#Life_Game
পর্ব – ৫
#writer_rukaiya_rakhi
শুয়ে শুয়ে নিজের এত কাছের বন্ধু রউফের মৃত্যুর কথা ভাবছেন এস আই নুর।কতটা নির্মম ভাবে খুন করা হয়েছে তাকে।কে করতে পারে এমন টা। ঠিক সেই মুহূর্তে তার ফোন এ একটা মেসেজ আসে। কেউ unknown নম্বর থেকে একটা ভিডিও পাঠিয়েছে।ভিডিও টা অন করতেই হাত কাপতে শুরু করে নূরের।ভিডিওটা আর কারো নয় তার বন্ধু রউফের।তাকে নির্মমভাবে মারা হচ্ছে ।ব্যাথায় গংরিয়ে উঠছে রউফ।ভিডিওর নিচেই লেখা ” এর পর তোর পালা ”
এবার অনেক চিন্তায় পড়ে যায় নুর।কে সে যে ওর বন্ধুকে মেরেছে এখন তাকেও মারতে চাইছে!
————
– এই যে হেলো মিস!
কারো ডাক শুনে পিছনে তাকায় শ্রাবণী। পিছনে তাকাতেই মুখটা কালো হয়ে যায় তার । কেননা পিছনে আদিত্য দাড়িয়ে আছে। এই ছেলেটা বড্ড বিরক্ত করছে তাকে।
– কি ব্যাপার মুখটা এমন বাংলা পেঁচার মত করে ফেললেন যে!!
– কি সমস্যা ? ডাকছেন কেনো?
– আরে সমস্যা হবে কেনো , এমনি ডাকলাম । আপনি কিন্তু অনেক সুন্দর গান করেন।
– আমি জানি সেটা( বিরক্তি ভাব নিয়ে)এখন বাই!
– আরে আরে কই যান। কথা শেষ ই করলাম না তার আগেই ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত বার বার দৌড়াচ্ছেন কেনো?(কথাটা বলেই জিহ্বায় কামড় দেয় আদিত্য)
– কি বললেন আপনি?(রেগে গিয়ে)
– রাগ করছেন কেনো? ছাগলের বাচ্চা তো অনেক কিউট হয় একদম আপনার মত!!
– আপনাকে তো আমি….
শ্রাবণী যেই এগোতে যাবে তখনই শাড়ীর সাথে পা বেজে পরে যেতে নেয়। চোখ বন্ধ করে নেয় সে। কিন্তু না সে তো পরে যায় নি ।কেউ তাকে ধরে আছে। চোখ খুলে দেখতে পায় আদিত্য তাকে ধরেছে। আজকে আদিত্য কে ভালো খেয়াল করে শ্রাবণী। চোখ দুটো ডাগর ডাগর, কালো ভ্রুজুগল, মাথায় সিল্কি চুল, চেহারার মধ্যে বাচ্চা বাচ্চা ভাব , গায়ের রং হলদে। সব মিলে একদম পারফেক্ট।
– উহুম উহুম..একটা বাচ্চার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন লজ্জা করে তো।
আদিত্যর কথায় ধ্যান ফেরে শ্রাবণীর। তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ায় আর সেখান থেকে চলে যায়।
– আরে একটা থ্যাংস তো বলতে পারেন!!
————-
মেসেজ টা আসার পর থেকেই খুব চিন্তায় পড়ে গেছেন নুর।একের পর এক সিগারেট এর প্যাকেট শেষ করে ফেলেছেন। কি করবে সে এখন! কিছু মাথায় ঢুকছে না।কে মারতে চাইছে কেনো মারতে চাইছে! বাসায় সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিবে? নাকি খুঁজবে তাকে! কিন্তু কোথায় খুঁজবে!! কোনো ক্লু পাচ্ছেন না তিনি!!
———–
– হেলো বাবা!
– কেমন আছিস মা?
– এইতো বাবা ভালো । তুমি কেমন আছো?
– তোকে ছাড়া কি আর ভালো লাগে বল!একা কেমন আছিস না আছিস , কি খাচ্ছিস কিছুই তো জানিনা!
– আরে বাবা, তুমি এমনি টেনশন করছ । আমি অনেক ভালো আছি।
– সত্যি তো?
– হে আমার সুইট বাবা! তুমি ওষুধ খাচ্ছ ঠিক মত?
– তুই থাকতে তো তুই জোর করে খাওয়াইতি। এখন তো কেউ নেই।
– আমি নেই দেখে কি নিজের খেয়াল রাখবে না নাকি!যদি আমি মরে যাই তখন?
– কি বলছিস এসব ( বলেই কান্না করে দিলেন সাঈদ চৌধুরী)
– আরে বাবা কান্না করছ কেনো এমনি বললাম।বাবা আমার একটু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে পরে ফোন করছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– আর হে ঠিক মত ওষুধ খাবে কিন্তু!
বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফোন রেখে দেয় শ্রাবণী।ওর মাথায় তো অন্য কিছু ঘুর পাক খাচ্ছে।
কিভাবে সেকেন্ড টার্গেটকে শেষ করা যায় সেই পরিকল্পনা করছে সে।
———–
সেই ঘটনার পর 4 মাস হয়ে গেছে । এর মাঝে আর কিছু হয়নি। এস আই নুর এর ও ভয় কেটে গেছে। এতদিন কিছু হয়নি তাইলে এখনও হবেনা। আজ তার বড় ছেলের বিয়ে ধুম ধাম করে আয়োজন করা হয়েছে। একমাত্র ছেলে বলে কথা! খুব খুশি তিনি নিজের ছেলের বিয়ে বলে কথা কে না খুশি হবে। ওনার ছেলের বিয়ে হচ্ছে বড় কমিউনিটি সেন্টার এ। সবাই অনেক মজা করতে ব্যাস্ত । কিন্তু।হটাৎ করেই সেখান কার ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। এভাবে ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়ায় সবাই অনেক অবাক হয়ে যায়। কারণ এত বড় কমিউনিটি সেন্টারে তো লোড শেডিং হওয়ার কথা না।
– আমি দেখছি কি হয়েছে।(একথা বলে সার্কিট চেক করতে যান নুর)
————
কমিউনিটি সেন্টার টা অনেক বড় হওয়ায় সার্কিট যে পাশটায় আছে সেই জায়গা টা একটু নিরব।টর্চ হাতে এগিয়ে যান তিনি। নির্জন পাশ টাতে যেতেই কারো চিৎকার শুনতে পান ।কিছুটা ভয় পেয়ে যান তিনি। তারপরও সাহস নিয়ে এগিয়ে যান দেখার জন্য যে কে চিৎকার করছে। আর একটু এগিয়ে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনতেই তিনি বুঝতে পারেন এটা তার বন্ধু রউফের কণ্ঠ।তার বন্ধু বার বার কারো কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইছে” প্লীজ ছেড়ে দাও! আমাকে মাফ করে দাও!” ভয়ে ভয়ে কন্ঠ অনুসরণ করে এগিয়ে গিয়ে দেখেন কেউ নেই আর চিৎকারও শোনা যাচ্ছে না। ওখান থেকে চলে আসতেই আবার একই কন্ঠ !!ভয়ে তার গলা শুকিয়ে যায়। আর সামনে যাওয়ার সাহস পান না তিনি। পিছিয়ে যেতে থাকেন কিন্তু হটাৎ ই কোনো কিছুর সাথে তার ধাক্কা লাগে । পিছনে ফিরতেই তিনি দেখতে পান কালো জ্যাকেট পরা একটা অবয়ব দাড়িয়ে আছে আছে তার সামনে।অন্ধকারে এর চেয়ে বেশি কিছু দেখা যাচ্ছে না।
– হেলো মিস্টার এস আই নুর!!
যখনি লাইট অবয়বের মুখে ধরতে যাবেন। ঠিক তখনই অবয়ব টা তার মুখে চেতনা নাশক স্প্রে করে দেয়। তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।
————–
চোখ খুলতেই তিনি……..
চলবে?