#আমার_সংসার
পর্বঃ ৬
কলমেঃ আয়েশা সিদ্দিকা (লাকী)
সুমন উঠে দেখলো রহমান সাহেব বারান্দায় বসে আছে। রহমান সাহেবের সাথে কথা না বলেই সুমন তমার ঘরে ঢুকে তমাকে বললো,
— তমা কি করছিস? পড়ছিস নাকি?
— না ভাইয়া পড়ছিনা এমনি বসে আছি। কিছু বলবে তুমি?
— আচ্ছা সুজনের ঘরে গিয়ে দেখতো সুজন আছে কিনা!
— আচ্ছা, তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি যাবো আর আসবো।
— শোন, যদি সুজন থাকে তাহলে তুই শুধু বলবি আব্বা ডাকছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
লতা দৌড়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। সুমনও বেরিয়ে রহমান সাহেবের কাছে গিয়ে বসলো। সুমন পাশে বসতেই রহমান সাহেব বললো,
— কিরে সারাদিন কোথায় কোথাশ থাকিস? বাড়িতেও তো তেমন একটা দেখিনা!
— কোথায় আর থাকবো, এই ঘুরে ফিরে বেড়াই।
— বললি যে আর বিদেশে যাবিনা তাহলে দেশে কিছু একটা ব্যাবসা বানিজ্য শুরু কর!
— হ্যাঁ সেটাই ভাবছি। কোন পথ ধরে যে এগিয়ে যাবো সেটাই ঠিক করতে পারছিনা। দেখি করা যায়। ভাবনার জন্য একটু সময় দরকার।
দুজনের কথার মাঝে সুজন এসে বসলো, সুমনের পাশে রাখা চেয়ারটাতে।
— আব্বা আমাকে ডেকেছিলেন?
— কই আমি তো ডাকিনি।
পাশ থেকে সুমন বললো,
— আমি ডেকেছিলাম।
— তমা যে বললো আব্বা ডাকছে!
— আব্বার ঘরে আমি আছি তাই আব্বার কথায় বলতে বলেছিলাম।
— ও আচ্ছা, কিছু বলবে? যা বলবে তাড়াতাড়ি বলো আমার একটু বের হতে হবে।
— হ্যাঁ কিছু কথা ছিলো। তোর কি খুব তাড়া আছে?
— হ্যাঁ একটা কাজ ছিলো সকাল সকালে বের হতে হবে। সমস্যা নাই কি বলবে বলো?
— আচ্ছা তোর জরুরি কাজ থাকলে তুই যা রাতে ফিরলে কথা হবে।
— আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে রাতে এসে শুনবো।
সুজন বেরিয়ে গেলো। সুমনও রহমান সাহেবকে রাতে থাকতে বলে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। নিজের ঘরে এসে বসে আছে সুমন। অথৈ সুমন এর জন্য খাবার এনে সুমনকে খেয়ে নিতে বললো। অথৈ তার বাবার বাড়িতে কথা বলবে তাই সুমনকে বললো,
— তোমার মোবাইলটা একটু দেবে?
সুমন মোবাইলটা অথৈ এর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
— আগে খেয়ে নাও তারপর কথা বলো।
— একটু পরে তো ভাইয়া বেরিয়ে যাবে তখন আর মায়ের সাথে কথা বলতে পারবোনা তাই আগে কথা বলে তারপর খাচ্ছি। মাকে ইফতারির কথা না বললে আব্বাকে জানাবে কে! তাই আগে কথা বলে নেই, পরে খাচ্ছি।
— ইফতারির কথা এখনই কিছু বলোনা বাড়িতে।
— কেনো?
— আমি নিষেধ করছি তাই।
— আগে ভাগে না বললে কি করে হবে? গোছানোরও তো একটা ব্যাপার আছে!
— আমি নিষেধ করছি তার পিছনে নিশ্চয় কোনো কারন আছে নাকি!
— হ্যাঁ তা হয়তো আছে।
— তাহলে! কথা বাড়িওনা, যা বলছি সেটা করো। এমনি কথা বলতে হয় কথা বলো। ইফতারির কথা কিছু বলোনা।
কথাগুলো সুমন ধমকের সুরে বলে খেতে শুরু করলো। অথৈ আর কথা না বলে ঘাড় নাড়ালো শুধু। অথৈ তার ভাই এবং মায়ের সাথে ভালো মন্দ কথা শেষ করে সুমনের সাথে সামান্য একটু খেয়ে নিলো।
এদিকে লতা মন খারাপ করে বেড়াচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে। আমি কি করে বলবো মায়ের কাছে এই ইফতারি সামগ্রী পাঠাতে! আর কেও না জানলেও আমি তো জানি তাদের সংসার কি করে চলে। দিন এনে দিন খাওয়ার মতো অবস্থা তাদের আর এর মধ্যে যদি তাকে নিয়ে ভাবতে হয় তাদের তাহলে তো আমি মেয়ে নামে কলঙ্ক। শুধু তাদের কাছে নিয়েই গেছি কখনও তার বিনিময়ে কিছুই করতে পারিনি, আমি আর ভাবতে পারছিনা কিছু। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে দেই। কিন্তু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করতে হচ্ছে। একটা মেয়ের জীবনে বিয়ের পর সব থেকে বড়ো অবলম্বন হলো তার স্বামী। কিন্তু আমার কপাল দেখো! এমন এক স্বামী পেয়েছি যে সবারটা বোঝে শুধু আমার ভালোলাগা মন্দলাগা কোনোটাই তার চোখে পড়েনা।
সাহস করে একবার কি সুজনকে বলে দেখবো! মাকে একটু বুঝিয়ে বলতে! নাকি বলতে গিয়ে উল্টো মার খাবো কে জানে! আমি আর কিছুই ভাবতে পারছিনা। কি করবো আর কি হবে। নাকি আনার মাকে একবার বলেই দেখবো! নাকি ভাইদের উপর এই মূহুর্তে বোঝা চাপিয়ে দেয়াটা কি ঠিক হবে!
হে আল্লাহ তুমি আমাকে পথ দেখাও। কোন পথে গেলে আমি এর সমাধান পাবো বলে দাও আল্লাহ।
সুজনকে কি বলবো একবার! যাই হয়ে যাকনা কেনো, আজ সুজন আসলে ওর সাথে একবার কথা বলবো। মারলে মাইর খাবো তাও আমি এই ইফতারির কথা কিছুতেই ও বাড়িতে বলতে পারবোনা। তাতে আমার যা হয় হবে। তুমি রক্ষা করো আল্লাহ। তুমিই একমাত্র ভরসা আমার।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে লতা কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছে। ক্লান্ত শরীর মন নিয়ে ঘুমিয়েছে। কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি। এদিকে অথৈ লতাকে কোথাও না দেখতে পেয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছে আশপাশের বাড়ি গুলোতে। কিন্তু লতা কোথাও নেই। হঠাৎ মনে পড়লো ঘরে ঘুমিয়ে নেই তো! ঘরে খুঁজতে এসে দেখে লতা ঘুমিয়ে আছে আর ছেলে ওর দাদীর কাছে খেলছে।
চারদিকে মাগরিবের আজান দিচ্ছে তাই লতাকে ডাক দিলো অথৈ। কয়েকবার ডাক দিলে লতা ধুচমুচিয়ে উঠে বসলো। অথৈ কে দেখে ভুত দেখার মতো করে চমকে উঠেছে লতা। অথৈকে এভাবে ওর ঘরে দেখে বললো,
— আপা তুমি এখানে? কিছু হয়েছে?
— না কিছু হয়নি। তোমাকে কোথাও না পেয়ে দেখতে এলাম তুমি ঘরে আছো কিনা। দেখলাম ঘুমিয়ে আছো। ডাকবোনা ভেবে চলে যাচ্ছিলাম পরে আজান দেয়া শুনে ডাক দিলাম।
— আসলে মনটা ভালো লাগছিলোনা। চিন্তায় চিন্তায় শরীরটাও খুব ক্লান্ত লাগছিলো তাই একটু বিছায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি।
অথৈ ঘরে লাইট জ্বালিয়ে দিতে দিতে বললো,
— আমি বুঝতে পারছি আপা। এতো চিন্তা করোনা তো কিছু একটা ব্যাবস্থা হবেই। বাইরে চলো অন্ধকার হয়ে এলো। আমাদের দুজনকে এভাবে দেখলে আবার মা কথা শুনাবে। আবার এদিকে রিমা বলেছে সে নাকি কি পিঠা খাবে। সেটা বানাতে হবে তা না হলে তো দুনিয়াদারী সব উল্টে যাবে।
— এই রিমার সমস্যা কি বুঝিনা। নিজের স্বামী সংসার সব ফেলে এখানে পড়ে থাকে। নিজে একটা কাজ তো করবেই না আবার হুকুমের পর হুকুম চালিয়ে যাবে। ভালো লাগেনা আর। এদিকে নিজের সমস্যা ওদিকে তার জ্বালা।
— আছে থাকুক তাতে সমস্যা নাই। কিন্তু সবার সাথে মিলে মিশে যদি চলে তাও পারা যায়। কিছু না করুক তাতেও দুঃখ নেই কিন্তু এই কথা লাগায় এটাই ভালো লাগেনা। আচ্ছা আপা তুমি বাইরে এসো আমি গেলাম।
— আচ্ছা।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে সুমন সুজন আর রহমান সাহেব এক সাথে হয়েছে কথা বলার জন্য। এদিকে অথৈ এর মনে ভয় কাজ করছে। সুমন কি বলবে আর কি বা হবে। অথৈ এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। লতাও বার বার জিজ্ঞেস করছে ওরা সবাই এক সাথে কেনো বসেছে! আমি তো নিজেই জানিনা তো লতাকে কি বলবো।
সুজন বললো,
— কি হলো ভাইয়া কি বলবে বলো।
— মা কই?
— কি জানি মা কই?
— বাইরে গিয়ে দেখ তো মা কই, বাইরে থাকলে ডাক দে মাকে।
সুজন বাইরে এসে মরিয়ম বেগমকে ডেকে নিয়ে গেলো।
চলবে…..
(কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন)