#রহস্যময়_ঘোর (পর্ব ৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসতেই বুকটা কেঁপে উঠে তুষারের। তাহলে নাম্বার টা কি সত্যিই বাস্তবিক ফারিহা নামের কোনো মেয়ের? এটা কিভাবে সম্ভব!
“হ্যালো, কে বলছেন?”
আবারও সেই কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে তুষার। কিছুটা স্বাভাবিক গলায় বলে,
“ফারিহা বলছেন?”
“জ্বি, আপনি কে বলছেন?”
এবার বুকের ভেতর ধুকপুক আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলো। মেয়েটা আবারও একই প্রশ্ন করলে কিছুটা বিব্রত হয়ে বলে,
“আমি তুষার।”
“কোন তুষার। আপনাকে কি আমি চিনি?”
“আপনি হয়তো চেনেন না। তবে আমি আপনাকে চিনি।”
“কিভাবে?”
“স্বপ্নের মাধ্যমে।”
“মানে!”
“বোঝেননি তাই তো? আচ্ছা, বুঝিয়ে বলছি।”
“বুঝিয়ে বলতে হবে না। আমার নাম্বার পেয়েছেন কোথায়?”
“আপনিই দিয়েছেন।”
“কোখন? আমি তো আমার নাম্বার কোনো ছেলেকে দিই না।”
“আপনিই দিয়েছেন। ঐ যে বললাম না, স্বপ্নে।”
“পাগল আপনি?”
“যেটা ভাবেন, এখন একটা প্রশ্নের উত্তর দেন।”
“ফোন রাখেন। আজাইরা বকবক শোনার ইচ্ছে নেই।”
বলেই বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিল মেয়েটা। তুষার ফোনের দিকে চেয়ে বলে, যেটা জানার জন্য ফোন দিল, ওটাই জানতে পারলাম না।
আবারও ফোন দিল ঐ নাম্বারে। ধরলো না। পরপর আরো দুইবার দিল। মেয়েটা এবার ফোন রিসিভ করে বলে,
“সমস্যা কি আপনার?”
“শুনুন, একটা কথা জেনে আর ফোন দিব না। শুধু একটা প্রশ্ন।”
“কি সেটা?”
“আপনি এখন কি করছেন?”
“ফাইজলামি করেন?”
“ফাইজলামি না, সত্যি এটা জানা খুব দরকার। তাই আপনাকে বার বার ফোন দে….।”
আবারও কল কেটে দিল মেয়েটা। তুষার হাল ছাড়লো না। কিছু সময় অপেক্ষা করে আবারও ফোন দিলে বুঝতে পারে ওপাশ থেকে তার নাম্বার ব্লক করা হয়েছে। বিনিময়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। সন্ধা হয়েছে সেই কখন। এই মুহুর্তে চারপাশটায় শহরের কৃত্রিম আলোয় জ্বলে উঠেছে।
কিছুটা ক্লান্তি অনুভব করলে ছাদের একপাশে হেলান দিয়ে নিচে বসে রইল সে। মাথাটা ঝিমাচ্ছে খুব। ঘুমের ঘোর এতটাই গাড় হচ্ছে যেন চোখ বন্ধ করলেই সে হারিয়ে যাবে ঘুমের দেশে। হলোও ঠিক তেমনটা। ক্লান্তিতে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইল সে। যা তাকে পূনরায় নিয়ে গেলো সেই ঘোরের সময়টাতে।
—————————————
মেয়েটা চলে গেলো অনেক্ষণ হয়েছে। সন্ধা নেমে এসেছে চারপাশে। ব্যাঞ্চের এক পাশে কতক্ষণ বসে ছিল মনে নেই তুষারের। পাশে পরে থাকা পার্স টা হাতে নিল সে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ফেলে গেছে সেটা। এখন এটা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সেই মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে গেলেও তা সহজ হবে না। কারণ মেয়েটার নাম ছাড়া আর কিছুই জানেনা সে। এটাও জানে না তারা কোথায় গিয়েছে।
তাছাড়া জিনিসটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা দেখার জন্য হালকা খুলতেই দেখে ভেতরে কয়েকটা টাকার বান্ডেল। তুষার তা হাতে নিয়ে দেখে পাঁচশো টাকার পাঁচটা বান্ডেল। মানে আড়াই লাখ টাকা। নিশ্চই পালিয়ে আাসার সময় বাসা থেকে চুরি করেছে, নয়তো ব্যাংক থেকে তুলে এনেছে। পালিয়ে বিয়ে করছে। অবশ্যই মেয়েটার এই টাকা গুলো খুব বেশিই প্রয়োজন। এগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য আগে মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে। তুষার চুপচাপ সেগুলো আগের মতো রেখে তা নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল। অতঃপর ব্যাগটা কাধে নিয়ে এগিয়ে গেলো দাড়িয়ে থাকা সিএনজি গুলোর দিকে। ওখানে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকেও বুঝে উঠতে পারছে না কি করা উচিৎ তার। কিভাবে ঐ মেয়েটাকে খুঁজে পাবে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই একটা সিএনজি এসে থামলো তার সামনে। যাত্রীদের থেকে ভাড়া নিয়ে বেড়িয়ে আসলো একটা ড্রাইভার। সেই লাল দাড়ি ওয়ালা লোকটা। যার গাড়িতে করে ফারিহা আর ঐ ছেলেটা গিয়েছিল।
তার কাছে এগিয়ে গেলো সে।
কিছুক্ষণ আগে রিজার্ভে নিয়ে যাওয়া একটা ছেলে ও একটা মেয়ের ব্যাপারে জানতে চাইল। তারা কোথায় গিয়েছে।
লোকটা পান চিবোতে চিবোতে বলল, সে জানেনা। তবে তার সিএনজিতে করে যতটুকু গিয়েছে ততটুকু নিয়ে যেতে পারবে।
তুষার সিএনজিতে উঠে বলে, তাহলে সেখানে নিয়ে চলুন। ওদেরকে যেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন।
মিনিট বিশেক পর সিএনজি থাকমো। লোকটা তুষারের দিকে চেয়ে বলে,
“তারা এখানেই নেমেছিল।”
তুষার নেমে দেখে একটা কাঁচা রাস্তা। রাস্তার দু পাশে গাছপালায় ঘেরা। অনেকটাই জঙ্গলের মতো। ফোনের প্লাস লাইট দিয়ে রাস্তাটা দেখে নিয়ে বলে,
“আপনি শিউর, ওরা এখানেই নেমেছিল?”
লোকটা মাথা নাড়লো। মানে সে নিশ্চিত হয়েই বলছে। আপাতত মেয়েটার টাকা গুলো ছারা আর কোনো টাকা ছিলটা দেখে, বেগ হাত ঢুকিয়ে ওখান থেকে একটা পাঁচশ টাকার নোট বের করে লোকটাকে দিল। ড্রাইভার তাকে তিনশ পঞ্চাশ টাকা ফেরত দিল। তুষার সেগুলো নিয়ে নিল চুপচাপ। না জানি সামনে আবারও ভাঙতির প্রয়োজন হয়।
লোকটা চলে গেলো গাড়ি নিয়ে। তুষার লাইট দিয়ে ভালো ভাবে রাস্তাটা লক্ষ করে দেখে, কাঁচা মাটি উপর পরিষ্কার ভাবে চাকার ছাপ বসে আছে। রাস্তায় আরো একটা গাড়ির ছাপ পেলেও সেটার উপর ধুলো জমে আছে। মানে ওটা আরো আগের। তার মানে চাকার নতুন ছাপটাই সেই গাড়ির যা একটু আগে গিয়েছে। নিশ্চই ফারিহাও ওটাতে করে গিয়েছে। তাছারা এখানে দুজন মানুষের জুতার ছাপ আছে শুধু। একটা মেয়েদের হিল, অন্যটা পুরুষের জুতা।
তার মানে শিউর এই রাস্তায়ই গিয়েছে তারা। লাইট নিয়ে দ্রুত পায়ে সেই ছাঁপ ফলো করে এগিয়ে গেলো সে। হাটতে হাটতে অনেকটা পথ এগিয়ে গেলো সে। ঘরির দিকে চেয়ে দেখে প্রায় ঘন্টা খানেক দ্রুত গতিতে হেটেও এই চাকার ছাপ শেষ হয়নি। এখন অব্দি একটা বাড়িত চোখে পড়েনি তার।
কি আশ্চর্য! এ কোন জায়গায় ঢুকে পড়লো সে? চার পাশে ঘন গাছপানা ছাড়া আর কিছুই নেই।
তবুও হাটছে চাকার ছাপ যতটুকু যাচ্ছে ততটুকু। ঘন্টা দুয়েক হাটার পর কিছুটা দুরে আলো জ্বলতে দেখছে সে। এবার আর জঙ্গল নেই। দুই পাশে ধান ক্ষেত। মাঝখান দিয়ে একটা পথ। গাড়িটা এই পথ দিয়েই গেছে। তুষার সামনের দিকে চেয়ে হাটতে লাগলো। এ কোন জায়গায় এসে ঢুকে পড়েছে বুঝে উঠতে পারছে না সে। বাস্তবে কি সত্যিই এমন কোনো জায়গা আছে? ভাবতে ভাবতে ঐ পথটাও পার হয়ে গেলো। আজব! রাস্তায় কোনো মানুষ নেই কেন?
রাস্তার পাশে একটা একাকি বাড়ি। আশাপাশের বাড়ি গুলো অনেকটাই দুরে। দুরুত্ব হলো, মাঝখানে কয়েকটা জমি। ওপাশে হয়তো কোনো একটা গ্রাম।
একটা কালো গাড়ি এই নির্জন বাড়িটার সামনে দাড়ানো। ফারিহা হয়তো এই বাড়িটাতেই আছে। ক্লান্ত শরিরে দাড়িয়ে পরপর কয়েকটা শ্বাস নিল সে। এতটা পথ হেটে প্রচুর ক্লান্ত লাগছে শরির। ব্যাগ থেকে ফারিহার কিনে দেওয়া পানির বোতলটা বের করে পানি খেয়ে নিল। অতঃপর এগিয়ে গেলো বাড়িটার দিকে।
মুখ বাধা অবস্থায় একটা চেয়ারে বেধে রাখা হয়েছে ফারিহাকে। তার সামনে তৌহিদ সহ আরো দু’তিন জন মানুষ ড্রিংক করছে। তৌহিদকে দেখে মনে হচ্ছে, সে অনেকটাই ক্ষেপে আছে ফারিহার উপর।
কারণ আশার পর ফারিহাকে জিজ্ঞেস করে,
“টাকা এনেছো?”
ফারিহা বড়ো ব্যাগ চেক করে মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“ও মাই গট। টাকা গুলো তো ভুলে ঐ লোকটার কাছে ফেলে এসেছি। এখন কি হবে?”
তৌহিদ আচমকাই দাত-মুখ খিঁচে ফারিহার গালে চ’র বসিয়ে দেয়। ফ্লোরে পরে গালে হাত দিয়ে অবার দৃষ্টিতে তৌহিদের দিকে তাকায় ফারিহা। যে ছেলেটা আজ অব্দি তার সাথে কখনো কড়া গলায়ও কথা বলেনি, সে আচমকাই গায়ে হাত তুলল। যেন বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে তার।
তৌহিদ অনেকটাই ক্ষপে গিয়ে বলে,
“বোকা মনে হয় আমাকে? ঘুরিয়ে না পেঁচিয়ে সোজা ভাবে বললেই পারতি, বাসা থেকে কোনো টাকা আনতে পারিস নি।”
ফারিহা কিছুটা ভয় পেয়ে কাঁদু কাঁদু গলায় বলে,
“আমি সত্যি টাকা এনেছিলাম। ব্যাগে আড়াই লাখ টাকা ছিল।”
তৌহিদ হয়তো বিশ্বাস করেনি তাকে। ফারিহার চুল ধরে বলে,
“তোর আগেও আমার সতেরোটা গার্লফ্রেন্ড ছিল। তার মাঝে চৌদ্দ জন সাথে টাকা নিয়ে আসলেও, তিনজন তোর মতো সেম কাজটাই করেছে। তাদের অবস্থা কি হয়েছে জানিস। আমাদের বন্ধুদের খাবার হয়ে রাত শেষে ঐ জঙ্গলে মাটির নিচে হারিয়ে গেছে। বিজনেসে লস হওয়াটা আমার মোটেও পছন্দ না।”
ফারিহার বুকটা কেঁপে উঠলো এবার। তার সাথেও কি এখন একই জিনিস ঘটতে চলছে? ভাবতেই আরো তিনজন ছেলেকে ঘরে ঢুকতে দেখে সে। তাদের হাতে ম’দের বোতল।
আসার পর থেকে প্রায় এক ঘন্টা ধরে বাধা অবস্থায় পড়ে আছে ফারিহা। ছেলে চারজন ভরপুর ম’দ্য পান করলো একসাথে। অতঃপর তৌহিদ মা’তাল অবস্থায় তার সামনে এগিয়ে আসলো। ফারিহার মুখে লাগানো টেপটা খুলে দিতেই ফারিহে থু থু ছিটিয়ে মারে তৌহিদের মুখে। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তার। ক্ষনিকটা কাঁন্নাজড়িত ভাব নিয়ে তেজস্বী গলায় তৌহিদের দিকে চেয়ে বলে,
“যদি জানতাম তুই একটা অমানুষ, তাহলে পরিবার ছেড়ে আশা তো দুরে থাক তোকে ভালোই বাসতাম না কখনো। এখন তোর চেহারার দিকে তাকাতেও ঘৃণা হচ্ছে আমার।”
বিনিময়ে তৌহিদের সাথে তার তিন বন্ধুও হেসে উঠলো। দেখে মনে হচ্ছে, ফারিহার কথায় মজা পাচ্ছে তারা। তৌহিদ গাল ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
“এগুলো কমন ডায়লগ ডারলিং। আগেও শুনেছি। শুনতে শুনতে কান পঁচে গেলো। নতুন কিছু ঢাকলে সেগুলো বলো।”
তীব্র ঘৃণা নিয়ে মুখ সরিয়ে নিল ফারিহা। হাত পা বাধা দেখে খুব বেশি সরতে পারলো না সে। পাশের ছেলে গুলো হেসে উঠলো আবারও।
আচমকাই পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে গেলো। হয়তো কারেন্ট চলে গেছে। কিন্তু পাশের বাড়ি গুলোতে আলো জ্বলছে এখনো। ওদিকে কারেন্ট যায়নি, এখানে কি করে গেলো? বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছে তৌহিদ।
ফোনের আলো জ্বালাতে গেলেই আচমকাই ভাড়ি কিছু দিয়ে আ’ঘাত পরে তার মাথায়। মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে সে। চিৎকার করে বলে উঠে,
“আজিম, সবুজ, রবি কোথায় তোরা? কি হচ্ছে এসব! বাড়িতে অন্য কেউ প্রবেশ করলো কি করে?”
To be continue………………
বিঃদ্রঃ গল্পটা পুরোটাই কাল্পনিক। বাস্তবে এমন ঘোর কখনো হয় না। এটা ঘোরের মধে থাকা কাহিনি ও সেই ঘোরের গোপন রহস্য নিয়ে লেখা একটা কাল্পনিক গল্প।