তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_২২

0
672

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২২

” অ্যাই অ্যাই এটা একদমই হয়নি। চিটিং করছো কেন?”

” একদম বাজে বলবি না। আমি মোটেও চিটিং করছি না। ইনফ্যাক্ট আমার মতো বাবুসোনা চিটিংয়ের স্পেলিং ই জানে না। চিটিং কারে কয় তাহা তো বহু দূরের বিষয়।”

এতবড় চাপাবাজি শুনে দুয়া আপাতত কো|মায়! অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো উপস্থিত পরিবারের সদস্যরা।
.

সান্ধ্যকালীন প্রহর। ছায়াবিথী’র লিভিংরুমে বড় ক্যারামবোর্ড রাখা। ক্যারামের দুইপাশে বসে দুয়া, তৃষা এবং নিশি, নিজাম সাহেব। আনোয়ারা বেগম সোফায় বসে হাসিমুখে ওদের খেলা দেখছেন। চারজন সদস্যের দ্বৈত খেলা বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। দুয়া এবং তৃষা এক দলে। নিশি এবং নিজাম সাহেব আরেক দলে। দুয়া’র শিকারি চক্ষু নিবদ্ধ রেড গুটিতে। মেয়েটি রেড গুটি নিশানা করে চাল দিলো। তৃষা উৎফুল্ল নয়নে তাকিয়ে। নিজাম সাহেব এবং নিশির কপালে চিন্তার ভাঁজ। এই বুঝি তারা হেরে গেল! কিন্তু হায়! মুহুর্তের মধ্যেই তৃষার উৎফুল্লতা হারিয়ে গেল। চান্স মিস করে ফেলেছে দুয়া।

” ওহ্ শিট! ”

চোখমুখ কুঁচকে দুঃখপ্রকাশ করলো দুয়া। তখনই কর্ণ কুহরে পৌঁছালো হাস্য ধ্বনি। চারজনেই বামে তাকালো। তূর্ণ মহাশয় দাঁড়িয়ে। বেশ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। দুয়াকে তাচ্ছিল্য করে বললো,

” হুহ্! উল্টোপাল্টা ভাবে খেললে ওহ্ শিট শিট তো হবেই‌। ”

দুয়া ভ্রু কুঁচকে শুধালো,

” তুমি কি আমার খেলার নৈপুণ্যকে আন্ডারস্টেমিমেট করছো? ”

তূর্ণ এসে নিশির পাশে বসলো। বাবাকে সসম্মানে সোফায় তুলে দিয়ে উত্তর দিলো,

” জ্বি হ্যাঁ। সবার দ্বারা সব হয় না। ”

” আচ্ছা? বাবার বদলে যখন বসেই পড়েছো হয়ে যাক এক রাউন্ড? ”

তূর্ণ দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

” ওকে ওকে। আমি আবার পত্নীভক্ত পুরুষ। বউয়ের কথা ফেলতে পারি না। ”

চাপাবাজি শুনে দুয়া ভেংচি কাটলো। আনোয়ারা বেগম মুচকি হেসে বললেন,

” পাঁজি ছেলে। শুধু শুধু বউয়ের পেছনে লাগছিস কেন?”

” নানুমনি! পেছনে লাগলাম কোথায়? আমি তো সামনে। ”

তূর্ণ বেবি ফেস করে নানুমনিকে শুধরে দিলো। তা দেখে দুয়া বিড়বিড় করে বললো,

” ঢং দেখলে বাঁচি না। ”

তূর্ণ তা শুনতে পেয়েও কিছু বললো না। বরং ওর দিকে তাকিয়ে থাকাবস্থায় নিশিকে বললো,

” তো ব্যাহনা! খেলা শুরু করা যাক? ”

” ইয়াহ্। ” হাসিমুখে সম্মতি জানালো নিশি।

শুরু হলো দ্বৈত খেলা। দুয়া, তৃষা ভার্সেস তূর্ণ, নিশি। নতুন করে খেলা শুরু হয়েছে। দুয়া কালো গুটি এবং তূর্ণ সাদা গুটি। দুই পক্ষই নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলছে।

” সাবাশ! চালিয়ে যাও। ”

ছেলে-মেয়েদের উৎসাহ প্রদান করে নিজাম সাহেব উঁচু কণ্ঠে পত্নীকে ডেকে উঠলেন।

” তাসলিমা। ও লিমা! জমজমাট খেলা চলছে। দেখে যাও। ”

তাসলিমা কিচেন থেকে জবাব দিলেন,

” আমি ব্যস্ত। তোমরাই দেখো। ”

” তুমি মিস করে ফেলবে তো। ”

” আমি ব্যস্ত। আসা সম্ভব না। ”

” ঠিক আছে থাকো রান্নাঘরে। কত জমজমাট একটা খেলা মিস করে ফেললে। ”

নিজাম সাহেব পুনরায় খেলায় মনোনিবেশ করলেন। খেলার এক পর্যায়ে দুয়া শনাক্ত করতে পারলো যে তূর্ণ মহাশয় চিটিং করছে। তৎক্ষণাৎ জোর বাক্যে আপত্তি জানালো সে।

” অ্যাই অ্যাই এটা একদমই হয়নি। চিটিং করছো কেন?”

তূর্ণ তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানিয়ে বললো,

” একদম বাজে বলবি না। আমি মোটেও চিটিং করছি না। ইনফ্যাক্ট আমার মতো বাবুসোনা চিটিংয়ের স্পেলিং ই জানে না। চিটিং কারে কয় তাহা তো বহু দূরের বিষয়।”

এতবড় চাপাবাজি শুনে দুয়া আপাতত কো`মায়! অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো উপস্থিত পরিবারের সদস্যরা। তৃষা হাসতে হাসতে বললো,

” ভাইয়া গুটি ফেরত দাও। নইলে কিন্তু এলিমিনেট করা হবে।”

” আমার কাছে কোনো গুটি নেই। ”

দুয়া বললো,

” ভালোয় ভালোয় ফেরত দাও বলছি। নইলে কিন্তু.. ”

” নইলে কি? হাঁ? ভয় দেখাচ্ছিস আমায়? আমি বুঝি তোর মতো পুতলাকে ভয় পাই? ”

” এখানে ভয় পাওয়ার প্রসঙ্গ আসছে কোথা থেকে? গুটি ফেরত দাও বলছি। ”

” গুটি নেই। ”

দুয়া’র পানে মৃদু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো সম্মোহনী বাক্য,

” তবে একবুক ভালোবাসা আছে। লাগবে? হুঁ? ”

ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টু হেসে শুধালো তূর্ণ। তাতেই কুপোকাত দুয়া। মেয়েটি কাঠিন্যতা ত্যাগ করে কোমলতায় ফিরে এলো। লাজুক আভা ছড়িয়ে পড়লো মুখখানিতে। আনমনে নত হলো মুখ। সে লালিমা মাখা মুখশ্রীতে বিমোহিত হলো পৌরুষ চিত্ত! মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করতে লাগলো মাইরা’র লাজে রাঙা মুখখানি। দুয়া আস্তে করে চোখ তুলে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই আটকে গেল সম্মোহনী চাহনিতে। একে অপরের নয়ন সাগরে ডুবে গেল দু’জন। মানুষটির অধরকোণে ফুটে উঠলো তৃপ্তিকর হাসির রেখা। ঠিক তখনই ট্রে হাতে হাজির হলেন তাসলিমা। সকলের জন্য সবজি পাকোড়া নিয়ে হাজির হয়েছেন।

” খেলা বন্ধ করো সবাই। সোফায় এসে বসো। পাকোড়া এনেছি। ”

” ওয়াও! পাকোড়া! ”

জিভে পানি চলে এলো নিশি’র। দুইবোন ছুটে গিয়ে সোফায় বসলো। চটাপট দখল করে নিলো পাকোড়া। এসবের ভিড়ে দু’জনার মুগ্ধময় দৃষ্টি বিনিময় ভঙ্গ হলো। তূর্ণ হঠাৎ করেই চোখ টিপে দিলো। তাতে হকচকিয়ে গেল মেয়েটি। বক্র হেসে খেলার আসর ত্যাগ করে উঠে দাঁড়ালো তূর্ণ। বসলো সোফায়। সেদিকে আড়চোখে তাকিয়ে দুয়া দৃষ্টি নত করে নিলো। লজ্জা মিশ্রিত হেসে সে-ও উঠে দাঁড়ালো।

দিবাকরের আলো ছুঁয়ে যাচ্ছে কায়া। কক্ষজুড়ে অস্থির মেয়েটি পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। কখনো নখে দন্ত আ’ক্রমণ করছে। কখনোবা সে বসে পড়ছে টাফটেড বেঞ্চে। কখনো আবার পানি পান করে শুকনা গলা সিক্ত করে নিচ্ছে। এমনই সময় কক্ষে প্রবেশ করলো তূর্ণ। তার মাইরা’র ( প্রিয়তমা ) এমন দশা দেখে কিছুটা অবাক হলো! মেয়েটি এমন করছে কেন? ধীরপায়ে এগিয়ে গেল তূর্ণ। দুয়া তখন টাফটেড বেঞ্চে বসে ধ্যানে মগ্ন। আলতো হাতে ওর কপাল স্পর্শ করলো তূর্ণ। তাপমাত্রা তো স্বাভাবিক। তবে?

” দুয়া! ”

হঠাৎ কর্ণ কুহরে কারোর কণ্ঠস্বর পৌঁছাতেই হকচকিয়ে গেল দুয়া। মুখ তুলে তাকালো। দেখতে পেল তূর্ণ দাঁড়িয়ে। চিন্তিত বদনে শুধালো,

” কি হয়েছে তোর? এমন অস্থির হয়ে আছিস কেন? এনি প্রবলেম? ”

” হুঁ। ” মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মেয়েটি।

” কি হয়েছে? বল আমাকে। ইনশাআল্লাহ্ সব সলভ্ করে দেবো। বল। ”

” পরীক্ষা সলভ্ করবে কি করে? ”

” হোয়াট? ” তূর্ণ ঠিক বুঝতে পারলো না।

দুয়া মলিন মুখে বললো,

” হাঁ। দু সপ্তাহ বাদে পরীক্ষা। ফাইনাল পরীক্ষা। ফাইনাল। চিন্তায় চিন্তায় আমার হাত-পা এমনকি পুরো শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসবে। কেঁপে কেঁপে উঠছে অন্তরাত্মা। কি হবে আমার? পাশ না ফেইল? ”

আকস্মিক অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো তূর্ণ। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এমন আচরণে হতবাক দুয়া! উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিস্মিত কণ্ঠে শুধালো,

” তুমি হাসছো? ”

তূর্ণ হাসতে হাসতে ওর কপালে টোকা দিয়ে বললো,

” গাঁধী। পরীক্ষার ভয়ে কেউ এমন করে? তোকে তো পুরো আদুআপা লাগছে। ”

দুয়া ভ্রু কুঁচকে ফেললো।

” আদুআপা! এটা আবার কি? ”

” হা হা। আদুভাইয়ের ফিমেল ভার্সন। ”

সরু চোখে তাকালো মেয়েটি। পুনরায় টাফটেড বেঞ্চে বসে বললো,

” বাজে বলবে না। আ’ম নট আদুআপা। ”

” ওকে ফাইন। বলবো না। ফাইনাল পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে দেখা। আর বলবো না। ”

দুয়া চিন্তিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,

” ফার্স্ট ক্লাস আসবে তো? এবার না প্রিন্সিপলস্ অফ ফিন্যান্স বেশ জটিল। এছাড়া অ্যাকাউন্টিং তো আছেই। আমার বেশ ভয় হচ্ছে। ম্যাথে একটু গড়বড় হলেই তো সব খতম। ”

তূর্ণ ওর দু বাহু স্পর্শ করে উঠে দাঁড় করালো। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দু’জনে। তূর্ণ সহধর্মিণীর চোখে চোখ রেখে বললো,

” নো টেনশন ওয়াইফি। যা হবে ইনশাআল্লাহ্ ভালোই হবে। ভয়কে জয় করে প্রিপারেশন নেয়া শুরু কর। হাতে এখনো দুই সপ্তাহ আছে। ইটস্ এনাফ ফর গুড প্রিপারেশন। আল্লাহ্’র রহমতে নিশ্চয়ই সফলকাম হবি।”

” হবো তো? ”

” ইনশাআল্লাহ্। ”

চিন্তিত বদন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠলো। সত্যিই দুশ্চিন্তা অনেকাংশে লাঘব পেয়েছে। এই মানুষটির প্রতিটি বাক্যে কি জা*দুকরী উপাদান মিশ্রিত থাকে! যা কর্ণগোচর হলেই সমস্ত ভয়-চিন্তা উধাও! দুয়া’র অধর কোণ প্রসারিত হলো। মুগ্ধময় দৃষ্টিতে তাকালো স্বামীর পানে। এতদিন এই মানুষটি চেনাজানা ছিল। কাজিন ছিল। দু’জনের মধ্যে ছিল টম এন্ড জেরি সম্পর্ক। একে অপরের পিছে লাগবে ঠিকই কিন্তু একে অপরের কেয়ার করতেও ভুলবে না। তারা যেন অঘোষিত একে অপরের পরিপূরক ছিল। আজ তাদের সম্পর্কের সমীকরণ বদল হয়েছে। বদলেছে সম্পর্কের নাম। সে-ই সঙ্গে একে অপরের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনাও পরিবর্তিত হয়েছে। দুয়া চেনা মানুষটির অচেনা এক রূপ প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করছে। অনুধাবন করতে পারছে তার হৃদয়ের বৃহৎ একটি অংশ কোনো জা*দুকরের দখলে চলে যাচ্ছে। নিজেকে নিত্যনতুন রূপে আবিষ্কার করছে সে। টের পাচ্ছে বক্ষপিঞ্জরের অন্তরালে লুকায়িত হৃদযন্ত্রটি আজ অন্যের সান্নিধ্যে দ্রুততম গতিতে স্পন্দিত হচ্ছে। এ কেমন অজানা অনুভূতিতে আবিষ্ট হচ্ছে তনুমন!

প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দোরগোড়ায়। হাতে মাত্র নয়দিন সময়। মন ও মস্তিষ্ক একত্রিত করে পড়াশোনায় মগ্ন দুয়া এবং তৃষা। দু’জনেই নিজেদের সেরাটা দিয়ে পড়াশোনা করছে। প্রত্যাশা ফার্স্ট ক্লাস। তৃষা তো সিজিপিএ থ্রি পাড় করতে পারলেই মহাখুশি। কিন্তু জাহিরাহ্ দুয়া! তার স্বপ্ন খুব ভালো সিজিপিএ অর্জন করে পরিবারকে গর্বিত করা। একটি ভালো রেজাল্ট উপহার দেয়া। তাই তো এত পরিশ্রম।
.

প্রিন্সিপলস্ অফ অ্যাকাউন্টিং এর ম্যাথ করছিল দুয়া। দু’টো অঙ্কে গিয়ে আটকে পড়েছে। দু’টো অঙ্ক ই ইম্পর্ট্যান্ট। বেশ কয়েকবার ফাইনাল পরীক্ষায় এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই এটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন করবে টা কি? অসময়ে এসে ফেঁসে গেল। দুয়া টেস্ট পেপার হাতড়ে অঙ্ক দু’টো খুঁজে বের করলো। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। সে বুঝতেই পারছে না ঠিক কিভাবে অঙ্ক দু’টো সমাধান করবে। দুয়া’র চিন্তিত মুখশ্রী দৃষ্টি এড়ালো না তূর্ণ’র। সে হাতে থাকা সাইন্স ফিকশন বইটি রেখে ওর সন্নিকটে এলো।

” কি হয়েছে? এমন হুতুম পেঁচার মতো মুখ করে আছিস কেন? ”

দুয়া মৃদু স্বরে বললো,

” অঙ্কে প্রবলেম হচ্ছে। সলভ্ করতে পারছি না। ”

” দেখি কোন অঙ্ক। ”

দুয়া মুখ তুলে তাকালো।

” তুমি বুঝবে না তো। এগুলো কমার্সের ম্যাথ। ”

” তাতে কি হয়েছে? গ্রুপে কি এসে যায়। অঙ্ক তো অঙ্ক ই। দেখি কোনটায় প্রবলেম? ”

নিজ উদ্যোগে টেস্ট পেপার হাতে নিলো তূর্ণ। দুয়া দেখিয়ে দিলো কোনটায় সমস্যা। তূর্ণ বেশ ভাব নিয়ে প্রশ্ন দেখতে লাগলো। এমন ভাব যেন এক্ষুনি সমাধান করে দেবে। কিন্তু এ কি হাল! প্রশ্নের গভীরে ঢুকতেই লেকচারার আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ ফুঁস! কিসব ডেবিট ক্রেডিট। অ্যাকাউন্টস্ রিসিভেবল, আনআর্নড্ রেভিনিউ ইত্যাদি ইত্যাদি দেয়া। এসব কি?

” এগুলো কি? এই ডেবিট ক্রেডিট না হয় শুনেছি।‌ কিন্তু বাকিগুলো? এগুলো কি? ”

” অ্যাকাউন্টিং এর অবিচ্ছেদ্য অংশ। তুমি বুঝবে না। ”

” বললেই হলো নাকি? কমার্সের চেয়ে সায়েন্স কিন্তু কয়েক গুণ বেশি কঠিন। সেই সায়েন্স যখন আমার হাতের মুঠোয় তখন কমার্স বুঝবো না? ”

” না বোঝার সম্ভাবনা বেশি। জানো তো সায়েন্সের স্টুডেন্টরা মনে করে কমার্স একদম পানির মতো সহজ। কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু আমি নিজের চোখে দেখেছি। শুনেছি। আমার কিছু সহপাঠী ছিল স্কুল লেভেলের। ওরা এখন সায়েন্সের সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছে। এত কঠিন কঠিন ম্যাথ ওরা সলভ্ করে। কিন্তু কমার্সের ম্যাথ বোঝে না। ওরা নাকি ডেবিট ক্রেডিট নাম দু’টো শোনেইনি। বাকিগুলো তো পরের বিষয়। সেখানে কমার্স, আর্টসের স্টুডেন্টরা কিন্তু সায়েন্সের টুকটাক বিষয়াদি জানে। তাহলে কি বোঝা গেল? কোনো গ্রুপ ই সহজ না। সবাই যার যার জায়গায় কঠিন। বুঝলে? ”

তূর্ণ মুচকি হাসলো। বিনা দ্বিধায় নিজের অপারগতা স্বীকার করে বললো,

” থ্যাংকস ম্যাডাম। একটা ভুল ধারণা ভেঙে দিলেন। আসলেই যার যার সাবজেক্ট তার তার কাছে সেরা। কঠিন। ”

” হুম। ” মুচকি হেসে সম্মতি পোষণ করলো দুয়া।

তূর্ণ টেস্ট পেপার রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বললো,

” এসব ডেবিট ক্রেডিট আমার কর্ম নয়। আমি বরং তোকে ইউটিউব থেকে কিছু লেকচার বের করে দিচ্ছি। ওগুলো ভালোমতো দেখ। ইনশাআল্লাহ্ বুঝতে পারবি। এতে না হলে কাল সকাল সকাল কোনো ফ্রেন্ডকে কল করে হেল্প নিস। এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে। এতরাতে কল করা ভালো দেখাবে না। ”

” ঠিক আছে। আমি ইউটিউবে দেখছি। ”

তূর্ণ নিজের মোবাইল এগিয়ে দিলো। দুয়া ইশারায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মোবাইলটি হাতে নিলো। খুঁজতে লাগলো কাঙ্ক্ষিত ভিডিও। তূর্ণ বইয়ের দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে বিছানা ত্যাগ করলো। সেদিকে তাকিয়ে দুয়া তৃপ্তিময় হাসলো। কারো কারো ভাষ্যে আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ সেল্ফ সেন্টারড্ পার্সন। অহংকারী। ঠোঁটকাটা নি’র্লজ্জ পুরুষ। নিজেকে সর্বদা পারফেক্ট দাবী করে। আসলেই কি তাই? উঁহু ভুল তারা। তারা তো আর তূর্ণের প্রকৃত রূপটি সম্পর্কে অবগত নয়। জানে না এই দুষ্টু মানুষটির অন্তরালে লুকায়িত এক সরল প্রাণ। হাসিখুশি, মিশুক আর খুবই ভালো একজন মানুষ সে। যে কিনা একজন ট্রু ফ্রেন্ড। শুধু সুসময় নয় বরং দুঃসময়ের বন্ধুও। আজকাল নিজেকে কেমন ভাগ্যবতী মনে হয়! মুচকি হেসে মোবাইলে মনোযোগ দিলো দুয়া।

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here