#বাতাসে_প্রেমের_আভাস (পর্ব-৪)
লেখনীতে— ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
-‘এই আধু ওঠ! দাওয়াতে যাবি না?’
আধ্রিকা ঘুমঘুম চোখে আরশিয়ার দিকে তাকালো। অবাক হয়ে বলল,
-‘বড় আপু, তুমি কখন এলে?’
-‘এই তো এক ঘন্টা হয়েছে। তুই এত ঘুম কাতুরে কেন রে? এসেই তো আমি চিল্লা ফাল্লা শুরু করে দিয়েছিলাম অথচ তুই একবারও উঠে আসলি না। ব্যাপার কী!’
-‘না সেরকম না। কাল রাতের আড়াইটা পর্যন্ত আমি অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করছিলাম। তাই একটু বেলা গড়িয়ে গেল।’
আরশিয়া বিছানায় বসতে বসতেই বলল,
-‘যা জলদি ফ্রেশ হয়ে আয়। গোসল দিয়ে নে একেবারে।’
আধ্রিকা শোয়া থেকে উঠতে উঠতে বলল,
-‘কেন?’
-‘বললাম না দাওয়াত আছে!’
-‘দাওয়াত? কোথায়? আমি তো জানি না।’
-‘জানিস না?’
-‘আরে সত্যিই জানিনা।’
-‘তনুর শ্বশুরবাড়ি থেকে সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। তনুর ভাসুর মিসবাহ্ সামনের সোমবার চলে যাচ্ছে। তাই একটা গেট-টুগেদারের আয়োজন করা হয়েছে।’
আধ্রিকার হঠাৎ করেই মনটা কেমন খা’রা’প হয়ে গেল। কিন্তু সে এটা বুঝে উঠতে পারল না কেন মন খা’রা’প হলো। মিসবাহ্ চলে যাচ্ছে বলে নাকি তাকে এখন মিসবাহ্’দের বাড়িতে যেতে হবে তাই!’
আরশিয়া আধ্রিকাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল,
-‘যাবি না?’
-‘ধুর। আমি কেন যাব? তোমরা যাও। আমার কাজ আছে। ভাবছি বারোটায় একবার ভার্সিটিতে যাব।’
-‘আজ তো শুক্রবার! ভার্সিটিতে তো ক্লাস নেই।’
আধ্রিকার টনক নড়ে। উফ! এখন কোন অজুহাত দিবে সে? আধ্রিকাকে ভাবনায় মশগুল থাকতে দেখে আরশিয়া হেসে বলল,
-‘এক্সকিউজ সাজানোর দরকার নেই। তনুর শাশুড়ি কল দিয়ে পইপই করে বলে দিয়েছে তোকে যেন নিয়ে যাই।’
-‘আমাকে কেন! ধ্যাত!’
-‘চল না। মজাই হবে। মামাদেরকেউ বলেছে।’
-‘মিথী যাবে?’
-‘হ্যাঁ। মিথীও যাবে। এখন যাবি তো? তোর বান্ধবী মিথীও যাচ্ছে।’
আধ্রিকা বি’র’ক্ত মুখ করে কাবার্ড থেকে জামা বের করতে নিলেই আরশিয়া বলে উঠল,
-‘শাড়ি পরিস।’
-‘কেন?’
-‘আজকে মেয়েরা সবাই নাকি শাড়িই পরবে। তনু বলেছে।’
-‘আমি পরতে পারব না।’
-‘কেন? তুই কি ছেলে!’
আধ্রিকা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় বড় বোনের দিকে। আরশিয়া হেসে বসা থেকে উঠে বলল,
-‘তোকে শাড়িতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। কেউ একবার দেখলে আর চোখ ফেরাতে পারে না বুঝলি!’
আরশিয়া চলে যেতেই আধ্রিকা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ওইদিন মিসবাহ্ তাকে একবারও তাকিয়ে দেখেনি। অথচ এর আগে তাদের বাড়িতে সে তার দিকে তাকিয়েছিল। হেসে কথা বলেছিল। আধ্রিকার হঠাৎ করেই অ’স্ব’স্তি হতে থাকে। সে মিসবাহ্’কে নিয়ে কেন এত ভাবছে? মাথাটা খা’রা’প হলো নাকি?
যদিও যাবে না, শাড়ি পরবেনা বলেছে আধ্রিকা। তারপরেও সে সবার আগে খুব সুন্দর করে সেজে, শাড়ি পরে তৈরি হয়ে গেল। তা দেখে মাইমুনা আর আরশিয়া মিটিমিটি হাসে। বড় বোন আর ভাবীর প্রতিক্রিয়া দেখে আধ্রিকা একটু ল’জ্জা পায়। তাই সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চুপচাপ বসে থাকে আর মোবাইল টিপে। অতঃপর দুপুর একটা বাজতেই সবাই বেরিয়ে পড়ে।
মিসবাহ্’দের বাড়িতে গিয়ে আধ্রিকা অবাক। এতো এলাহি কান্ড! ডেকোরেশন এনে সাজিয়েছে। বাড়ির ছেলে চলে যাচ্ছে কোথায় সব মন ম’রা থাকবে তা না। সবাই যার যার মতো হৈ হুল্লোড়ে ব্যস্ত। আধ্রিকা যেতেই মিসবাহ্’র মা মাজেদা চৌধূরী আধ্রিকাকে জড়িয়ে ধরেন। কি সুন্দর খোঁজ খবর নেয়। অপ্রত্যাশিত আদর ভালোবাসায় আধ্রিকার মন গলে যায়। ইশ! এই মহিলা শাশুড়ি হিসেবে দারুন হতো!
মিসবাহ্’র দেখা পাওয়া গেল না আসার এক ঘন্টার মধ্যেও। এক ঘন্টা পার হলো যখন, তখন খাওয়া দাওয়াও শেষ, সবাই ড্রয়িং রুমে বসেছে আড্ডা দিবে বলে। মিসবাহ্’কে তখনই দেখল আধ্রিকা। একটা কালো পাঞ্জাবী আর সাদা পাজামা পরনে তার। ফর্সা, সুঠাম দেহে এই পাঞ্জাবী পরায় এত বেশি আকর্ষণীয় লাগছিল তাকে! মিসবাহ্’র মুখে সর্বদা মৃদু হাসি লেপ্টে থাকে। মানুষটা বোধ হয় হাসতে খুব ভালোবাসে। আধ্রিকা দেখে চোখ সরাতে পারে না। আশ্চর্যরকম ভাবে খুব বে’হা’য়ার মতোই সে তাকিয়ে ছিল। মাইমুনা আধ্রিকার পাশেই বসা ছিল। সে আধ্রিকাকে হাত দিয়ে আলতো করে গুতো মে’রে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
-‘এই আধু! এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন মিসবাহ্ ভাইয়ের দিকে? সবাই দেখছে তো! কি ভাববে!’
আধ্রিকা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। ইশ! সে ভুলেই গিয়েছিল তারা দুজন ছাড়াও আরো কেউ যে আছে। সে ভীষণ ল’জ্জায় পড়ে গেল। আশেপাশে তাকাতে দেখল তেমন কেউ খেয়াল করেনি। সবাই যার যার মতো কথা বলছে। কিন্তু মিসবাহ্ কি খেয়াল করেছে? মিসবাহ্ দেখলেই তো সর্বনা’শ। মিসবাহ্’র কাছে ভুলেও ছোট হওয়া যাবে না। সে সবার সাথে গল্পে মশগুল হতে পারল না। তার মাথায় মিসবাহ্ চক্রের মতো ঘুরছে। মিসবাহ্’কে চাইলেই এক নজর দেখতে পারে অথচ সে ল’জ্জা, সংকোচে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। তারপরেও লা’জ, ল’জ্জার মাথা খেয়ে আড়চোখে তার সামনের সোফায় বসে থাকা মিসবাহ্’কে সে দেখেছে। আর সবার সাথে হাসিখুশি হয়ে সে কথা বলছে। আর আধ্রিকার দিকে ফিরেও তাকালো না। বড় আপা ভুল বলেছে। শাড়িতে আধ্রিকাকে মোটেও ভালো লাগে না। মোটেও না। যদি ভালো লাগত তবে মিসবাহ্ কি একবারও না তাকিয়ে পারতো? আধ্রিকার হঠাৎ করেই নিজেকে খুব ছোট মনে হতে থাকে। এই আসরে বসার মতো যোগ্য মনে হয় না তার নিজেকে। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই তাহসান বলল,
-‘এই তুই কোথায় যাচ্ছিস?’
তাহসানের কথা শুনে সবাই তাকালো আধ্রিকার দিকে। তবুও মিসবাহ্ তাকালো না। আধ্রিকার এত অভিমান হলো! সে জবাব না দিয়ে হন হন করে দোতলায় চলে গেল। তখন তাকে মাজেদা চৌধূরী একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বলেছিল বিশ্রাম করতে চাইলে এখানে আসতে। এই রুমে কেউ আসবে না। নিশ্চিন্তে এখানে দু দন্ড রেস্ট নিতে পারবে সে।
আধ্রিকা চট করেই দক্ষিণ দিকের সেই রুমটায় ঢুকে পড়ল। কার রুম, কেমন রুম কিছুই দেখল না। ঢুকে গিয়েই ভেতরে থাকা বড় বিছানায় শুয়ে পড়ল। তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কেন? সে নিজেই জানেনা। সে কেঁদেও ফেলে। নিঃশব্দ কান্না। শুধু থেকে থেকে তার বুক, পিঠ দুলে দুলে উঠছে। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের কোণের গড়িয়ে পড়া পানিগুলো মুছতে মুছতেও এক সময় সে বি’র’ক্ত হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ কাঁদার পর খুব হালকা লাগছিল। তারপর কখন সে ঘুমিয়ে পড়ল টেরই পেল না।
———————–
আধ্রিকার যখন ঘুম ভাঙে তখন বিকেল পাঁচটা বাজছিল। চোখ মেলেই আধ্রিকা দেখতে পায় মিসবাহ্’কে। তখনিই সে খুব চমকে উঠে। মিসবাহ্ তার সামনেই ব্যালকনির পাশের সোফায় বসে কফি খাচ্ছে। আধ্রিকা শোয়া থেকে উঠতেই সেও আধ্রিকার দিকে তাকালো। আধ্রিকা বেশ বি’ব্র’তবোধ করল। শাড়ি ঠিক আছে কিনা দেখে নিল। শাড়ি পরে ঘুমালে বা’জে অবস্থা হয় তার। কোনো কিছুই ঠিকঠাক থাকে না। এখন সব ঠিক দেখে সে স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে।
আধ্রিকা মিসবাহ্’র দিকে তাকিয়ে ক্ষি’প্ত গলায় বলল,
-‘আপনি এখানে কি করছেন? এত অ’স’ভ্য হয় কীভাবে একটা মানুষ! একটা মেয়ে ঘুমিয়ে থাকলে সেই রুমে আসা মোটেও উচিত না।’
হাতের মগটা টেবিলে রেখে মিসবাহ্ সোফায় হেলান দিয়ে বলল,
-‘স্যরি ফর দ্যাট। কিন্তু আমার রুমে আমি আসতেই পারি।’
-‘আপনার রুম?’ আধ্রিকা অবাক হয়ে বলল।
মিসবাহ্ হেসে বলল,
-‘হ্যাঁ। আমার রুম। জানতেন না নাকি?’
আধ্রিকা বিছানা ছাড়তে ছাড়তেই বলল,
-‘জানলে কি আর আসতাম!’
মিসবাহ্ ছোট করে জবাব দিল,
-‘ও..’
মিসবাহ্ আধ্রিকার উপস্থিতি ভুলে গিয়ে পুনরায় কফিতেই মনোনিবেশ করল। আধ্রিকা ব্যাগটা হাতে নিয়ে চলেই যাচ্ছিল কিন্তু আয়নায় নিজের বি’দ্ধ’স্ত রূপ দেখে ঘা’ব’ড়ে গেল। কাজল লেপ্টে গেছে। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। দেখেই যে কেউ বুঝে যাবে সে কান্না করছিল। কিন্তু কারণটা যখন জিজ্ঞেস করবে তখন সে কী জবাব দিবে!
-‘ওয়াশরুমটা ওই দিকে!’
আকস্মিক মিসবাহ্’র কথা শুনে আধ্রিকা একটু চমকে গেলেও পেছন ফিরে তাকালো। মিসবাহ্ হাতের ইশারায় ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিতেই কি মনে করে সে ব্যাগ থেকে তার ফেইস ওয়াশ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। তারপর ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখল মিসবাহ্ নেই। ব্যাগে ফেইস ওয়াশটা রেখে টিস্যু দিয়েই মুখটা মুছল সে। তারপর শাড়িটা একটু ঠিক করে নিয়ে যখন চলে আসবে তখনিই দেখতে পায় বেলকনি থেকে মিসবাহ্ আসছে। তার কানে ফোন। আধ্রিকাকে চলে যেতে দেখে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে বলল,
-‘আপনার চা।’
ভ্রু কুঁচকে তাকালো আধ্রিকা। মিসবাহ্ চোখ দিয়ে ইশারা করতেই আধ্রিকা দেখল সোফার পাশে সেন্টার টেবিলটাতে চা সহ আরো কিছু খাবার রয়েছে। আধ্রিকা সেসব দেখে পুনরায় মিসবাহ্’র দিকে তাকালো। মিসবাহ্ তা দেখে ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিতে পরে কল করবে জানিয়ে কলটা কেটে দিল। তারপর এগিয়ে এসে আধ্রিকাকে বলল,
-‘তনু দিয়ে গেছে। বলল মা পাঠিয়েছেন। আপনার জন্য।’
-‘এখন এতসব আমি খেতে পারব না।’
-‘চা কিন্তু খাওয়াই যায়।’
মিসবাহ্ সোফায় বসল। আধ্রিকা ভাবল হয়তো মিসবাহ্ তার সাথে কথা বলতে চাইছে। আর এটা ভেবেই তার মনটা কেন যেন খুশিতে ভরে গেল। সেও বসে চায়ের কাপটা হাতে নিল। দুই চুমুক, তিন চুমুক, চার চুমুক খাওয়া হয়ে গেলেও মিসবাহ্’কে কোনো কথা বলতে দেখা গেল না। বরং সে মোবাইলেই ব্যস্ত। আধ্রিকা বুঝল মিসবাহ্ তাকে কোনো রকম গুরুত্ব দিচ্ছে না। মিসবাহ্’র কাছে তার বিন্দুমাত্র মূল্য নেই। সেখানে আলাপ জমানো তো দূরের কথা। লোকটা মনে এতটা অহং’কার? এতটা আত্মকেন্দ্রিক সে? ছিঃ আধ্রিকার একটু আগেই খুশিতে ভরে যাওয়া মনটা হঠাৎ করেই কেমন বিষাদে ছেয়ে গেল। এতক্ষণ যে চা টা খেতে খুবই ভালো লাগছিল সেটাও এখন কেমন তেঁতো হয়ে গেল। অ’প’মা’ন, উপেক্ষা সইতে না পেরে আধ্রিকা উঠে দাঁড়ায়। তাকে দাঁড়াতে দেখে মিসবাহ্ চোখ তুলে তাকালো বলল,
-‘কি হলো? চা টা শেষ করলেন না যে!’
-‘চা টা খুব বাজে হয়েছে। গলা দিয়ে নামছে না আর।’
আধ্রিকা চলে এলো। নিচে এসে দেখল সবাই বসে আছে একসাথে। তাকে দেখে আরশিয়া বলল,
-‘কোথায় ছিলি?’
-‘ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
-‘কই তনুর রুমেই তো আমরা ছিলাম। তোকে তো দেখিনি।’
-‘অন্য একটা রুমে ছিলাম।’
-‘ওহ!’
বলেই আরশিয়া তার মেয়েটাকে মায়ের কাছে দিয়ে আসার জন্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সে চলে যেতেই কেউ একজন বলে উঠল,
-‘কোন রুম ছিলে গো?’
পেছন থেকে অন্য কারো গলা পেয়ে আধ্রিকা ঘাড় ফেরায়। দেখল তনুর চাচাতো বোন মণিকা। মেয়েটাকে দেখেই আধ্রিকার মেজাজ আরো বেশি বিগড়ে গেল। এই মেয়েটা চূড়ান্ত রকমের ফাজিল আর অ’স’ভ্র, অভ’দ্র। ছেলে দেখলেই ঢলে পড়া এর স্বভাব। আর অন্য মেয়েদের ছোট করে কথা বলার মধ্যে সে আনন্দ খুঁজে পায়। আধ্রিকা জবাব দিল না কোনো। মণিকা এবার সামনে এসে বসল। বলল,
-‘বললে না যে কোন রুমে ছিলে?’
আধ্রিকা বি’র’ক্ত হয়ে বলল,
-‘কোন রুমে ছিলাম এটা জানাটা কি খুব বেশি দরকার? আর যে রুমেই থাকি না কেন। তোমার কী?’
মণিকা দুই কাঁধ নাঁচিয়ে জবাব দিল,
-‘আমার কিছুই না। না মানে আমি উপরেই ছিলাম। তোমাকে মিসবাহ্ ভাইয়ের রুম থেকে বের হতে দেখেছিলাম। এর আগে দরজাটাও বন্ধ ছিল। আর মিসবাহ্ ভাইয়াকেও ঢুকতে দেখেছিলাম। না মানে! এভাবে একটা পর পুরুষের রুমে এতটা সময় কি করছিলে?’
আধ্রিকার কথাটা শুনে গা জ্ব’লে গেল। কতটা অ’সভ্য হলে মেয়েটা এমন কথা বলতে পারে। ইচ্ছে করছিল ঠা’টি’য়ে একটা চ’ড় মা’রতে। কিন্তু ইচ্ছেটাকে বহু ক’ষ্টে দমিয়ে রাখতে হলো।
মিসবাহ্ উপর থেকে আসছিল। তাকে দেখেই এক প্রকার মৌমাছির মতো উড়ে গিয়ে মণিকা তার সামনে দাঁড়ালো। মেয়েটা একেবারে গা ঘেসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে মিসবাহ্’র। ঘৃ’ণায় সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয় আধ্রিকা। তার গা কাঁ’প’ছে। খা’রা’প লাগছে। আরশিয়া মেয়েকে রেখে এসে আবার আধ্রিকার পাশে বসে। বোনকে একটু অন্যরকম মুখ করে থাকতে দেখে বলল,
-‘কীরে! শরীর খা’রা’প করছে?’
-‘না।’
-‘তবে? এমন লাগছে কেন?’
-‘উফ। কেমন লাগছে?’
-‘জানিনা। বুঝে উঠতে পারছি না।’
মিসবাহ্ আর মণিকা কথা বলতে বলতে এক কোণায় গিয়ে দাঁড়াতেই আধ্রিকা বলল,
-‘দেখেছ! দেখেছ কি খা’রা’প এরা! ওই তোমাদের প্রিয় মিসবাহ্, মেয়েটার সাথে কেমন ঢং করে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কথা বলছে! কেমন দেখা যাচ্ছে। ছিঃ বি’শ্রী!’
আরশিয়া সেদিকে একবার তাকিয়ে মুঁচকি হেসে বলল,
-‘তাতে তোর কী?’
-‘আমার কি হবে! আমার কিছুই না। লোকে কি বলবে হ্যাঁ! আর মেয়েটা তো ভালো না। চেনোই তো। মিসবাহ্ তো রামছাগল। তাই বুঝতে পারছে না।’
আরশিয়া হাসি চেপে রেখে বলল,
-‘আশ্চর্য! মিসবাহ্’কে নিয়ে তুই এত কেন ভাবছিস এখন? প্রেমে পড়েছিস?’
-‘কচু পড়েছি।’
মিথী পাশে বসে সব শুনছিল। সে চট করে বলে উঠল,
-‘যা-ই বলিস! মিসবাহ্ ভাইকে ওর সাথেই মানিয়েছে ভালো।’
আধ্রিকা কথাটা শুনে কিছুক্ষণ কটমট দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘হ্যাঁ। ঠিকই বলেছিস। দুইটা অ’স’ভ্য মানুষকে মানাচ্ছে ভালো। আমি ভালো মানুষ। সভ্য মানুষ। আমার, আমার মতোই একজন জীবন সঙ্গী হবে দেখিস!’
ফেরার সময় আধ্রিকা যখন গাড়িতে উঠল মিথী বলল,
-‘তুই মিসবাহ্ ভাইয়ের রুমে ছিলি তাই না!’
-‘তখন তো শুনেছিস। মণিকা বলল তো।’
মিথী হেসে বলল,
-‘জানিস মণিকা বারবার মিসবাহ্ ভাইয়ের রুমে যেতে চাইছিল। মিসবাহ্ ভাই কোনো ভাবেই রুমে ঢুকতে দিল না। বেশ ভদ্র ভাবেই জানায় তার পার্সোনাল জোনে সবাইকে এলাউ করে না সে। অথচ তোকে করেছে। মণিকা সেটা নিয়েই রা’গ।’
কথাটা শুনে আধ্রিকা পুলকিত বোধ করে। তারপরেই তার মনে পড়ে সে তো মিসবাহ্’র অগোচরে তার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাই হয়তো এলাউ করেছে। ঘুমন্ত মানুষকে নিশ্চয়ই উঠিয়ে বের করে দেওয়া যায় না। কার্টেসী মাত্র! আধ্রিকা গাড়ির দরজাটা টানতে নিলেই কেউ একজন পাশে এসে দাঁড়ায়। আধ্রিকা চোখ তুলে তাকায় মানুষটার দিকে। মিসবাহ্ দাঁড়িয়ে আছে। সে খুব যতনে গাড়ি থেকে বের হয়ে থাকা আধ্রিকার শাড়ির আঁচলটা তুলে দিল। তারপর দরজাটা নিজে বন্ধ করে দিয়ে বলল,
-‘ভালো থেকো। আল্লাহ্ হাফেজ।’
গাড়ি ছেড়ে দিল। আধ্রিকার চোখটা হঠাৎ করেই ভিজে উঠল। এই মানুষটাকে সে হয়তো আর কোনো দিন দেখতে পারবে না। কোনো দিন না। কথাটা ভাবতেই তার বুক ভাঙা কান্না আসছে। আশ্চর্য! লোকটাকে সে কি ভালোবেসে ফেলেছে?
(এই পর্বটা লিখতে প্রচন্ড মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা হয়েছে। তারপরেও লিখে গেছি। আশা করছি পাঠকরা তার যথাযথ মূল্যায়ন করবেন। নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রকাশ করবেন। কেমন লেগেছে তা জানাবেন।)