প্রেম_প্রেম_পায় #স্বর্ণালী_সন্ধ্যা পর্ব সাত

0
556

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব সাত

৭.
ভীষণ ভাবে কেপে উঠলো অপরাজিতা। ফায়াদের এই ফিসফিসানো আবেগ মিশ্রিত উওর সে আশা করে নি। সবসময় অনুভূতি সে একাই ব্যক্ত করেছে। ফায়াদ তাকে বাধা না দিলেও সাড়া দেয় নি কখনো। প্রথমবার! এই প্রথম বার সে সাড়া দিল অপরাজিতার অনুভূতিতে।

‘আ আপনি আ আমাকে’

থামিয়ে দিল ফায়াদ,
‘হুশশ! আজ আর কথা নয়। ঘরে যাও। ভিজে গিয়েছো বেশ। চেঞ্জ করে পড়তে বসো। মাথার মধ্যে আমাকে ঘুড়ালে চলবে না। পড়াশোনার গাফিলতি পছন্দ নয় আমার।’

বলেই ফোন কেটে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল সে।ঠান্ডা আওয়াজে শাসিয়ে গেল মনে হচ্ছে। অপরাজিতা তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। বড্ড খুশি খুশি লাগছে তার। ফায়াদের শেষ কথাটায় লজ্জাও পেয়েছে খানিকটা। গাফিলতি সে করবে না। তার ডাক্তার সাহেবের পছন্দ নয়। মুচকি মুচকি হেসে রুমে চলে গেল সে।

ফায়াদের বাসায় পৌছায়ে পৌছাতে রাতের প্রায় ১২ টা বেজে গিয়েছে।বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখলো মা বাবা দুজনেই বসে আছে তার জন্য।তাকে দেখেই আখি বেগম এগিয়ে এলেন,

‘কি রে বাবা! সেই কখন বললি আসছিস এতো দেড়ি কেন?’

ফায়াদ মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ইশ এমন মমতাময়ী আর কেউ আছে? সে মুচকি হেসে নিচু হয়ে মা কে জড়িয়ে ধরলো।

‘ রাস্তায় আটকে গিয়েছিলাম মা।’

‘ফোন করে বলবি তো। টেনশন হয় তো।এখন গিয়ে ফ্রেশ হো। খাবার দিচ্ছি আমি।’

বলেই ব্যস্ত পায়ে রান্না ঘরে গেলেন তিনি। এতক্ষণ পর মুখ খুললেন ফারদিন আহমেদ,
‘মা কে এভাবে এতো টেনশনে রাখো কেন তোমরা?হুটহাট না বলে এভাবে আর যাবে না।’

বাবা তোমরা কেন বলেছে বুঝতে পেরেছে ফারাদ। সে বলল,
‘ফারাজ ভালো নেই বাবা’

ফারদিন আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘একাকিত্ব কখনো মানুষকে ভালো রাখে না।’

‘হুম’

ফায়াদ আর কিছু বলল না। এই বিষয়ে কেউ তেমন বেশিক্ষন কথা বলতে পারে না। তার আগেই হৃদয় ভার হয়ে উঠে। কষ্ট টা যে বিশাল!

সময় বহমান। এর থেমে থাকার নিয়ম নেই। দেখতে দেখতে কতোগুলো দিন চলে গেল।কাল থেকে এইএসসি এক্সাম শুরু। অপরাজিতা আজ এসেছে ফায়াদের চেম্বারে। তার হাত এখন ভালো আছে। ভারি জিনিস তুলতে একটু সমস্যা হয় তাছাড়া সে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।
প্রত্যেকবার অপরাজিতা ভিসিট নিয়ে দেখা করে। কিন্তু এবার তাকে পিয়ন ভিসিট ছাড়াই যেতে দিল। চেম্বারে প্রবেশ করে দেখে একজন মেয়ে এবং তার মা বসে আছে। ফায়াদ তাদের পরামর্শ দিচ্ছে।
অপরাজিতা কে একপলক দেখেই ফায়াদ সোফা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘একটু বসতে পারবে?’

অপরাজিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো।সে সোফায় বসলো। তারপর আরো দুজন রোগী দেখে দম নিল ফায়াদ। এখন সে ২০ মিনিটের ব্রেক নিবে। উঠে অপরাজিতার পাশে গিয়ে বসলো। সময় নিয়ে অপরাজিতাকে একবার পরোখ করলো সে। মুখটা শুকিয়ে গেছে।

‘খাওয়া দাওয়া করো না?’

‘করি তো’

এমনিতে মেয়েটা প্রচুর কথা বলে। আজ শান্ত ভাবে বসে আছে। মাথার মধ্যে টেনশন ঘুরলে চঞ্চলতা দেখাবেই বা কি করে! ফায়াদ ব্যাপার টা বুঝতে পেরে আড়ালে মুচকি হাসলো।

‘কাল তো এক্সাম।প্রিপারেশন কেমন?’

এবার অপরাজিতা টেনশনে হাসফাস করছে৷ বলল,
‘সব পড়েছি। তবুও ভয় হচ্ছে। মনে হচ্ছে কিচ্ছু পারবো না। আমার মাথা টা খারাপ হয়ে যাচ্ছে টেনশনে।’

ফায়াদ নরম দৃষ্টিতে তাকালো। মেয়েটা আসলেই খুব চাপে আছে। সে অপরাজিতার মাথায় হাত বুলয়ে নরম সুরে বলল,
‘সব ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। ভালোভাবে এক্সাম দিবে।’

‘হুম’

ফায়াদ উঠে গেল। তার টেবিলের থেকে একটা বড় শপিং ব্যাগ নিয়ে ফিরে এলো।ব্যাগ টা অপরাজিতার দিকে এগিয়ে দিল।অপরাজিতা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো। ফায়াদ অপরাজিতাকে ইশারায় ব্যাগটা নিতে বলল।ব্যাগটা হাতে নিয়ে সে তাকিয়ে আছে ফায়াদের দিকে। মোট কথা সে জানতে চাচ্ছে এটা কেন? ফায়াদ বুঝতে পেরে বলল,

‘কাল তো এক্সাম। তাই বেস্ট উইশ হিসেবে সামান্য গিফট।’

গিফট পেয়ে খুশি হয়ে গেল অপরাজিতা।গিফট পেলে যে কেউ খুশি হয়।ছোট কিছু হোক আর বড় কিছু। গিফট শব্দ শুনেই মুখে হাসি ফুটে। হোক সেটা সামান্য একটা জিনিস। এই মুহুর্তে অপরাজিতার হাসি দেখে ফায়াদের মনটা জুড়িয়ে গেল।
অপরাজিতা খুশি হয়ে বলল,
‘ধন্যবাদ। তবে আপনাকে এক্সাম এর আগে দেখতে পারলে আমার জন্য সেটা সবচেয়ে বড় বেস্ট উইশ হতো।কিন্তু আব্বুর সাথে যাবো তাই এটা তো সম্ভব না।

হাসি হাসি মুখেই বলেছে সে। কিন্তু সে যে তার আক্ষেপ প্রকাশ করেছে তা বুঝতে দেড়ি হলো না ফায়াদের।
অপরাজিতার গিফট পেয়ে মনটা হালকা হয়ে এলো। সে ফায়াদের সাথে তার বিভিন্ন কথা শুরু করলো।ফায়াদ আজ থামাচ্ছে না। যতটুকু সময় ফ্রি আছে ততটুকু সময় একজন মনোযোগী শ্রোতা হয়েই না হয়
পার করলো।

———————

‘খান!’

‘জি?’

‘মিস নীতি আপনাকে আমি কফিটা খেতে বলেছি।’

‘কিন্তু কেন স্যার?’

‘যা করেছি করেন।’

বাধ্য হয়ে নীতি কফিটা মুখে দিল।মুখে দিতেই তার মনে হলো এর থেকে বাজে কফি সে কোনো দিনও খায় নি। কফিটা বেসিনে ফেলে এসে বলল,

‘এটা কোনো কফি হলো? ছি!’

ফারাজ এবার হাসি হাসি মুখ করে টেবিলে দুই হাত ভর করে বসে নীতির মুখের দিকে তাকিয়ে খুব সুইটভাবে বলল,
‘এই কফি রোজ আপনি আমাকে খাওয়ান। নিজের বানানো কফি নিজেই খেতে পারেন না আর আমাকে খাওয়াচ্ছেন!’

নীতি মাথা নিচু করে অপরাধী চোখে তাকিয়ে রইলো। সে তো শুধু স্যার এর জীবনে মিষ্টতা আনতে চেয়েছিল।নীতির মনোভাব বুঝতে পেরে ফারাজ কফির দিকে তাকিয়ে ভীষণ নরম ভাবে বলল,
‘চিনি বাড়িয়ে জীবনের মিষ্টতা আসবে না নীতি।’

‘স্যরি স্যার’

ফারাজ চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে তার কেবিনের দরজা টা খুলে বাহিরের রাস্তা দেখিয়ে দিতে দিতে মিষ্টি এক হাসি দিয়ে নীতিকে বলল,
‘স্যরি শুনবো না।এখন আমাকে একটা পারফেক্ট কফি বানিয়ে এনে দিন। কুইক!’

নীতি চোরা হেসে বেড়িয়ে গেল কফি বানানোর উদ্দেশ্যে।কয়েক কদম এগোতেই পিছু ডাকলো ফারাজ।

‘নীতি!’

নীতি পিছু ফিরতেই ফারাজ বলল,
‘ব্লাক কফি লাগবে না। আপনার মতো করে বানিয়ে আনুন তবে চিনি এক চামচের বেশি নয়। বেশি মিষ্টি একসাথে বিষের মতো লাগে।’

বলেই ফারাজ কেবিনের ভিতর চলে গেল। নীতি শুনলো তার কথা। কফি বানাতে বানাতেই ভাবলো মানুষটা অদ্ভুত। কিসের তার এতো কষ্ট? কিসের একাকিত্ব!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here