তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব- ৪৯

0
1018

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৪৯

রাতে খাওয়ার পর্ব চুকিয়ে আস্তেধীরে টেবিল গোছাচ্ছে আর রাইমার সাথে গল্প করছে তুরা, ঘড়ির কাটা ঠিক রাত বারোটার সময় জানান দিচ্ছে, অথচ এখনো বাড়ির সকলে জাগ্রত।
দুপুরে আহান তুরার সঙ্গে তহমিনাকেও এ বাড়িতে এনেছিল। মূলত সে তহমিনা কেই আনার জন্যে গেছিলো। রাইমা এসেছে,ইনসাফ ও আপাতত ব্যবসার কাজ সেরে বাড়িতেই আছে। তাই একসাথে কিছু সময় কাটালে সবারই ভালো লাগবে এই উছিলাই উনাকে আনা। শুধু শুধুই তুরাকে বিব্রত করেছে ওভাবে!
তহমিনা এসে বিকেল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এখানেই ছিলো , এত রাত করে তাকে ফিরতে দেওয়ার ইচ্ছে কারোরই ছিলো না। তবে মাহিদের সকালে ভার্সিটি যেতে হয় বলে উনি ছেলেকে রেখে আর থাকতে চাইনি। দূরত্ব তো বেশি না,আসা যাওয়া তো লেগেই থাকে।

-তোদের দুজনের গল্প হলো? এবার শুতে যা। এই অবস্থায় কিন্তু রাত জাগা একেবারেই ঠিক নয় রাই

রুবি খাতুনের কথা শেষ হলে তুরা রান্নাঘরে থালা বাসন গুছিয়ে এক গ্লাসে দুধ এনে রাইমার সামনে ধরে বলল

-এটা চট করে খেয়ে ফেলো তো আপু,তারপর মা জননীর কথা মতো ফট করে শুয়ে পরবা,একদম অবাধ্য হওয়া যাবে না কিন্তু

শেষের কথাটা টেনে টেনে রসিকতার ছলে বলল,তুরার বাচনভঙ্গি দেখে রাইমাসহ উপস্থিত সকলেই হেসে ফেলল। চুমকিও গালে হাত দিয়ে বলল

-একদম অবাধ্য হওয়া যাইব না কিন্তু আফা,ইমান ভাইয়ে খুব বকা দিবো

বলেই ফিকফিক করে হেসে উঠলো।রাইমা মুখ ফোলালো ওদের কথা শুনে।এ বাড়িতে এসে থেকে ইমান দুই ঘন্টা পরপরই ফোন দেয়, বিকেলেই তো ফোন দিয়ে বলেছে ‘বড়রা যা বলবে মেনে চলবা একদম অবাধ্য হওয়া যাবে না ‘
ব্যস,তুরা পাশেই ছিলো তখন। সেই থেকে এখন অব্দি কম করেও বার দশেক এ বলে পচিয়েছে রাইমাকে

-মা,দেখেছ? দুটোই বড্ড পেকেছে। এদের দুটোরই কান ম লে দেওয়া উচিত

গাল ফুলিয়ে বলল রাইমা, তুরা হাত মুছতে মুছতে আবারও রসাত্মক গলায়ই বলল

-ওমাহ,আমরা তো শুধু বললাম অবাধ্য হওয়া যাবেনা এতে আবার পাকার কি হলো। আর তোমরা বলবে তাতে দোষ নেই আমরা শুনলেই দোষ,হুহ!

বলেই মেকি মুখ ভেঙচালো তুরা,আবারও গল্প শুরু করলো দুজন, চুমকি ও ওদের সাথে বসে থেকে গল্প করলো বেশ অনেকক্ষণ। শেষে রুবি খাতুন তাড়া দিতেই তিনজনেই ঘরের দিকে গেলো। রাত ও অনেক বেড়েছে, একটা বাজতে চলল প্রায়। রাইমার বিছানা গুছিয়ে দিলে রাইমা শুয়ে পরলো। তুরা টুনিকে খুঁজতে বারান্দার দিকে গেলে ওকে পেলো নাহ। ‘এখানেই তো থাকে টুনি,গেলো কোথায়?’ বলে এদিক ওদিক ভালো করে খুঁজতে লাগলেও পেলো না কোথাও৷ আবারও বেরিয়ে এসে নিচে বসার ঘরেও খুঁজে এলো খানিক। কিন্তু কোত্থাও টুনিকে না পেলে মাথায় একটা কথাই এলো

-ও ঘরটাতে যাইনি তো?

কপালে হাত রাখলো তুরা,বারবার মনে হচ্ছে টুনি আহানের ঘরেই আছে। এই টুনিটা প্রচন্ড বেহায়া হয়েছে! ঘুরেফিরে শুধু আহানেরই কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করে। এতো যে বকে কথা শোনায় তাও লজ্জা হয়না ওর,,এই তো কাল ও ওকে সুরসুর করে ঘর থেকে বের করে দিলো আহান,তবুও আবারও ওর কাছেই গেছে নিশ্চয়। রয়ে সয়ে তবুও খানিক এদিক ওদিক দেখে এগিয়ে গেলো তুরা আহানের ঘরের দিকে।
দুপুরে তহমিনার সাথে আসার পর থেকে আর আহানের মুখোমুখি হয়নি। খাওয়ার সময়ে কয়েকবার চোখাচোখি হলেও তুরা বারবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
চোখ দু’টো শুধু বারবার আহানের ঘাড়ের লম্বা সেই আঁচড়ের দাগের উপরেই যাচ্ছিলো। ভেবেছিলো আজ রাইমার সাথেই ঘুমাবে তাহলে আর লোকটার মুখোমুখি হতে হবে নাহ,কিন্তু এই টুনির বাচ্চা টা সব ঘোপালা করে দিল।
মৃদু পায়ে ছোট ছোট পদক্ষেপ ফেলে এগিয়ে গেলো ঘরের দিকে। আস্তে করে নব মুচড়ে দরজা টা খুলতেই একজোড়া তীক্ষ্ণ নজরের সাথে সামনাসামনি চোখ আটকে গেলো। ধপ করে ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো। আহান যেনো তুরার আসার খবর টা আগেই জানতো,তাই এমন তীর্যক চাহনিতে এদিকেই চেয়ে আছে
অপ্রস্তুত হয়ে অস্থিরচিত্তে অবিন্যস্ত পদক্ষেপ ফেলে এগিয়ে গেলো, আহান এখনও নিশ্চুপ। চোখ মুখের অভিব্যক্তি স্বাভাবিক। তবে নিকষ কৃষ্ণ মণি দুটো স্বজ্জলিত তাকিয়ে আছে স্থির ভাবে। আহানের এহেন জলন্ত দৃষ্টিতে ভড়কে গেলেও হাতের আঙুলে ওড়না পেচাতে পেচাতে এদিক ওদিক তাকালো। খাটের হেডবোর্ডের পেছনে, বারান্দায়,সব জাগায় দেখেও পেলোনা টুনিকে।ললাটে অসংখ্য ভাঁজ পরলো তুরার গেলো কোথায় টুনিটা!
আহান তখনও স্থিরচিত্র দিয়ে তাকিয়ে তুরার দিকে,সোফায় পিঠ এলিয়ে দুহাত ছড়িয়ে বসে আছে,,ঠোঁটটা রহস্যময়ী ভাবে বাকানো,হাসছে কি রেগে আছে তা আড়চোখে তাকিয়ে ঠাওর করতে পারলো না তুরা।

-ম্ মানে,,টুনিকে দেখেছেন?

জড়তা ভেঙে জিজ্ঞাসা করলো তুরা, আহান ভ্রু যুগল নাচিয়ে না বোধক ইশারা করলো। তবে তুরার মন যেনো ক্ষান্ত হলো না৷ আবারও বলল

-টুনিকি এ ঘরে আসেনি?

ঠোঁট উলটে কাধ নাচালো আহান। তার অর্থ হয়তো না বোধক ই হবে, তবে তুরা তার মর্মার্থ বুঝলো নাহ। মনটাও খারাপ করছে ভীষণ। আবারও চারিদিকে নজর বুলালো। মন খারাপ করে ঘর থেকে বেরতে নিলেই ‘ম্যাও’ করে একটা ডাক কানে আসলো। তড়িৎ চমকিত হয়ে ঘাড় ঘুরালো, আগ্রহী স্বরে আহানকে বলল

-টুনি না? টুনি ডাকলো নাহ?

-কই টুনি?

নির্লিপ্ত স্বরে বলল আহান,তুরা আরও ব্যস্ত হয়ে বলল

-আমি মাত্রই শুনলাম ওর ডাক। এখানেই আছে ও!

বলেই খাটের নিচে বাথরুমে সব জাগায় আবারও খুঁজতে লাগলো, কিন্তু কোত্থাও টুনিকে দেখলো নাহ।স্তম্ভিত হলো তুরা, আবারও মনটা ছোট হলো। সে স্পষ্ট শুনেছিল টুনির ডাক, তাহলে কি ভুল শুনলো? কোথাও গেলো ও?

-পেলে কোথাও?

তুরা ঘাড় নাড়ালো, মন খারাপ হয়ে আসলো ভীষণ। তুরাকে চমকে দিয়ে আবারও ‘ম্যাও’ বলে ডাকটা কানে আসলো। সচকিত হয়ে তাকালো তুরা আহানের দিকে, উতলা হয়ে বলল

-শুনতে পেরেছেন এবার? আমি বললাম তো টুনির ডাক আমি শুনেছি।

বলেই খুঁজতে লাগলো। এক পর্যায়ে আহানের দিকে কেমন সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো, ভ্রু কুচকে ললাটে বলিরেখার ভাঁজ ফেলে এগিয়ে আসলো ওর দিকে। কেনো যানি মনে হচ্ছে টুনি এখানেই আছে, জহুরি নজরে আহানের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেলে হুট করেই আহানের পায়ের কাছে টি-টেবিলের নিচ থেকে টুপ করে ঘাড় বের করে ‘ম্যাও’ বলে উঠলো টুনি। তুরা উদ্দীপিত হয়ে এক ছুটে গিয়ে টুনিকে কোলে তুলে নিলো।
আহানের দিকে বেশ কড়া চোখে তাকিয়ে বলল

-আপনি ভীষণ মিথ্যুক। টুনিকে লুকিয়ে রেখে হয়রানি করছিলেন আমায় এতক্ষণ!

আহান উঠে দাড়ালো। পোলোর শার্ট টা হাত দিয়ে টান করলো। ছাই রঙা ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলল

-আমি একটাও মিথ্যে বলিনি

-আচ্ছা? আমি যে কতবার জিজ্ঞাসা করলাম টুনি কি এখানে আছে, ওকে দেখেছেন বারবার ই তো নাকচ করে দিলেন। অথচ ও আপনার সামনেই ছিল,এটা কি মিথ্যা নয়?

এক হাত বের করে ভ্রু চুলকালো,স্থবির চেহারায় তুরার দিকে তাকিয়ে মন্থর গলায় বলল

-আমি কি একবার ও মুখে না বলেছি?আমিতো ভ্রু কুচকেছি। এর উত্তর না ও হতে পারে হ্যাঁ ও হতে পারে, তুমি আমায় এভাবে মিথ্যেবাদী বলতে পারো নাহ

আহানের লজিক শুনে তুরা বোকা বনে গেলো, লোকটা ইচ্ছে করে তাকে বোকা বানিয়েছে,হয়রানি করেছে ব্যাপারটা উপলব্ধি করেই তুরা খ্যাপাটে গলায় বলল

-পারি,অবশ্যই পারি। আপনি আসলেই ভীষণ মিথ্যেবাদী, অসভ্য একটা লোক, হনুমান কোথাকার

ফরফর করে বলল তুরা,বেশি উত্তেজিত হয়ে কি দিয়ে কি বলে দিলো সে হিসেব ও করলো নাহ। এবার আহান দুহাত পকেট থেকে বের করে নড়েচড়ে দাঁড়ালো। ধীরে সুস্থে এক পা এক পা করে তুরার কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো। পরিস্থিতি সুবিধার নাহ! হটকারিতায় তুরা যা বলে দিয়েছে তার মাশুল এবার দিতে হবে।
উপস্থিত মস্তিষ্ক এই জানান দিলেই তুরা টুনিকে দু’হাতে চেপে দরজা দিয়ে পালাতে গেলেই আহান খপ করে কোমর চেপে ধরলো তুরার, মোচড়ামুচড়ি করে ছোটার চেষ্টা করলেও ছাড় পেলো না।বেশ খানিকক্ষণ ধস্তাধস্তি করেও লাভ হলো না বরং পেছন থেকে সাপের মতো আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো আহান তুরার শরীর। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে আবৃত থুতনি ঠেকিয়ে তুরার কাঁধে রাখলো। হিসহিসিয়ে বলল

-দুদিন ধরে ইগনোর করছ কেনো? সমস্যা কি মেয়ে?

তুরা ফ্যালফ্যাল করে দাঁড়িয়ে রইলো। কিসের মধ্যে কি বলছে লোকটা?তুরা ভেবেছিলো একটু আগে বলা কথা গুলোর জন্যে হয়তো বকবে,এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে এখন?
তুরার উত্তর না পেয়ে কোমরে মৃদু চাপ দিলো,নিজের দিকে ঘুরালো তুরাকে, টুনিকে এখনো দু’হাতে ঝাপটে ধরে রেখেছে তুরা,আহান সেসবে গ্রাহ্য না করে মাঝখানের দূরত্ব ঘুচানোর চেষ্টায় এগিয়ে এসে বলল

-এসব লুকোচুরি, পালিয়ে বেরানোর কারণ কি? দুদিন সহ্য করেছি এখন আমার জবাব চাই?

তুরা অবিন্যস্ত চোখে এদিক ওদিক তাকালো। এলোমেলো ভাবে আমতা-আমতা করলো খানিক। কি উত্তর দেবে এটার!নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল

-ছাড়ুন আমাকে

-আগে উত্তর চাই!

তুরার চিবুক বুকে স্পর্শ করলো। মাথা ঝুকিয়েই ভীষণ জড়তা ভরা গলায় বলল

-ল্ লজ্জা লাগছিলো

তুরার কথা শেষ হতে দেরি আহান দু’হাতে তুরার কোমর চেপে উচু করে ধরলো। বিছানার কাছে নিয়ে শুইয়ে দিয়ে নিজে আধশোয়া হয়ে তুরার উপর উঠলে তুরা খানিক চেঁচিয়ে উঠে বলল

-কি করছেন,টুনি তো গলে যাবে আল্লাহ্

আহান বিরক্ত হলো, টুনিকে এক হাতে চিমটিয়ে ধরে সরিয়ে পাশে রেখে দুহাত তুরার দুই কাঁধের পাশে রেখে ঝুঁকে এসে ফিসফিসিয়ে বলল

-সবসময় যদি এই টুনিকেই নিয়ে পরে থাকো তাহলে হাবা আর গোবা আসবে কি করে বলো তো?

মুহুর্তেই তুরা বিমূর্ত হয়ে গেলো, নিউইয়র্কে থাকাকালীন তুরাকে রাগাতে আহান ফোনে বাচ্চার নাম জিজ্ঞাসা করলে হাবা আর গোবা বলেছিল রেগে গিয়ে,সেটা ধরেই আহান এরূপ কথাটা বলল।
শরমে তুরার চোখ মুদে এলো,মুখ অন্যদিকে ঘুরাতে নিলে আহান থুতনি চেপে ধরে মুখ এগিয়ে নিয়ে অধর ছুঁয়ে দিলো তুরার অধরে, বেশ কিছুক্ষণ ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের ভাজে চেপে ধরে শব্দ করে দুটো চুমু খেলো, তুরা বেসামাল নিজেকে সামলাতে না পেরে খামচে ধরলো আহানের শার্ট, আহান মুখ তুলে তাকালো রক্তিম আভায় সজ্জিত তুরার মুখশ্রীতে, ধীমি গলায় বলল

-লজ্জা ভাঙাতে কত কিছু করলাম,এর পরেও যদি লজ্জা পাও তাহলে আর কি করতে পারি তুমিই বলে দাও?

মুখ ঘুরিয়ে নিলো অন্যদিকে,আর কত লজ্জা দিবে লোকটা! লজ্জায় লজ্জায় তুরা মিইয়ে গেলো পুরোটা। এতটা অসভ্য কি করে হলো আহান!
তুরার গালে মুখ ডুবিয়ে দিলো আহান, নরম গালের পেলব ত্বক ঠিক কতখানি দেবে গেলো তার ধ্যান নেই। ওভাবেই মুখ লাগিয়ে আহান ধীরে ধীরে বলল

-যেমন লজ্জা লাগলে আমার থেকে পালিয়ে বেড়াও ওমন পচা লজ্জার দরকার নেই। লজ্জা লাগুক আর অন্যকিছু আমার কাছেই আসবে। আমিই সারিয়ে দেবো,,ভেঙে ফেলব তোমার শরমের সকল বাধ

চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে এলো তুরার, ভেতরের বাহিরের ঝলকানি আর শিরশিরানিতে নেত্রকোনা জমে এলো। দুহাতে সমস্ত শক্তিতে জড়িয়ে ধরল আহানের পিঠ,গলা। একই ছন্দে দুজনের হৃদস্পন্দের কাঁপুনিতে স্বর্গীয় ভালো লাগা কাজ করছে।
ওদের দুজনের দিকেই পিটপিট করে চেয়ে আছে টুনি, হয়তো কোনো কিছুই ওর বোধগম্য হচ্ছে নাহ। মৃদু স্বরে হাজারো প্রশ্ন আর কৌতুহল মিশিয়ে আস্তে করে ‘ম্যাও’ বলে ডেকে উঠলো।

_______

এরই মাঝে কেটে গেলো সপ্তাখানেক। আর দিন কয়েকের ভেতরেই ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। তুরা হরদমে পড়াশোনা শুরু করেছে, রেজাল্ট এমন তেমন হলে আহান পিঠে চ্যালাকাঠ ভাঙ’বে বলেছে।
আদরের সময় আদর আর পড়ার সময় পড়া, এই কথাটা শুনে তুরার ছোট্ট মনটা ভেঙে গেছে। বারবার মনে পরছে আহানের এই কথাটা, লোকটা কত নিষ্ঠুর হলে এভাবে বলতে পারলো। দশটা না পাঁচটা না একমাত্র বউ তুরা, তাকে কি না পড়াশোনার সাথে তুলনা করবে? তবে তুরাও কম যায় না। সেও পড়বে,পড়ে দেখিয়ে দেবে সে মোটেও ভাঙাচোরা স্টুডেন্ট নাহ

সকাল করে ভার্সিটি এসেও বই খুলে বসেছে তুরা, এইকদিনে লেকচার আর শীট কালেক্ট করে সে অনুযায়ী পড়তে হবে। তাই সব ক্লাসগুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে করে। পাশেই ফারিহা বসা, ওর হাতেও বই। তবে হাতে বই থাকলেও মনোযোগ অন্যদিকে, খানিক বাদে বাদেই দরজার দিকে তাকাচ্ছে।

-কাকে খুঁজছিস?

তুরার প্রশ্নে ধ্যান ভাংলো, ওর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো, ছোট জবাবে বলল

-সাদমান

-তাই তো, ও তো দেরি করেনা। আজকে তাহলে এখনও আসলো না কেনো?

-আজকে না, বল কয়েকদিন ধরেই। খেয়াল করেছিস ও মিশে না ঠিক করে?কেমন দেরি করে আসে আবার চলে যায়। ঠিকঠাক কথাবার্তাও বলেনা। জিজ্ঞাসা করলে কিছু না বলে কাটিয়ে দেয়

-হয়তো আন্টির শরীর নিয়ে একটু চিন্তিত, তুই ভাবিস না। ঠিক হয়ে যাবে

তুরার কথায় ও ভঙ্গিমা বদলালো নাহ ফারিহার। বরং আরও জোর দিয়ে ফারিহা বলল

-সেরকম টা মোটেও নাহ। ওর ভাবসাব দেখিস নি? এড়িয়ে চলতে চাই। আবার সেদিন দেখলাম একটা সঙ্গিনী ও জুটিয়েছে, বেশ আলাপ আলোচনা করে দুজনে পড়াশোনা নিয়ে

-তুই ভুল ভাবছিস ইয়ার,ও এমন কেনো..

তুরা পুরোটা শেষ করার আগেই ফারিহা চোখের ইশারায় দরজার দিকে তাকাতে বললে ও ঘুরে তাকাতেই দেখলো সাদমান ঢুকছে,পাশাপাশি একটা মেয়েও হাঁটছে। সাদমান কয়েকটা শীট মেয়েটার হাতে দিলে ও হেসে ধন্যবাদ জানিয়ে সিটে বসলে সাদমান ও এসে বসলো নিজের আসনে।
তুরা আর কিছু বলল নাহ,ফারিহার দিকে তাকালে দেখল ও চুপচাপ বইয়ের দিকে তাকিয়ে, কলম দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে। ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো তুরা, দুজনই চুপ করে আছে, এভাবে একেবারেই ভালো লাগছে না ওর।
তবে সে নিয়ে মন খারাপ করার সময় পেলো না। কিছুক্ষণ পরেই ক্লাস শুরু হলো। পরপর চারটা ক্লাস শেষ করে বেরলো সকলে। তুরা আর ফারিহা নেমে আসলে ফারিহা তুরাকে বিদায় দিয়ে নিজেই আগে আগে হেঁটে চলে গেলো। তুরাও উপায়ন্তর না পেয়ে রিকশা ধরলো। আজ আহানের ফিরতে দেরি হবে,এক্সামের সব ঝামেলা সামলাতে ব্যস্ত সে।

চুপচাপ ঘাড় নামিয়ে হাঁটছিলো ফারিহা,রাস্তার বা পাশে চোখ যেতেই দেখলো সাদমান ও হাঁটছে,
হুট করেই মন খারাপের মেঘ জমলো ফারিহার বুকে। কি এমন করেছে সে যে সাদমান তাকে এড়িয়ে চলছে? সে খুব ভালো মতই লক্ষ্য করেছে সাদমান স্পষ্টত তাকেই এড়িয়ে চলে,রিমঝিম কে পড়াতে গেলেও ফারিহার সাথে কথা বলে না,যেনো অপরিচিত দুজন।
নাহ আজকে সে শুনবেই সাদমানের কি হয়েছে, এরকম ব্যবহার কেনো করছে।
রাস্তার দুপাশে তাকিয়ে এক দৌড়ে পাড় হলো। সাদমান তখনও হাঁটছে, পেছন থেকে ডাক শুনেই ঘুরে তাকালো

-এই,দাঁড়া। এভাবে রেস লাগিয়েছিস কেনো হাফ লেগে গেলো

হাঁফাতে হাঁফাতে বলল ফারিহা,তবে সাদমান তেমন অভিব্যক্তি দেখালো না। চলার গতি বহমান রেখে গম্ভীর গলায় বলল

-তো দৌড়ানোর কি দরকার, রিকশা করে চলে গেলেই হয়

ফারিহার হাসি হাসি করে রাখা মুখটা চুপসে গেলো, মন খারাপের আধার নামলো। তবে এবার আর দমিয়ে রাখলো নাহ। সাদমানের হাত টেনে ধরে দাঁড় করিয়ে বলল

-কি সমস্যা তোর? এভাবে ইগনোর করছিস কেনো?

সাদমান এক হাতে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল

-ইগনোর কেনো করবো। আর আমি ইগনোর করার কে

-ক্লাসে আসিস লেইটে, আসলেও কথা বলিস না ঠিকঠাক, কিছু জিজ্ঞাসা করলেও এড়িয়ে যাস।একা একাই বাড়ি ফিরে যাস।এগুলো কেমন ব্যবহার? এমন একটা ভাব করিস যেনো আমায় চিনিস ই না! নাকি নতুন বান্ধবী নিষেধ করেছে আমার সাথে মিশতে

ফারিহা থামলো। তবে সাদমানের কোনো ভাবান্তর হলো নাহ। নির্লিপ্ত ভাবে বলল

-প্রথমত রোজ রোজ আগে আগে এসে বসে আড্ডা দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই, আর আমার কথা কম বলা আর বেশি বলাতেও কি, আমি বলা না বলাতে কারো কোনো ফারাক হওয়ার কারণ দেখছিনা। আর যদি বান্ধবী নিষেধ করেও থাকে সেটা আমার পারসোনাল ব্যাপার।

বলেই হাঁটা ধরলো সামনের দিকে,একবার ও পেছনে ফিরে তাকালো নাহ। ফারিহা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। সাদমানের এরূপ আচরণ তার ভেতরে ভীষণ ভাবে আঁচড় কাটলো। এমনটা মোটেও আশা করেনি সে!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#Humu_♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here