দাম্পত্য_ জীবন #মেহু_আপু #পর্ব_03

0
499

#দাম্পত্য_ জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_03

আকাশ সাওয়ার নিতে যায় তোয়াল ছাড়া। সাওয়ার নেওয়া শেষ হলে দেখে তোয়াল নেই। রুমে ঢুকার উপায় নেই কারন নীলা বসে আছে। আকাশ মাথাটা একটু বের করে নীলার কাছে তোয়াল চায়। নীলা লজ্জা পেয়ে তোয়াল নিয়ে যায় দরজার কাছে। নীলা বলে উঠে এই যে তোয়াল নেন আকাশ। আকাশ তোয়াল নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়। নীলা হাত বাড়িয়ে দেয়। আকাশ নীলার হাতকে তোয়াল ভেবে হেচকা ডান দেয়। নীলা ভীতরে ঢুকে যায়। নীলা চিৎকার করে একি করছেন আকাশ। আকাশ লজ্জা পেয়ে যায় কারণ ফার্স্ট টাইম কোনো মেয়ের সামনে শার্টলেন্স অবস্থায়। নীলা চোখ বন্ধ করে ফেলে। সাবানে পা লেগে নীলা পড়ে যেতে লাগে, আকাশ তাকে ধরে নেয়। কিন্তু আকাশের হাত লেগে ট্যাপ অন হয়ে যায়! ওই অবস্থায় দুজনে ভিজে যায়। নীলা চোখ বন্ধ করে ফেলে আর জোড়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে আকাশের বুকে। আকাশ শুধু নীলাকে দেখেই যায় মুগ্ধ অবস্থায়। নীলাকে সাওয়ার নেওয়া অবস্থায় দেখে আকাশ মুগ্ধ হয়ে যায় নীলার রুপে।।

মিউজিক বাজছে —– অবুঝ এ মন শুনেনা বারণ করে উচাতন সারাক্ষণ,বিনিময়ে তোকে চাওয়া ফিরে পাওয়ার নিবেদন। মন বুঝেনা, মন সহেনা কারে বলি এ মনের কথা। ও মনরে রে রে এ —-

এমন সময় আকাশের ভাবি উষশী, নীলা আর আকাশকে ডাকতে রুমের দিকে আসে। রুমের কাছে এসে দেখে দরজা খোলা তাই নক না করেই ভিতরে ঢুকে দেখে কেউ নাই। এমন সময় বাথরুমের দিকে নজর যায়। উষশী দেখা মাত্রই চিল্লিয়ে উঠে। আকাশ আর নীলা হকচকিয়ে যায়। উষশী বলে আকাশ বিয়ের পর তুমি এত নিলজ্জ হয়েছো। যে সাওয়ার নিতে গেলে যে দরজা লাগাতে হয় তাও ভূলে গেছো। আকাশ তাড়াতাড়ি দরজা লাগিয়ে দেয়। নীলা বলে কি করছেন আকাশ। আকাশ বললো চুপ করে থাকো। আকাশ বললো ভাবী তুমিতো নিলজ্জ কম না! এক বিবাহিত পুরুষের ঘরে ঢুকছো নক করবা না। নীলা বললো ছি! এসব কি বলতেছেন?

উষশী বললো বিবাহিত পুরুষ দরজা লাগাতে ভূলে গেলে আমার নক না করে আসাতেই দোষ। আকাশ বললো ভাবী কি বলবা জ্বলদি বলো ঠান্ডা লাগছে। উষশী মুচকি হাসি দিয়ে বলে বাবা এতক্ষণ তো খুব রোমান্স করছিলে। এখন আমি আসাতেই ঠান্ডা লেগে গেলো। নীলা তখন বললো ভাবী আপনি যা ভাবছেন এরকম কিছু না এটা একটা এক্সিডেন্ট মাত্র। উষশী বললো বুঝি আমি সব বুঝি ওই সময় পার করে এসেছি আমি বলেই মুচকি হাসি দিলো। আকাশ এবার রেগে বললো আমি কিন্তু এবার বের হয়ে যাবো। কিছু বলার থাকলে বলো? উষশী বললো থাক যাচ্ছি নিচে আসো তাড়াতাড়ি নাস্তা করতে হবে। এই বলে উষশী চলে গেলো।

নীলা তখন আকাশকে রাগ দেখিয়ে বলে আপনার জন্য আজ এরকম অবস্থায় পড়তে হলো। ছি! কি লজ্জা ভাবীকে মুখ দেখাবো কিভাবে কি করে? আকাশ তখন বললো তোমাকে কে এভাবে হাত এগিয়ে দিতে বলছিলো।

নীলা বললো আমি কি জানতাম আপনি তোয়ালের পরিবর্তে হাত ধরে রান দিবেন। তাহলে তো লাঠি দিয়ে দিতাম। তখন আকাশ বললো থাক কিছু হবে না এই বলে তাওয়াল নিয়ে বের হয়ে আসে।

আলমারি তে যেয়ে আকাশ কালো রঙের শার্ট, প্যান্ট,বেল্জার পড়ে, আর নীলার জন্য কালো শাড়ি, বের করে বেডে রেখে নিচে যায়।

নীলা সাওয়ার নেওয়া শেষে বেড়িয়েই দেখে কালো শাড়ি। নীলার কালো রঙ খুব প্রিয়ো তাই সেও কালো শাড়ি,চুড়ি,টিপ পড়ে নিচে চলে আসে

—— ডাইনিং টেবিল ——

আকাশের বাড়ির সবাই ডাইনিং বসে আছে নীলার জন্য। নীলা আসতেই আর্জিনা বেগম বললো ছোট বউ তুমি বসো আমি আর বড় বউমা পরিবেশন করছি। নীলা বললো না মা এমনিতেই আমি সকাল উঠে রান্না করি নাই আর এইটুকু করলে আমার বাবার বাড়ির মান সম্মান সব যাবে –”

আকাশ নীলাকে কালো শাড়িতে দেখে মুগ্ধ আর মনে মনে বলে যাক বিয়েটা মেনে না নিলেও সেতো আমার পরিবারকে আপন করে নিছে এইটুকু আশা তো নিরাশ করে নাই নীলা এইটাই অনেক।।

নীলা সবার পাতে ভাত দেয় কারণ বেলা আজ অনেকটা হয়েছে এর জন্য কেউ নাস্তা না করেই ভাত খাবে। সবাইকে পরিবেশন করলো নীলা,আর উষশী।

খেতে খেতে আজগর সাহেব বললো আজ আকাশ আর নীলার রিসেভশন। ডেকোরেটরের লোক সব কিছু ঠিকঠাক মতো করলো কিনা সেদিকে খেয়াল রাখিয়ো ইশান। ইশান বললো আচ্ছা বাবা, আজগর সাহেব বললো সবাই প্রস্তুত থাকো আরেকটুর পর নীলার বাড়ি থেকে নীলার বাড়ির লোক আসবে তাদের যেনো কোনো ত্রুটি না হয় সেদিকে সবাই মনোযোগ দিয়ো। এই বলে আজগর সাহেব খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো।

—“একে একে সবাই খাওয়া শেষ করলো ডাইনিং পরিষ্কার করে উষশী আর নীলা খেয়ে নিলো “—

—— সময়ঃ- 12.00 PM ——

নীলার বাড়ি থেকে নীলার বাবা দুই কাজিন রিয়া, কেয়া,প্রতিবেশীর কিছু লোক আসছে সাথে করে মিষ্টি,ফলমূল নিয়ে আসছে আর পরিবারের সবার জন্য কিছু উপহার সামগ্রী হিসাবে কাপড় নিয়ে আসছে।

সবার খুব পছন্দ হয়েছে আজগর সাহেব বললো বিয়াই উপরে যান এটা আপনার জামাই ও মেয়েকে দিয়ে আসুন ওরা নাহয় রিসেভশন পার্টিতে আপনার দেওয়া পোশাক পড়বে।

লিটন সাহেব খুব টেনশনে আছে কারণ তার মেয়ে কিনা কি করছে হামজার বিষয় টা নিয়ে খটকায় পড়ছে লিটন সাহেব? এসব ভাবতে ভাবতে নীলার রুমে যেয়ে নক করে। আর নীলার বাকি আত্নীয়রা ড্রয়িংরুমে সভায় মনোনিবেশ করে!!

নীলা দরজা খুলে তার বাবাকে দেখতে পেয়ে কিছু বলেনা তখন আকাশ বলে উঠে বাবা আসসালামু আলাইকুম। ভিতরে আসেন। তখন লিটন সাহেব সালাম নিয়ে ভীতরে ঢুকে আকাশকে একটা ব্লু কালারের পাঞ্জাবি আর হোয়াইট কালারের পায়জামা, আর একটা ব্লেজার দিয়ে বলে বাবা পছন্দ হয়েছে।

আকাশ বলে এগুলা করার কি মানে বাবা আর বাবার হাতের জিনিস পছন্দ হবে না কেনো? লিটন সাহেবের কোনো ছেলে নাই তাই লিটন বলে উঠে আমার কোনো ছেলে নাই বাবা। তোমার মুখ থেকে বাবা ডাক শুনে আমি আবেগে আপ্লুত বলেই চোখের পানি ছাড়ে।

আকাশ এসব দেখে লিটন সাহেবকে বলে উঠে কে বলছে ছেলে নাই তাহলে আপনি কি আমাকে আপনার ছেলে মনে করেন না!! আজ থেকে আমি এ আপনার ছেলে।

লিটন সাহেব আকাশকে বুকে জড়িয়ে ধরে। এসব দৃশ্য দেখে নীলা মনে মনে বলে উঠে ছেলেটা এত ভালে কি করে? যাকে আমি স্বামীর অধিকার দিলাম না তবুও সে আমার বাড়ির লোককে কিভাবে আপন করে নিচ্ছে। আল্লাহ ক্যান আপনি এরকম ছেলের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি তাকে এতো কষ্ট কি করে দিবো কিন্তু আমিতো হামজাকে ভালোবাসি তাকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে??!

এমন সময় আকাশের ফোনে কল আসে। আকাশ বলে উঠে বাবা আপনি নীলার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলুন আমি ফোনটা ধরেই আসতেছি। এই বলে আকাশ ফোন ধরতে বেলকুনিতে যায়।

নীলা বলে উঠে বাবা কেমন আছো তুমি?

লিটন সাহেব বলে উঠে ভালো আছি মা, তুমি কেমন আছো?

নীলা বলে আমাকে তুমি কি ভালো রাখার জন্য বিয়ে দিছো?

লিটন সাহেব বলে উঠে ক্যানো মা কি করলাম আমি?

নীলা বললো বাবা থাক ন্যাকামো করবে না। তুমি হামজার সাথে কি করেছো বলো?

লিটন সাহেব বলে উঠলো কি করছি মানে ও কি তোমাকে কিছু বলেছে?

নীলা বলে উঠলো বাবা তুমি ক্যান ওর মা বোনকে মারার হুমকি দিছো?

লিটন সাহেব বললো ও তোমাকে এসব কে বলেছে।

নীলা বললো বাবা আমার কাছে প্রুভ আছে, এই যে দেখো ও আমাকে মেজেস করেছে। আর এই কাজ তুমি ছাড়া আর কেউ করতে পারেনা?

লিটন সাহেব বললো শান্ত হও মা তুমি যাকে ভালোবাসো সে মানুষ না সে তোমাকে কখনে সুখি করতে পারতো না। আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্য করেছি।

নীলা বললো কোন ভালোর কথা বলছো বাবা, অর্থের সুখ মানুষের জন্য সুখ না, মনের সুখ টাই আসল।

লিটন সাহেব বললো আমি যদি প্রমান করি তুমি যাকে ভালোবাসো সে তোমার অর্থকে ভালোবেসেছে তাহলে তুমি কি করবা তখন?

নীলা বললো বাবা তুমি এসব কি বলছো আর হামজার নামে খারাপ এলিগেশন কিভাবে আনো? এমনিতেও তুমি একটা জঘন্য কাজ করেছো তার উপর এত বড় বড় কথা কিভাবে বলো?

লিটন সাহেব তখন কিছু না বলে ফোন বের করে হামজার রেকর্ড করা কথা গুলো চালু করে দেয়। দেখো তোমার হামজা কি করেছে?

রেকর্ড শুনে নীলা ভেঙে পড়ে তারপর তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। বাবা এ আমি কেমন হামজাকে ভালোবেসেছিলাম ও তো এমন ছিলো না।

লিটন সাহেব বলে মা তোমায় একটা কথা বলছি অর্থের অভাব এমন জিনিস যারা এই অভাবে পড়ে তখন ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়। আমি জানতাম ওইখানে তোমাকে বিয়ে দিলে কখনোই সুখী হইতা না এর জন্য আমি ছেলেটিকে পরীক্ষা করেছি। আমি তোমার বাবা হয়ে এই কাজটা করে কি ভূল করেছি? এরপরেও যদি তুমি আমাকে ভূল বুঝো আমার করার কিছু নাই?

নীলা বললো বাবা আমাকে মাফ করো অল্পতেই তোমার মান সম্মান ডুবচ্ছিলাম।

লিটন সাহেব বললো থাক মা এসব নিয়ে আফসোস রাখিয়ো না। আকাশ অনেক ভালো ছেলে আর আমি ওকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি, ও কোম্পানির সিয়ো হওয়া সত্ত্বেও কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে দেখি নাই।

নীলা কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো কিন্তু বাবা আমি তো তাকে সব বলে দিয়েছি।

এমন সময় আকাশ তার রুমে ঢুকলো বিস্মিত হয়ে 🙂

#চলবে,,,

[ ভূল ত্রুটি মার্জনীয়, অনেক কষ্ট করে লিখি দু চারটা ভালো কমেন্ট অথবা ভূল গুলো একটু ধরিয়ে দিলে ভালো হয়। আপনাদের উৎসাহ পেলে লেখার আনন্দ দ্বিগুন হয়ে যায়। সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার আহবান রইলো। আসসালামু আলাইকুম ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here