_লাল_নীল_সংসার_ #_মারিয়া_রশিদ_ #_পর্ব_২_

0
417

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_২_

সকাল বেলা শিশির নিজের একাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়। আজ তার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। আজ সে, সাঝ, আদনান সবাই বাড়িতে থাকবে। সপ্তাহে এই একদিন সবসময় পুরো পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারে শিশির। তিন ভাই-বোন এক সাথে সময় কাটায়। টাকাটাহ তুলে বাজারে চলে যায় শিশির বাজার করার জন্য। মা গতকাল রাতে বলেছিলো, ঘরে বাজার নেই। আজ যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটির দিন আর হাতে টাকাও আছে তাই, শিশিরের মনে হলো একটু ভালো খাওয়া দাওয়া করলে ক্ষতি কি?

শিশির বাজারে গিয়ে একটা মুরগি, এক কেজি আলু, হাফ কেজি বেগুন, আর এক মুঠি লাল শাক কিনে নিয়ে আসে। শিশির ঘরে আসতে আসতেই ঘেমে নেয়ে যায়। বাইরে এতো রোদ আর গরম, তার উপর বাজারে মানুষের সমাগম বেশি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের ভিড় আরও বেশি। শিশির একবারে গোসল করে সোফার উপর বসে টিভি দেখতে থাকে।

সাঝ এতো সময় পড়াশোনা করছিলো। এখন মাকে একটু রান্নার কাজ এগিয়ে দিচ্ছে। আহিয়া রহমানের মুরগি কাটা হয়ে গেলে সাঝ বটি নিয়ে আলু, মরিচ, পেঁয়াজ কেটে দিচ্ছে।

আদনান আজ বেশ বেলা করে উঠেছে। সকাল বেলা শিশিরের ডাকে উঠে ফজরের নামায আদায় করে আবার ঘুমিয়েছিলো। এখন উঠে চোখ ডলতে ডলতে মাঝের রুমে আসতেই শিশির বলে ওঠে,
–” কি নবাবজাদা? মাত্র ঘুম থেকে উঠলেন?”

আদনান একটু হেসে বড় হামি দিয়ে বলে ওঠে,
–” কয়টা বাজে?”

শিশির আদনানের অবস্থা দেকে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” ১১:৩০ বাজে।”

আদনান বাথরুমে যেতে যেতে বলে ওঠে,
–” ওহ, মাত্র। আমি ভাবলাম ১২:৩০ টাহ বাজে। জুম্মার নামাজের সময় প্রায় হয়ে গেছে।”

শিশির জোরে হেসে দিয়ে একটু জোরে চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” মা! শুনেছো তোমার ছেলের কথা? ১১:৩০ তার কাছে মাত্র আর সে নাকি জুম্মার নামাজের কিছু সময় আগে উঠতে চায়।”

শিশিরের কথা শুনে রান্নাঘর থেকে সাঝ আর আহিয়া রহমানের হাসি ভেসে আসে। শিশির টিভি বন্ধ করে দিয়ে রান্নাঘরে এসে সাঝের পাশে বসে একটা রসুন নিয়ে খোয়া বাছতে বাছতে বলে ওঠে,
–” মা! আব্বু কোথায়?”

আহিয়া রহমান রান্না চাপাতে চাপাতে বলে ওঠে,
–” তোর আব্বু একটু বাইরে গেছে।”

শিশির একটু বিরক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” এখন বাইরে কেন গেছে? বাইরে মারাত্মক রোদ আর গরম। এমনিই শরীর ভালো নাহ।”

–” সেকি আর আমার কথা শুনেরে বাবা। যাহ মন চায় তাই করে।”

শিশির কিছু বলতে যাবে এর মাঝে আদনান রান্নাঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” মা! ক্ষিধে পেয়েছে।”

সাঝ হাতের কাজ পাশে রেখে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই গিয়ে বস, আমি খাবার দিচ্ছি।”

আদনান চলে গেলে সাঝ আদনানের জন্য খাবার বেড়ে নিয়ে যায়। শিশির রসুন বাছতে বাছতে বলে ওঠে,
–” মা! কিছু কি হয়েছে? তোমাকে এমন মলিন দেখাচ্ছে কেন?”

আহিয়া রহমান একবার শিশিরের দিকে তাকিয়ে আবার রান্না করতে করতে বলে ওঠে,
–” তোর কাকা সকালে তোর আব্বুকে ফোন দিয়েছিলো।”

কথাটাহ শুনেই শিশিরের হাত থেমে যায়। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি বলেছে কাকা?”

–” বলেছে, যে হয় তাড়াতাড়ি তাদের টাকা দিয়ে দিতে আর নাহলে সাঝের সাথে তার পোলার বিয়ে দিতে।”

কথাটাহ শুনতেই শিশিরের রাগে শরীর কেপে উঠে। মায়ের দিকে তাকিয়ে রাগী চাপা গলায় বলে ওঠে,
–” ওনাদের সাহস হয় কি করে এই কথা বলার? আমার বোন কি কোনো পন্য নাকি, যে তাকে বিয়ে দিয়ে নিজেদের ধার মেটাবো? আর তার ছেলের সাথে আমি আমার বোনের বিয়ে দিবো, ভাবলো কি করে? ওনার গুন্ডা বদমাশ ছেলের সাথে আমি আমার বোন বিয়ে দিবো? আমি আমার বোন কে ডাক্তারি পড়াবো মা, এইটা ওনাদের মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে দিয়ো। আর খুব শীঘ্রই আমি তাদের টাকা টাহ শোধ করে দেবো। কিন্তু, আমার বোনের দিকে নজর দিলে, আমার থেকে খারাপ কেউ হবে নাহ। এইটা ওনাদের মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে দিয়ো।”

আহিয়া রহমান শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” বোন কে যে ডাক্তারি পড়াবি, এতো খরচ কিভাবে জোটাবি? শুনেছি, ডাক্তারি পড়ার নাকি অনেক খরচ। ওখানে চান্স পেতে গেলে যে কোচিং গুলো করা লাগে তারও খরচ অনেক। কিভাবে জোটাবি এতো খরচ?”

শিশির একটু হেসে বলে ওঠে,
–” এইসব নিয়ে ভেবো নাহ মা। আমি আমার বোনকে আমার সবটুকু দিয়ে পড়াবো। ওকে ডাক্তারি পড়তে হবে মা। ও কতো স্বপ্ন দেখে বলোতো, একদিন একজন বড় আদর্শ ডাক্তার হবে। টাকার জন্য ওর স্বপ্ন টাহ ভেঙে দেওয়া উচিত নাহ। দরকার হলে আমি আরও অনেক পরিশ্রম করে আরও বেশি টাকা উপার্জন করবো। তুমি চিন্তা করো নাহ। আমি ঠিক সামলিয়ে নিবো।”

আহিয়া রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলে ওঠে,
–” সব সময় শুধু ওদের চিন্তা। নিজের কি হবে একবারও ভেবেছিস? ওদের জন্য নিজের সব ঢেলে দিচ্ছিস। কিন্তু, তোর কি হবে বাবা? নিজের দিকে একটু তাকাবি তো নাকি?”

শিশির হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আমি তো ভালোই আছি, মা।”

–” ভালো হয়তো আছিস। কিন্তু এইভাবে কি জীবন চলবে? বয়স কি কম হলো? ২৮ পেরিয়ে ২৯ হয়ে যাচ্ছিস। সংসার কবে বাঁধবি, শুনি? বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। আমারও এমন পোড়া কপাল ঢাক ঢোল বাজিয়ে যে বড় ছেলের বউ আনবো, সেইটাহও হয়তো হবে নাহ। নিজে নিজেই তো একটা নিজের গতি করতে পারিস, নাকি?”

মায়ের কথা শুনে শিশির একটু হেসে স্বাভাবিক হয়ে বলে ওঠে,
–” আমি এখনও এইসব নিয়ে ভাবছি নাহ মা। আর ২৯ এমন কোনো বয়স নাহ। আগে নিজের ভাই বোনদের একটা গতি করি, তারপর দেখা যাবে। আদনান অনার্স শেষ করলে মাস্টার্সে ভর্তি করতে হবে। সাঝের মেডিকেলের জন্য কোচিং। এইসব ছাড়া এই মুহুর্তে আমার মাথায় কিছু আসে নাহ মা। আর তুমি যে কথা বলছো, এই মুহুর্তে বিয়ে করাটা আমার পক্ষে একটু চাপের হয়ে যাবে। দয়া করো মা, এইসব নিজেও ভেবো নাহ আর আমাকেও ভাবিও নাহ। আমি যেগুলো নিয়ে আছি, সেই গুলো নিয়েই থাকতে চাই।”

আহিয়া রহমান একটু গজ গজ করতে করতে বলে ওঠে,
–” হ্যা! তোরা আজকাল নিজেরাই নিজেদের ব্যাপার ভালোই বুঝিস। আমি যে আর জোর করে বউ ঘরে আনবো, এমন কপাল নেই।”

শিশির মায়ের কথা শুনে একটু হাসে কিন্তু কিছু বলে নাহ। সাঝ আদনানের খাওয়ার পর প্লেট গুলো নিয়ে রান্নাঘরে আসতেই শিশিরও আর কথা বাড়ায় নাহ। সাঝ প্লেট টাহ ধুয়ে তাকের উপর রেখে দেয়।


বিকাল হয়ে এসেছে।
সাঝ মাত্র ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে সোফায় এসে বসেছে। আদনান একটু বাইরে গেছে। আহিয়া রহমান সকালে শিশিরের আনা লাল শাক বেছে রাখছে। আজিজ রহমানও বাইরে গেছে একটু হাটাহাটি করার জন্য। শিশির বের হওয়ার জন্য রেডি হয়ে মাঝের রুমে আসতেই দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ ভেসে আসে। শিশির গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখে কোয়েল আর রুহি দাড়িয়ে আছে। কোয়েল শিশিরের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া!”

শিশিরও মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?”

–” জি! ভালো।”

ওদের আওয়াজ পেয়ে সাঝ একটু এগিয়ে এসে কোয়েল আর রুহিকে দেখে একটা আনন্দের হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” তোরা এই সময়? বলিস নি তো।”

রুহি সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আসলে, আমি তোদের বাড়ি আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, আমি তো তোদের বাড়ি চিনি নাহ। তাই কোয়েল কে সাথে করে নিয়ে আসলাম। ও তো অনেকবারই এসেছে। তাই!”

সাঝ এগিয়ে এসে আনন্দের সাথে বলে ওঠে,
–” ভালো করেছিস, আই ভেতরে আই।”

রুহি আর কোয়েল ভেতরে আসতেই সাঝ আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মা! এই হলো রুহি আমার বান্ধবী। আর কোয়েল কে তো তুমি চিনোই। আর রুহি, ইনি হচ্ছেন আমার মা।”

রুহি আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, আন্টি।”

আহিয়া রহমান শাক পাশে রেখে হাসিমুখে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো, মা?”

–” জি, আন্টি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

সাঝ শিশিরের পাশে গিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” রুহি! এই হচ্ছে আমার বড় ভাইয়া। আর ভাইয়া ও রুহি, আমার বান্ধবী।”

রুহি শিশিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া।”

–” ওয়ালাইকুম আসসালাম। সাঝ! ওদের তোর রুমে নিয়ে যা।”

সাঝ সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে ওদের নিয়ে নিজের রুমে চলো যায়। ওরা চলে যেতেই শিশির আহিয়া রহমানের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” মা! ওদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করো।”

আহিয়া রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে দুঃখী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” ঘরে তো কিছুই নাই। খালি মুড়ি আর চা আছে।”

–” আচ্ছা, তুমি চায়ের পানি বসাও, আমি দোকান থেকে কিছু কিনে নিয়ে আসছি।”

আহিয়া রহমান সম্মতিসূচক মাথা নাড়াতেই শিশির চলে যায়। আহিয়া রহমানও গিয়ে চায়ের পানি বসান।
এইদিকে রুহি, কোয়েল, সাঝ রুমে বসে গল্প করছে। এমন সময় রুহি বলে ওঠে,
–” সাঝ! আমার এখানে আসার কিন্তু একটা কারন আছে।”

সাঝ রুহির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি কারন?”

–” তুই আমার বার্থডে পার্টিতে চল প্লিজ। আমার ভালো লাগবে। দেখ আমি কোনো ফ্রেন্ডসের বাসায় গিয়ে দাওয়াত দেই নি। সবাইকে কলেজ থেকেই দিয়েছি কিন্তু, তুই তো কোথাও যেতে চাস নাহ, তাই আমি তোর বাসায় আসলাম। এরপরও যদি তুই নাহ আসিস, তাহলে আমি খুব কষ্ট পাবো।”

সাঝ কিছু বলবে তার আগেই আহিয়া রহমান নাস্তা নিয়ে প্রবেশ করে। চানাচুর, বিস্কিট, চমচম মিষ্টি, চা দেয়। কোয়েল নাস্তা দেখে বলে ওঠে,
–” আন্টি আপনি আবার কষ্ট করতে গেলেন কেন?”

আহিয়া রহমান হেসে বলে ওঠে,
–” গরীবের ঘরে এসেছো। তেমন কিছুই দিতে পারি নি। এইটুকু খেলো আমি খুশি হবো।”

রুহি ব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে,
–” এইসব কি বলছেন আন্টি? এইসব বলবেন নাহ, এতে নিজেদের কাছে নিজেদের ছোট মনে হয়।”

কথাটাহ বলে রুহি আর কোয়েল দুইটা বিস্কিট নিয়ে খেতে থাকে। আহিয়া রহমান মুচকি হেসে বেরিয়ে যায়। কিছুসময় পর ওরা চলে যায়। সাঝ পড়েছে মহা চিন্তায়। পরিবারের কাছে কখনো এরকম কোথাও যাওয়ার আবদার সে করেনি। কিন্তু, আজ রুহি যেভাবে বলে গেলো, নাহ গেলেও ব্যাপার টাহ কেমন যেন দেখাবে। সমস্যা টাহ হলো ওর বার্থডে পার্টি টাহ রাতের বেলায় করা হচ্ছে। একে তো কখনো বলে নি এমন কোথাও যাওয়ার কথা, তার উপর দিনেও হলেও হতো রাতের কথা বলায় কেউ যদি রাজি নাহ হয়। তাহলে?


এখন বেশ রাত হয়ে এসেছে।
আদনান রুমে টুলের উপর বসে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে রেখে একটা বই পড়ছে। শিশির বিছানার উপর আধশোয়া হয়ে ফ্রি ফেসবুক চালাচ্ছে। শিশির প্রয়োজন নাহ হলে খুব একটা এমবি কিনে নাহ। অফিসে ওয়াই-ফাই চালায় আর বাইরে, বাসায় ফ্রি ফেসবুক চালায়। সাঝ ভাইদের রুমে এসে একটা জোরে নিশ্বাস নিয়ে শিশিরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া!”

সাঝের ডাকে শিশির তার দিকে তাকায়। আদনান একবার সাঝের দিকে তাকিয়ে আবার বইয়ে চোখ দেয়। শিশির সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কিরে বোন কিছু বলবি?”

সাঝ আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! তোমাকে আমার কিছু বলার ছিলো।”

শিশির একটু উঠে বসে বলে ওঠে,
–” বল, কি বলবি?”

সাঝ হাতের আঙুলে ওড়না পেঁচাতে পেঁচাতে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া আসলে…”

বোনের এমন ভাবে কথা বলার ধরন দেখে শিশির হালকা ভ্রু কুচকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে, বোন? তুই আমার কাছে বলতে ইতস্তত করছিস কেন? কোনো সমস্যা?”

শিশিরের কথা শুনে আদনানও সাঝের দিকে তাকায়। সাঝ মাথা নিচু করে আছে। শিশির সাঝের হাত ধরে পাশে বসিয়ে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইকে বলতে এতো ইতস্তত কেন করছিস? বল, ভাইকে।”

সাঝ একবার শিশিরের দিকে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! আজ বিকালে আমার বান্ধবীরা এসেছিলো নাহ?”

–” হুম! তাতে কি হয়েছে?”

–” ওরা আসলে আমাকে দাওয়াত দিতে এসেছিলো।”

শিশির হালকা ভ্রু কুচকে বলে ওঠে,
–” কিসের দাওয়াত?”

সাঝ নিচের দিকে তাকিয়েই বলে ওঠে,
–” আসলে, আগামীকাল রুহির জন্মদিন। ওরা আমাকে গতকাল কলেজেও বলছিলো, কিন্তু আমি রাজি হয় নি। তাই আজ বাসায়ও এসেছে।”

–” তুই কি যেতে চাস?”

সাঝ একপলক শিশিরের দিকে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি ওদের। কিন্তু ওরা শুনছিলো নাহ।”

–” দাওয়াত কখন?”

–” রাতের বেলা অনুষ্ঠান।”

শিশির আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান, আগামীকাল সন্ধ্যায় সাঝকে ওর বান্ধবীর বাসায় দিয়ে আসবি। আর আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।”

শিশিরের কথা শুনে সাঝ অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। শিশির সাঝের তাকানো দেখে মুচকি হাসি দেয়। সাঝের চোখে পানি জমা হয়ে যায়। এতো ভালো কেন তার ভাইটা? সাঝ শিশিরকে জড়িয়ে ধরে। শিশির মুচকি হাসি দিয়ে সাঝকে আগলে নেয়। আদনানও ওদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়।


শিশির অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে মাঝের রুমে এসে জোরে জোরে বলে ওঠে,
–” সাঝ! সাঝ!”

সাঝ নিজের রুম থেকে উত্তর দেয়,
–” আসছি ভাইয়া!”

আদনান সোফার উপর পা তুলে বসে বসে টিভি দেখছে। শিশির আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভার্সিটি যাবি নাহ?”

আদনান শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যা! ভাইয়া যাবো।”

সাঝ রুম থেকে এগিয়ে এসে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জি! ভাইয়া বলো।”

–” আজ কলেজ যাবি?”

–” হ্যা! কলেজ কেন যাবো না?”

–” আজ নাহ তোর দাওয়াত আছে?”

–” সমস্যা নেই। কলেজ শেষ করে এসে যাবো। দাওয়াত তো রাতে।”

শিশির মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে ওঠে,
–” রেজিষ্ট্রেশন ফি কত?”

–” ৯০০ টাকা।”

শিশির মানিব্যাগ বের করে ২০০০ টাকা বের করে সাঝের দিকে এগিয়ে দিতেই সাঝ অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” এতো টাকা?”

শিশির সাঝের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” ৯০০ টাকা রেজিষ্ট্রেশন ফি, ৭০০ টাকা কোচিং এর আর বাকি টাকা দিয়ে রুহির জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাস। খালি হাতে যাওয়া ঠিক হবে না।”

সাঝ মুচকি হেসে টাকা টা নিয়ে নেয়। শিশির আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বিকালে টিউশনি আছে?”

আদনান এতো সময় ওদেরকেই দেখছিলো। এখন ভাইয়ের প্রশ্নে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” হুম, আছে। সমস্যা নেই। সাঝকে দিয়ে তারপর যাবো।”

শিশির মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রদান করে সাঝের দিকে তাকিয়ে নিজের ফোন টাহ এগিয়ে দিতেই সাঝ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। শিশির হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” দাওয়াতে যাবি, সবাই তো ছবি তুলবে, তোর কি ইচ্ছে জাগবে নাহ? আমার ফোনটাহ রাখ, আমি আমার সিম আজকের মতো মায়ের ফোনে ঢুকিয়ে নিয়েছি আর মায়ের সিম আমার ফোনে দিয়েছি। মেডিকেলে চান্স পেলে তোকে ভালো দামি একটা ফোন কিনে দিবো। এখন ধর, আমার ফোন নিয়ে অনুষ্ঠানে ঘুরে আয়। ধর।”

সাঝ ছলছল চোখে হাত বাড়িয়ে শিশিরের ফোন টাহ নিয়ে নেয়। শিশির মুচকি হেসে মাকে বলে বেরিয়ে পড়ে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আহিয়া রহমান সাঝের দিকে এগিয়ে আসতেই সাঝ মাকে জড়িয়ে ধরে। আদনান সাঝের কান্ড দেখে হেসে দেয়।

#_চলবে………..🌹

{{ আসসালামু আলাইকুম ❣️
সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করুন,,,, আপনাদের গঠনমূলক কমেন্টে লেখার উৎসাহ জাগে।।।।😊 }}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here