রহস্যময়_ঘোর (পর্ব ৫)

0
234

#রহস্যময়_ঘোর (পর্ব ৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

হটাৎ পেছন থেকে শুকনো পাতার শব্দ শুনে চমকে উঠে ফারিহা। মনে হলো কিছু একটা তার দিকে ছুটে আাসছে। গাছের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখে ক্ষনিকটা ভয় নিয়ে উঁকি দিতেই দেখে তুষার।
একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিশ্বাস ফেললো ফারিহা। তুষার সামনে এসেই তার দিকে চেয়ে বলে,
“আপনি ঠিক আছেন তো?”

ফারিহা কিছুটা অবাক হলেও মাথা নাড়িয়ে বলে,
“হ্যাঁ। এভাবে ছুটে আসলেন কেন? খারাপ কিছু হয়েছে?”
তুষার সত্যটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো। বললে ফারিহা নিশ্চই তাকে পা’গল ছাড়া অন্য কিছু ভাববে না। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলে,
“না, কিছু না। এমনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এই নিন কিছু ফলমুল সংগ্রহ করতে পেরেছি। এগুলো খেয়ে নিন। তারপর এখান থেকে বের হওয়ার একটা রাস্তা খুঁজতে হবে।”

ফারিহা ক্ষনিকটা ভ্রু কুচকে বলে,
“একটু আগে না আগুন জ্বালিয়ে বললেন, রাতটায় এখানে বিশ্রাম নিবেন?”
“হুম বলেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে যায়গাটা নিরাপদ নয়। যত দ্রুত সম্ভব বের হতে হবে এখান থেকে। এই নিন তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন।”

ফারিহা কয়েকটা ফল হাতে নিল। গাছের নিচে বসে দুজন মিলে খাচ্ছে সেগুলো। তুষার ফোন হাতে নিয়ে দেখে চার্জ প্রায় শেষ হয়ে আছে। অন্ধকারে ফোনের লাইটই সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটা মাধ্যম ছিল। তাহলে কি সেটাও বন্ধ হতে চলল?
ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
“আপনার ফোন কোথায়?”
“ব্যাগে।”

তুষার বেগ থেকে ফোনটা বের করে দেখে চার্জ আছে অনেক। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল সে। পালানোর সময় বুদ্ধি করে ফারিহার ব্যাগটাও নিয়েছিল সে। নয়তো এই মুহুর্তে অনেক বড়ো সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা রাস্তা খুঁজে পেলো তারা। একটু একটু আলো ফুটতে শুরু করেছে চার পাশে। ফোনে তাকিয়ে রেখে ভোর পাঁচটা। ফারিহা ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে লুটিয়ে পড়ে বলে,
“আমি আর পারছি না। পা দুটো অবস হয়ে গেছে আমার।”
তুষার চার পাশে চেয়ে বলে,
“আর একটু কষ্ট করুণ। সামনে হয়তো কোনো মেইন রোড পেয়ে যাবো।”
ফারিহা দু’দিকে মাথা নেড়ে বলে,
“আর পারবো না আমি।”

আর কিছু বললো না তুষার। এমনিতেও অনেক্ষণ আগে থেকেই এই পর্যন্ত ধরে ধরে আনতে হয়েছে তাকে। সেই সন্ধা থেকেই সারাটা রাত দৌড় ও হাটার মধ্য দিয়েই গিয়েছে। তার নিজেরই ক্লান্তিতে এখানে শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। মেয়েটার কথা কি বলবে?
কিছুক্ষণ বসে কিছুটা ক্লান্তি কাটালো তুষার। ব্যাগ দুটো দুই কাঁধে নিয়ে ফারিহাকে পাঁজাকোলে তুলে নিল সে। ফারিহা অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে হা করে চেয়ে আছে তুষারের মুখের দিকে।
সেদিকে মন দিল না তুষার। যত দ্রুত সম্ভব এই জায়গাটা ত্যাগ করতে হবে। এমনিতেও রাতে কোনো বন্য প্রাণীর মুখোমুখি হয়নি দেখে অনেকটাই অবাক হয়েছে সে। হয়তো এটা ছিল তাদের গুড লাক।

বিশ মিনিটের মতো হেটে মেইন রোডের পাশে এসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই একটা গাড়ি দেখতে পায় তারা। ভালো করে লক্ষ করে দেখে পুলিশের গাড়ি।
তাদের দেখেই থেমে গেলো সেটা। পুলিশ অফিসার নেমে এখানে আসার কারণ জানতে চাইল। তুষার বিপদের কথা বললেও তাদের সন্দেহ দুর হলো না। তাদের দুজনের ব্যাগ চেক করতে শুরু করলো।
ব্যাগে পাঁচটা টাকার বান্ডেল দেখে সন্দেহটা আরো গাড়ো হলো তাদের। পুলিশ তাদের দিকে চেয়ে বলে,
“সুবিধার মনে হচ্ছে না আপনাদেরকে। এই দুজনকেই গাড়িতে তুলো।”

তারা তেমন কিছু করেনি বা তারা কোনো অপরাধী না, এটা বুঝাতে গিয়েও ব্যর্থ হলো তুষার। একটা বিপদ না সারতেই আরেকটা বিপদ এসে হাজির। এই মুহুর্তে নিজের কপালটা গাছের সাথে পিটাতে ইচ্ছে হচ্ছে যেন। সব সময়ই কোনো দোষ না করেই বিপদে ফেঁসে যাওয়ার দুর্ভাগ্যটা তার ছোট বেলা থকেই।
,
,
জেলে বসে আছে দুজন। একটু আগে তাদের টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ফারিহা ভয়ে সত্যটা বলে দেয়, পালিয়ে বিয়ে করবে ভেবে বাসা থেকে নিয়ে এসেছে এগুলো।
অফিসার সবটা শুনে তার থেকে অভিবাবকের নাম্বার চাইলে ফারিহার বড়ো মাই মানে নিবিড়/ফাহাদের নাম্বার দিল তাদের।
অফিসার ফোন দিয়ে বলে,
“ফাহাদ বলছেন?”
“জ্বি। আপনি কে বলছেন?”
“আমি ** থানা থেকে বলছি। ফারিহা নামের আপনার কোনে বোন আছে?”
“হ্যাঁ, গতকাল থেকে মিসিং সে। আজকেই থানায় মিসিং রিপোর্ট করার কথা ছিল।”
“তা আর করতে হবে না। আপনার বোন আমাদের কাছেই আছে। একটা ছেলের সাথে পালিয়ে এসে আমাদের হাতে আটক হয়েছে। ঐ ছেলেটাও আছে সাথে।”
ওপাশ থেকে নিবিড় উত্তেজিত গলায় বলে,
“আচ্ছা ঠিক আছে। ওদের কিছু করবেন না। ওভাবেই রাখুন। আমি এক্ষুনি রওনা দিচ্ছি।”

জেলের ভেতর দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে দুজন। তুষার কৌতুহল নিয়ে ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
“তাহলে কি সত্যিই নিবিড় আপনার ভাই?”
“হ্যাঁ, আপনাকে মিথ্যে বলতে যাবো কেন?”
“কিন্তু আমি বাস্তবে ফিরে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করেছে এটা।”
ফারিহা এবার কিছুটা রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“এই বিপদের সময়ও আপনি কি সব বাস্তব/স্বপ্ন বলে মজা করছেন?”

তুষার আর কথা বাড়ালো না। সে ভালোই বুঝতে পারছে, তাকে কেউই বিশ্বাস করবে না। এই মুহুর্তে থানার দেওয়ালের সাথে নিজের মাথাটা পিটাতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। তুষারকে চুপ থাকতে দেখে ফারিহা বলে,
“আচ্ছা নিবিড় যে আমার ভাইয়া, তা আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? ওকে ফাইন। ভাইয়া তো আমাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য আসছে। তখন নিজ চোখেই সামনাসামনি দেখে নিবেন।”

অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো। সময় যেন কাটছেই না। চট করে তুষারের নাম্বারের কথাটা মনে হতেই ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
“আচ্ছা সেদিন নাম্বার টা কিভাবে সত্যি হয়ে গেলো?”
“কোন নাম্বার!”
“ঐ যে বললেন বাস্তবে ফিরে গেলে নাম্বারে কল দিতে। আমি বাস্তবে ঐ নাম্বারে কল দিয়ে দেখলাম ওটা ফারিহা নামেরই একটা মেয়ের। এটা কিভাবে সম্ভব!”

ফারিহা এবার তুষারের উপর বিরক্ত হলো। বিরক্তিকর ভাব দেখিয়ে বলে,
“আপনার এই স্বপ্নের গল্পটা কি বাদ দিবেন না? এমনিতেই বাসায় ফিরে গেলে কি হবে ঐ টেনশনে আছি। আপনি আছেন ঐ একই বিষয়ে ফান করা নিয়ে।”
“আমি শুধু জানতে চাইছি ঐ নাম্বার টা সঠিক হলো কি করে?”
“আচ্ছা যদি আপনার কথা সত্যি হয়েও থাকে আমি এসবের কিছু জানি না। আমি তখন যাস্ট মজা করে একটা ভুল নাম্বার বানিয়ে দিয়েছিলাম। আচ্ছা তারপর কি হলো বলুন তো দেখি।”
“দু’বার কথা বলতেই ব্লক করে দিয়েছে। বাস্তবে আপনি আস্ত ভাবওয়ালী।”
“আচ্ছা এখন তাহলে আরেকটা নাম্বার মুখস্থ করে নিন। আপনার ঐ বাস্তবে ফিরে গেলে কল দিবেন।”

যদিও এবার ফারিহা মজা করা নিয়ে বিরক্ত হয়েই আবারও ভুল নাম্বার দিয়েছে। তুষার অনেক্ষণ ধরে নতুন নাম্বার টাও মুখস্ত করে নিল। বাস্তবে ফিরে গেলে এই রহস্য উদঘাটন করতে হবে তাকে।

বিকেলের দিকে ঐ থানায় উপস্থিত হয় নিবিড়। তাদের দুজনকে তার সামনে আনা হলে নিবিড় অবাক হয়ে তুষারের দিকে চেয়ে বলে,
“কিরে, আমার বোনকে পালিয়ে নিয়ে আসা ছেলেটা তাহলে তুই! কিভাবে পারলি এটা তুষার?”

তুষার দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“বিশ্বাস কর ভাই আমি কিচ্ছু করিনি। আমি যাস্ট এই বিপদে ফেঁসে যাওয়া এক নিরিহ ব্যাক্তি।”
নিবিড় স্বাভাবিক দৃষ্টি রেখে বলে,
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি। তুই আমাকে বলতে পারতি। আমি দেখতাম বিষয়টা। পালিয়ে নিয়ে আসার দরকার কি ছিল।”

তুষার কিছু বলতে চাইলেও নিবিড় না শোনার মতো করে ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
“এখানে কিছু বলবো না। আগে বাসায় চল।”

ভয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ফারিহা। বাসায় ফিরে ভাইয়া না হয় একটু বকাবকি করবে। কিন্তু বাবা? নিশ্চয়ই জেন্ত পুতে ফেলবে তাকে।
তুষার এখনো বুঝতে পারছেনা বিষয়টা। বাস্তবে নিবিড় অস্বীকার করেছিল, তার কোনো পরিবার নেই। এখন এখানে বোনও আছে আবার বাসার কথাও বলছে। কি হচ্ছে এসব?

নিবিড় কার সাথে যেন কথা বলে পুলিশ অফিসারের হাতে ফোনটা দেয়। অফিসার খুব সম্মানের সাথে কথা বলে তার সাথে। কথা শেষে খুব সহজেই ছেড়ে দিল তাদের। তারা সাইন করার সময় জিজ্ঞেস করে,
“আপনাদের দ্বায়-ভার রুশান স্যার এত আত্মবিশ্বাস এর সাথে নিল কেন? সে কি হয় আপনাদের?”

To be continue…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here