তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_১০

0
759

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১০

” দুয়া অ্যাই দুয়া! কোথায় তুই? তোর কোনো ধারণা আছে খালামণি কতটা টেনশন করছে? ভার্সিটি শেষে এখনো বাসায় ফিরিসনি কেন? কোথায় তুই? ”

উৎকণ্ঠিত মানব মৃদু ধমকে উঠলো। বিপরীতে থাকা এক মানবী ফোনের ওপাশ হতে কম্পিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

” দুয়া হাসপাতালে। ”

” হাসপাতাল! ”

হতবিহ্বল হয়ে গেল তূর্ণ! সে কি ভুল শুনলো! বক্ষপিঞ্জরের অন্তরালে লুকায়িত হৃদযন্ত্রটি দ্রুতবেগে স্পন্দিত হচ্ছে। অস্থিরতা জড়িয়ে ধরছে আষ্টেপৃষ্ঠে। অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে অন্তঃস্থলে। শুকনো ঢোক গিললো তূর্ণ। কিছু বলবে যে পারছেই না। কণ্ঠনালী যেন অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ওপাশ থেকে পুষ্পি তড়িঘড়ি করে বললো,

” স্ স্যার! আমরা ঢামেকে আছি। আপনি তাড়াতাড়ি আসুন। ”

টুট টুট শব্দে কল কেটে গেল। রয়ে গেল হতবিহ্বল, দিশেহারা এক মানব!

ঢামেকের লোকসমাগম ভর্তি স্থান। ফিনাইলের তীব্র গন্ধ এসে কড়া নাড়ছে নাসারন্ধ্রে। অসুস্থ রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত চিকিৎসকরা। উৎকণ্ঠায় সময় অতিবাহিত করছে রোগীর স্বজনরা। বড় বড় কদম ফেলে হাসপাতালে প্রবেশ করলো তূর্ণ। এতটুকু সময়ের মধ্যেই ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা। বুকের মধ্যিখানে ধক ধক করে চলেছে অবিরাম। মসৃণ চুলগুলো অনেকটা এলোমেলো হয়ে রয়েছে। ঘামে ভেজা শার্ট লেপ্টে বলিষ্ঠ দেহে। তূর্ণ দ্রুত পায়ে ছুটে গেল রিসিপশনে।

” এক্সকিউজ মি! দুয়া! জাহিরাহ্ দুয়া কত নম্বর কেবিন কিংবা ওয়ার্ডে আছে বলতে পারবেন? ”

কেঁপে কেঁপে উঠছে কণ্ঠ। এলোমেলো হয়ে পড়ছে শব্দমালা। রিসিপশনিস্ট ছেলেটা চেক করে দেখতে লাগলো। কিন্তু লাভ হলো না।

” দুঃখিত! এই নামে এখানে কেউ ভর্তি নেই। ”

হতবাক হলো তূর্ণ!

” এসব কি বলছেন? দুয়া! জাহিরাহ্ দুয়া এখানেই আছে। ভালোমতো চেক করে দেখুন না। পেয়ে যাবেন। নামটা ভালোমতো দেখুন। জাহিরাহ্ দুয়া। দেখুন না একটু। ”

কণ্ঠে কেমন আকুতি! যা ছুঁয়ে গেল রিসিপশনিস্ট অবধি। সে আরেকবার চেক করে দেখলো। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

” দুঃখিত। এই নামে কেউ নেই। ”

উদ্ভ্রান্ত মানবটি বাঁ আঁকড়ে ধরলো চুল। ছটফটানি বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। এখন কি করবে সে? দুশ্চিন্তায় মস্তিষ্কে সঠিকভাবে কাজ অবধি করছে না। ঠিক তখনই ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকটায় এলো তিয়াশ। এক পর্যায়ে খেয়াল করলো তূর্ণ’কে।

” স্যার! ”

ফোন কেটে দিয়ে ছুটে এলো তিয়াশ।

” স্যার আপনি এখানে? ”

হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠ কর্ণ কুহরে পৌঁছাতেই পিছু ঘুরে তাকালো তূর্ণ। বহু কষ্টের পর এক চিলতে স্বস্তি মিললো বুঝি। তিয়াশের দু হাত আঁকড়ে ধরলো তূর্ণ। থেমে থেমে আকুতি মাখা স্বরে শুধালো,

” দু য়া! কোথায়? ”

বেশ অবাক হলো তিয়াশ! তবে কিছু বললো না। তূর্ণ’র বেগতিক অবস্থা দেখে বললো,

” চলুন আমার সাথে। ”
___

প্রতিটি কদম অগ্রসর হচ্ছে আর মনে মনে স্রষ্টাকে স্মরণ করে চলেছে তূর্ণ। পা বুঝি চলতে নারাজ। বড় কষ্ট করে হেঁটে চলেছে সে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেল কাঙ্ক্ষিত স্থানে। তিয়াশ হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলো,

” দুয়া। ”

ভীতসন্ত্রস্ত মানবটি আস্তে ধীরে সেথায় তাকালো। একপলক তাকিয়ে মৃদু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো। অধর কা’মড়ে নিজেকে সামাল দেয়ার চেষ্টা করে গেল। চক্ষু বন্ধ করে শুকরিয়া আদায় করলো স্রষ্টার। স্টিলের পাশাপাশি লম্বা চেয়ারের সারি। একটিতে বসে দুয়া। পোশাকে লেপ্টে অল্পস্বল্প লাল বর্ণ তরল পদার্থ। মেয়েটি বুঝে ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেল। দুয়া’র পাশের স্থানটি দখল করলো তূর্ণ। বসলো ঠিক বাম পাশেই। হঠাৎ বাম পাশে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করে মেয়েটার ঘোর কেটে গেল। পাশে তাকিয়ে দেখলো তূর্ণ বসে। কিছুটা অবাক হলো বুঝি। তূর্ণ সম্মুখে সমতল দেয়ালে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নরম কণ্ঠে বললো,

” বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এমনটা কেউ করে? ”

প্রশ্নের উত্তর দিলো না দুয়া। আপনমনে বলে উঠলো,

” বৃদ্ধা আন্টির কন্ডিশন ভালো না। সে ব্ বাঁচবে তো? ”

কণ্ঠস্বর কিঞ্চিৎ কম্পিত হলো। ওর দুশ্চিন্তা অনুধাবন করতে পারলো তূর্ণ। দুয়া’র পানে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। চিন্তিত মেয়েটার মায়াভরা মুখখানি কেমন মলিন হয়ে গিয়েছে! কপোলে নোনা জলের অস্তিত্ব বিদ্যমান। পোশাকে র ক্ত লেপ্টে। ওকে আশ্বস্ত করতে মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিলো তূর্ণ।

” চিন্তা করিস না। ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ্ সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

দুয়া কিছু বললো না। চুপটি করে বসে রইল। আলগোছে হাতটি সরিয়ে নিলো তূর্ণ। তখনই কোথা থেকে ছুটে এলো তৃষা। ভাইকে দেখে যথেষ্ট অবাক হলো! পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে বলতে লাগলো,

” দুয়া! আন্টির ফোন থেকে কয়েকবার ট্রাই করেছি। ওনার ছেলে কিংবা ছেলের বউ কল রিসিভ করছে না তো। কেন যেন মনে হচ্ছে নম্বর ব্লক করে রেখেছে। ”

উঠে দাঁড়ালো তূর্ণ। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

” ফোনটা আমাকে দে। ”

তৃষা মাথা নাড়িয়ে মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বের করলো। তুলে দিলো ভাইয়ের হাতে। তূর্ণ মোবাইল হাতে নিয়ে এক কোণে গিয়ে দাঁড়ালো। ব্যস্ত হয়ে পড়লো মোবাইল নিয়ে। তৃষা সেদিকে একবার তাকিয়ে দুয়ার পাশে বসলো। ওকে স্বাভাবিক করার প্রয়াস চালিয়ে গেল। তিয়াশ এবং পুষ্পি সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে।

অন্ধকারে নিমজ্জিত বসুধা। বেলকনিতে উদাস বদনে দাঁড়িয়ে দুয়া। দৃষ্টি নিবদ্ধ দূরাকাশে। পাশে এসে যে কেউ দাঁড়িয়েছে সে খেয়াল অবধি নেই। তূর্ণ গলা খাঁকারি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো‌। চমকে পাশে তাকালো দুয়া! ডান পাশে তূর্ণ দাঁড়িয়ে। এলো কখন?

” ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে। আন্টি এখন আউট অফ ডেঞ্জার। ওনার ভাই ভাবী সাথেই আছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। ”

মাথা নাড়ালো দুয়া। ওর নীরবতায় ভারাক্রান্ত হলো পুরুষালি চিত্ত! খানিকের নীরবতা ভঙ্গ করে তূর্ণ বলতে লাগলো,

” ছোটবেলা থেকেই তুই নরম কোমল হৃদয়ের। কারোর দুঃখকষ্ট সহ্য করতে পারিস না। আমার এখনো মনে আছে তোর তখন বারো বছর বয়স। প্রতিবেশী আন্টির পোষা বিড়াল অসুস্থ হয়ে মা রা গিয়েছিল। তোর সে কি কান্না! সেই বার এত কষ্ট পেয়েছিলি, কান্না করেছিলি যে পুরো এক সপ্তাহ জ্বর ছিল। বিছানায় পড়ে শুধু কাতরাতে থাকতি। সেই স্মৃতি ভোলার নয়। আজো মনে আছে। তখন প্রতিবেশীর বিড়ালের মৃ”ত্যুতে তোর অবস্থা নাজেহাল ছিল। আর আজ? তোর চোখের সামনে এক অসহায় বৃদ্ধা অ্যাক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়ে ছিল। যন্ত্রণায় ছটফট করেছে। সেই দৃশ্য চাইলেও ভোলার নয়। বুঝতে পারছি। তাই বলে এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবি? তুই বুঝতে পারছিস না খালামণি, খালু এতে কত কষ্ট পাচ্ছে? ”

ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো দুয়া। মায়াবী নেত্রকোল অশ্রুতে ভরপুর হয়ে যাচ্ছে।

” আ আমার চোখের সামনে আন্টি রাস্তায় র”ক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলো। ওখানে কত লোক ছিল। কেউ কেউ ভিডিও করছিল। কিন্তু সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। তু তুমি জানো? ওনার খুব র”ক্তক্ষরণ হয়েছিল। ওনাকে নিয়ে যখন হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। আমার কাঁধে মাথা রেখে উনি ছটফট করছিলেন। কষ্ট পাচ্ছিলেন। আমি চাইলেও তো সেই মুহুর্তে ভুলতে পারছি না। উনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। আজ যদি ওনার কিছু একটা হয়ে যেতো? ওনার নির্দয় ছেলে, ছেলের বউয়ের হয়তো কিছু হতো না। কিন্তু ওনার পরিবার? ”

ক্রন্দনরত ললনা বসে পড়লো বেতের সোফায়। দু হাতে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। যা দেখে র”ক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে এক কাঠিন্যে মোড়ানো হৃদয়ে! নিভৃতে পাশেই হাঁটু গেড়ে বসলো তূর্ণ। কোনো স্বান্তনা বাণী দিলো না। শুধু আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো কেশের ভাঁজে ভাঁজে। তার র’ক্তিম দৃষ্টি নিবদ্ধ বাহিরের অন্ধকারে। কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো ওভাবে। মেয়েটার ক্রন্দন এখন প্রায় থেমে গেছে। ধীরে ধীরে কম্পিত হচ্ছে কায়া। তূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। হঠাৎই ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে নাক ছিটকে বললো,

” ইয়াক! পুতলা তোর তো নাকের জল চোখের জল এক হয়ে বুড়িগঙ্গা হয়ে গেছে! ”

হতভম্ব হয়ে গেল দুয়া! ক্রন্দন ভুলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল তূর্ণ’র দিকে। তূর্ণ চোখমুখ কুঁচকে বললো,

” দিনকে দিন তুই যেমন ছিঁচকাদুনে হচ্ছিস তোকে বিয়ে দিতে তো বেশ ভোগান্তি পোহাতে হবে। শেষমেষ খালুকে মোটা অংকের যৌতুক দিয়ে কন্যা বিদায় না করতে হয়! ছ্যা ছ্যা ছ্যা! কপাল গুণে আমাদের সেন্টিখোর মেয়েকে বিদায় করতে যৌতুক প্রথা! ও মাই আল্লাহ্! তোর জন্য আমাদের এখন পুলিশি মারপ্যাঁচে পড়তে হবে! ”

তূর্ণ’র অতিরঞ্জিত নাটক দেখে দুয়া ক্ষি প্ত হলো। চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো তড়িৎ।

” একদম বাজে কথা বলবে না তূর্ণ ভাইয়া! কে ছিঁচকাদুনে হুঁ? আমি? মোটেও নয়। স্বাভাবিক একটা মানুষ এতটুকু কান্না করেই থাকে। আর দুঃখ পেলে কাঁদবো না তো কি করবো? হাসবো? ”

” হাসবি! হাহ্! শেষমেষ দেখা যাবে শোকে কাতর লোকজন তোর ভুতুড়ে হাসি শুনে ইন্না লিল্লাহ! বিনা টিকেটে পরকাল। ”

তূর্ণ’র কণ্ঠে বিদ্রুপের আভাস। দুয়া তেড়ে গিয়ে আঙ্গুল তাক করে বললো,

” একদম আমার হাসি নিয়ে উল্টোপাল্টা বলবে না। তুমি জানো সবাই আমার হাসির কত প্রশংসা করে? তৃষা তো বলেছে আমার বর নাকি আমার হাসিতেই ফিদা হবে। ”

” হাঁ। হাঁসি তো ফাঁ*সি। ”

কোমল চিকন আঙ্গুলটি ধরে নামিয়ে দিয়ে বললো,

” পুঁচকে একটা মেয়ে। এখনই বর বর চিন্তা শুরু হয়ে গেছে! কানের নিচে দেবো লাগিয়ে এক‌। তখন দেখবি বর বর কেমনে বর্বর হয়। ”

ভেংচি কাটলো দুয়া। দাঁড়ালো মুখ ঘুরিয়ে। দৃষ্টি পুনরায় নিবদ্ধ হলো চন্দ্রিমায়। মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো চন্দ্র। মুচকি হাসলো তূর্ণ। অবশেষে দুয়ো রানীর দুঃখ ঘুচে গেল!

শুক্রবার। ছুটির দিন। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে একটা ইংরেজি উপন্যাস পড়ছিল তূর্ণ। সে মুহূর্তে কক্ষে প্রবেশ করলেন তাসলিমা। হাতে ট্রে। তাতে চা নাস্তা। তূর্ণ’র বিপরীতে বসলেন উনি। মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে মুচকি হাসলো তূর্ণ। মায়ের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে নিজে কাপ হাতে নিলো। কফিতে এক চুমুক দিয়ে বইয়ের পাতায় মনোযোগ দিলো। তাসলিমা উশখুশ করে শেষমেষ বলেই ফেললেন,

” জানিস আমাদের বাড়ি থেকে সাত বাড়ি পরে রাসেল থাকে। ছেলেটা ওয়েল এস্টাবলিসড্। দেখতে শুনতে মোটামুটি। তোর বয়সী হবে। উঁহু। এক বছর ছোট হবে বোধহয়। আগামী শুক্রবার ওর বিয়ে। ভাবি দাওয়াত দিয়ে গেলেন। ”

ভ্রু কুঁচকে তাকালো তূর্ণ।

” তো? দাওয়াত দিয়েছে। আব্বুকে নিয়ে যাও। পেট ভরে খেয়েদেয়ে আসো। ”

তেঁতে উঠলেন তাসলিমা।

” যাবো কোন মুখে হাঁ? যাওয়ার মতো মুখ রেখেছিস? গেলেই সবাই জেঁকে ধরে। তোর বিয়েশাদীর খবরাখবর নেয়। কেউ কেউ সম্বন্ধ নিয়েও হাজির হয়। তখন আমি কি করি! মুখটা এতটুকু করে ফেলি। এছাড়া কি করবো? ছেলে আমার কোনো উপায় রেখেছে? পাড়া পড়শী থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন! সবাই বিয়ে করে ফেলছে। কিন্তু ছেলে আমার মহা ব্যস্ত। ওনার বিয়ে করার টাইম আছে নাকি? নেই। উনি তো মাদার তেরেসার মেল ভার্সন। ”

তূর্ণ বড় শ্বাস ফেলে বললো,

” আম্মু! আবার শুরু করে দিলে? ”

” কি শুরু করেছি হাঁ? বাপের মতো বল ঝগড়া করছি। ”

তূর্ণ তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানালো।

” ছিঃ ছিঃ। কি যে বলো না তুমি? আব্বুর ঘাড়ে কয়টা মাথা যে সে তোমাকে ঝগড়ুটে বলবে? আমার আব্বু তো শান্তশিষ্ট লেজ বিশিষ্ট ভদ্রলোক। ”

ট্রেতে শব্দ করে চায়ের কাপ রাখলেন তাসলিমা।

” কথা ঘুরানোর চেষ্টা করিস না। লাভ নেই। আজ তোকে সত্যিটা বলতেই হবে। কেন তুই বিয়ে বিদ্বেষী? জীবনে মস্ত বড় ছ্যাকট্যাক খেয়ে সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করেছিস? ”

মায়ের কণ্ঠে সন্দেহের ছাপ! হতবিহ্বল হলো তূর্ণ!

” তুমি এসব কি বলছো আম্মু? তোমার পাঁচটা না দশটা না একমাত্র হ্যান্ডসাম বাবুসোনা। তাকে ছ্যাকা দিয়ে বাঁকা করবে কে? এমন কেউ এই তল্লাটে আছে নাকি? ”

তাসলিমা এবার একটু লাই পেলেন। ছেলের কাছ ঘেঁষে মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বললেন,

” আমার সোনা বাবু। বিয়ে করবে না? মায়ের জন্য লাল টুকটুকে বউ আনবে না? ”

না বোধক মাথা নাড়ালো তূর্ণ। তাসলিমা দমে গেলেন। প্রশ্ন করলেন,

” কেন? ”

” আমি তো বাবু। তোমার সোনা বাবু। বাবুরা কি বিয়ে করে? ”

বাচ্চা ফেস করে জবাব দিলো তূর্ণ। ক্ষে পে গেলেন তাসলিমা। ছেলের উরুতে চাপড় মে রে বললেন,

” দুষ্টু ছেলে! মায়ের কথায় মাকেই নাস্তানাবুদ? ”

দাঁত কেলিয়ে হাসলো তূর্ণ। এবার প্রসঙ্গ বদলে ফেললেন তাসলিমা।

” তুই কি সত্যিই কখনো বিয়ে করবি না? ”

” আপাতত না। ”

তাসলিমা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

চলবে.

[ আসসালামু আলাইকুম পাঠক বন্ধুরা। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। কেমন লাগছে গল্পটি? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here