#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_02
-” আকাশের বাড়িতে পৌঁছা মাত্রই আকাশের মা আর্জিনা বেগম বউকে ঘরে তুলে আকাশের রুমে পৌছে দেয়। এরপরে আকাশের ভাবী এক ক্লাস দুধ দেয় নীলাকে। নীলাকে বলে এই দুধটা আকাশকে খেতে দিবা নীলা। এই নীলা তুমি এখনো কাঁদছো ক্যান? নীলা বললো কই ভাবী আমি তো কাদছি না চোখের কাজল লেপ্টে গেছে তো তার জন্য চোখ মুছতেছি। আকাশের ভাবী বললো নীলা আমার দেবর আকাশ অনেক ভালো তাকে কষ্ট দিয়োনা সে এখন অব্দি কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করেনাই। তার সব ভালোবাসা তার বউয়ের জন্য রেখে দিছে। তুমি ভাগ্যবতী মেয়ে নীলা। নীলা এই কথাটা শুনে অবাক হলো একটুখানি! “-
–” আকাশ দরজায় নক করে বললো আসতে পারি আমি। তখন আকাশের ভাবী বললো আসো আকাশ। নীলা তুমি থাকো কাল কথা হবে, এই আকাশ বোনকে রেখে গেলাম যত্ন নিয়ো। কি ও বাড়িতে আসতে না আসতেই তোমার বোন হয়ে গেলো আর আমি এতদিন থেকেও তোমার ভাই হতে পারলাম না। ভাবী বললো আকাশ হিংসামি ভাব ছাড়ো নতুন বউ এসেছে এবার পরিবর্তন হও। আকাশ বললো জ্বি জাঁহাপনা আপনি এবার আসেন। ভাবী বললো তর সইসে না এখনি সম্পূর্ণ রাত পড়ে আছে এখনো। আকাশ তার ভাবির হাত ধরে বললো যাও তো তুমি নাহলে আমাকে জ্বালিয়েই ছাড়বে। এসব দৃশ্য দেখে নীলা মনে মনে খুব হাসে বিয়ের পর নীলার ঠোঁটে এই প্রথম হাসি মিললো। “-
–” আকাশ দরজা লাগিয়ে দিলো তারপর নীলার কাছে গেলো এরপরে নীলার ঘোমটা উপরে তুললো। নীলা এই প্রথম পুরুষের কাছে আসতেই শঙ্কিত হয়ে উঠলো। “-
-” আকাশ বললো কিভাবে শুরু করবো বুঝতেছি না। আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা নীলা। সেই প্রথম দিনে তোমার ছবি দেখে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, সেই অনুভূতি তোমাকে বুঝাতে পারবো না নীলা। তোমাকে ছবিতে যত সুন্দরী লেগেছিলো বাস্তবে তুমি তার চেয়েও পরী। “–
–” নীলা এবার মুখ খোলে কারণ সে আকাশকে বিয়ে করলেও তাকে স্বামীর মর্যাদা দিতে পারবে না। নীলা বললো আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই আকাশ” —
–” আকাশ বললো বলো তুমি কি বলতে চাও? আমিয়ো শুনতে চাই। নীলা বললো আমি আপনাকে এখন যেকথা বলতে চাই আপনি শোনার পর এই কথা কাউকে বলবেন না কথা দিন?
আকাশ কিছু টা অবাক হয়ে বলে বলো তুমি কি বলতে চাও?”-
–” আমি এই বিয়ে করতে চাই নাই আকাশ। আকাশ বললো কেনো করতে চাও নাই? নীলা বললো আমি এক ছেলেকে ভালোবাসি আকাশ তার নাম হামজা। হামজা আর আমার তিন বছরের ভালোবাসা কিন্তু বলিদান করতে হলো?
আকাশ বললো কেনো বলিদান করলা? নীলা বললো কারণ সে মিডিল ক্লাস তার কোনো জব নেই, তাই আমার বাবা তার সাথে আমাকে বিয়ে দেয় নাই। আকাশ বললো এটা ঠিক করলো না তোমার বাবা , তা বলো এখন কি করতে চাও তুমি? “–
–” নীলা বললো আমি যা বলবো আপনি তা মেনে নিবেন? আকাশ বললো চেষ্টা করবো বলো তুমি! “–
–” নীলা বললো আমি আপনার কাছ থেকে কিছুদিনের সময় চাই স্বাভাবিক হতে এর আগে আপনি আমার কাছ থেকে স্বামীর অধিকার নিতে চাইবেন না কথা দেন “–
–” আকাশ বললো তুমি কি কিছুদিন পর তাকে ভূলতে পারবা? অবশ্যই পারবা না, অতএব আমি তোমাকে ৬ মাস সময় দিলাম, যদি এর মধ্যে তুমি মনে করো তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারবা তাহলে সেইদিন আমি স্বামীর অধিকার চাইবো? আর যদি না পারো তাহলে আমি নিজেই তোমাকে ডির্ভোস দিয়ে মুক্তি করে হামজার হাতে তুলে দিবো! কিন্তু তোমাকে সবার সামনে আমার স্ত্রী হওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হবে?”–
–” এই কথা শুনে নীলা অবাক হয়ে আকাশ কে দেখে আর মনে মনে বলে এত সুন্দর মনের ছেলে যে কিনা স্ত্রী কে প্রথম রাতে না পেয়ে আমার চাওয়ার মূল্যর জন্য নিজেকে সেক্রিফাইস করতেও রাজি? “—
—” আকাশ বললো কি ভাবছো নীলা? নীলা বললো যখন সময় আসবে আপনি আপনার বাবা মা কে আমার আম্মু আব্বুকে কিভাবে ম্যানেজ করবেন? আকাশ বললো সেইটা আমার উপর ছেড়ে দাও “–
–” এখন তুমি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থেকোনা যাও চেঞ্জ করে স্বাভাবিক হয়ে আসো নীলা! নীলা বললো হুম কিন্তু আমি পড়বো কি? বাড়ি থেকে তো কোনো কাপড় আনি নাই। আকাশ বললো আলমারি খুলো ওইখানে একটা থ্রিপিস রাখা আছে তোমার জন্য পড়ে আসো। নীলা আলমারি খুলে থ্রি পিস নিলো তারপরে ওয়াশরুমে গেলো এরপরে আকাশের কথা গুলো ভাবলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো একটা মানুষ এত কি করে ভালো হতে পারে। সে কি আসলেই ভালো নাকি আমার সুযোগ নিতে চাইছে ও এই কথা মনেমনে ভাবতেছে তারপরে অলংকার ল্যাহেঙ্গা চেঞ্জ করে থ্রিপিস পড়ে বাইরে আসলো। রুমে এসে দেখে আকাশ সোফায় বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত আকাশকে দেখে নিস্পাপ শিশু মনে হচ্ছিলো। নীলা আস্তে আস্তে আকাশের কাছে গিয়ে হাতঘড়ি খুলে দিয়ে বেডে উঠে পড়লো। বিছানার ল্যাম্পপোস্টের কাছে রাখা দুধের গ্লাস দেখে মনে মনে বললো এ আমি কি করলাম মানুষ টাকে দুধ খাওয়াইতে পারলাম না! এরপরে নীলা তার ফোন টা অন করে অন করার সাথে সাথেই হামজার নম্বর থেকে ০২ টা এসেমেস আসে “–
–” প্রথমে এসেমেসে লেখা ছিলো নীলা আমাকে মাফ করো আমি তোমাকে দেওয়া কথা রাখতে পারলাম না। আমি তোমার কাছে গেলে আজকে আমার মা ও বোনের লাশের উপর দিয়ে যাইতে হতো। আমি এরকম মিল চাই না নীলা। এর জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি “–
–” দ্বিতীয় এসেমেসে লেখা ছিলো নীলা আমার ভালোবাসা নিয়ো আমি জানি তুমি যখন আমার এসেমেসটা পড়ছো তখন তুমি অন্য কারো বউ হয়ে গেছো। আমি শুধু তোমাকে এই কথাটাই বলতে চাই আমাদের চারহাত এক হওয়ার জন্য নয়। তাই তুমি আমার কথা ভেবে তোমার স্বামীর সাথে অবিচার করিয়ো না এটাই আমার অনুরোধ। “–
–” নীলা মেজেস দুইটা দেখে অবাক হয়ে যায় আর সে মনে মনে ভাবতে লাগে তাহলে তার বাবা লিটন সাহেব হামজার সাথে কিছু করেছে কারন হামজাকে দিয়ে সম্ভবত জোর খাটিয়ে এসেমেস দেওয়াইছে। কারণ বাবা শুরু থেকেই চাইতো আমাদের মিল না হোক এটা বাবারেই কাজ। বাবাই হামজাকে হুমকি দিছে এসব করার! “—
–” নীলা কাদতে শুরু করে। এমন সময় আকাশের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আকাশ নীলাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে তুমি কাঁদছো ক্যান? নীলা স্বাভাবিক হয়ে বলে এই দেখেন হামজার এসেমেস, আমি শিউর বাবা হামজার সাথে কিছু করেছো। আকাশ তখন নীলাকে বলে আমি কি তোমাকে কোনো বিষয়ে জোড় করছি? নীলা তুমি বাড়িতে যেভাবে ছিলা এখানেও ঠিক সেভাবেও থাকবা। তাহলে এসব বিষয়ে নিয়ে এখন কাদছো ক্যান? নীলা বলে আকাশ তুমি এসব করে পাবা কি? আকাশ বললো কোনো কিছু পাওয়ার বিনিময়ে এসব করছি না? তুমি শুধু আমাদের বাড়িতে যে কয়টা দিন আছো বাড়ির লোক কে বুঝতে দিবা না যে আমাদের সব কিছু ঠিক নাই শুধু এইটুকু আবদার।নীলা তখন বলে হুম। আচ্ছা এখন তাহলে ঘুমাও। এই বলে দুজনে ঘুমিয়ে পড়ে? “–
সিন শিফট হয় হামজার বাড়িতে হামজা তার তিন বছরের ভালোবাসা বলিদান করছে লোভে পড়ে। হামজা ছোট থেকে গরীব ছিলো, তাই সে নীলার বাবার বাবা প্রপোজাল ফেলতে পারে নাই। নীলার বাবা হামজার কাছে আসে হামজাকে জিজ্ঞেস করে তোমায় কি দিলে তুমি আমার মেয়েকে ছাড়তে রাজি আছো? হামজা বলে কোনো কিছুর বিনিময়ে সে নীলাকে ছাড়তে পারবে না কারণ তারা একে অপরকে খুব ভালোবাসে। লিটন সাহেব ভালোবাসার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য মাথায় একটা ছক কষে হামজাকে প্রপোজাল দেয়। লিটন বলে দেখো হামজা তুমি যদি তোমার ভালোবাসা সেক্রিফাইস করো তাহলে আমার কোম্পানির 40% শেয়ার তোমাকে দিবো? এই কথা শোনা মাত্রই হামজা লোভে পড়ে যায় এতদিন থেকে চাকরির চেষ্টা করছে চাকরি হচ্ছে না এখন যদি সে নীলাকে সেক্রিফাইস করে তাহলে সে কোটিপতি। আর একবার কোটিপতি হলে সে সুখী কারণ যেকোনো মেয়েকে সে বউ বানাতে পারবে। হামজা বলে আঙ্কেল আমি যদি সত্যি আপনার মেয়েকে ছাড়ি তাহলে আপনি যে আমাকে আপনার কোম্পানির শেয়ার বানাবেন এই কথার নিশ্চয়তা কতটুকু। লিটন সাহেব মনে মনে বলে টোপ গিলেছে তাহলে, আসলে গরীবরা গরীব ওই হয়। কারণ যে ছেলে লোভের বশবর্তী হয়ে এরকম প্রপোজালে রাজি হতে পারে সে আর যাই হোক আমার মেয়ের জামাই হতে পারেনা। লিটন ফোনের রেকর্ডিং চালু করে হামজার সাথে যা কথা হয় সব রেকর্ড করে। লিটন সাহেব বলে আমি যেহেতু কথা দিছি কথা রাখবো এইটুকু ভরসা রাখো। হামজা বলে কথার ভরসা নিশ্চয়তা নাই প্রমান চাই। লিটন বলে আমি যেহেতু তোমাকে শেয়ার দিতে চাইছি অবশ্যই দিবো আর তুৃমি আমার মেয়ের জন্য কালকে রেলস্টেশনে যাবা না তোমরা আজকে যা কথা বলেছো সব শুনেছি এর জন্য এখানে আসা। এই বলে লিটন সাহেব বের হয়ে যায় আর মনে মনে বলে ছি! ছি! আমি লোক চিনতে ভূল করি নাই। হামজা এসব বিষয় মনে করে আর নীলাকে ভূল বুঝানোর জন্য ওই মেজেস দুইটা দেয়। হামজা বলে ভালোবাসা গেলে আরো ভালোবাসা আসবে কিন্তু একবার এই সুযোগ গেলে আমাকে সব হারাতে হবে তাই আমি যা করেছি আমার ভালোর জন্যই করেছি! “–
——- নতুন সকাল ——-
আকাশের ঘুম ভেঙ্গে গেলো খুব তাড়াতাড়ি। সোফা থেকে নীলাকে দেখছে আর মনে মনে বলছে হে আল্লাহ আমি এই আকাশ কোনোদিন কোনো মেয়েকে ভালোবাসলাম না সব ভালোবাসা আমার স্ত্রীর জন্য রেখে দিয়েছিলাম আর আপনি আমার সাথে এইরকম করলেন। কি সুন্দর পরী লাগছে নীলা কে অথচো, এই পরীকে বিয়ে করেও আমার করতে পারলাম না। কি পাপ করেছিলাম আমি যার জন্য, আমাকে এইভাবে শাস্তি দিলেন আপনি। কি মায়াবী নীলার মুখ এই বলে বেডে যায়। তখন নীলার ঘুম ভেঙ্গে যায়। নীলা বলে কি করছেন আকাশ? আকাশ বলে ডাকতে এসেছি!!
–” নীলা বললো কয়টা বাজে? আকাশ বাড়িতে অনেক লোক নীলা তুমি তাড়াতাড়ি আজকে উঠো সাওয়ার নিয়ে নিচে নামতে হবে আমাদের কারণ আজকে আমাদের রিসেপশনের আয়োজন করা হয়েছে ” —
–” নীলা বললো ওই বাড়ি থেকে আমাদের কেউ আসবে না। তখন আকাশ বললো সবাই আসবে। এই কথা শেষ করে আকাশ সাওয়ার নিতে যায় “—
#চলবে,,
[ভূল ত্রুটি মার্জনীয় ও ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেক কষ্ট করে লিখছি আপনাদের সাড়া পেলে লেখার ইচ্ছে দ্বিগুণ বেড়ে যায়। Happy Reading. ]