_লাল_নীল_সংসার_ #_মারিয়া_রশিদ_ #_পর্ব_৭_

0
369

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_৭_

ছোয়া নিজের মায়ের পাশে বসে মায়ের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। মায়ের জ্বর টাহ আবার বেশ বেড়েছে। মিসেস. কেয়া ( ছোয়ার মা ) চোখ খুলে ছোয়ার দিকে তাকিয়ে অসুস্থ কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আর দিতে হবে নাহ। তুই একটু রেস্ট নে।”

কিছুটাহ বিরক্ত হয়ে ছোয়া বলে ওঠে,
–” আহ! আম্মা! তখন থেকে কি শুরু করলা বলোতো? রেস্ট তো হচ্ছেই। আমি কি আর নেচে বেড়াচ্ছি নাকি? আমি তো বসেই আছি তাই নাহ।”

মিসেস. কেয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্পন্দন ( ছোয়ার ছোট ভাই ) দৌড়ে রুমে আসে। তারপর ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বুবুন! আম্মার কি অবস্থা এখন?”

ছোয়া পানিতে কাপড় ভেজাতে ভেজাতে বলে ওঠে,
–” এইতো জ্বরটাহ একটু কমে এসেছে।”

স্পন্দন ওদের দিকে তাকিয়ে একটু একটু দুলছে। ছোয়া একবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মায়ের কপালে ভেজা কাপড় টাহ দিতে দিতে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে? ক্ষিধে পেয়েছে?”

স্পন্দন একটু সময় চুপ থেকে বলে ওঠে,
–” হুম!”

ছোয়া মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আম্মা! তুমি একটু শুয়ে থাকো। আমি ওকে খাইয়ে আসি। ওর অনেক ক্ষুধা লাগছে।”

মিসেস. কেয়া চোখ দিয়ে সম্মতিসূচক ইশারা করলে, ছোয়া স্পন্দন কে ডাইনিং রুমে চলে আসে। স্পন্দন কে চেয়ারে বসিয়ে রান্নাঘর থেকে ভাত, মাছ ভাজি, আর ডাল নিয়ে এসে ভাইয়ের সামনে বসে। খাবার দেখে স্পন্দন কিছুটাহ নাক ঘুচিয়ে বলে ওঠে,
–” এইসব কি রান্না করেছিস বুবুন? মাংস নেই?”

ছোয়া ডাল দিয়ে ভাত মাখতে মাখতে বলে ওঠে,
–” আছে। কিন্তু, এখন তোমাকে মাছ আর ডাল দিয়ে খেতে হবে।”

স্পন্দন নাক শিটকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার মাছ ভালো লাগে নাহ, তুই জানিস নাহ?”

–” জানি। সাথে এইটাও জানি, মাছ শরীরের জন্য খুব দরকার। আর ছাত্র বয়সে আরও বেশি দরকার। তাই তুমি এখন এই খাবারই খাবে।”

কথাগুলো বলে ছোয়া ভাইয়ের মুখের সামনে এক লোকমা খাবার ধরলে স্পন্দন খেয়ে নেয়। স্পন্দন মুখের খাবার টুকু শেষ করে আহ্লাদী সুরে বলে ওঠে,
–” বুবুন! এই মাছ টার পাশাপাশি এক পিস মাংস ও দে প্লিজ। নাহলে, আমার খেতে ভালো লাগছে নাহ।”

ছোয়া একবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে স্পন্দন ঠোঁট উল্টো করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ছোয়া মাংস আনার জন্য উঠতে উঠতে বলে ওঠে,
–” তোকে নিয়ে আর পারা যায় নাহ।”

তারপর মাংস এনে স্পন্দনকে খাবার এনে খাইয়ে দেয়। স্পন্দনও আর কোনো বায়না নাহ করে খেয়ে নেয়।


শিশির রুমে বিছানার উপর বসে বসে অফিসের কিছু ফাইল দেখছে। আদনান বিছানার অপর প্রান্তে বসে বই পড়ছে। আর দুই সপ্তাহ পর অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা তার। তাই এখন ভালোভাবে পড়তেই হবে। এমন সময় ফোনে ভাইব্রেশনের শব্দ হতেই ফোন টাহ হাতে নিয়ে দেখে স্নেহা ফোন দিছে। আদনান একবার আড়চোখে শিশিরের দিকে তাকিয়ে দেখে শিশির ফাইল দেখায় ব্যস্ত। আদনান বইটাহ বন্ধ করে ফোন নিয়ে বারান্দায় এসে রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে স্নেহার ফুপিয়ে কান্না করার আওয়াজ তার কানে আসে। স্নেহার কান্নার আওয়াজ কানে আসতেই আদনানের বুক কেঁপে উঠে। ব্যস্ত ভাবে বলে ওঠে,
–” স্নেহা! কি হয়েছে তোর? কান্না করছিস কেন?”

কিছু বলছে নাহ স্নেহা। কান্না করেই যাচ্ছে। আদনানের শরীর কেঁপে উঠছে স্নেহার কান্নার আওয়াজে। এভাবে কাঁদছে কেন মেয়েটা? আদনানের কেমন জানি ভয় লেগে উঠে। আদনান আতংকিত গলায় বলে ওঠে,
–” স্নেহা! কাদছিস কেন? বল আমাকে। আমাকে বলবি নাহ? তুই এরকম ভাবে কাঁদছিস কেন? আমার চিন্তা হচ্ছে, প্লিজ বল।”

স্নেহা কান্নারত অবস্থায় বলে ওঠে,
–” আদনান!”

চিন্তামুলক রেশ নিয়ে আদনান বলে ওঠে,
–” বল, কি হয়েছে?”

স্নেহা কান্নারত অবস্থায় বলে ওঠে,
–” আমি নাহ, কোনো কিছু বুঝছি নাহ। কোনো পড়াই বুঝছি নাহ আমি। আর দুই সপ্তাহ পর এক্সাম। আমি কিছুই পারবো নাহ। আমার ইম্প্রুভ চলে আসবে। আমি ফোর্থ ইয়ারে উঠতে পারবাে নারে। আমি সব ভুলে গেছি।”

স্নেহার কথা শুনতেই আদনানের সব ভয় যেন কর্পুরের মতো উড়ে যায়। সে তো ভেবেছিলো কি নাহ কি হয়েছে। কিন্তু, মেয়েটা যে এখনও কান্না করে যাচ্ছে। নাহ, এইটা তে আদনানের সহ্য হচ্ছে নাহ। আদনান বলে ওঠে,
–” স্নেহা কাদিস নাহ প্লিজ। কিছুই হবে নাহ। এক্সাম ভালো হবে ইনশাআল্লাহ! দেখিস, ভালোই হবে।”

স্নেহা কান্নারত অবস্থায় বলে ওঠে,
–” কিভাবে ভালো হবে? আমি তো সব ভুলে গেছি।”

–” আচ্ছা! আগে তোর কান্না থামা তারপর বলছি। চোখ মুছ।”

স্নেহা চোখ মুছে ভেঙে যাওয়া গলায় বলে ওঠে,
–” বল।”

আদনান স্নেহার কন্ঠ টাহ শুনতেই চোখ বন্ধ করে ফেলে। কেউ কান্না করার পর তার ভেঙে যাওয়া কন্ঠটাহ যে এতো সুন্দর লাগে? আগে জানা ছিলো নাহ আদনানের। স্নেহা আবার বলে ওঠে,
–” কি হলো? বল।”

স্নেহার কথায় আদনানের ধ্যান ভাঙে। তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” হুম! বলছি, কি সমস্যা বললি, তুই সব ভুলে গেছিস, তাইতো?”

–” হুম!”

–” বিদেশে ঘুরতে গিয়ে একটুও পড়িস নি?”

–” পড়েছিলাম। কিন্তু, অতোটাহ ভালো করে নাহ। ঘুরতে গেলে কি পড়া হয়?”

স্নেহার কথা শুনে আদনান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আমি আগামীকাল সব নোট নিয়ে আসবো তো। নোট গুলো দেখলে, তুই সব পারবি।”

স্নেহা আবার কান্না মিশ্রিত গলায় বলে ওঠে,
–” নোটের গুলো তো সবই নতুন। আমি তো ওগুলো আরও পারবো নাহ। এইবার আমার ঠিকই ইমপ্রুভ চলে আসবে।”

আদনান একটু হেসে বলে ওঠে,
–” নাহ আসবে নাহ। তুই আরও ভালো রেজাল্ট করবি ইনশাআল্লাহ! শোন, আগামীকাল ভার্সিটি তে আমাদের তৃতীয় বর্ষের লাস্ট ক্লাস। পরশুদিন থেকে এক্সামের আগ পর্যন্ত মানে এই দুই সপ্তাহ আমি তোকে গাইড করবো। তুই শুধু পড়বি। দেখবি ইনশাআল্লাহ সব হয়ে গেছে।”

–” কিন্তু, তোর টিউশন?”

–” ভার্সিটি অফ থাকবে। আমি দিনে টিউশনি শেষ করে ফেলবো৷ বিকাল বা সন্ধ্যার সময় তোকে হেল্প করবো।”

–” তাহলে, তুই আমাদের বাসায় আসবি কিন্তু।”

আদনান কিছুটাহ ইতস্তত করে বলে ওঠে,
–” বাসায়? রোজ রোজ বাসায় গেলে আন্টি কি বলবে?”

স্নেহা কিছুটাহ বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
–” এখানে বলাবলির কি আছে? কেউ কিছুই বলবে নাহ। আর তাছাড়া তুই আমার দরকারেই আসছিস তাই নাহ? যাহ বললাম তাই মানে তাই।”

–” আচ্ছা! বাবা ঠিক আছে। তাই হবে।”

আদনান স্নেহার সাথে আরও কিছুসময় কথা বলে ফোন রেখে দেয়। তারপর বারান্দার গিরিলে হাত রেখে রাতের আকাশের দিকে তাকায় আদনান। আজকের চাঁদ টাহ বেশ বড় হয়ে উঠেছে। স্নেহাকে ঠিক এই চাঁদের মতো দেখায়। নাহ, কি ভাবছে সে এইসব? এই চাদের গায়ে তো দাগ আছে, কলঙ্ক আছে। কিন্তু, তার স্নেহার গায়ে কোনো দাগ নেই, কোনো কলঙ্ক নেই। আছে একরাশ পবিত্রতা। এই ওয়েট ওয়েট, কি ভাবছে সে? তার স্নেহা? আসলেই কি তার স্নেহা? নাহ নাহ, এইসব ভাবা যাবে নাহ।

স্নেহা অনেক বড় ঘরের মেয়ে। বাবা, মা, ভাই এক কথায় পুরো পরিবারের সবার আদরের কন্যা সে। তারও অবস্থান হবে অন্য কোনো এক রাজপ্রাসাদের রাজার পুত্রের সাথে। স্নেহা তো তার কাছে বার্বিডল। আর এই বার্বিডল কে সাজানো গোছানো রাজপ্রাসাদের মানায়। তার মতো গরীবের কুটিরে নয়। আর কিছু ভাবতে পারে নাহ, আদনান। চোখ দুইটো জ্বালা করছে। তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দেয় আদনান। তারপর রুমে এসে বই নিয়ে বসে। কিন্তু, বই পড়ায় মন বসছে নাহ তার। শিশিরও তার কাজ সেরে মাঝের রুমে গিয়ে টিভি দেখছে একা একা। আজিজ রহমান গ্রাম থেকে এখনও আসে নি। আদনান রুমের লাইট টাহ অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।


পরের দিন বিকাল বেলা সাঝ কোচিং থেকে ফিরছে। মাথা নিচু করে হাটছিলো সাঝ। হঠাৎ সামনে তাকাতেই দেখে ছোয়া। সেইদিন এই আপুটাহ কতো সাহায্য করেছিলো। ছোয়া এখনও ওকে খেয়াল করে নি। সাঝ একটু মুচকি হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ছোয়া একটু এগিয়ে আসতেই সাঝ হাসি মুখে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, আপু!”

হঠাৎ এমন বলাই চমকে সামনে তাকায় ছোয়া। সামনে সাঝকে দেখে ছোয়ার মুখে এক ছটাক হাসি ফুটে উঠে। তারপর সাঝের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম! সাঝ! তুমি?”

সাঝও সহাস্যে বলে ওঠে,
–” কোচিং গেছিলাম আপু! বাসায় যাচ্ছি এখন।”

–” ব্যাথা সেরে গেছে একদম?”

–” জি আপু!”

–” আলহামদুলিল্লাহ!”

এর মাঝেই সাঝ হঠাৎই ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আপু চলো, আজ আমার বাসায় চলো।”

সাঝের কথা শুনে ছোয়া একটু হেসে বলে ওঠে,
–” নাহ সোনা! আজ যাবো না। অন্য একদিন যাবো।”

সাঝ একটু বায়না করে বলে ওঠে,
–” প্লিজ, আপু! আজ চলো। তোমাকে দেখলে মা ভিষন খুশি হবে। আর আমারও খুব ভালো লাগবে। চলো, প্লিজ!”

সাঝ বার বার বলায় আর না করতে পারে না ছোয়া। সাঝের সাথে তার বাসায় যেতে রাজি হয়। আর এতে সাঝ প্রচন্ড খুশি হয়। ওরা গল্প করতে করতে সাঝদের বাসার সামনে চলে আসে। সাঝ দরজায় কলিং বেল বাজাতেই আহিয়া রহমান দরজা খুলে দিয়ে সাঝকে দেখে বলে ওঠে,
–” আয়, ভেতরে আয়।”

ছোয়া একটু পাশে সরে দাড়িয়ে থাকায় আহিয়া রহমান তাকে খেয়াল করে নি। সাঝ মায়ের হাত ধরে টেনে বলে ওঠে,
–” মা! আমার সাথে আরও একজন আছে।”

আহিয়া রহমান সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কে?”

সাঝ পাশে দাড়িয়ে থাকা ছোয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ওঠে,
–” এসো আপু!”

আহিয়া রহমান একটু এগিয়ে এসে ছোয়া কে দেখে খুব খুশি হন। হাসি মুখে বলে ওঠে,
–” আরে ছোয়া মা যে। আসো আসো ভেতরে আসো।”

ছোয়া ভেতরে আসতে আসতে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, আন্টি।”

–” ওয়ালাইকুম আসসালাম, মা! তুমি আইছো আমি ভিষন খুশি হইছি।”

ওরা সবাই ভেতরে আসে। সাঝ সোফার উপর আজিজ রহমান কে দেখে আনন্দিত মুখ নিয়ে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আব্বু আপনি কখন এলেন?”

আজিজ রহমান মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে ওঠে,
–” এইতো মা, কিছু সময় আগে এসেছি।”

তারপর ছোয়ার দিকে তাকিয়ে কিছুটাহ অবাক হয়ে যায় আজিজ রহমান। এই মেয়েটা কে? ছোয়াও আজিজ রহমান কে দেখে একটু ইতস্তত বোধ করতে থাকেন। এর আগের দিন তাদের দেখা হয় নি। তাই তারা একে অপরকে চিনেও নাহ। আজিজ রহমানকে ছোয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহিয়া রহমান বলে ওঠে,
–” এরে তো চিনো নাহ তুমি। এই হলো ঐ মেয়ে, আমাদের সাঝ যখন এক্সিডেন্ট করছিলো, তখন তো এই সেই মেয়ে, যে সাঝ রে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলো। ছোয়া! ইনি হলেন তোমার আংকেল।”

ছোয়া বুঝে যায় ইনি এই বাড়ির কর্তা। ছোয়া আজিজ রহমানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, আংকেল!”

–” ওয়ালাইকুম আসসালামু, মা! দাড়াই আছো ক্যা? বসো।”

আহিয়া রহমান ছোয়ার হাত ধরে সোফার উপর বসিয়ে দিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। আজিজ রহমান ছোয়ার সাথে একটু গল্প করে নিজের রুমে চলে যান। তারপর সাঝ আর ছোয়া গল্প করতে থাকে। কথা বলার মাঝে ছোয়া একটু এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলো। ব্যাপার টাহ সাঝ খেয়াল করতেই বলে ওঠে,
–” আপু! তুমি কি কাউকে খুজছো?”

ছোয়া সাঝের দিকে তাকিয়ে একটু আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” তোমার ভাইয়া বাসায় নেই?”

–” নাহ, আপু! ভাইয়া তো রাতে আসে।”

–” ওহ!”

এর মাঝেই আহিয়া রহমান ট্রে করে চা, বিস্কুট নিয়ে আসে। তারপর ছোয়া কিছু সময় আহিয়া রহমান আর সাঝের সাথে গল্প করে চলে যায়।


শিশির বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বাবার রুমের সামনে গিয়ে দরজায় হালকা শব্দ করে বলে ওঠে,
–” আব্বু আসবো?”

–” আয় বাপ!”

শিশির বাবার অনুমতি পেয়ে ভেতরে এসে দেখে আজিজ রহমান একটা বই পাশে রেখে একটু উঠে বসলো। শিশির আজিজ রহমানের সামনে বসে বলে ওঠে,
–” কেমন আছেন আব্বু? শরীর ঠিক আছে?”

আজিজ রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” হ্যা, ঠিক আছি আলহামদুলিল্লাহ! অফিস থেকে এলি নাকি মাত্র?”

–” হ্যা! আব্বু! অফিস থেকে এসে হাত মুখ ধুয়ে আপনার কাছে আসলাম।”

আজিজ রহমান মাথা নাড়লেন। শিশির আজিজ রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আব্বু! জমির টাকা টাহ কাকাকে দিয়েছেন?”

আজিজ রহমান মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যারে বাপ! দিয়ে আসলাম। তোর দেওয়া দশ হাজার আর জমি ব্যাচা চল্লিশ হাজার সব টাকা দিয়েই তোর কাকার ঋন শোধ করে আসলাম।”

–” কাকা, কিছু বললো না?”

আজিজ রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” কইছে।”

–” কি আব্বু?”

–” কইলো, মাইয়ারে ডাক্তারি পড়াইবা খরচ জোটাবা কেমনে, আমিও দেখবো।”

শিশির একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখবে আব্বু! সবার সব জবাব অটোমেটিক পেয়ে যাবে। আব্বু! আপনি তাহলে রেস্ট নেন। আমি রুমে যায়।”

–” যা, গিয়ে একটু শুয়ে থাক।”

শিশির সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে আজিজ রহমানের রুম থেকে নিজের রুমে চলে আসে। একটা বড় পাথর নেমে গেলো বুক থেকে। লোকটার টাকা টাহ যেন গলায় আটকে গেছিলো, সেইটা নেমে গেছে। অনেক হালকা লাগছে তার, শান্তি লাগছে। শিশির বিছানায় গিয়ে শুতেই সাঝ শিশিরের রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া আসবো?”

শিশির বলে ওঠে,
–” আই!”

সাঝ ভেতরে এসে শিশিরের সামনে বসে এক গ্লাস শরবত এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” নে এইটা খা।”

শিশির মুচকি হেসে গ্লাস টাহ নিয়ে শরবত টাহ খেয়ে নেয়। সাঝ কে একটু খেতে বলে কিন্তু সাঝ রাজি হয় না। শিশির সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” পড়াশোনা কেমন চলছে?”

–” আলহামদুলিল্লাহ!”

–” হুম! ভালো করে পড়। পরীক্ষার তো আর বেশি দেরিও নেই। ভালো রেজাল্ট করতে হবে ইনশাআল্লাহ। শেষ সময়ে রিভিশন যতো ভালো হবে, পরীক্ষা ততো ভালো হবে।”

সাঝ সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়। তারপর একটু উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” জানিস ভাইয়া, আজ আমাদের বাসায় কে এসেছিলো?”

–” কে?”

–” ছোয়া আপু!”

ছোয়ার নাম শুনতেই শিশিরের চোখের সামনে ছোয়ার মায়া ভরা মুখটা ভেসে উঠে। তারপর সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” হঠাৎ?”

–” আসলে, আপু আসতে চাই নি। আমি কোচিং থেকে ফিরছিলাম, তখন আপুর সাথে দেখা। তারপর জোর করে নিয়ে এলাম।”

–” ওহ!”

সাঝ কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” হুম! ভাইয়া একটা কথা বলি?”

–” হুম বল!”

–” আমার নাহ খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।”

শিশির সাঝের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” তুই গিয়ে পড়তে বস। আমি আদনান কে ফোন করে বলে দিচ্ছি।”

সাঝ মিষ্টি হেসে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা!”

সাঝ চলে যায়। শিশির ফোন অন করে আদনান কে কল করতেই আদনান কল রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া!”

–” ওয়ালাইকুম আসসালাম! কই তুই?”

–” বাসের জন্য ওয়েট করছি ভাইয়া!”

–” ওহ, শোন, আসার সময় একটা আইসক্রিম নিয়ে আসিস।”

–” আইসক্রিম?”

–” হ্যা! সাঝ খেতে চেয়েছে।”

–” আচ্ছা! বাস এসে গেছে ভাইয়া! পরে কথা বলছি। আল্লাহ হাফিজ!”

–” সাবধানে আই। আল্লাহ হাফিজ!”

ফোন কেটে দেয় শিশির। তারপর আবার ছোয়ার কথা মাথায় আসে তার। মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে তার ভালোই লাগে। কিন্তু, শিশির চাই নাহ তাকে ভাবতে। মেয়েটা খুব বড় ঘরের মেয়ে নাহ হলেও তাদের থেকে অবস্থা সম্পন্ন। তাই এমন একটা জীবনে মেয়েটাহ কে জড়ানোর কোনো মানেই হয় নাহ। মাঝে মাঝেই ছোয়ার চিন্তা আসে তার মাথায়, কিন্তু শিশির সেই ভাবনা গুলো কে কাছে আসতে দেয় নাহ। আজও তাই করতে চাইছে। কিন্তু, আদোও পারছে কি?

#_চলবে………….🌹

{{ ভুল, ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি 😊 }}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here