প্রেম_প্রেম_পায় #স্বর্ণালী_সন্ধ্যা পর্ব তিন

0
600

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব তিন

৩.
ক্লান্ত দেহ নিয়ে মাত্রই বাসায় ফিরেছে ফায়াদ।আজ অনেক রোগী ছিল।ব্যস্ত দিন ছিল।ঘরে প্রবেশ করেই সোফায় গা এলিয়ে দিল সে। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে নিজের রুমে যাবে। মাথা পিছনের দিকে এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে সে। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলো একটা হাত তার মাথায় বুলিয়ে যাচ্ছে। অনুভব করে মুচকি হাসলো সে। চোখ না খুলেই বলল,
‘মা’

আখি বেগম দরদ মিশিয়ে বললেন,
‘বেশি ক্লান্ত লাগছে বাবা?’

‘না মা একটু মাথা ধরেছে’

মাথা থেকে হাত সরিয়ে এবার ছেলের পাশে বসে ঠাস করে বললেন,
‘তো বিয়ে করিস না কেন?’

ফায়াদ এবার চোখ খুলে সোজা হয়ে বসলো,
‘বিয়ের সাথে মাথা ব্যথার কি কানেকশন?’

আখি বেগম বেশ সিরিয়াস ভাবে বলা শুরু করলেন,
‘একটা বউ থাকলে এখন মাথায় হাত বুলিয়ে দিত,চা বানিয়ে দিত,মাথা টিপে দিত।মাথা ব্যথা না পালিয়ে যাইতো কই!’

ফায়াদ কপাল চাপড়ালো।ছেলের কপাল চাপড়ানো দেখে তিনি ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘তুই বিয়ে কেন করিস না বল তো?’

ফায়াদ মায়ের হাত ধরে বলল,
‘যাদের দেখি তাদের পছন্দ হয় না মা৷ জীবনসঙ্গী মনের মতো চাই। শুধু সারাদিন ঘরের কাজই করবে এমন কাউকে চাই না। এমন একজন কে চাই আমার মন যাতে সে বুঝে,আমাকেও যাতে খুজে তার প্রতিটি পদক্ষেপে।’

‘এমন কেউ থাকলে বল আমরা প্রস্তাব দেই৷ আর কতো দিন এরকম বিয়ে ছাড়া থাকবি বয়সটা তো কম হলো না।’

ফায়াদ বেশ কিছুক্ষন ভেবে বলল,
‘আর কিছুদিন যাক মা। এবার বিয়েটা করে ফেলবো।’

এরই মধ্যে ড্রইং রুমে প্রবেশ করলেন ফারদিন আহমেদ।আখি বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘তোমার ছেলের আর বিয়ে করা লাগবে না।কোথায় এই বয়সে নাতি-নাতনীদের সাথে খেলবো, তা আর কিভাবে হবে! তাদের বাবাকেই এখনো বিয়ে দিতে পারলাম না।সঠিক সময়ে বিয়ে করলে দুই বাচ্চার বাপ থাকতো এখন।’

ফায়াদ বাবার দিকে তাকিয়ে আখি বেগমকে বললেন,
‘মা! বাবা তো এখনো মাশাল্লাহ। তুমি অনুমতি দিলে বাবাকে আরেকটা বিয়ে দিতাম। না মানে বাবার আবার ছোট বাচ্চা পছন্দ!’

আখি বেগম চোখ রাঙানি দিতেই সে সোফার রুম থেকে কেটে পড়লো।ফারদিন আহমেদ বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আখি বেগমকে বললেন,
‘কত বড় অস’ভ্য তোমার ছেলে!’

আখি বেগম চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললেন,
‘অস’ভ্যতামি করলে ছেলে আমার হয়ে যায়?’

‘না মানে’

আখি বেগম মুখ ঝামটি মেরে বললেন,
‘চুপ থাকো। একবারে বাপের মতোই হইসে ছেলে!’

বলে তিনি চলে গেলেন রান্নাঘরে খাবার গরম করতে। ফারদিন আহমেদ সোফায় বসে বিরবির করে বলছেন,
‘ছেলের মা আমাকে ইনডাইরেক্টলি অস’ভ্য বলে গেল?’

তখনি রান্না ঘর থেকে আখি বেগম চেচিয়ে বললেন,
‘ইনডাইরেক্টলি না আমি তোমাকে ডাইরেক্টলিইই বলেছি’

ফায়াদ রুমে এসে নিঃশব্দে হেসে যাচ্ছে।বাবা-মায়ের সাথে সে খুব ফ্রি।ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা তার সাথে খুব ফ্রেন্ডলি। এরকম মা-বাবা থাকলে কোনো সন্তান হতাশায় ভুগবে না। শাসন যেরকম করে আবার বন্ধুর মতো পাশেও থাকে।
জামা-কাপড় নিয়ে সে গেল গোসল করতে। এখন গোসল না করলেই নয়।ঠান্ডা পানির ছোয়ায় ক্লান্তি টা যেন একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল করে বের হলো সে। চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো।সেই মূহুর্তে বেজে উঠলো চিরপরিচিত রিংটোন। সে একবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আবারো চুল মোছায় মনোযোগ দিল৷ সে জানে ফোনের ওই পাশের ব্যক্তি আবার কল দিবে৷ ফ্রেশ হতে হতে আবার কল দিল। ফোন রিসিভ করলো সে৷ রিসিভ করতে না করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
‘এতো দেরি করেন কেন সবসময়?আচ্ছা থাক মাফ করে দিলাম। আসসালামু আলাইকুম।’

ফায়াদ বড় করে শ্বাস নিয়ে বলল,
‘ওয়ালাইকুমুসসালাম’

‘হঠাত একটা প্রশ্ন মাথায় আসলো তাই ফোন দেওয়া।’

ফায়াদ বারান্দাতে তোয়ালে মেলতে মেলতে বলল,
‘তা কোন দিন মাথায় কিছু আসে না? তোমার তো ফোন দেওয়ার বাহানা দরকার শুধু’

খিলখিল করে হেসে দিল অপরাজিতা। হাসতে হাসতে বলল,
‘তা ঠিক বলছেন।’

ফায়াদ বারান্দারই একটা চেয়ারএ বসে শান্ত ভাবে বলল,
‘প্রশ্ন টা?’

অপরাজিতা বেশ ভাবুক হয়ে বলল,
‘আচ্ছা আমি আপনাকে এতো জালাতন করে আপনি ওগুলো সহ্য করেন কেন?চাইলে তো বিচার দিতে পারেন আমার আব্বুর কাছে।’

ফায়াদ মনে মনে ভাবলো,’এইটা কি মেয়ে নাকি অন্য কিছু! নিজের ঘাড়ে নিজেই বাশ আনার চিন্তা করে।’ কিন্তু মুখে বলল,
‘দিতে বলছো? বিচার দিব ভাবছি।যেদিন দিব সেদিন তোমার বাবার থেকে জরিমানা সহ নিয়ে আসবো।’

অপরাজিতা মুখ ভেঙচি কেটে বলল,
‘এহ আসছে জরিমানা নিতে। এরকম করলে কিন্তু আসলেই বউ পাবেন না। আগে তো মজা করে বলতাম। এখন তো বউ আমিইই’
শেষ কথাটা একটু লাজুক ভাবে বলার চেষ্টা করলো সে। আবার মিন মিন করে বলল,
‘আপনাকে আমি ছাড়া কেউ বিয়ে করবে না বুঝছেন৷ আপনি কিন্তু মোটেও অন্য কোনো মেয়ের দিকে চোখ দিবেন না৷’

মিনমিন করে বলার কারন হলো ফায়াদ এর রাগ।হুট করে রেগে গেলে ঝামেলা। এই লোক এর রাগকে ভয় পায় সে। এই কথাটা ফায়াদ জানে৷ অপরাজিতার মিনমিন কথা শুনে হাসলো সে৷ এই মেয়ে ভয় পাবে তবুও হার মানবে না।

ফায়াদ ঘড়ি দেখে অপরাজিতাকে স্বভাবসুলভ গম্ভীর স্বরে বলল,
‘ডিনার করে পড়তে বসো।’

বলেই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল।
বারান্দা থেকে ঘরে আসতেই দেখলো তার মা বিছানায় বসে আছে। ফায়াদকে বলল,
‘মেয়েটা কে?প্রতিদিন ফোন দেয়।পছন্দের মানুষ থাকলে বলিস না কেন?’

ফায়াদ মায়ের পাশে বসে সরাসরি বলল,
‘মেয়েটা ছোট।’

‘কত আর ছোট হবে?’

ফায়াদ ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আমার থেকে অনেক ছোট সে’

‘বয়স কোনো ব্যপার না বাবা।আমরা কথা বলব?’

‘আরো কিছুদিন যাক আম্মু।সময় হলে আমিই বলব’

‘মেয়েটা কে সেটা তো বলবি’

‘পরে। এখন চলো ক্ষুধা লাগছে।
মাকে ঠেলে চলল ডিনারের উদ্দেশ্যে।
————–
তারপর চলে গেল বেশ কিছুদিন। সময়তো আর থেমে থাকে না।ইদানীং বেশ গরম পড়েছে বাহিরে।রোদের তীব্রতা খুবই বেশি। বাহিরে গেলে মনে হয় সূর্য রাগ দেখাচ্ছে। আজ ছুটির দিন ফায়াদের। বিকালের দিকে বসে বসে কিছু রোগীর ফাইল৷ দেখছিল সে। হঠাৎ ফোন আসে।নাম্বার টা চেনা তার। কিন্তু এ সময় তো মেয়েটার কল দেওয়ার কথা না।ফোন রিসিভ করার পর অপাশ থেকে অপরিচিত কন্ঠ শুনে আবারো ফোনে তাকালো সে। নাম্বার তো ঠিকি আছে। ফায়াদ জিজ্ঞেস করলো,
‘আপনি কে?’

‘আমি **** হাস্পাতালের থেকে বলছি।আপনি কি ডক্টর ফায়াদ?’

‘জি কিন্তু হসপিটাল থেকে বলছেন মানে? ফোনের মেয়েটা কই? ওর কিছু হয়েছে?’
ফায়াদ বিচলিত হয়ে গেল।

‘মেয়েটার ছোটখাটো এক্সিডেন্ট হয়েছে।তাকে বললাম তার গার্ডিয়ানকে জানাতে। সে তো কেদে কেদে হয়রান।বলে মা-বাবা নাকি বকা দিবে। গার্ডিয়ান ছাড়া তো তাকে এভাবে যেতে দিতে পারি না। পরে বলল আপনাকে ফোন দিতে। আপনি হাসপাতালে আসুন।’

এক্সিডেন্টের কথা শুনে সে অস্থির হয়ে গেল।হুট করেই যেন অস্থির লাগা শুরু করলো।সে বিচলিত হয়ে বলল, ‘ফোনটা একটু ওকে দেন।’

‘সে ভয় পাচ্ছে। আপনি নাকি বকবেন।’

ফায়াদ রাগী ভাবে বলল,
‘ওকে আমি থাপ’ড়াবো।আসতেছি।’

বলে ফোন কেটে দিল। তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হলো সে। আখি বেগম এভাবে তাকে বের হতে দেখে একটু টেনশনে পড়লেন।ফোন দিলেন।ফায়াদ বলল তার একটু জরুরি কাজ আছে আসতে লেট হবে। তারপর তিনি একটু স্বস্তি বোধ করলেন।

ফায়াদ ফোনে কি বলেছে তা সব শুনেছে অপরাজিতা। লাস্ট কথা শুনে তার ভয় করছে। কি দরকার ছিল বেখেয়ালে হাটার। ফায়াদ তাকে একবার এভাবে হাটতে দেখে ধমকেছিল। রাস্তায় ফোন চালাতেও নিষেধ করেছিল। হলো তো এখন! মা-বাবাও বকবে। ব্যথার থেকে অপরাজিতার যেন বকার চিন্তা বেশি হচ্ছে।
অপরাজিতা নার্সটাকে বলল,
‘আপু আপনি আমার সাথে থাকেন।তাহলে উনি আর আমাকে থাপ্পড়’ মারতে পারবে না’
নার্স টা অপরাজিতার দিকে মায়া মায়া করে তাকালো। মেয়েটা সেই কখন থেকে বকা দিবে বকা দিবে করেই কান্না করছে।কান্না করতে করতে চোখ নাক লাল হয়ে গেছে। তবুও তার বকা খাওয়ার ভয়৷ ব্যথা যে পেয়েছে সেদিকে টেনশন নাই।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here