#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব আট
৮.
অপরাজিতা ফায়াদের কাছ থেকে বাসায় ফিরতেই মায়ের সম্মুখে পড়লো। রামিসা বেগম তীক্ষ্ণ চোখে পরোখ করছেন তাকে৷ মায়ের এমন দৃষ্টি দেখে ভরকে গেল অপরাজিতা।রামিসা জিজ্ঞেস করল করলেন,
‘কোথায় গিয়েছিলি?’
অপরাজিতা নিজেকে শান্ত রেখে বলল,
‘ফ্রেন্ডদের কাছে গিয়েছিলাম’
‘হাতে কি?’
অপরাজিতা এবার ঢোক গিলে ব্যাগটা শক্ত করর ধরে বলল,
‘কিছু না আম্মু। ফ্রেন্ডরা দিল। ‘
‘শুধু তোকে? ‘
হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘শুধু আমাকে দিবে কেন? সবাই সবাইকে দিয়েছে৷’
‘আচ্ছা যা রুমে।কাল পরীক্ষা পড়তে বসিস।’
‘হুম’
বলেই রুমে চলে গেল৷ রামিসা মেয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিলেন বেশ কিছুক্ষন।
অপরাজিতা রুমে এসে স্বস্থির নিশ্বাস নিল। দরজা আটকে ব্যাগটা খুলল সে৷ খুলে একটা সুন্দর ঘড়ি পেল।কালো রঙ এর।কিছু চকলেট পেল। অনেক গুলো চিরকুট পেল সে৷ সাথে একটা মোটামুটি বড় বাক্স।বাক্সটা তালা দেওয়া৷ কিন্তু চাবি নেই। পুরো ব্যাগ তন্নতন্ন করে চাবি খুজলো সে৷ পেল না৷ বাক্সটা উলটে পালটে দেখতে গিয়ে দেখলো বাক্সের গায়ে কাগজ আটকে লিখা,’চাবি আমার কাছে। এ+ পেলে পাবে চাবি।’
লিখা টা দেখে অপরাজিতা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। এই ডাক্তার তাকে শান্তি দিবে না।পড়তে বাধ্য করেই ছাড়বে।তাকে কিভাবে বাধ্য করা যাবে ধরে ফেলেছে। নিজের সাথে বকবক করতে করতে তার নজর গেল চিরকুট এর দিকে৷ খুশি হয়ে প্রথম চিরকুট তা খুলল।তাতে লিখা, ‘প্রেম পত্র পড়ার আশা ছেড়ে দাও আপাতত। পরীক্ষার পড়া পড়।’
লিখাটা পড়ে তার মুখ টা হা হয়ে গেল।কোথায় চিরকুট পড়ে একটু লাড্ডু ফুটবে মনে, তা না চিরকুট পড়ে তার মনে হচ্ছে তার সামনে রাখা লাড্ডু কেউ ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে।একে একে সবগুলো চিরকুট খুলল।সবগুলো তে একই কথা লিখা যে,’পড়তে বসো’।
লাস্ট চিরকুট টা খুলল।তাতে লিখা, ‘ Wish you a very good luck’
পড়েই হেসে দিল সে। বিরবির করে বলল,
‘হ্যা হ্যা বসছি পড়তে। আর কতো বলবেন! নিরামিষ ডাক্তার।’
—————-
‘এই ফাইলটা কমপ্লিট করে আমার ডেস্কে দিয়ে যাবেন আগামী সকালে,আর কাল যে মিটিং এরেঞ্জ হওয়ার কথা ছিল তার কি খবর?’
উত্তরের জন্য নীতির দিকে তাকিয়ে আছে ফারাজ৷ কিন্তু নীতি অন্যমনস্ক। ফারাজ নীতির দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলো নীতির দৃষ্টি তার গীটারের দিকে।ফারাজ ডাকলো,
‘মিস নীতি!’
সাড়া না পাওয়ায় এবার জোড়েই ডাক দিল,
‘নীতি!!’
হুড়মুড়িয়ে উঠলো নীতি।তাড়াহুড়ো করে বলল,
‘জি জি স্যার’
ফারাজ তার তাড়াহুড়ো দেখে শান্ত করার ভঙ্গিতে বলল,
‘রিল্যাক্স রিল্যাক্স’
নীতি লজ্জিত বোধ করলো। সে আসলে একটা ভাবনায় ছিল৷ ফারাজ উঠে তার গিটার এর কাছে গিয়ে একটা গিটার হাতে নিল। তারপর নীতির দিকে এসে বলল,
‘গিটারে কি দেখছিলেন?’
‘আ আব আসলে’
আমতা আমতা করছে সে। ফারাজ তাকে অভয় দিয়ে বলল,
‘ভয় পাবেন না। বলুন!’
নীতি চুল গুলো কানের পিছে গুজে বোকা বোকা হেসে বলল,
‘আসলে যেটা বলব ওটা খুবই ল্যাম!’
ফারাজ ভ্রু কুচকে বলল,
‘এবং কি সেটা?’
নীতি হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম একটা গিটার কিনবো। কিন্তু আমি তো বাজাতে পারি না। আমার জাস্ট এমনি ট্রাই করার ইচ্ছা। এরপর তো আর ছুয়েও দেখা হবে না। তাই মাথায় আসলো আমি একটা গিটার বানাবো। কয়েকটা তার বেধে দিলেই তো হবে তাই না? ওটাই দেখছিলাম। ‘
ফারাজ কতোক্ষন নীতির দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছিল যে নীতি যা বলছে ভেবে বলছে তো?সে নীতিকে কিছু বলতে যাবেতার আগেই নীতি উল্টো ঘুরে দিল দৌড়। ফারাজ যেন এবার আহাম্মক বনে গেল। সে ভাবে পায় না এই মেয়েটা মাঝেমধ্যে এতো অদ্ভুত জিনিস ভাবে কিভাবে!
নিজের হাতের গিটারের দিকে চোখ পড়তেই হেসে দিল সে।
—————–
সারা রাত যেন ঘুমই হয়নি অপরাজিতার।টেনশনে মাথা টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে বারবার বই ধরলেই মনে হচ্ছে কিচ্ছু পারে না।অথচ সে সব পড়েছে।মাকে একথা বলতেই মা দিল এক ঝাড়ি। বলে কিনা এক্সামের আগে ফালতু কথা বলতে না। বাবাকে বলতেই বাবা বলে এসব কিছু না, তুমি রিল্যাক্স করো। রিল্যাক্স টাই তো আসছে না!
তার উপর আরেকটা সমস্যা হচ্ছে দুনিয়ার যতো পাপ করেছে সব তার আজকে মনে আসছে৷ মনে হচ্ছে ওগুলোর শাস্তি এই পরীক্ষায় পাবে না তো!৷ বই হাতে ধরলেই যেন লাগে এগুলো সে পড়ে নি। আবার বই হাতে না নিলে লাগে সে সময় নষ্ট করছে৷ আবার কিছু টপিক আছে যেগুলো পড়তে গেলে পারে মনে হয় কিন্তু বই বন্ধ করলে মনে আসে না৷ সব মিলিয়ে মাথাটা জগা খিচুড়ি হয়ে আছে।
অবশেষে বাবার সাথে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসলো সে। শিক্ষার্থীদের ভীড় বাহিরে।সবার মুখেই চিন্তার ছাপ! অপরাজিতা আশেপাশে তাকাচ্ছে৷ কাউকে দেখতে চাওয়ার বৃথা আশা।আজ দেখতে পাবে না জেনেই গতকাল গিয়েছিল সে। তবুও অবচেতন মন যেন সব কিছুতেই তাকে পাশে চায়।
আসিফ ইসলাম মেয়েকে বার বার অভয় দিচ্ছে।উপদেশ দিচ্ছে৷অপরাজিতা মনোযোগ দিয়ে শুনছে বাবার কথা।সকল শিক্ষার্থীদের ভিতরে ঢুকার কথা বলা হয়েছে।।অপরাজিতা ভিতরে ঢুকার আগে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আব্বু দোয়া করো যাতে আমি সব কমন পাই’
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
‘ফি-আমানিল্লাহ’
বাবাকে ছেড়ে দাড়াতেই অপরাজিতার চোখে পড়লো বাবার পিছনেই কিছুটা দূরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার পানেই। সে তাকাতেই দূরে দাড়ানো ব্যক্তিটি হাসি মুখে থাম্বস আপ দেখিয়ে উইশ করলো।
চওড়া হাসি ফুটলো অপরাজিতার মুখে।সামনে বাবা আর তার একটু দূরে প্রিয় মানুষ। পরীক্ষা ভালো না হয়ে যাবে কোথায়!খুশিতে অপরাজিতা বাবাকে আবারো জড়িয়ে ধরে আলতো করে৷ আসিফ ইসলাম মেয়ের কান্ডে হেসে দেয়। তাকে তাড়া দিয়ে বলে,
‘এবার যাও আম্মিজান। ভালোভাবে এক্সাম দিবে।’
খুশিমনে অপরাজিতা ভিতরে গেল। ভিতরে যাওয়ার আগে আরো একবার পিছে তাকিয়ে দেখেছিল। অপরাজিতার কান্ডে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ফায়াদের মুখেও হাসি ফুটে উঠেছে।সে বুঝে গিয়েছে ছোট এই মেয়েটা গভীর ভাবে ভালোবাসতে জানে। সে এটাও বুঝতে পারে যে এই ভালোবাসাকে নিজের দুর্বলতা নয়,শক্তি হিসেবে নেয় মেয়েটি। নাহয় আজকাল অনুভুতিতে ডুবে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা লাটে উঠছে অথচ অপরাজিতা সেই অনুভুতিকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। মেয়েটা চঞ্চল হলেও বোকা নয়। কিন্তু ফায়াদ তাকে বোকা বলে৷ কারন বোকা মেয়েটা জানেই না যে সে একজনের মনের বাগানে ভালোবাসার অপরাজিতা ফুল ফুটিয়ে তুলছে ধীরে ধীরে ।
(চলবে)