_লাল_নীল_সংসার_ #_মারিয়া_রশিদ_ #_পর্ব_৫_

0
411

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_৫_

শিশির অফিসে নিজের ডেস্কে বসে কাজ করছে। মাথা টাহ কেমন যেন ঝিম ধরে আছে তার। একটা টাফনিল খেয়ে নিয়েছে, যেন ব্যাথা নাহ বাড়ে। মাথারই বা কি দোষ? রোজ রোজ এতো চিন্তা এসে জড়ো হচ্ছে যে, মাথা ব্যাথা তো করবেই। বাবা খবর নেওয়ার পর যদি জমির দাম ভালো আসে তাহলে সেই ব্যবস্থায় এগোবে শিশির। অফিস লোন নিলে, জমিটা হয়তো বাঁচানো যাবে কিন্তু সংসারে টানাটানি হয়ে যাবে অনেক। আর সেই বা কি করবে এই বিলের জমি দিয়ে? শুধু শুধু পড়ে আছে। তাতে যদি সেইটা বেঁচে এই ঝামেলা থেকে মুক্ত হওয়া যায় তাই ভালো। এইসব ভাবছিলো আর কাজ করছিলো শিশির। এমন সময় ফোন বেজে উঠতেই কাজ এবং ভাবনায় বাঁধা পড়ে শিশিরের। শিশির ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার কাকা ফোন দিয়েছে। এই লোকটা এখন আবার কেন ফোন দিচ্ছে তাকে? টাকা চাইতে? নাকি সাঝকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে? শিশির জানে তার কাছে এই প্রস্তাব দিলে নিজেকে সামলিয়ে রাখা দায় হয়ে যাবে। এক প্রকার বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করে শিশির বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, কাকা!”

ওপাশ থেকে কর্কশ গম্ভীর গলায় শিশিরের কাকা আফজাল রহমান বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম। কাকাকে তো ভুলেই গেছোস শিশির। একটা ফোনও তো দিস নাহ।”

শিশির খানিকটা তাচ্ছিল্য ভাবে হেসে বলে ওঠে,
–” কি আর করি কাকা, বলুন তো? কাকাকে যদি ফোন দিয়ে বার বার তার খবর নিই, তাহলে কাকার ভাবনাটাহ এমন হতে পারে যে, তার কাছে টাকা নেওয়ার ধান্দায় বার বার ফোন দেই।”

শিশিরের কথায় আফজাল রহমান আরও গম্ভীর হয়ে যান। ছেলে টাহ তার কথা তাকেই শোনাচ্ছে। এতো সাহস কোথা থেকে আসে এই ছোকড়ার? তাও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” এইসব বাদ দে, কাজের কথায় আসি।”

শিশির আবার একটা তাচ্ছিল্য ভাবে হাসি দেয়। তার কাকা দরকার ছাড়া তাদের ফোন করে খবর নিবে এইটা কল্পনা করাও অন্যায়। আর তার উপর এখন তো টাকা পায় তাদের কাছে। কিন্তু, তাও নিজের মনোক্তি লুকিয়ে রেখে বলে ওঠে,
–” জি, কাকা বলুন। কি বলবেন?”

–” আজ সকালে তোর আব্বারে ফোন দিছিলাম। হেয় কয়, তোর সাথে কথা কইতে। তাই তোরেই কই, আমার টাকা কবে দিবি?”

শিশির একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” দিবো কাকা! খুব তাড়াতাড়ি আপনার টাকা দিয়ে দেবো। আমাকে একটু সময় দেন।”

–” শোন, তোর আব্বারে আমি অনেক দিন সময় দিছি। এহন, একখান কাম কর। হয় আমার টাকা দিয়া দেয় আর যদি নাহ পারোস তাহলে সাঝের লগে আমার পোলার বিয়ে দিয়ে দে। তোগো কাছে টাকা আমি আর চামু নাহ।”

কথাটাহ পড়তেই শিশিরের মাথা গরম হয়ে যায়। চারিদিকে তাকিয়ে দেখে সবাই কাজে ব্যাস্ত। শিশির নিজেকে সামলিয়ে রাগী চাপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” সাবধান কাকা! আমি আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি। আর দ্বিতীয়বার যদি আপনি এই কথা ভাবেন তাহলে, আমি আপনার সাথে বাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হবো। যা আমি কখনোই চাই নাহ। আপনি ভাবলেন কি করে, আপনার ওরকম বদমাশ পোলার সাথে আমার বোনের বিয়ে দিবো?”

আফজাল রহমান রেগে চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” এই, তোর সাহস হয় কেমনে আমার পোলারে বদমাশ কস? খুব বড় লায়েক হয়ে গেছোস এক একজন তাই নাহ? এহন আর কাকারে দরকার হয় নাহ, তাই নাহ?”

শিশির একটা তাচ্ছিল্যমুলক হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” কাকা, যখন আপনাকে আমাদের খুব দরকার ছিলো তখন আপনি আমাদের পাশে এসে দাড়ান নি। বরং নিজে দুই নাম্বারি করে আমার আব্বুর প্রাপ্য টাহও নিয়ে গেছেন। আমি নাহ কখনো আপনাকে এইসব কথা বলতে চাই নি। কিন্তু, আপনি বলতে বাধ্য করলেন। আমার বোন কোনো পন্য নাহ যে তাকে দিয়ে নিজেদের ধার মেটাবো। আমি আমার বোন কে ডাক্তারি পড়াবো আর অনেক ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দেবো। আর হ্যা, আমি আপনার সব টাকা ফেরত দিয়ে দেবো। খুব তাড়াতাড়িই দিয়ে দেবো। চিন্তা কইরেন নাহ। আমি অফিসে আছি। রাখছি। আর অনেক কথা বলে ফেললাম, হয়তো বেয়াদবিও করলাম, মাফ করবেন। ভালো থাকবেন! আল্লাহ হাফিজ!”

কথাগুলো বলেই শিশির তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দেয়। আফজাল রহমান কে আর কিছু বলার সুযোগ দেয় নাহ। শিশিরের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। কাছের মানুষ গুলো এমন করলে কার সহ্য হয়? সে তো তার নিজের কাকা, একটাই কাকা, তার কাছের থেকে কি এইসব কাহিনি তাদের প্রাপ্য? ভালো লাগে নাহ শিশিরের। আজ আর কাজ করাই মন বসাতে পারছে নাহ। যদিও আজ হাফ টাইম কাজ করতে হবে। দুপুরে বাসায় চলে যেতে পারবে। তাই আর বেশি কিছু নাহ ভেবে কাজে মনেযোগ দেয় শিশির।


বিকাল পড়ে এসেছে। শিশির দুপুরে খেয়েই ঘুমিয়েছে, এখনও উঠে নি। আজিজ রহমানকে পাশের বাসার ওনার বয়সী এক ভদ্র লোক ডেকে নিয়ে গেলেন। শিশির আসার সময় কাঁচা বাজার করে নিয়ে এসেছে। শাক খেতে আদনান খুব ভালোবাসে, তাই শিশির সব সময় বাজার করলে কোনো না কোনো শাক কিনে নিয়ে আসে। আজও কিনে নিয়ে এসেছে, পাট শাক। আহিয়া রহমান তাই ডাল দিয়ে রান্না করবেন জন্য বেছে রাখছেন। আদনান টিউশনি করতে গেছে। সাঝ কোচিং এ গেছে। এতো সময় মেয়েটা চলে আসে, আজ একটু দেরি করছে মনে হয়। তাই নিয়ে আহিয়া রহমানের কিছু টাহ চিন্তাও হচ্ছে। শিশির জেগে থাকলে কোচিং এ পাঠানো যেতো। কিন্তু, ছেলেটার উপর দিয়ে যা পরিশ্রম যায় সবসময়, ঘুম থেকে জাগাতেও মন চাচ্ছে নাহ। দেখা যাক আর কিছু সময়। হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে চমকে উঠে আহিয়া রহমান। সাঝ এসেছে ভেবে দরজা খুলতেই চমকে যান ওনি। সামনে একটা মেয়ের কাঁধে হাত দিয়ে ভর করে দাড়িয়ে আছে সাঝ, মাথায় ব্যান্ডেজ, পায়েও একটু ব্যান্ডেজ করা। আহিয়া রহমান চেচিয়ে কান্না করে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে আমার মেয়ের? আমার মেয়ের এরকম ব্যান্ডেজ করা কেন? ও আল্লাহ!”

সাঝ মায়ের দিকে তাকিয়ে অসুস্থ কন্ঠে বলে ওঠে,
–” মা! শান্ত হও।”

আহিয়া রহমান কান্না করতে করতে সাঝকে ধরে নিয়ে সোফার উপর বসায়। তারপর সাঝের সাথে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কান্না গলায় বলে ওঠে,
–” ওর এরকম হলো কি করে? আর তুমি কে?”

মেয়েটি মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি ছোয়া! আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, এমন সময় সাঝের একটা সিএনজির সাইডে ধাক্কা লাগে। তারপর আমি ওকে নিয়ে হসপিটাল যায়।”

শিশিরের ঘুম ভেঙে যায়। মাঝের রুমের হট্টগোল শুনে তাড়াতাড়ি এসে সাঝের মাথায় পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে ওর হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠে। তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে সাঝের সামনে হাঁটু ভাজ করে বসে আতংকিত গলায় বলে ওঠে,
–” বােন! কি হয়েছে তোর? এইসব ব্যান্ডেজ কেন?”

সাঝ হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া তেমন কিছু হয় নি। একটু ছোট খাটো এক্সিডেন্ট হয়েছে।”

এক্সিডেন্টের কথায় চমকে উঠে শিশির। ভয়ার্ত গলায় বলে ওঠে,
–” এক্সিডেন্ট? কিভাবে হলো?”

বলতে বলতে শিশিরের চোখ পড়ে ছোয়ার দিকে। ছোয়া ওদের দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। ছোয়া কে দেখে শিশির হালকা ভ্রু কুচকে বলে ওঠে,
–” আপনি?”

ছোয়া হালকা হেসে সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” আমিই সাঝকে নিয়ে এসেছি।”

সাঝ অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোমরা একে অপরকে চেনো?”

শিশির একপলক ছোয়াকে দেখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছোয়া মিষ্টি হেসে বলে ওঠে,
–” আসলে, ওনি একদিন আমাকে খুব উপকার করেছিলেন।”

সাঝ অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” মানে?”

–” মানে, আমাকে একদিন রাস্তায় একটা লোক খুব বিরক্ত করছিলো। মি. শিশির আমাকে প্রোটেক্ট করেছিলেন। তখন ওনার সাথে আমার পরিচয় হয়।”

ছোয়ার কথা শুনে সাঝ মুচকি হাসে। শিশির সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এইসব বাদ দে। আগে বল তোর এরকম হলো কি করে?”

সাঝ শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আসলে, ভাইয়া! আমি কোচিং থেকে ফিরছিলাম। একটা সিএনজি আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ধাক্কা লাগে, আর আমি ফুটপাতের উপর পড়ে গিয়ে মাথায় আর পায়ে চোট পেয়েছি।”

শিশির চিন্তিত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” চল, একবার ভালো করে চেকআপ করিয়ে নিয়ে আসি।”

ছোয়া ওদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তার কোনো দরকার হবে নাহ। আমি ডক্টর দেখিয়েছি। ডক্টর বলেছে, দুই একদিনের মাঝেই সুস্থ হয়ে যাবে। আর এইযে আমি মেডিসিনও নিয়ে এসেছি। এগুলো সময়মতো খাওয়ালে আর একটু যত্ন নিলে দুই একদিনের মাঝে ঠিক হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ!”

ছোয়া একটি প্যাকেট আহিয়া রহামানে দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এইযে মেডিসিন।”

শিশির ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মেডিসিন আনার কোনো দরকার ছিলো নাহ। আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম। আপনি ওকে নিয়ে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেছেন, তার উপর ওকে বাসায়ও পৌঁছে দিলেন। ধন্যবাদ দিলেও কম পড়ে যাবে।”

ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” কি বলছেন এইসব? এইটা তো মানুষ হিসাবে আমার দায়িত্ব।”

ছোয়ার কথা শুনে শিশিরের খুব হাসি পেলো। ওর বলা কথা মেয়েটাহ আজ ওকেই বলছে। বোন আর মা সামনে থাকায় নিজের হাসিটাহ কন্ট্রোল করে নিলো শিশির। ছোয়া আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” সাঝের দিকে খেয়াল রাখবেন আন্টি। সাঝ নিজের খেয়াল রেখো। দুই একদিনের মাঝে সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ! আমি আজ আসি, তাহলে?”

আহিয়া রহমান কিছু ব্যাস্ত হয়ে বলে ওঠে,
–” সেকি, কিছু খেয়ে যাও। চা করে এনে দি।”

–” নাহ! আন্টি! আজ নাহ। অন্য কোনোদিন খেয়ে যাবো। আজ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আজ আসি। ভালো থাকবেন। সাঝের খেয়াল রাখবেন।”

ছোয়া একবার শিশিরের দিকে তাকিয়ে চলে যায়। শিশির ছোয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছিস?”

–” না ভাইয়া। সুস্থ হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ!”

–” চল তোকে রুমে দিয়ে আসি। মা, সাঝের জন্য এক গ্লাস দুধ গরম করে নিয়ে আসো।”

কথাটাহ বলে শিশির সাঝকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। আহিয়া রহমানও রান্না ঘরে চলে যায়।


রাতে আদনান বোনের পাশে কিছু সময় কাটিয়ে নিজের রুমে এসে দেখে শিশির চোখের উপর হাত রেখে আধশোয়া হয়ে আছে। আদনান ভাইকে নাহ বলে এরকম ভাবে গার্মেন্টেসের কাজে গেলে, পরে ভাই জানলে খুব কষ্ট পাবে। তাই, ভাইকে মানিয়েই যাবে বলে ঠিক করেছে। আদনান শিশিরের পাশে বসে আস্তে করে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া!”

আদনানের ডাকে চোখের উপর থেকে হাত সরায় শিশির। তারপর বলে ওঠে,
–” সাঝের কাছের থেকে এলি নাহ? কি অবস্থা ওর।”

–” ভালো। ব্যান্ডেজ গুলো খুলে দিয়েছি।”

–” হুম! দেখি ওর কাছ থেকে ঘুরে আসি।”

কথাটাহ বলে শিশির উঠতেই আদনান বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

আদনানের কথায় শিশির কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকিয়ে ভাইয়ের পাশে বসে বলে ওঠে,
–” কি কথা, বল।”

আদনান কিছুটা আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া প্লিজ আমাকে নাহ করিস নাহ আর তুইও রাগ করিস নাহ। সেইদিন তোর আর বাবা- মায়ের সব কথা আমি শুনেছি। কাকা আব্বুর কাছে টাকা পাবে। পঞ্চাশ হাজার। অনেক বড় এমাউন্টের টাকা এইটা। আমি জানি ভাইয়া, তুই কখনো এরকম আলোচনায় আমাকে বা সাঝকে রাখতে চাস নাহ। কিন্তু, কথাগুলো আমার কানে এসেছে।”

শিশির চুপ করে ভাইয়ের কথাগুলো শুনছে। আদনান আবারও বলে ওঠে,
–” ভাইয়া আমার টিউশনি থেকে মাস গেলে ছয় হাজার টাকা আসে। আমি কাল পরশুর মাঝেই ছয় হাজার টাকা পেয়ে যাবো। আর আমার জমানো ছয় হাজার টাকা আছে। আপাততো এইগুলো তুই নে।”

কথাগুলো বলে আদনান ছয় হাজার টাকা ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দেয়। শিশির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে। আদনান ভাইয়ের হাতের মাঝে টাকা গুজে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এইবার আর একটা কথা বলি, ভাইয়া তোর উপর পুরো সংসারের দায়িত্ব। তার উপর এই টাকা গুলোর চাপ তোর কাছে অনেক বড় একটা চাপ। আমি বুঝি ভাইয়া। বলছি যে, আমার এক ফ্রেন্ডের মামা একটা গার্মেন্টেসের মালিক। আমি সেখানে কাজ করলে, মাসে দশ হাজার টাকা দেবে। আমাকে বলেছে, ভার্সিটর ইম্পর্টেন্ট ক্লাস করার পর ওখানে কাজ করলে টাকা টাহ দেবে। তাই ভাবছি যে, টিউশনি তিনটা রাতে করবো আর ওখানে দিনে কাজ করবো।”

শিশির চুপচাপ আদনানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলছে তার আদরের ভাই? শিশিরের চোখে পানি জমা হচ্ছে। শিশির আদনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” তুই যে এতো টাহ ভেবেছিস, তার জন্য তোর প্রতি আমার গর্ব হচ্ছে। কিন্তু, তোকে এইসব কিছুই করতে হবে নাহ।”

আদনান আপত্তি জানিয়ে বলে ওঠে,
–” কিন্তু, ভাইয়া!”

–” শোন, বাবা গ্রামে বিলের জমিটুকু বিক্রি করার কথা ভাবছে। তাতে হয়তো বেশ কিছু টাকা হাতে চলে আসবে। তার উপর তোর এই ছয় হাজার টাকা আমি রাখছি। আর দেখা যাক, কতো কি হয়, তারপর ভেবে নিবো। তোকে এতো পরিশ্রম করতে হবে নাহ। আমার ছোট্ট আদরের ভাই বোনকে এতো পরিশ্রম করতে দেখতে পারবো নাহ আমি।”

শিশির আদনানের মুখ টাহ এগিয়ে নিয়ে কপালে একাট চুমু দিয়ে বলে ওঠে,
–” এতো চিন্তা করিস নাহ। সব ঠিক হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ!”

আদনান মুচকি একটা হাসি দেয় শিশিরের দিকে তাকিয়ে। শিশির উঠে টাকা টাহ জায়গা মতো রেখে সাঝের কাছে চলে যায়। আদনান ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু, শিশিরের কেমন জানি ঘুম আসছে নাহ। হঠাৎ করেই ছোয়ার কথা মনে পড়লো তার। এতো সময় মনে ছিলো নাহ। কিন্তু, এখন হঠাৎ করেই মেয়েটার কথা মনে আসলো। মেয়েটাহ আজ তাদের কত বড় উপকার করলো, যেখানে আপনজনরাই সর্বনাশ করতে উঠে পড়ে লাগে। মেয়েটাহ সব সময় হেসে হেসে খুব মিষ্টি করে কথা বলে সবার সাথে। খুব সহজেই সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। মেয়েটার হাসি আর চোখ দুইটা খুব সুন্দর। সেইদিন বাসেও কাজল কালো চোখ দুইটা দেখেছিলো শিশির আর আজও দেখেছে। হঠাৎ শিশিরের মনে হলো এইসব কি ভাবছে ও? একটা মেয়েকে নিয়ে ভাবছে? না না এইটা ঠিক নাহ। কোনোরকম ভাবে নিজের মন কে সামলিয়ে নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে শিশির।

#_চলবে………..🌹

{{ ভুল, ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি 🥰 }}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here