রহস্যময়_ঘোর (পর্ব ৪) #মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

0
209

#রহস্যময়_ঘোর (পর্ব ৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

অন্ধকারে আচমকাই কারো অতর্কিত আ’ক্র’ম’নে দিশেহারা হয়ে পড়লো সবাই। তৌহিদ র’ক্তাক্ত কপাল চেপে ধরে লুটিয়ে পড়ে ফ্লোরে। তৌহিদের ফোনের প্লাস লাইট অন থাকায় কিছুটা আলোকিত হলো রুমটা।
আজিম, সবুজ, রবি তিনজনই মা’তাল অবস্থায় ঠিকভাবে দাড়াতেও পারছে না। তবুও তুষারকে আ’ঘাত করতে চাইলে তুষার কিছুটা পেছন সরে এসে তাদের আ’ঘাত করতেই মাতাল অবস্থায় জ্ঞান হারায় তারা।

ফারিহা ভয়ে চোখ বুঁজে আছে এসব দেখে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে হলে পিটপিট করে চোখ খোলে সে। দেখে তুষার চেয়ারের পাশে দাড়িয়ে তার বাধন গুলো খুলে দিচ্ছে। ফারিহার ভয় এখনো কাটেনি। কাঁপা গলায় তুষারকে জিজ্ঞেস করে,
“আ,, আপনি এখানে কি করছেন?”
“সব পরে বলছি। প্রথমে এরা জেগে উঠার আগেই এখান থেকে পালাতে হবে।”

বাধন খোলা হতেই ফারিহার হাত ধরে দ্রুত পায়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেলো তারা। রাস্তায় আসতেই দাড়ালো তুষার। ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
“পায়ের হিল গুলো খুলে হাতে নিন। দীর্ঘ পথ। যত দ্রুত সম্ভব পার হতে হবে।”

বলে তুষার তাড়া দেখাতেই ফারিহা পাশ থেকে বলে,
“দাড়ান। ওদিকে কিছু ঘর-বাড়ি দেখা যাচ্ছে। আমরা গিয়ে ওদের কাছে আজ রাতের জন্য সাহায্য চাইতে পারি।”

একা একটা অচেনা মেয়েকে নিয়ে অচেনা বাড়িতে গিয়ে সাহায্য চাইতে কিছুট অস্বস্তি লাগছিল তুষারের। তবুও প্রস্তাবটা ফেলে দিল না। রাত হয়েছে মোটামুটি। এই রাস্তা দিয়ে দ্রুত পায়ে হেটেও এখানে আসতে তার দুই ঘন্টার উপরে লেগেছে। এখন ফারিহাকে নিয়ে আবার সেই পথে যাওয়ার কথা ভাবতেও যেন পা দুটি অবস হয়ে আসছে মুহুর্তেই। যেন পা দুটি আর্তনাথ করে বলছে,
“আর পারবো না বাপ। এবার কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমাকে একটু শান্তি দে।”

একটা বাড়িতে এসে দরজায় কড়া নাড়লো তুষার। একজন ভদ্রলোক দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলো, কারা আপনারা? তুষার তাদের বিপদের কথা বলে রাতে থাকার জন্য সাহায্য চাইলে লোকটা দুঃখিত বলে দরজা বন্ধ করে দিল তাদের মুখের উপর।
আরো কয়েকটা বাড়ি গিয়েও একই পরিস্থিতির সম্মুখিন হলো তারা। কেউই তাদের সাহায্য করতে রাজি হয়নি।
কারণ বেশ কিছুদিন ধরে এই এলাকায় চো’র-ডা’কাতের উৎপাত বেড়েই চলছে। তাই হয়তো অপরিচিত কাউকে সাহায্য করতে রাজি হয়নি তারা।

অনেক চেষ্টার পর একজন লোক রাজি হলো। পরিচয় জানতে চাইলে তুষার বলে স্বামী-স্ত্রী।
তারপর তাদের একটা রুমে নিয়ে গেলো লোকটা।
ঘরটা টিনের। রুমে একটা খাট ও চেয়ার টেবিল ছাড়া আর কিছু নেই। ক্লান্ত শরিরে চেয়ারে বসলো তুষার। ফোন হাতে নিয়ে দেখে রাত সাড়ে দশটা। হটাৎ’ই কারেন্ট চলে গেলো। শরির দিয়ে যেন গরম ভাব বের হচ্ছে। কিছুটা বাতাস আসবে বলে জানালা খুলে দিল তুষার। খোলা জানালা, কোনো গ্রীল নেই জানালায়। যাই হোক ঘর যেমনই হোক। আজ রাতটা নিরাপদে পার হলেই হয়।
ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
“আপনি হয়তো ক্লান্ত। বিশ্রাম নিন।”
ফারিহা কৌতুহল নিয়ে বলে,
“তাহলে আপনি কোথায় ঘুমাবেন?”
“চেয়ারে বসে কোনো রকম সময়টা পার করে দিতে পারবো। আমার সমস্যা হবে না।”

রাত তখন সাড়ে এগারো টা। মাত্র কিছুটা চোখ লেগে এসেছিল ফারিহার। হটাৎই তুষারের অস্বাভাবিক ডাক শুনে জেগে উঠে সে। কিছুটা ঘুম কাতুর চোখে তুষারের দিকে তাকালে তুষার বলে,
“আমাদের এক্ষুনি পালাতে হবে এখান থেকে। বাইরে ঐ ছেলে গুলো দাড়িয়ে আছে।”
“কোন ছেলে গুলো?”
“ঐ যে তখন যাদের মে’রে পালিয়ে এসেছিলাম।”

ফারিহা অনেকটাই অবাক হয়ে বলে,
“তারা আমাদের খোঁজ পেলো কিভাবে!”
“হয়তো বাড়ির মালিকের হাত আছে ওদের সাথে। এখন তাড়াতাড়ি চলুন। সময় নষ্ট নষ্ট না করে ওরা আসার আগেই পালাতে হবে আমাদর।”

ঘুম আসছেনা দেখে একটু বাইরের দিকে গিয়েছিল তুষার। তখনই বাড়ির মালিক ও তৌহিদের সাথে থাকা দুজনকে দেখতে পায় সে। মুহুর্তেই বিষয়টা অনুমান করে ফারিহার কাছে ছুটে আসে।

ফারিহা দরজার দিকে উকি দিতেই তুষার হাত ধরে বলে,
“ঐ দিক দিয়ে না। ওরা দরজার দিকেই আসছে।”
“তাহলে বের হবো কিভাবে?”
“এই জানালা দিয়ে। বাড়ির পেছন দিক দিয়ে গোপনে সরে যেতে হবে আমাদের।”

বলেই ফারিহা ও তার ব্যাগ দুটো জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে নিজেও বের হয়ে আসে। সমস্যায় পরে ফারিহা। সে মেয়ে হয়ে এটা কিভাবে টপকাবে? তাছাড়া ঘরের বাইরের অংশ অনেকটাই নিচ। যা তুষার খুব সহজেই লাফ দিয়ে নেমে গিয়েছিল।
ফারিহার সমস্যা বুঝতে পেরে তুষার হাত বারিয়ে বলে,
“লাফ দিন আপনি। ভায় পাবেন না, আমি আছি। নষ্ট করার মতো সময় নেই।”

ফারিহা চোখ বন্ধ করে লাপ দিতেই তুষার ধরে ফেলে তাকে। ফরিহা চোখ খুলতেই দেখে তুষারের বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে আছে সে। এক পলক ফারিহার দিকে তাকালো তুষার। লাইফে প্রথম কোনো মেয়ে আজ তার এতটা কাছে। তাও একদম শরিরের সাথে লেপ্টে আছে অপরিচিত এক তরুনী। হার্ট যেন হাতুড়ি পেটার মতো করে বিট করতে শুরু করলো মুহুর্তেই।
কিছুটা নার্ভাস হয়ে ফারিহাকে ছেড়ে দিল সে। তারপর স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে ব্যাগ গুলো এক হাতে নিয়ে ফারিহার হাত ধরে দৌড়াতে শুরু করলো।

কিছু দুর যাওয়ার পর বুঝলো পেছনে তাদেরকে খোঁজাখুঁজি চলছে। দৌড়াতে দৌড়াতে একদম জঙ্গলের কাছে চলে এসেছে তারা। লোক গুলোও এদিকটায় আসছে। তাই সোজা রাস্তা বেছে না নিয়ে জঙ্গলের মাঝ দিয়ে ছুটলো তারা। কারণ সোজা রাস্তায় খুব সহজেই ধরা পড়ে যাবে তারা।

ঘন্টা খানেক পর একটা গাছের নিচে বসে পড়লো তারা। পা আর চলছে না কিছুতেই। এই মাঝ জঙ্গলে রাস্তা কোন দিকে তাও বুঝতে পারছে না তুষার। মনে হচ্ছে কোনো মুভির মতো সেও হারিয়ে গেছে এই জঙ্গলে। আচ্ছা, এই জঙ্গলের নাম কি? স্বপ্নের জায়গার আবার নাম হয়?
আপাতত নাম নিয়ে ভাবার কোনল ইচ্ছে নেই। ক্লান্ত হয়ে দুজন বসে রইল চুপচাপ। শরির কিছুটা শান্ত হলে উঠে নিয়ে কয়েকটা লাকড়ি কুড়িয়ে এক জায়গায় রাখলো তুষার। ফারিহা তার পাশে হাতে ফোনের লাইট নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিছুটা কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি করবেন এগুলো দিয়ে?”
তুষার স্বাভাবিক গলায় জবাব দেয়,
“আগুন জালাবো। রাত এখনো অনেক বাকি।জঙ্গলের রাস্তা কোন দিকে ওটাও জানা নেই। তাই এখানেই বিশ্রাম নিয়ে রাতটা পার করতে হবে।”

বলেই পকেট থেকে লাইটার বের করে তুষার। ফারিহা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আপনি স্মোক করেরন?”
“কি করে বুঝলেন?”
“যারা স্মোক করে তাদের কাছেই লাইটার থাকে।”
তুষার ক্ষনিকটা হেসে বলে,
“হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। তবে সব সময় না। মাঝে মাঝে টেনশনে থাকলে খাওয়া হয়। দিনে দু’একটা।”

বলতে বলতেই আগুন ধরালো সে। চার পাশে অনেকটা জায়গা আলোকিত হয়ে গেলো। গাছের নিচটা পরিষ্কার করে নিল। কিছুক্ষণ সেখানে বসে ক্লান্তি কাটিয়ে ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
“আপনি এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। আমি একটু আশপাশটা দেখি কোনো খাবার সংগ্রহ করতে পারি কি না। ভয় পাবেন না, আমি আশে পাশেই আছি।”
ফারিহা আচ্ছা সূচক হালকা মাথা নাড়ালো। তুষার ফোনের প্লাস অন করে হাটা ধরলো আশপাশ চেক করতে। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় ১ টা।

———————————–
ইদানিং তুষার খুব বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে নিবিড়ের প্রতি। স্বপ্নে হলেও একটা মেয়ে তার পাশে আছে, আর এমন আবেগ ময় স্বপ্নটা তার জন্য ভালো ভাবে উপভোগ করারই সুজুগ হচ্ছে না।
একটু পর পর এসে জাগিয়ে দিচ্ছে ঘুম থেকে। এখনও জাগিয়ে দিলো রাতের খাবারের জন্য। একে তো অদ্ভুত স্বপ্নের কথা তারা বিশ্বাসও করে না। তার উপর আবার এসে স্বপ্নের মাঝে ব্যাঘাত ঘটায়।

রাতের খাবার শেষে ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে সিগারেটের লম্বা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো তুষার। তার পাশাপাশি রেজোয়ানের কাছে সকল কথা শেয়ার করছে। এই মুহুর্তে রেজোয়ানই এক মাত্র ব্যাক্তি, যে খুব মনোযোগ দিয়ে তুষারের কথা শুনছে। নিবিড়কে এসব বলতে গেলেই হাসির পাত্র হতে হয় তাকে। তার চেয়ে রেজোয়ানকে বলাই ভালো।

সবটা শুনে একটুও অবাক হলো না রেজোয়ান। কারণ সে আগে থেকেই জানতো এমন কিছু ঘটবে তুষারের সাথে। ফাইনালি তার এত বছরের চেষ্টা ও পরিশ্রম সফল হচ্ছে। একবার এর সফলতা পেয়ে গেলে দেশ-বিদেশে রেজোয়ানের নাম ছড়াতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা এই পনেরো দিনের। কারণ এই পনেরো দিনের ঘোর তুষারকে আরো অনেক কিছুর সম্মুখীন করতে চলেছে।

তুষারকে এই বিষয়ে কিছুই বললো না রেজোয়ান। তুষারও যেন দুঃখ কষ্ট ভাগাভাগি করার বন্ধু পেয়ে বলে গেলো সব। বলতে বলতে ছাদে নিবিড়কে দেখে বিরক্ত হলো সে। কারণ এখনই এই আবেগময় মুহুর্ত টা হাস্যকরে পরিনত করবে নিবিড়।
নিবিড় তার পাশে এসে দাড়িয়ে বলে,
“তো বল, এখন নতুন করে কি স্বপ্নে দেখলি।”

তুষার কিছুটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলে,
“বলে কি লাভ? তুই সব কিছুই ফান মনে করিস।”
“আচ্ছা সিরিয়াস হিসেবে নিব বল।”

তুষার আকাশের দিকে চেয়ে বলে,
“সে আমার খুব কাছে এসেছিল। একদম বুকে। এক মুহুর্তের জন্য কেন জানি আমি তাকে অনুভব করলাম। মনে হয়েছিল, সে আমার খুব কাছের কেউ। হার্ট তখন তীব্র গতিতে বিট করছিল। তারপর তাকে নিয়ে আমি একটা জঙ্গলে হারিয়ে গেলাম। অনেক হাটাহাটি করেও কোনো রাস্তা খুঁজে পেলাম না। তারপর মাঝ জঙ্গলে আগুন জ্বালিয়ে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করলাম।”

পাশ থেকে নিবিড় বলে,
“কি বলিস, আমাদের না জানিয়েই সংসার শুরু করলি!”
“আরে নারে ভাই। একটা বিপদে আটকে ছিলাম আমরা। মাঝ রাত। সাথে পেট ক্ষুদায় টনটন করছিল। ছিলনা কোনো খাবার। আমি মেয়েটাকে আগুনের পাশে বসিয়ে খাবারের সন্ধানে বের হলাম। তারপর তোর ডাকে উঠে দেখি তোরা খাবার নিয়ে বসে আছিস। এখন চিন্তা হচ্ছে মেয়েটা কিছু খেতে পেরেছে কি না।”

নিবিড়ের হাসি আসতেই বাধ্য হয়ে মেয়েদের মতো হাত নিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো। কারণ হাসবেনা বলে কথা দিয়েছিল। তবুও হাসি আসছে, কি জ্বালা৷
তুষার আবারও বিরক্তি নিয়ে বলে,
“হাসছিস?”
“না না। আচ্ছা বল তো তোরা কোন জঙ্গলে ঢুকেছিলি?”
“তা তো জানিনা।”
“তুই না বললি, তোরা খুলনায় গিয়েছিস।”
“হ্যাঁ।”
“সবচেয়ে জনপ্রিয় জঙ্গল সুন্দরবন তো খুলনাতেই।”

নিবিড়ের কথায় তুষার কিছুটা ভেবে আচমকাই বলে উঠে,
“ও মাই গট! তাহলে তো মেয়েটাকে নির্ঘাত বা’ঘে খেয়ে নিবে। হয়তো এতক্ষণে বা’ঘে হা’ম’লা’ও করে ফেলেছে তার উপর। আমাকে এক্ষুনি ঘুমিয়ে স্বপ্নে আবার তার কাছে যেতে হবে। মেয়েটাকে বাচাতে হবে।”

বলেই এক দৌড়ে সিড়ি দেয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো তুষার। নিবিড়ের যেন হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। সে মজা করার উদ্দেশ্য নিয়ে সুন্দরবনের কথা বলেছিল। বেচারা সেটা সিরিয়াসলি নিয়ে এতটা আতঙ্কিত হয়ে যাবে কে জানতো।

নিবিড় হাসতে হাসতে পেছন থেকে ডেকে বলে,
“তাকে বাচিয়ে বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চা সহ, পুরো একটা পরিবার বানিয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসিস বন্ধু। দোয়া করে দিলাম।”

To be continue…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here