?’

ফায়াদ এসে পড়লো বিল দিয়ে।
‘খাওয়া শেষ হলে….’

কথা শেষ হওয়ার আগেই অপরাজিতা বলল,
‘দেখুন! আমি কিন্তু খাদক না। আমাকে খাদক ভাব্বেন না।’

অপরাজিতার কথা শুনে ফায়াদের জোড়ে হাসতে ইচ্ছা করছে কিন্তু সে হাসি চেপে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
‘খাদক ভাবার কি আছে? তুমি খেতে পছন্দ করো এটা আমি আগে থেকেই জানি’

অপরাজিতা অসহায় চোখে তাকালো। সে আসলেই খেতে ভালোবাসে। তাই বলে পাশের জনকে খেয়ালই করলো না আজকে?সব দোষ উনারই তো। উনার ভাবনাতেই উনাকে ভুলে গিয়েছে।
অপরাজিতার মনোভাব বুঝতে পেরে ফায়াদ স্বাভাবিকভাবে বলল,
‘এতো লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। তোমার জন্যই সব অর্ডার করেছিলাম।আমি একটা কফি খেয়েছি।’

ওখান থেকে বের হয়ে ফায়াদ অপরাজিতা কে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।অপরাজিতা গাড়িতে বসে বলল,
‘গাড়ি কেন?’

‘এলাকার মধ্যে ছেলে নিয়ে ঘুরবে?’

অপরাজিতা আর দিরুক্তি করলো না।অনেক্ষন নিরবতা চলল গাড়ির মধ্যে। নিরবতা ভাঙতে অপরাজিতা বলল,
‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’

ফায়াদ ড্রাইভ করতে করতে বলল,
‘কোথায় যেতে চাও?’

‘আপনি আমার সাথে এতো ভালো বিহেব কেনো করছেন?’

কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পেয়ে একপলক তাকালো অপরাজিতার দিকে। আবারো ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
‘খারাপ বিহেব করেছি কবে?’

অপরাজিতা ঢোক গিলে কিছুটা হাসফাস করে বলল,
‘না মানে!আপনি এরকম করলে তো আমার প্রেম প্রেম পায়’

তারা এসে পৌছালো। গাড়ি থামিয়ে এবার অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে খুবই স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘তো করো প্রেম!’

অপরাজিতা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
‘কার সাথে?’

ফায়াদ মুচকি হেসে বলল,
‘যার সাথে তোমার ইচ্ছা!’

অপরাজিতা অবাক হলো। সে এতোটাই অবাক হলো যে কথা বলতে ভুলে গেল।ফায়াদ সময় দিল অপরাজিতা কে। বেশ কিছুক্ষন পর অপরাজিতা বলল,
‘আগে তো কখনো এটা বলেন নি?’

ফায়াদ তার সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলল,
‘আমি বাচ্চাদের সাথে প্রেম করি না।পরে দেখা যাবে তোমার সাথে তাল মিলালে পড়ালেখা সব হাওয়ায় আর তারপর তোমার বাপ এসে আমাকে বলবে আমি তার মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি।’
পরক্ষনেই অপরাজিতার দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল,
‘যদিও তুমি এখনো কিছুটা বাচ্চা তবে চলবে।’

বলে সে গাড়ি থেকে বের হলো। অপরাজিতা শিউরে উঠলো ফায়াদের দৃষ্টি দেখে। এটাই কি তার নিরামিষ ডাক্তার? তার ভ্রম নয় তো!নিরামিষ থেকে আমিষ হলো কবে এটা?সে অবাক এর উপর অবাক।
ফায়াদ গাড়ি থেকে বের হয়েছে খেয়ালে আসতেই সেও বের হলো। দেখলো ফায়াদ তার জন্যই দাঁড়িয়ে আছে।

‘ভাবনা শেষ? আসো সামনে একটা নদী আছে। একটু হাটতে হবে।’

তারা পাশাপাশি হাটতে লাগলো। অপরাজিতা ভিতরে ভিতরে খুব অস্থির হচ্ছে। আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছে। ফায়াদ খেয়াল করলো,
‘কি বলবা বলে ফেলো’

অপরাজিতা অস্থিরতা নিয়ে থেমে থেমে বলল,
‘আপনি কি আমাকে প্রপোজ করলেন?’

‘তাই মনে হচ্ছে?’

অপরাজিতা প্রশ্ন করলো,
‘না??’

ফায়াদ হেসে দিয়ে বলল,
‘হ্যা’

নদীর পারে এসে বসলো তারা। আকাশের পানে চেয়ে অপরাজিতা বলল,
‘স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।’

ফায়াদ তাকালো অপরাজিতার পানে। মেয়েটার চোখ অশ্রুতে টলমল করছে। কাঙ্ক্ষিত কিছু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পেয়ে গেলে অনুভূতি টা খুবই আবেগীয়।ফায়াদ অপরাজিতার গালে হাত দিয়ে তার দিকে ফিরালো। চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘স্বপ্ন নয়।’

অশ্রু কণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।সে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল,
‘তার মানে আমাকে আর আপনাকে হারানোর ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে না, তাই না?’

কথাটা শুনে ফায়াদের ইচ্ছা করলো মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিতে। মেয়েটা তাকে এতো ভালো কেন বাসে?সে তো এতো ভালোবাসা পাওয়ার মতো কিছু করে নি। তাকে হারানোর ভয় মেয়েটাকে না জানি কতোটা যন্ত্রণা দিয়েছে। সে ভীষণ নরম ও আদুরে সুরে উত্তর দিল,
‘না’

‘ভালোবাসেন?’

‘বাসবো’

অপরাজিতা আবারো আকাশে পানে চাইলো।এবার তার মুখে হাসি। প্রাপ্তির হাসি। ফায়াদের চোখে এক অন্যরকম দৃশ্য। আর লুকোচুরি নয়।অনুভুতিরা ডানা মেলে মুক্তভাবে উড়ুক।

‘আমি আপনার কাধে মাথা রাখি?’

ফায়াদ তার স্বভাবসুলভ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘যদি না বলি?’

অপরাজিতা চমৎকার এক হাসি দিয়ে বলল,
‘শুনবো না’

বলে সে মাথা রাখলো ফায়াদের কাধে।হেসে দিল ফায়াদ। জীবনে সবকিছু নিয়ম মেনে হয় না। কিছু সময় নিয়ম ভঙ্গ করতেই আনন্দ। এই যে তার পাশের মেয়েটাকে ভালোবাসা তার নিয়মের মধ্যে ছিল না।তার জীবনসঙ্গি হিসেবে সে ম্যাচুরড কাউকে চাইতো কিন্তু তার অনুভূতি সব এই ইমম্যাচুর মেয়েটার মধ্যে। আর এতেই সুখ।

অপরাজিতা গুন গুন করছে,
‘হতে পারে এ পথের শুরু
নিয়ে যাবে আমাদের অজানায়
তুমি আমি আমাদের পৃথিবী
সাজিয়ে নিবো ভালোবাসায়।

ভালোবাসি বলে দাও আমায়
বলে দাও হ্যাঁ সব কবুল
তুমি শুধু আমারই হবে
যদি করো মিষ্টি এই ভুল।’

ফায়াদ ধীরে ধীরে আওড়ালো,
‘কবুল’

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here